Friday, October 7, 2016

"( Past and present condition of Education in BD and several Moral degradation )" " সেকাল ও একালের শিক্ষা এবং নৈতিক শিক্ষার আকাল "" ( TR collection)

PAST and PRESENT condition of EDUCATION OF BANGLADESH BY TR LATEST COLLECTIONBD
EDUCATION FOR ALL  ,TR LATEST COLLECTIONBD
আমাদের ছোটবেলায় প্রাইমারি স্কুলে হস্তলিপির খাতায় বড় বড় করে লিখতাম, ‘সদা সত্য কথা বলিব’, ‘কখনো মিথ্যা বলিব না’,’গুরুজনকে মান্য করিব’ ইত্যাদি আরো কত কী ! হস্তলিপির খাতায় নিয়মিত লিখা বাধ্যতামূলক ছিল । ক্লাসে শিক্ষক মহোদয় এ জাতীয় নীতি বাক্যগুলো উচ্চ কন্ঠে বলতেন আর আমরা নিজ নিজ খাতায় সুন্দর করে লিখতাম।

এ গুলো আবার পরের দিন হস্তলিপির মেইন খাতায় বড় বড় অক্ষরে বাড়িতে যত্ন করে লিখে শিক্ষককে এনে স্কুলে দেখাতে হতো । স্যার খাতা ভালো করে দেখে প্রয়োজনে আরো সুন্দর করে লিখে দিতেন বা অক্ষরের উপর কলম চালিয়ে সেগুলো ছোট-বড় করে দিতেন। এ করে করে আমাদের হাতের লেখা এক সময় খুব সুন্দর হয়ে ওঠতো এবং সে সাথে ‘সত্য কথা বলা’,’মিথ্যা না বলা’,’গুরুজনকে মান্য করা’ ইত্যাদি নীতিবাক্য গুলো আমাদের হৃদয়ে গেঁথে যেতো। আজো সে নীতিবাক্য গুলো আমাদের যেন পাহারা দিয়ে দিয়ে সামনের দিকে নিয়ে যায়।কিন্তু,এখন আর প্রাইমারি স্কুলে সে সবের চর্চা নেই ।


ছোটবেলা আমরা স্কুলে দলবেঁধে ধারাপাতের নামতা শেখতাম। একজন উচ্চস্বরে বলে যেতো আর তার সাথে আমরা সবাই এক সাথে চিৎকার করে করে নামতা শিখতাম।স্কুলের মাঠের এক কোণে বড় আম গাছটার নীচে দাঁড়িয়ে ‘একে শুন্য- দশ’, ‘একদশ এক- এগার’,’এক দশ দুই -বার’,একদশ তিন -তের’——-ইত্যাদি করে করে একশ’ পর্যন্ত গণনা শিখেছি। আজকাল প্রাইমারি স্কুলের পাশ দিয়ে হেঁটে যেত যেতে দলবেঁধে গণনা কিংবা নামতা শেখার দৃশ্য খোঁজার চেষ্টা করি। কিন্তু,কই? এ রকম তো কোন দৃশ্য দেখিনা। সেই পুরনো আম গাছটি ও নেই। কাঁচা ছনের স্কুল ঘরটি ও নেই। সবি পাকা,সবি দালান। মনে পড়ে কোথায় যেন শুনেছিলাম, ‘একদা স্কুল ঘর ছিল কাঁচা আর লেখাপড়া ছিল পাঁকা, এখন স্কুল ঘর হয়েছে পাকা আর লেখাপড়া হয়ে গেছে কাঁচা।’

পাঁচ পাঁচটি শ্রেণি। মাত্র একজন কিংবা দু’জন শিক্ষক ছিলেন। সে জায়গায় আজ পাঁচ-সাত জন আবার কোথাও আট-দশজন শিক্ষক।
প্রাইমারি পর্যায়ে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে আমাদের ৩/৪ টি মাত্র বই ছিল । সে জায়গায় আজ ৬/৭ টা। নৈতিক জ্ঞান সমৃদ্ধ, শিক্ষণীয় ও উপদেশমূলক গল্প,প্রবন্ধ ও কবিতা ছিল।সে সব পড়তে পড়তে নীতি ও নৈতিকতার বিষয় কঁচি মনে গেঁথে যেতো।

আজকাল বইয়ের বোঝা শিশু শিক্ষার্থীর গাড়ে চেপে বসেছে।কেবল পরীক্ষা আর পরীক্ষা।আমাদের শিক্ষা আজ পরীক্ষামুখি।জ্ঞানের পথ হারিয়ে সে যেন ভিন্ন কোনদিকে যাত্রা শুরু করেছে।’আগডুম,বাগডুম,ঘোড়া ডোম সাজে’ -সে আজ আমাদের সন্তানদের ভিন্ন কোন প্ররোচনা ।
আজ অনেক ছাত্রছাত্রী তাদের শিক্ষকে সম্মান করে না, বাবা মাকে মান্য করেনা। বই নিয়ে পড়াশুনা করতে বসে না। মোবাইল,কম্পিউটার,ল্যাপটপ ফেসবুক,ইউটিউব,ইমো,হোয়াটস আপ তাদের মাথা খেয়ে ফেলছে।তারা এ সবে চব্বিশ ঘন্টা লেগে থাকে। এ করে করে তারা জাহান্নামে চলে যাচ্ছে।এ সব থেকে আমাদের প্রজন্মকে বাঁচিয়ে রাখার কৌশল আমাদেরই নির্ধারণ করতে হবে।
ঐশী নামের সেই মেয়েটির কথা কে ভুলে যাবে ? সে তার নিজের বাবা-মাকে হত্যা করে কী নির্মম এক ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে ! তা থেকে আমরা কী কিছু শিখতে পারি নাই ? সেদিন পত্রিকায় দেখলাম,ছয় সন্তানকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করার পর বুড়ো বাবা-মা এখন বৃদ্ধনিবাসের বাসিন্দা । কেন এ সব হচ্ছে ? কার দোষে হচ্ছে ?
‘পারিবনা এ কথাটি বলিও না আর, একবার না পারিলে দেখ শতবার ‘।-কবিতার এ পংক্তিগুলো আমাদের অধ্যবসায়ী হবার কী-ই না চমৎকার শিক্ষা দিতো ! ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে,কথায় না বড় হয়ে বড় হবে কাজে’-কবিতার উল্লিখিত চরণ দু’টি অনেক বড় হবার স্বপ্ন দেখাতো যে কাউকে ।
আমাদের প্রবন্ধ, কবিতা,গল্প, উপন্যাস, নাটক ইত্যাদিতে কী চমৎকার ভাবে শিক্ষণীয় ও নৈতিকতাপূর্ণ বিষয় ফুটিয়ে তোলা হতো। আমাদের পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচিতে এ সবের ঘাটতি এখন প্রকট।
আমাদের পরীক্ষা পদ্ধতির আরো সংস্কার প্রয়োজন। সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির চাইতে আর কোন ভাল প্রশ্ন হয় না। কিন্তু, নোট-গাইড বন্ধ করতে না পারায় এ প্রশ্ন পদ্ধতিটি আমাদের দেশে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হবার পথে।পরীক্ষা দিলেই পাশ যদি অবধারিত হয়ে যায়,তবে পড়াশুনার কী দরকার ? আমাদের এখন হয়েছে তাই।
আমাদের সিলেবাস ও কারিকুলাম যুগোপযোগি করে আরো ঢেলে সাজাতে হবে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে।আমাদের পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচিতে নৈতিক জ্ঞানের সংযুক্তি ঘটাতে হবে।আমাদের মনে রাখতে হবে যে, নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষা প্রকৃতপক্ষে কোন শিক্ষাই নয়।
সংগৃহীত দৈনিক শিক্ষার নিয়মিত কলাম থেকে।
পোস্ট টি দৈনিক শিক্ষা ওয়েব সাইট এ দেখতে এখানে ক্লিক করুন  

No comments:

Post a Comment