'ম্যাথম্যাটিকাল এংজাইটি' বা 'গণিত ভীতি' আমাদের কার নেই বলুন। অনেকের কাছেই গণিত হল রসকষ হীন একটি বিষয়। এরকম অল্প কিছু মানুষ আছে যাদের গণিত ভীতি তো দূরে থাক, সারাদিন গণিতের জটিল সব সমস্যা নিয়ে থাকতে ভালবাসেন। তাদের কাছে গণিত-ই হল সকল রসের আধার।
তবে আমরা যারা শিক্ষাজীবনে গণিতের ভয়ে সবসময় জড়সড় হয়ে থাকি, আজকের লেখাটি তাদের মধ্যে একটু হলেও গণিত নিয়ে ভীতি দুর করে গণিতের প্রতি আগ্রহের সৃষ্টি করতে পারবে।
হ্যাঁ, আজকে আমরা আলোচনা করব গণিতের কিছু চমৎকার বিষয় নিয়ে যা কি না রসকষ হীন গণিত কে করেছে অত্যন্ত রোমাঞ্চকর। তো চলুন দেখে নেওয়া যাক।
১। লুডু খেলা তো আমরা সবাই জানি, তাই না? কখনো ছক্কার দুই বিপরীত পৃষ্ঠের সংখ্যা যোগ করে দেখেছেন? না করে থাকলে একবার পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। যোগ করলে দেখতে পাবেন প্রাপ্ত যোগফল ৭।
ধরুন আপনি ছক্কায় ছয় তুলেছেন। এর মানে ঠিক বিপরীত পৃষ্ঠে ১ আছে। এভাবে প্রতিটি বিপরীত পৃষ্ঠ যোগ করলে ৭ পাবেন।
২। Palindrome Number সম্পর্কে হয়তো আমরা অনেকেই জানি। তবে যারা জানি না চলুন জেনে নেওয়া যাক।
কিছু সংখ্যা আছে যাদের উলটো দিকে থেকে পড়লেও একই সংখ্যা পাওয়া যাবে। এ ধরনের সংখ্যাকে Palindrome Number বলে। যেমন: ১২১, ৩৫৭৫৩ ইত্যাদি।
৩। কোন সংখ্যার অংকগুলোর যোগফল যদি তিন দ্বারা বিভাজ্য হয় তবে সংখ্যাটিও তিন দ্বারা বিভাজ্য হবে।
যেমন: ৭৩২ এর অঙ্কগুলোর যোগফল ৭+৩+২=১২, যা তিন দ্বারা বিভাজ্য। এর অর্থ ৭৩২ ও ৩ দ্বারা বিভাজ্য হবে।
৪। ২ এবং ৫ ব্যতীত এমন কোন মৌলিক সংখ্যা নেই যারা ২ বা ৫ দ্বারা শেষ হয়।
৫। রোমান সংখ্যায় শূন্য বলে সংখ্যা নেই। এদের সংখ্যা পদ্ধতিতে শূন্যের কোণ ব্যাবহারই নেই। রোমান সংখ্যায় মোট অংক সাতটি। এগুলো হল I, V, X, L, C, D, এবং M। রোমান পদ্ধতিতে সকল ধরনের সংখ্যা এই সাতটি অংক দ্বারা গঠন করা হয়।
৬। ৭ সংখ্যাটি সকল দেশে সকল জাতির কাছে একটি তাৎপর্য পূর্ণ সংখ্যা। কারণ প্রকৃতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেই এই সংখ্যাটির দেখা মেলে। যেমন: সপ্তাহে ৭ দিন, রংধনুর ৭ রঙ, ৭ সুর প্রভৃতি।
৭। আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে সংখ্যা গণনার জন্য আমরা মিলিয়ন, বিলিয়ন, ট্রিলিয়ন ব্যাবহার করি। কিন্তু এর পর কি? অনেকেই হয়তো এর পরে কোয়াড্রিলিয়ন পর্যন্ত জানি। কিন্তু গণনার ক্ষেত্রে এর পরেও কিছু বৃহৎ সংখ্যার গণনা আছে। যারা জানেন না তারা নিচের ক্রম টি মনে রাখতে পারেন।
মিলিয়ন - বিলিয়ন - ট্রিলিয়ন - কোয়াড্রিলিয়ন - কুইন্টিলিয়ন - সেক্সটিলিয়ন - সেপটিলিয়ন - অকটিলিয়ন - ননিলিয়ন - ডেসিলিয়ন।
৮। ছোটবেলায় আমরা সকলেই ইংরেজীতে গণনা শিখতাম। তাও আবার বানান করে করে। আচ্ছা বলুন তো, এই বানান করতে গিয়ে কখনো কোন সংখ্যায় a অক্ষর টি পেয়েছেন? হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন কোন বানানে a অক্ষর টি নেই। সর্বপ্রথম আপনি যে সংখ্যায় গিয়ে a পাবেন তা হল One Thousand মানে এক হাজারে গিয়ে। এর আগের কোন সংখ্যার ইংরেজী বানানে a অক্ষর টি নেই। বিশ্বাস না হলে একের পর এক বানান করে পড়ে দেখতে পারেন।
৯। এবার কার্ড বা তাস খেলার একটি চমৎকার তথ্য জেনে নেওয়া যাক। আপনি তাস খেলার সময় যদি তাসগুলোকে পর্যাপ্ত সাফল্য করেন তাহলে যে কম্বিনেশন টি তৈরি হবে সেটি একটি ইউনিক কম্বিনেশন হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ, আপনার কম্বিনেশন টি আগে কেউ কখনো দেখে নি।
১০। ২৩ জনের একটি ক্লাসরুম এ দুজন শিক্ষার্থীর একই জন্মদিন হওয়ার সম্ভাবনা ৫০%। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যদি ৭৫ জন হয় তাহলে এই সম্ভাবনা ৯৯% পর্যন্ত বেড়ে যায়।
১১। ফিবোনাচি সংখ্যা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। তবে এটা জানেন কি যে শামুকের সর্পিলাকার খোলস এই সংখ্যা পদ্ধতি মেনে চলে।
ফিবোনাচি সংখ্যার বৈশিষ্ট্য হল এই ধারার আগের দুটি সংখ্যা যোগ করলে পরের সংখ্যাটি পাওয়া যায়।
০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩,..............
এটিই হল ফিবোনাচি সংখ্যার ক্রম। আর শুধু শামুকের খোলস নয়, সূর্যমুখী ফুলের সর্পিল গঠন সহ আরও অনেক ক্ষেত্রেই এই সংখ্যার দেখা মেলে। গাছের শাখা গণনা করলেও আমরা এর দেখা পাই। একটি শাখা থেকে ক্রমান্বয়ে শাখা গণনা করলে দেখা যাবে এটি ফিবোনাচি ক্রম মেনে বৃদ্ধি পেয়েছে।
১২। গড়ে মানুষের মাথায় প্রায় ১ লক্ষ চুল থাকে। আর আমাদের প্রতিদিন প্রায় ৫০-১০০ টি চুল পরে। তবে যেহেতু নতুন চুল গজায় তাই আমরা টাক হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাই। তবে হ্যাঁ, যাদের চুল গজানোর হার কম তাদের কিন্তু ঠিকই এই অপ্রত্যাশিত ব্যাপারটিকে গ্রহণ করতে হয়।
১৩। আচ্ছা বলুন তো, জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন "google" তাদের নামটি কিভাবে পেয়েছে বা নির্বাচন করেছে?
মূলত "googol" শব্দটি থেকে এসেছে google. "googol" শব্দ টি ১ এর পরে ১০০ টি শূন্য বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। বোঝাই যাচ্ছে সংখ্যাটি কত বড়। আর তাই অসীম সংখ্যক ইন্টারনেট সার্চ অপশন বোঝাতে google বেছে নিয়েছে এই শব্দটি।
১৫। পিজা খেতে ভালবাসেন? যদি ভালবাসেন তাহলে এর নামের পেছনের গণিত আপনাকে বেশ আনন্দই দেবে।
পিজা একটি গোলাকার বস্তু। কাজেই এর আয়তনের সূত্র হবে πr2h. যেখানে r হল ব্যাসার্ধ এবং h হল উচ্চতা।
সূত্রটিকে ভেঙে লিখলে দাঁড়ায় Pi.r.r.h
এখন যদি এর ব্যাসার্ধ কে z এবং উচ্চতা কে a দ্বারা প্রকাশ করা যায় তাহলে আয়তন দ্বারায় Pi.z.z.a। কি, এখন বানান টা বোঝা যাচ্ছে?
Collected
No comments:
Post a Comment