Skip to main content

Leo Tolstoy নিজেই একটা পৃথিবী

আপনার কি মনে পড়ে লে তলস্তয়ের সেই "সাড়ে তিন হাত জমি" গল্পটির কথা? একটি গল্প যেন হাজারটি উপন্যাসের চেয়েও অনেক বেশি সুন্দর। নিশ্চয় মাধ্যমিকে সহপাঠ কিংবা আনন্দপাঠে গল্পটি আপনি পড়েছেন। যদি না পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই পড়বেন!

তলস্তয়ের মূল জীবনে প্রবেশের পূর্বে সংক্ষেপে গল্পটি বলার লোভ আমি সামলাতে পারছিনা। এটা আমার কৈশোরের মধুর স্মৃতিগুলোর একটি। রাশিয়ার এক দরিদ্র কিশোর পাখোম যার প্রচন্ড আকাঙ্ক্ষা ধনী হওয়ার। একদিন সে শয়তানের কাছে জানতে পারে ভলগা নদীর পাড়ে খুব কমদামে জমি কিনতে পারা যায়। ফলে ১০০ একর জমি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তার মনে জেঁকে বসলো। ফলে ঐ গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য হয়ে জমির মালিক হলো সে। এবার শয়তান তাকে জানালো পাশের দেশে আরো সহজে জমি পাওয়া যায়। যার মূল্য দিনপ্রতি ১০০ রুবল। অর্থাৎ একদিনে সে দৌড়ে যতটুকু জমি অতিক্রম করবে ততটুকু তার দখলে চলে আসবে। পাখোম একদিন প্রাণপণ দিয়ে দৌড়ালো, সে এত বেশি দৌড়ালো যে তার শরীর ভেঙে পড়লো। কিন্তু অধিক জমির লোভে সে আরো দৌড়ালো। সে অনেক জমি অধিকার করলো বটে কিন্তু সেসব তার ভাগ্যে জুটলোনা। সূর্য্যের সাথে তার জীবনসূর্য‌্যও ডুবে গেলো। অবশেষে সে সাড়ে তিন হাত জমি তথা একটা কবরের মধ্যে শায়িত হলো। 

একটু ভাবুন যার ছোটগল্প এত সুন্দর তার উপন্যাস আরো কত সুন্দর! লিও তলস্তয় আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন তার কালজয়ী উপন্যাস " যুদ্ধ ও শান্তি" (War and Peace) ও "আন্না কারেনিনা"- এর জন্য। এরছাড়াও তিনি অসংখ্য কালজয়ী ছোট গল্প, প্রবন্ধের স্রষ্টা। সোভিয়েত ইউনিয়নে তার সাহিত্যকর্ম ৯০ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছিলো। এছাড়া তাকে নিয়ে প্রায় তেইশহাজার বই লেখা হয়েছে। 

জন্ম ও শৈশব:

তলস্তয়ের জন্ম হয়েছিলো ১৮২৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার তুলা প্রদেশের ইয়াসনায়া পলিয়ানা (Yasnaya Polyana) -তে একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তিনি ছিলেন তার বাবা মায়ের কনিষ্ঠ সন্তান। তার পুরো নাম লেভ নিকোলায়েভিচ টলস্টয় (Lev Nikolayevich Tolstoy)। তার পিতার নাম কাউন্ট নিকোলাই টলস্টয় ও মায়ের নাম মারিয়া টলস্টায়া। ৯ বছর বয়সের পূর্বেই তিনি তার পিতামাতাকে হারান এবং বাকি তিন ভাইয়ের সাথে আত্মীয় স্বজনের কাছে লালিত-পালিত হন। জন্মসূত্রে তলস্তয় তৎকালীন রাশিয়ার অভিজাততন্ত্রের মানুষ ছিলেন। কিন্তু তিনি আভিজাত্যকে পছন্দ করেনি খুব একটা যা তার পরবর্তী জীবনে প্রতিফলিত হয়।

ব্যক্তিজীবন:

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন স্বাধীনচেতা মানুষ ছিলেন। চার্চের প্রকাশ্য সমালোচনা করে তিনি যাজকদের চক্ষুসূলে পরিণত হন। তিনি সবসময় বলতেন, "ইশ্বর ও যীশুকে নিয়ে ব্যবসা করে যারা তাদের চেয়ে আমি অধিক ধার্মিক খ্রিষ্টান।" তার লেখনীর জন্য চার্চ কর্তৃক তাকে ধর্ম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিলো। কিন্তু তলস্তয় তার চিন্তার উপর সবসময় বহাল থেকেছিলেন।
১৮৪৪ সালে তিনি কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারেননি। শিক্ষকরা তাকে একজন অমনোযোগী ও শিখতে অনিচ্ছুক ছাত্র হিসেবে চিহ্নিত করেন। অথচ এই ছাত্রটিই বিশ্ব জয় করেছিলো তার লেখনী দিয়ে। কয়েকবছর পর তিনি ডিগ্রী ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন এবং উদাসীন জীবনযাপন করেন। এরপর ১৯৫১ সালে তার বড় ভাইয়ের পরামর্শে তিনি  আর্মিতে যোগদান করেন ও ৫৫ সালে ক্রিমিয়ান যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধের বিরতিকালীন সময়ে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। 

তিনি তার প্রবন্ধে জারতন্ত্রের প্রকাশ্য সমালোচনা করেছেন, শাসকদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষকে সোচ্চার করেছেন। দুর্ভিক্ষের সময় মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়িয়েছেন, আদমশুমারিতে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি ৩৪ বছর বয়সে, ১৮৬২ সালে একজন চিকিৎসকের মেয়ে টলস্টয় সোফিয়া অ্যান্ড্রেয়েভ্‌না বেরোস (Sofya Andreyevna Behrs) কে বিবাহ করেন।তাদের মোট ১৩ জন সন্তান ছিলো। বিবাহের শুরুর জীবনগুলো তাদের জন্য সুখের হলেও তিনি সারাজীবন দাম্পত্য জীবন নিয়ে টানাপোড়েনে ছিলেন। তার জীবনের ভালবাসার গল্প এবং পরিবারের কলহ দ্বন্দ্বের উপাখ্যান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই হয়তো তিনি লিখেছিলেন তার কালজয়ী উপন্যাস "আন্না কারেনিনা"। তার ব্যক্তিগত জীবন পুরোটাই একটি রোমাঞ্চ উপন্যাস।

সাহিত্যকর্ম:

রাশিয়ান সাহিত্যের যুগশ্রেষ্ঠ তিনজন সাহিত্যিক হচ্ছেন তলস্তয়, পুশকিন ও গোর্কি। তারা একে অপরের সাথে যেন প্রতিযোগিতা করেছেন। আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে এই প্রতিযোগিতার বিজয়ীর মুকুটটি হয়তো তলস্তয়ের মাথাতেই উঠবে। স্বয়ং ম্যাক্সিম গোর্কি বলেছেন, "তলস্তয় নিজেই একটি পৃথিবী"। তলস্তয়ের কালজয়ী দুইটি উপন্যাস হচ্ছে "ওয়ার এন্ড পিস" ও "আন্না কারেনিনা"। ওয়ার এন্ড পিস তিনি লিখেছিলেন নেপোলিয়নের রুশ আক্রমণের প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে, যেখানে তিনি তার যুদ্ধ ও শান্তি সম্পর্কে মতামত দিয়েছেন। এই উপন্যাসটি ১৮৬৫ থেকে ১৮৬৭ সালে ধারাবাহিকভাবে ও ১৮৬৯ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটি প্রকাশিত হলে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায় এবং তিনি তার পরবর্তী কালজয়ী উপন্যাস "আনা কারেনিনা" লেখায় হাত দেন। ১৮৭৩ থেকে ৭৭ পর্যন্ত বইটি প্রকাশিত হয় এবং পাঠক ও সমালোচকদের মন জয় করে নেয়। তার তিন খন্ডের আত্মজীবনীগুলো হলো "চাইল্ডহুড", "বয়হুড" ও "ইয়ুথ"। এই বই তিনটিও অত্যধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠে। তবে তার কিছু লেখার মাধ্যমে তিনি কিছুটা বিতর্কিত হন। ১৮৮৩ সালে ‘দ্য মিডিয়েটর’ গ্রন্থে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত বিশ্বাস লিপিবদ্ধ করেন এবং চার্চের বিরুদ্ধাচরণ করেন। মূলত মুক্ত চিন্তা, শাসকের অন্যায়, যুদ্ধ, বিপ্লব ছিলো তার সাহিত্যের মূল উপাদান। অযাচিত কথা, অবাস্তব রোমান্টিকতা থেকে তিনি তার সাহিত্যকে দূরে রেখেছিলেন। 

যাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলেন:

তার সাহিত্য জীবন বিখ্যাত উপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্স ও ভিক্টর হুগো ছাড়া অনুপ্রাণিত ছিলো। ১৮৬০ সালে ইউরোপ ভ্রমণের সময় ভিক্টর হুগোর সাথে তার পরিচয় হয় এবং সদ্য প্রকাশিত "লা মিজারেবল" তার জীবনে দাগ কাটে যার প্রতিফলন ঘটে "ওয়ার এন্ড পিস" উপন্যাসে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই তিনি মন্টেষ্কুর ব্যাপক সমালোচনা করেছিলেন এবং কিছুক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত ছিলেন। 

দর্শন:

লিও তলস্তয় শুধু একজন সাহিত্যিক নয় পাশাপাশি একজন দার্শনিক বটে। তার দর্শন ছিলো চার্চের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে আসল ধর্মচর্চা করা ও অভিজাততন্ত্রকে বর্জন করা। এছাড়া তিনি অহিংস আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন যার দ্বারা ভারতের বাপুজি গান্ধী অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। বিখ্যাত ফরাসি বিপ্লবও তার সাহিত্যদর্শন থেকে অনুপ্রাণিত ছিলো। তিনি তার দর্শন প্রচার করে অনেকের চক্ষুসূল হলেও সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি তার অত্যধিক জনপ্রিয়তার কারণে। যদিও বিখ্যাত অক্টোবর বিপ্লবের পূর্বেই তার জীবনাবসান হয়েছিলো কিন্তু তিনি এই বিল্পবের পূর্বেই তার দর্শন দ্বারা এই বিপ্লবকে উদ্বেলিত করেছিলেন। তিনি ইউরোপ ভ্রমণের সময় একটি মৃত্যুদন্ড স্বচক্ষে দেখে তার বন্ধু ভ্যাসিলি বটকিনকে বলেছিলেন, " সত্য কথা হলো রাষ্ট্র একটি ষড়যন্ত্র যা শুধু শোষণের জন্যই নয় সর্বোপরি তার নাগরিকদের দুর্নীতি করার জন্যই তৈরি হয়েছে। এখন থেকে আমি কোথাও আর কখনো কোনো সরকারের চাকরি করবো না।" 

নোবেলবিতর্ক:

জীবনকালে অত্যধিক জনপ্রিয় হলেও তলস্তয় তার যোগ্য পুরস্কার পাননি। ১৯০২ থেকে ১৯০৬ পর্যন্ত প্রতি বছরই তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য এবং ১৯০১, ১৯০২ এবং ১৯১০ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন কিন্তু একবারও নোবেল পাননি। যা হয়তো নোবেল ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত ঘটনা। তবে অন্য অনেক পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। 

মৃত্যু:

জীবনের শেষ সময়গুলোতে তিনি খুব সহজ সরল জীবনযাপন করেছেন। চাষাদের সাথে থেকেছেন, তাদের মত পোশাক পড়েছেন। মৃত্যুর কিছুবছর পূর্বে  তার শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় ফলে পরিবার তার সেবার কোন কমতি রাখেনি। কিন্তু লিও তলস্তয় অভিজাত ও সুখের জীবনকে ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। যার কারণে স্ত্রীকে ত্যাগ করে তিনি একদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। ট্রেনে তিনি অহিংস ও শান্তির মতবাদ প্রচার করেন। হটাৎ ১৯১০ সালের ২০ নভেম্বর ইয়াসনায়া পলিয়ানার একটি স্টেশনে ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হন ও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার শেষ সময়কে নিয়ে ২০০৯ সালে The Last Station নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। 

মৃত্যুর পর অসংখ্য মানুষ পুলিশি বাধা অতিক্রম করে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া যে যাজকরা তাকে ধর্ম থেকে বহিষ্কার করেছিলো তারা আগ্রহী হলেও তলস্তয়ের অনুসারীরা তাদের এ কাজে বাধা দেয় ও ধর্মীয় আচারনুষ্ঠান ছাড়াই তাকে সমাহিত করা হয়। 

রায়হান হৃদয় 
রাষ্ট্রবিজ্ঞান, 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

Copied from SA TT AC ADE M Y. 

Comments

Popular posts from this blog

Auto Paragraph

Auto paragraph Facebook/Computer/Mobile phone/Internet/Television  ( এই গুলার যে কোন একটা ..........  দেওয়া জায়গা গুলাতে বসাতে হবে ) ..............is one of the greatest invention of modern science. It has made our life easy and comfortable. We use it in our daily life. We cannot think of our day without.......... . We can communicate with anyone of anywhere of the world by using.......... . It has made the word smaller. We can share our feelings, liking and disliking’s with others using............. . Nowadays.........  has become a great medium of learning. People  can learn many things using........   sitting at home. It is a great source of entertainment also. We can watch videos music news sports etc through..........  .we need not to go to stadium. Inspire of having so many good sides it has some bad sides also. It is harmful for our body. Sometimes students become addicted to it. At last it can be said that..........  is a ...

Books poem analysis with bangla

Books poem in bangla and with analysis Verse-wise Bangla Translation: What worlds of wonder are our books! As one opens them and looks, New ideas and people rise In our fancies and our eyes. আমাদের বইগুলো কী আশ্চর্য এক জগৎ! যখনই কেউ তা খুলে দেখে, নতুন ভাবনা আর নতুন মানুষ জেগে ওঠে কল্পনায় ও চোখের সামনে। The room we sit in melts away, And we find ourselves at play With some one who, before the end, May become our chosen friend. আমরা যে ঘরে বসে আছি, তা যেন মিলিয়ে যায়, আর আমরা আবিষ্কার করি নিজেদের খেলায় মত্ত কাউকে সঙ্গে নিয়ে, যে হয়তো শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠবে। Or we sail along the page To some other land or age. Here's our body in the chair, But our mind is over there. অথবা আমরা পৃষ্ঠার ওপর দিয়ে ভাসতে থাকি অন্য কোনো দেশ বা কালের দিকে। আমাদের শরীরটা রয়েছে চেয়ারে, কিন্তু মন চলে গেছে দূরে অন্য কোথাও। Each book is a magic box Which with a touch a child unlocks. In between their outside covers Books hold all things for their lovers. প্রতিটি বই একেকটি জাদুর বাক্স, যা শিশুরা এক ...

paragraph on PREMATURE MARRIAGE

P remature marriage is a very common feature in a poor country like Bangladesh. It means the marriage of the boys and girls before attaining their physical and mental maturity. In our country girls particularly poor rural girls are the victims of premature marriage. Unfortunately, the birth of girls is considered unwelcome in our country. They are neglected from their birth. They have to live in a male dominated society. As a result, they are the victims of gender discrimination. They have no 'say' in the family decision. Many parents try to find a husband for their daughters before they attain the age of maturity. We find that illiteracy, poverty, selfish attitude, unconsciousness, religious misconception , dowry system, etc. are some of the causes of premature marriage. The effects of premature marriage are very harmful for health and mind of a female child. The girls cannot adjust with the new environment of their in-law's house. They cannot serve their husbands' fam...