Skip to main content

ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহি:) –(৫ নভেম্বর ১৯৫৮ - ১১ মে ২০১৬)

ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহি:) –(৫ নভেম্বর ১৯৫৮ - ১১ মে ২০১৬)
------------------------

‘সৌদি আরবের ইমাম সউদ ইউনিভার্সিটির একজন শিক্ষার্থী দ্বিতীয় সেমিস্টারে পুরো ফ্যাকাল্টিতে ফার্স্ট হলেন। আরব দেশের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন নন-আরব ফার্স্ট হলেন, এটা যেনো চমক লাগানো সংবাদ। সাংবাদিক সাক্ষাৎকার নেবার জন্য ছুটলেন সেই ছাত্রের কাছে। সাক্ষাৎকারটি পরদিন ছাপা হয় রিয়াদের সেরা দৈনিক ‘আর-রিয়াদ’ পত্রিকায়। সেই ছাত্রের গড় নাম্বার ছিলো ৯৭, চারটি বিষয়ে পেয়েছিলেন ১০০ তে একশো। 

কিং সউদের সেই কৃতি ছাত্র হলেন ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ)। ১৯৮৬ সালে তিনি ইমাম সউদ ইউনিভার্সিটি থেকে লিস্যান্স, ১৯৯২ সালে মাস্টার্স, ১৯৯৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশী, যিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। চূড়ান্ত পরীক্ষায় গড়ে ৯৬ মার্ক পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরপর দুইবার বাদশাহ আযিযের কাছ থেকে সেরা ছাত্রের পুরস্কার গ্রহণ করেন।

সৌদি আরবের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেরা ছাত্রের খেতাব পাবার পাশাপাশি তাঁর সামনে সুবর্ণ সুযোগ ছিলো সেখানে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়ার। ইংরেজিতে পারদর্শী হবার ফলে চাকরির অফার পেয়েছিলেন ইংল্যান্ড, অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়া থেকেও। কিন্তু, তিনি কী করলেন? পিএইচডি সমাপ্ত করেই ব্যাগ গুছাতে শুরু করলেন।

তাঁর জীবনী-লেখক তাঁকে পরামর্শ দিলেন, “সৌদিতে সম্পূর্ণ সময়টা পড়ালেখা করেই কাটালেন, ব্যাংক-ব্যালেন্স বলতে কিছুই নেই। কিছুদিন সৌদিতে থেকে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে দেশে গেলে হয় না?” 

দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহি:) বললেন:
> “পিএইচডি শেষ করে দেশে যাবো বলে আল্লাহর সাথে আমি ওয়াদা করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, সবকিছু দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হলো। আমি আল্লাহর সাথে কৃত আমার ওয়াদা রক্ষা করতে চাই।”

পড়ালেখার সুবাদে প্রায় ১৭ বছর থেকেছেন সৌদি আরব। ১৯৯৮ সালে যখন দেশে ফিরবেন, নিশ্চয়ই অনেক শপিং করবেন, কাপড় কিনবেন, সৌদি আরব থেকে আতর থেকে শুরু করে এমনসব জিনিস কিনবেন, যেগুলো সাধারণত দেশে গেলে পাওয়া যায় না। কিন্তু, না। তাঁর দুশ্চিন্তা হলো, এই ১৭ বছরে যেসব বই তিনি পড়েছেন, সংগ্রহ করেছেন, সেগুলো তো দেশে গেলে পাওয়া যাবে না। সেগুলো দেশে নিয়ে যাবেন কিভাবে? 

বিমানে একজন মানুষ তো সর্বোচ্চ ২৫-৩০ কেজির পণ্য নিতে পারে। তাঁর বইগুলোর ওজন তো এর ১০০ গুণ বেশি। তিনি বইগুলো দেশে নিয়ে যাবার জন্য কার্টুনে ভরে ট্রান্সপোর্টে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করলেন। 
> **প্রায় ১০০ টি কার্টুনে ৩৫০০ কেজি বই! **

দীর্গ ১৭ বছরের সম্বল আত্মস্থ ইলম এবং ৩৫০০ কেজি ওজনের বই নিয়ে ১৯৯৮ সালে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহি:) দেশের মাটিতে পা রাখেন। তাঁর সামনে সুযোগ ছিলো নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থেকে উজ্জ্বল ঈর্ষণীয় ক্যারিয়ার গড়ার। কিন্তু, নিজের ঘর অন্ধকার রেখে আলোর দাওয়াত নিয়ে পাশের গ্রামে তিনি যেতে চাননি। ফিরে আসেন নিজের শিকড়ে। 

কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ, এই অঞ্চল দুটোকে মানুষ চিনে লালন ফকির আর পাগলা কানাই ফকিরের এলাকা বলে।  শিরক, বিদ’আত, কুসংস্কার আর বাউল ফকিরদের তীর্থস্থান এই অঞ্চল। এরকম একটা এলাকায় জন্মগ্রহণ করে, এলাকার অধঃপতন দেখে কিভাবে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহি:) বিদেশে এসির রুমে বসে দ্বীন কায়েমের স্বপ্ন দেখবেন?

তিনি ফিরে এসে নিজ এলাকার ধর্মীয় কুসংস্কার দূর করার উদ্যোগ নেন। ১৯৯৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার হিশেবে যোগদান করেন। চাকরি করেই ক্ষান্ত হোননি, শিক্ষা সংস্কারের জন্য একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন **‘আল-ফারুক একাডেমি’** নামে। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন** ‘আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট’**। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন মাহফিলে ওয়াজ করতে যেতেন, হাসিমুখে জটিল বিষয়গুলোর যুথসই সমাধান দেবার চেষ্টা করতেন। একজন আলেম শুধুমাত্র হাসি দিয়েই মানুষের মন জয় করতে পারেন, আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যারকে না দেখলে এটা বুঝার উপায় ছিলো না হয়তো। মানুষকে দূরে সরিয়ে দেবার বদলে কাছে টেনে নেবার প্রবণতা ছিলো তাঁর বেশি। ইখতেলাফি বিষয়ের আলোচনায় তাঁর শব্দচয়ন মানুষকে মুগ্ধ করতো। বাংলাদেশের মিডিয়ায় আলোচিত আলেমগণের মধ্যে এমন সহনশীল এপ্রোচের সাথে মানুষজন আগে পরিচিত ছিলো কিনা কে জানে! তাঁর ওয়াজ সুরেলা ছিলো না, তবুও মানুষ আগ্রহ নিয়ে তাঁর ওয়াজ শুনতো। সুরেলা ওয়াজ না করেও তিনি ছিলেন বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় বক্তা।

সাধারণ শিক্ষিত এবং মাদ্রাসায় শিক্ষিত, এই দুই শ্রেণী যার বই পড়ে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে, তিনি হলেন ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর। জেনারেল শিক্ষিত কাউকে বাংলাদেশের কোনো আলেমের একাধিক বই রেফার করার মতো মৌলিক বই খুব বেশি ছিলো না। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যারের লেখাগুলো ছিলো এমন স্টাইলের যে, একজন সাধারণ শিক্ষিত মানুষও তাঁর ৫০০+ পৃষ্ঠার বইগুলো সহজে পড়তে পারতো। যা বলতে চাচ্ছেন, তা সহজে লিখতে পারতেন। 

ভালো বক্তা এবং ভালো লেখক; এই দুই গুণ বেশিরভাগের থাকে না। কেউ ভালো বক্তা, তো কেউ ভালো লেখক। আল্লাহ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যারকে এই দুটো গুণ দান করেছিলেন।’

~আরিফুল ইসলাম
collected from fb 

Comments

Popular posts from this blog

Books poem analysis with bangla

Books poem in bangla and with analysis Verse-wise Bangla Translation: What worlds of wonder are our books! As one opens them and looks, New ideas and people rise In our fancies and our eyes. আমাদের বইগুলো কী আশ্চর্য এক জগৎ! যখনই কেউ তা খুলে দেখে, নতুন ভাবনা আর নতুন মানুষ জেগে ওঠে কল্পনায় ও চোখের সামনে। The room we sit in melts away, And we find ourselves at play With some one who, before the end, May become our chosen friend. আমরা যে ঘরে বসে আছি, তা যেন মিলিয়ে যায়, আর আমরা আবিষ্কার করি নিজেদের খেলায় মত্ত কাউকে সঙ্গে নিয়ে, যে হয়তো শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠবে। Or we sail along the page To some other land or age. Here's our body in the chair, But our mind is over there. অথবা আমরা পৃষ্ঠার ওপর দিয়ে ভাসতে থাকি অন্য কোনো দেশ বা কালের দিকে। আমাদের শরীরটা রয়েছে চেয়ারে, কিন্তু মন চলে গেছে দূরে অন্য কোথাও। Each book is a magic box Which with a touch a child unlocks. In between their outside covers Books hold all things for their lovers. প্রতিটি বই একেকটি জাদুর বাক্স, যা শিশুরা এক ...

🚀 ৫০টি দরকারি কিবোর্ড শর্টকাট (Windows)(বাংলা ব্যাখ্যাসহ)

🚀 ৫০টি দরকারি কিবোর্ড শর্টকাট (Windows) (বাংলা ব্যাখ্যাসহ) (অজানা কিন্তু খুবই কাজে লাগে) ⸻ ১. Ctrl + N → নতুন ফাইল বা ডকুমেন্ট খুলবে (Word, Notepad, Browser ইত্যাদিতে)। ২. Ctrl + Shift + T → আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্রাউজার ট্যাব পুনরায় খুলবে। ৩. Ctrl + Shift + Left/Right Arrow → একসাথে পুরো শব্দ নির্বাচন করা যাবে। ৪. Alt + F4 → অ্যাপ বা উইন্ডো বন্ধ হবে। ৫. Ctrl + P → প্রিন্ট ডায়ালগ বক্স খুলবে (প্রিন্ট করার জন্য)। ⸻ ৬. Ctrl + A → সব ফাইল বা টেক্সট সিলেক্ট হবে। ৭. Ctrl + C → কপি করা যাবে। ৮. Ctrl + V → পেস্ট করা যাবে। ৯. Ctrl + X → কাট করা যাবে। ১০. Ctrl + Z → সর্বশেষ কাজ Undo হবে। ⸻ ১১. Ctrl + Y → Undo করা কাজ Redo হবে। ১২. Windows Key + E → File Explorer খুলবে। ১৩. Windows Key + D → ডেস্কটপ দেখাবে (সব মিনিমাইজ হবে)। ১৪. Ctrl + Shift + Esc → সরাসরি Task Manager খুলবে। ১৫. Windows Key + L → কম্পিউটার লক হবে। ⸻ ১৬. Windows Key + S → সার্চ অপশন চালু হবে। ১৭. Windows Key + R → Run কমান্ড চালু হবে। ১৮. F5 → রিফ্রেশ করবে। ১৯. Alt + Enter → Properties খুলবে। ২০. Ctrl + T → ব্রাউজারে নতুন ট্যাব খু...

70 speaking rules(1~20)

Spoken Rule-1 Feel like – ইচ্ছা করা/আকাঙ্খা প্রকাশ করা প্রয়োগ ক্ষেত্র: ব্যক্তির কোন কিছুর “ইচ্ছা করলে” Feel like ব্যবহার হবে Structure: Subject + feel like + Verb (ing) + Extension. Example ✪ I feel like doing – আমার করতে ইচ্ছা করছে। ✪ I feel like eating – আমার খেতে ইচ্ছা করছে। ✪ I don’t ...