Skip to main content

Asia You like it’s বাংলা

সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য। 
&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&
As you like it - William Shakespeare - Bangla Translation - অ্যাজ ইউ লাইক ইট -উইলিয়াম শেক্সপিয়ার - বাংলা অনুবাদ পর্ব-১
------------------------------
ইউরোপের দুটো দেশ, ফ্রান্স আর বেলজিয়ামের মাঝখান দিয়ে বহুদূর পর্যস্ত চলে গেছে আর্ডেনের গহন অরণ্য। শুধু ওই দুটি দেশ নয়, ইউরোপের আরও অনেক দেশের সীমান্ত ছুঁয়ে গেছে সেই বন। এই বনে পাহাড়, ঝরনা, নদীর পাশাপাশি রয়েছে গোরু, ভেড়া চরাবার বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। একদিকে যেমন বাঘ, সিংহ, নেকড়ে প্রভৃতি হিংস্র জন্তুরা শিকারের খোঁজে ঘুরে বেড়ায়, তেমনি অন্য দিকে ফুল-পাতায় ছাওয়া গাছের ডালে বসে কোকিল আর জংলি ময়নারা রচনা করে এক সুন্দর পরিবেশ। বনের একধারে স্ত্রী-পুত্র-পরিবার আর পোষা জন্তুদের সাথে বাস করে কিছু মেষপালক।
ফ্রান্সের একটা ছোটো রাজ্য রয়েছে ঠিক এই আর্ডেন জঙ্গলের লাগোয়া। সে সময় ইউরোপের অনেক ছোটো রাজ্যের রাজারা ডিউক উপাধি নিয়ে রাজ্য শাসন করতেন। এ গল্প যে রাজ্যকে নিয়ে লেখা হয়েছে তার প্রাক্তন শাসকের উপাধিও ছিল ডিউক। এই ডিউক নিজে সৎ ও সুশাসক হলেও তার ছোটো ভাই ফ্রেডারিক ছিলেন যেমন স্বার্থপর তেমনি ধান্দাবাজ। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যে কোনও অন্যায় কাজ করতেও পিছপা ছিলেন না তিনি।

নিজের মতোই সবাইকে সৎ এবং উদারমনা বলে মনে মনে ভাবেন ডিউক। এ ধরনের লোককে নিয়েই হয় মুশকিল। পরম নিশ্চিন্তে ছোটো ভাই ফ্রেডারিকের উপর রাজ্য শাসনের ভার ছেড়ে দিয়ে ধর্ম-কর্ম, পড়শোনা আর নির্দোষ আমোদ-প্রমোদে মেতে রয়েছেন তিনি। ফ্রেডারিক দেখলেন এই সুযোগ। বড় ভাইয়ের সরলতার সুযোগ নিয়ে অনায়াসেই তিনি কেড়ে নিতে পারেন তার রাজ্য। এর জন্য যুদ্ধ-বিগ্রহেরও প্রয়োজন নেই। তিনি মতলব ভাজতে লাগলেন। প্রথমে তিনি নিজের মত জঘন্য চরিত্রের কিছু লোককে খুজে বের করে তাদের প্রচুর টাকা পয়সা আর সম্পত্তি দিয়ে নিজের দলে টেনে নিয়ে এলেন। তারপর তিনি তাদের বসিয়ে দিলেন রাজ্যের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে। তাদের সাহায্যে রাজ্যের সমস্ত ক্ষমতা করায়ত্ত করলেন তিনি। এতদিনে ছোটো ভাই ফ্রেডারিকের আসল চেহারা দেখে আতকে উঠলেন ডিউক। ফ্রেডারিক তাকে প্রাণে মেরে দেবে এই আশঙ্কা করে ডিউক পালিয়ে গেলেন আর্ডেনের বনে। সভাসদদের মধ্যে যারা তাকে সত্যি সত্যিই ভালোবাসত, তারাও চলে গেলেন ডিউকের সাথে। বহুদিন আগে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে মারা যান তার স্ত্রী। যাবার সময় সেই মা-হারা মেয়েটিকে সাথে নিয়ে যেতে পারলেন না ডিউক।
ডিউকের মেয়ে রোজালিন্ড দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি মধুর তার স্বভাব। ডিউকের পাষণ্ড ছোটো ভাই ফ্রেডারিকেরও মাত্র একটিই মেয়ে, নাম সিলিয়া। ওরা দুই বোনই সমবয়সি। সবে পা দিয়েছেন যৌবনে । রোজালিন্ডের সমবয়সি হলেও সিলিয়া কিন্তু দেখতে তার মতো সুন্দর নয়। ছোটোবেলা থেকে দুজনে একসাথে বড়ো হবার ফলে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব জন্মেছে উভয়ের মাঝে। একে অপরকে ছেড়ে মোটেও থাকতে পারে না। বড়ো ভাই তার দু-চোখের বিষ হলেও সে কিন্তু নিজের মেয়ে সিলিয়ার মতোই ভালোবাসে রোজালিন্ডকে। বাবার অভাব যাতে সে বুঝতে না পারে তার জন্য চেষ্টার কোনও ক্রটি নেই ফ্রেডারিকের। সিলিয়াও সাধ্যমতো চেষ্টা করে রোজালিন্ডকে খুশি রাখতে তার বাবা যে রাজ্য হারিয়ে বনে বনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কাকার দয়ায় যে সে বেঁচে - রোজালিন্ড সর্বদাই চেষ্টা করে যাচ্ছে তার আচার-আচরণ দিয়ে সে নিদারুণ লজ্জা মুছে ফেলার।
স্যার রোল্যান্ড ডি’বয় (Sir Rowland De’Bois) ছিলেন রাজ্যহীন ডিউকের অন্যতম প্রিয় বন্ধু। বহুদিন আগেই তিন ছেলেকে রেখে মারা গেছেন তার স্ত্রী। ছেলেদের নাম অলিভার, জ্যাক আর অরল্যান্ডো। ডিউক রাজ্য ছেড়ে বনে চলে যাবার কিছুদিন আগেই মারা যান রোল্যান্ড ডি’বয়। তার সম্পত্তির পুরোটাই একলা দেখা-শোনা করে বড়ো ছেলে অলিভার।

মেজো ভাই জ্যাককে সহ্য করতে পারলেও ছোটো ভাই অরল্যান্ডোকে মোটেও দেখতে পারে না অলিভার। মেজো ভাইকে বড়োলোকের ছেলেদের মতো দামি দামি পোশাক কিনে দিলেও, কেন জানি অরল্যান্ডোকে এ সব থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে অলিভার। বাবার মৃত্যুর পর সে একটাও দামি পোশাক কিনে দেয়নি ছোটো ভাইকে। তার নির্দেশে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়েছে অরল্যান্ডোর। চাষা-ভূষোর ছেলেদের মতো পুরনো ময়লা তালি-মারা পোশাক পরে খেত-খামারে কাজ করতে হয় অরল্যান্ডোকে। কিন্তু এসব দুঃখ-কষ্ট সত্তেও হতাশ হবার ছেলে নয় অরল্যান্ডো। বড়ো ভাই অলিভারের নজর এড়িয়ে নিজের চেষ্টায় লেখাপড়া শিখেছে সে। এ বয়সেই সুন্দর কবিতা লিখতে পারে অরল্যান্ডো। ছন্দের দোলায় সেগুলো হয়ে ওঠে এক একটি চমৎকার কবিতা ।
অরল্যান্ডো শুধু দেখতে সুন্দর নয়, সে প্রচণ্ড শক্তিধর। জলে ভিজে, রোদে পুড়ে আর ভেড়া, ছাগল চরিয়ে শুধু তার স্বাস্থ্যই মজবুত হয়নি, দৃঢ় হয়েছে তার মাংসপেশিও। অরল্যান্ডো যে কত শক্তি ধরে কদিন বাদে তা টের পেয়ে অবাক হল সবাই।
চার্লস নামে এক মাইনে করা কুস্তিগীর আছে রাজসভায়। মাঝে মাঝেই সে দেশের লোককে আহবান জানায় তার সাথে কুস্তি লড়তে। আগে অনেকেই তার আহবানে সাড়া দিত। কিন্তু হেরে যাওয়া কুস্তিগীরের হাত-পা ভেঙে দেয় বলে কেউ তার সাথে কুস্তি লড়তে যায় না। এবার বহুদিন পর কুস্তি লড়ার ডাক দিয়েছে চার্লস। তার আহবানে সাড়া দেয় এক বুড়ো চাষির তিন জোয়ান ছেলে আর অরল্যান্ডো। কিন্তু কুস্তি লড়ার দিন একরকম গায়ে পড়ে তার সাথে ঝগড়া বাধাল অলিভার। অরল্যান্ডো তখন বাগানে বসে পুরনো চাকর অ্যাডামের সাথে কথা বলছিল। কথায় কথায় তার বাবা স্যার ডি’বয়ের রেখে যাওয়া উইলের কথা তুলে তিনি অ্যাডামকে বললেন, “আমার যতদূর জানা আছে বাবা তার উইলে মাত্র একহাজার ক্রাউন আমার জন্য বরাদ্দ করে গেছেন, আর আমায় মানুষ করার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন বড়ো ভাইয়ের ওপর, সে কথা তুমিও জানো অ্যাডাম। কিন্তু আমার বড়ো ভাই শুধু মেজভাই জ্যাককে লেখা-পড়া শেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছে। লেখা-পড়া শিখে সে উন্নতিও করেছে। আর আমার বড়ো ভাই অলিভার কিনা আমার লেখা-পড়া বন্ধ করে দিয়ে খেত-খামারে কাজে লাগিয়েছে। সারাদিন সেখানে মজুরের মতো কাজ করার পর রাতে আমায় খেতে হয় চাকর-বাকরদের সাথে। এভাবে প্রতিদিন সে আমার উপর অন্যায়-অত্যাচার করে চলেছে। আমি আর কিছুতেই সহ্য করতে রাজি নই অলিভারের এ অন্যায়।
অ্যাডাম নিজেই এ সব অন্যায়ের সাক্ষী। তাই অরল্যান্ডোর কথায় ঘাড় নেড়ে সায় দিল সে। অলিভার বলল, “অ্যাই অরল্যান্ডো! কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে সকালবেলা এই বাগানে বসে আড্ডা দিচ্ছিস”
গলাটা সামান্য চড়িয়ে বলল অরল্যান্ডো, ‘তা কী আর করব! আমায় তো কোনও কাজ-কর্ম শেখানো হয়নি, তাই কিছু করছি না’।
অরল্যান্ডোকে ধমকে বলে উঠল অলিভার, ‘তাই নাকি? আজকাল দেখছি তোর বড্ড বাড় বেড়েছে। কার সাথে কথা বলছিস তা খেয়াল আছে?’
‘কেন? আমি কথা বলছি আমার বড়ো ভাই অলিভারের সাথে’, জবাব দিল অরল্যান্ডো, একই রক্ত বইছে আমাদের শিরায়’।
‘তবে রে! তোর এত দূর সাহস!’ বলে তার দিকে তেড়ে এল অলিভার।

একটুও ঘাবড়ে না গিয়ে অরল্যান্ডো বলল, ‘মুখ সামলে কথা বলবি অলিভার। এদিক দিয়েমতুই আমার চেয়ে অনেক ছোটো’।
অলিভার উত্তেজিত হয়ে বলল, ‘শয়তান, তুই আমায় মারের ভয় দেখাচ্ছিস!’
অরল্যান্ডো জবাব দিল, ‘শয়তান আমি না তুই নিজে? নেহাত তুই আমার বড়ো ভাই, নইলে তোর জিভ টেনে ছিড়ে ফেলে দিতাম’।
দু-ভাইয়ের মাঝে মারামারি বেধে যাবার উপক্রম। তখন তাদের থামাতে এসে অ্যাডাম বলল, ছিঃ! ছিঃ! কী করছেন আপনারা? বড়ো কর্তা মারা যেতে না যেতেই নিজেদের মধ্যে মারামারি শুরু করেছেন? আপনাদের প্রয়াত পিতার কথা মনে রেখে নিজেদের বিভেদ ভুলে যান।
এরই মধ্যেই মারামারি চলতে লাগল। এক সময় অরল্যান্ডো তার চেয়ে দুর্বল দাদা অলিভারের গলা টিপে ধরল।
যন্ত্রণায় চিৎকার করে বলল অলিভার, ওরে অরল্যান্ডো! ভালো চাস তো ছেড়ে দে আমার গলা। ভীষণ লাগছে আমার।
আমার কথা না শোনা পর্যস্ত আমি তোমায় ছাড়ব না, জবাব দিল অরল্যান্ডো, বাবা তার উইলে আমায় মানুষ করার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন তোমার উপর। সে দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছ তুমি? হয় তুমি নিজের দায়িত্ব পালন কর নতুবা বাবা আমার জন্য যা টাকা রেখে দিয়েছেন তা আমায় দিয়ে দাও। নিজের ভাগ্যকে সাথে নিয়ে চলে যাব আমি ।
গর্জে উঠে অলিভার বলল, বাবার উইল অনুযারী তোমার কিছু পাওনা থাকলে তবে তো পাবে! আর এতই যদি নিজের পাওনা-গণ্ডা বুঝতে শিখেছ, তাহলে নিজের ভার নিজেই নিয়ে নাও। আজ থেকে তোমায় খাওয়াবার দায়িত্ব আমি ছেড়ে দিলাম। তুমি এখনই আমার সামনে থেকে দূর হয়ে যেখানে খুশি চলে যাও। এরপর অ্যাডামের দিকে সে তাকিয়ে বলল, আর, হ্যা অ্যাডাম, তোর মতো আপদকে পুষতে চাই না আমি । হারামজাদা! তুইও দূর হয়ে যা অরল্যান্ডোর সাথে সাথে।
জলভরা দু-চোখে অলিভারের দিকে তাকিরে বলল অ্যাডাম, বাহ অলিভার, কি সুন্দর কথা বলতে শিখেছ তুমি? তোমর স্বর্গবাসী পিতা, আমার মনিবও কখনও এভাবে কথা বলেননি আমার সাথে। বেশ আমি যাচ্ছি। ঈশ্বর তোমার পিতার আত্মাকে শান্তি দিন।

As you like it - William Shakespeare - Bangla Translation - Part 2 - অ্যাজ ইউ লাইক ইট -
 বাংলা - পর্ব ২
----------------------
দু-ভাইয়ের মাঝে মারামারি বেধে যাবার আগেই অরল্যান্ডোকে টেনে বাইরে নিয়ে এল অ্যাডাম। ঠিক এমন সময় সেখানে এসে হাজির হল কুস্তিগীর চার্লস। সে অলিভারকে বলল, কী ব্যাপার স্যার অলিভার! শুনলাম আপনার ছোটো ভাই নাকি আজ আমার সাথে কুস্তি লড়তে আসবেন? শুনেই তো ভয়ে আমার বুক কাপছে। তাই তো ছুটে এলাম আপনার কাছে। আপনি তো জানেন কেউ আমার সাথে কুস্তি লড়তে এলে আমি মেরে তার হাড়গোড় ভেঙে দিই। আপনার ভাই এলেও আমি কিন্তু তাকে ছেড়ে কথা কইব না। কারণ কুস্তিই আমার পেশা! এ পেশায় জয়ী হওয়াটাই বড়ো কথা। এ পেশায় টিকে থাকতে হলে লড়াইয়ে আমায় জিততেই হবে, নইলে না খেতে পেয়ে মারা যাব। এসব কথা ভেবেই আমি ছুটে এসেছি আপনার কাছে। আপনার ভাইকে যদি বাচাতে চান, তাহলে আমার সাথে লড়াই থেকে বিরত করুন তাকে। নইলে উনি প্রাণে বাচবেন না একথা আগেই বলে দিলাম আপনাকে।
অলিভার বললেন, তুমি এসে ভালোই করেছ চার্লস, নইলে খবরটা পেতাম না আমি। আমার ভাইয়ের কথা আর বলো না তুমি। ও যেমন আমার অবাধ্য, তেমনি বজ্জাত আর একগুঁয়ে। ওর জন্যে কোনও মায়া-দয়া নেই আমার। ইচ্ছে করলে কুস্তির সময় তুমি ওর হাত-পা ভেঙে পঙ্গু বানিয়ে দিতে পার ওকে, এমনকি মেরেও ফেলতে পার। তুমি কিছু মনে করো না, আমি ঠান্ডা মাথায় এ কথা বলছি। বেশ, এই কথা রইল, তুমি কুস্তির প্যাচে ওকে মেরে ফেলবে আর আমিও দু-হাত ভরে বকশিশ দেব তোমাকে। হারামজাদা অরল্যান্ডোর সাহস দেখ! ও কিনা লড়তে চায় তোমার মতো কুস্তিগীরের সাথে? তুমি জন্মের মতো ওর লড়াইয়ের সাধটা মিটিয়ে দাও। তুমি আমায় দেখলে আমিও দেখব তোমাকে।

চার্লস রাজি হয়ে গেল অলিভারের প্রস্তাবে। স্থির হল, কুস্তির প্যাচে চার্লস মেরে ফেলবে অরল্যান্ডোকে, তারপর দু-হাত ভরে বকশিশ নেবে অলিভারের কাছ থেকে।
চার্লস চলে যাবার পর নিজের মনে আক্ষেপ করে বলে উঠল অলিভার, আমার কাছে অরল্যান্ডো একটা জানোয়ার বই আর কিছু নয়। ওকে ঘেন্না করি আমি। অথচ অন্য সবাই ওকে ভীষণ ভালোবাসে। ওর মার্জিত কথা-বার্তা আর বিনয়ী আচরণ দেখে সবাই ভাবে ও খুব শিক্ষিত। এর ফলে দিন দিন সবার চোখে ছোটো হয়ে যাচ্ছি আমি। কিন্তু অরল্যান্ডোর চালাকি আর বেশিদিন চলবে না। এবার হতভাগা শেষ হয়ে যাবে চার্লসের হাতে।
নিদিষ্ট সময়ে শুরু হয়ে গেল কুস্তি। চার্লসের সাথে কুস্তি লড়তে একে একে মঞ্চে উঠে এল বুড়ো চাষির তিন জোয়ান ছেলে। দৈহিক শক্তি তাদের যথেষ্ট থাকলেও পেশাদার কুস্তিগীরের সাথে লড়তে গেলে যে কৌশলের দরকার তা তাদের কারও ছিল না। ফলে তারা তিনজনই হেরে গেল চার্লসের কাছে। কুস্তিতে হারিয়ে দেবার পর অন্য সবার যা ব্যবস্থা করে চালস, এবারও তাই করল। ওদের পাঁজরের দু-তিনটি করে হাড় সে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল। অসহায় বুড়ো আর কী করে!
কোনও মতে তিন ছেলেকে কাধে বয়ে নিয়ে কাদতে কাদতে বাড়ি ফিরে গেল। চার্লসের সাথে বুড়ো চাষির তিন ছেলের একই জায়গায় পরপর লড়াই হবার পর মঞ্চের জায়গাটা খারাপ হয়ে গেছে। ডিউক অলিভার তাই নির্দেশ দিলেন এবার লড়াইটা হবে তার প্রাসাদের সামনের ময়দানে । পরবর্তী কুস্তির লড়াই দেখতে এবার উৎসাহী দর্শকেরা একে একে এসে ডিউকের প্রাসাদের সামনে ভিড় জমাল। তখন রোজালিন্ড আর সিলিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছিল সে বনে। রাজপ্রাসাদের আরাম-আয়াসের মাঝে কাটালেও এতটুকু শান্তি নেই রোজালিন্ডের মনে। তার মন তখনই বিষগ্ন হয়ে ওঠে যখন সে ভাবে কত কষ্টের মাঝে আর্ডেনের বনে দিন কাটাচ্ছেন তার বাবা। সবসময় রোজালিন্ডের এই বিষণ্ণ কালো মুখ দেখে একটুও ভালো লাগে না সিলিয়ার। তার বাবা ফ্রেডারিক যে অন্যায়ভাবে রোজালিন্ডের বাবার রাজ্য কেড়ে নিয়েছে, সে কথা সে জানে। আর এও জানে তারই বাবার জন্য আজ আর্ডেনের বনে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন রোজালিন্ডের বাবা। রোভালিন্ডকে সব সময় আনন্দ এবং খুশির মধ্যে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে সে, তবুও কেন যেন হাসি নেই রোজালিন্ডের মুখে। ভেবে ভেবেও এর কারণ খুঁজে পায় না সিলিয়া।

একদিন সে মুখ ফুটে বলেই ফেলল, তুমি আমায় মোটেও ভালোবাস না রোজালিন্ড। তোমার জায়গায় আমি হলে কিন্তু এভাবে মুখ কালো করে বসে থাকতাম না। তোমার বাবা যদি আমার বাবাকে রাজ্যছাড়াও করতেন, তবু আমি নিজের বাবার মতো মনে করতাম তোমার বাবাকে।
জোর করে মুখে হাসি এনে রোজালিন্ড বলল, বেশ তো, এই কথা! এবার থেকে বাবার কথা ভুলে গিয়ে দিনরাত তোমার সাথে হেসে হেসে কথা বলব, তাহলে হবে তো?
নিজেকে সামলে নিয়ে আস্তে আস্তে বলল সিলিয়া, “তুমি আমার ভূল বুঝো না রোজালিন্ড। তুমি তো জান আমি বাবার একমাত্র সস্তান। তার অবর্তমানে সব সম্পত্তির মালিক হব অমি। আমি কথা দিচ্ছি তোমার বাবার কাছ থেকে অন্যায়ভাবে কেড়ে নেওয়া সম্পত্তি তখন আমি ফেরত দেব। দোহাই তোমার! একটু হাসো। এভাবে মুখ কালো করে বসে থেক না।”
হেসে বলল রোজালিন্ড, “দেখো সিলিয়া! ভালোবাসার খেলা খেলে একটু মজা করে দেখলে হয় না?”
কপট শাসনের ভান করে চোখ পাকিয়ে বলল সিলিয়া, “তবে রে মেয়ে! মনে মনে এসব ফন্দি আঁটা হচ্ছে? চারপাশটা একবার দেখে নিয়ে চুপি চুপি বলল, “মজা করলে তো ভালোই হয়! দেখো, প্রেমের খেলা খেলতে সেটা যেন শেষে আবার সত্যি হয়ে না দাড়ায়।
সায় দিয়ে রোজালিন্ড বলল, হ্যা, সেটা তো একটা ভাববার বিষয়।
এমন সময় সেখানে এসে হাজির হলেন লাবো নামে ডিউক ফ্রেডারিকের এক পারিষদ। তিনি সরাসরি রোজালিন্ড আর সিলিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তোমরা এখানে বসে আছ? খানিক আগে একটা সুন্দর কুস্তির লড়াই হয়ে গেল তা দেখলে না তোমরা? আমাদের কুস্তিগীর চার্লসের সাথে লড়তে এসেছিল এক ব্যাটা বুড়োর তিন জোয়ান ছেলে। চার্লসের কুস্তির প্যাঁচে ওদের তিনজনেরই বুকের হাড় ভেঙে গেছে। ওদের কাধে নিয়ে বুড়ো বাপটা কাদতে কাদতে বাড়ি ফিরে গেছে। এখন এই ময়দানে শুরু হবে কুস্তির আসল খেলা।”
ধীরে ধীরে এগিয়ে এল দ্বিতীয় লড়াইয়ের সময়। সপারিষদ ডিউক ফ্রেডারিকও হাজির হয়েছেন সেখানে। সিলিয়াকে দেখে তিনি বললেন, “এবার চার্লসের সাথে যার লড়াই হবে সে একটা কমবয়সি ছেলে। সবাই তাকে নিষেধ করেছে চার্লসের সাথে লড়তে। কিন্তু সে কারও কথা শুনছে না- বলতে বলতে অন্যদিকে চলে গেলেন ডিউক। এবার সিলিয়ার অনুরোধে লাবো গিয়ে নিয়ে এলেন চার্লস-এর তরুণ প্রতিদ্বন্দ্বীকে। রোজালিন্ড তাকে জিজ্ঞেস করল, “তাহলে তুমিই লড়তে চাও চার্লসের সাথে?”
বিনীতভাবে জবাব দিল অরল্যান্ডো, রাজকন্যা! আমি একজন প্রতিদ্বন্দ্বী। শুধু নিজের শক্তি পরীক্ষার আশায় আমি সাড়া দিয়েছি ওর আহবানে।
সিলিয়া বলল, তুমি কি জানো, এটা তোমার নিছক হঠকারিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ চার্লস-এর সাথে লড়াইয়ে আজ পর্যস্ত কেউ জেতেনি, প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে ও তার হাড়-পাঁজরা ভেঙে দিয়েছে। তোমার অল্প বয়স, ওর সাথে লড়তে গিয়ে যদি তোমার মৃত্যু হয় তাহলে সেটা খুব দুঃখের ব্যাপার হবে। এখনও বলি, ওর সঙ্গে লড়াইয়ের আশা ত্যাগ কর।
অরল্যান্ডো বলল, আপনাদের ভয় যে নিছক অমূলক নয় তা আমি জানি রাজকন্যা। কিন্তু এখন আর ফেরার রাস্তা নেই। আমি মারা গেলেও কোনও দুঃখ নেই, কারণ আমার জন্য কাঁদবার কেউ নেই।
“হায়! আমার সবটুকু শুভেচ্ছা দিয়ে যদি তোমায় আটকে রাখতে পারতাম!” বলল রোজালিন্ড।
“আমারও সেই মত”, সায় দিয়ে বলল সিলিয়া, “ক্ষমতা থাকলে আমার সবটুকু শুভেচ্ছা দিয়ে বেঁধে রাখতাম তোমায়।”
লড়াইয়ের ঘন্টা বেজে উঠতেই চার্লস মঞ্চে উঠে অভিবাদন জানাল ডিউককে।
ডিউক বললেন, “চার্লস, তুমি মাত্র এক রাউন্ড খেলবে। মনে রেখ, প্রতিদ্বন্দ্বী মাটিতে পড়ে যাবার পর তুমি আর তাকে  ছোবে না।”
 “আপনার আদেশ শিরোধার্য”, বলল চার্লস, “এক রাউন্ডই আমার পক্ষে যথেষ্ট। প্রতিদ্বন্দ্বী একবার আছাড় খেয়ে পড়ে গেলে সে আর উঠে দাড়াতে পারবে না।”
এবার অন্যদিক দিয়ে মঞ্চে এগিয়ে এল অরল্যান্ডো। ডিউককে অভিবাদন জানিয়ে এগিয়ে গেল চার্লসের দিকে। শুরু হয়ে গেল দুজনের লড়াই। সবাই ধরেই নিয়েছিল সামান্য কিছুক্ষণের মধ্যেই চার্লস তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে মাটিতে আছড়ে ফেলে তার হাড়গোড় ভেঙে দেবে। খানিক বাদেই ডিউক চেঁচিয়ে বলে উঠলেন, “আর নয়, এবার লড়াই থামাও”।
এদিকে অরল্যান্ডোর প্যাঁচে মাটিতে আছাড় খেয়ে চার্লসের অবস্থা তখন শোচনীয়। কয়েকজন লোক এসে ধরাধরি করে নিয়ে গেল তাকে। অরল্যান্ডোর দিকে তাকিয়ে ডিউক বললেন, “কী নাম তোমার?”
অরল্যান্ডো জবাব দিল, “স্যার রোল্যাল্ড ডি’বয়ের ছোটো ছেলে আমি-নাম অরল্যান্ডো।”
তার কথা শুনে ভ্রু কুচকে গম্ভীর স্বরে ডিউক বললেন, তোমার বাবাকে সবাই খুব ভালোবাসত,  শ্রদ্ধা ভক্তি করত-যদিও তিনি আজও আমার শক্র। যাই হোক, তুমি ভালোই লড়াই করেছ। তুমি একজন বীর। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন।”
(বাকি পর্ব গুলো পরবর্তীতে দেওয়া হবে)

Comments

Popular posts from this blog

Auto Paragraph

Auto paragraph Facebook/Computer/Mobile phone/Internet/Television  ( এই গুলার যে কোন একটা ..........  দেওয়া জায়গা গুলাতে বসাতে হবে ) ..............is one of the greatest invention of modern science. It has made our life easy and comfortable. We use it in our daily life. We cannot think of our day without.......... . We can communicate with anyone of anywhere of the world by using.......... . It has made the word smaller. We can share our feelings, liking and disliking’s with others using............. . Nowadays.........  has become a great medium of learning. People  can learn many things using........   sitting at home. It is a great source of entertainment also. We can watch videos music news sports etc through..........  .we need not to go to stadium. Inspire of having so many good sides it has some bad sides also. It is harmful for our body. Sometimes students become addicted to it. At last it can be said that..........  is a ...

Books poem analysis with bangla

Books poem in bangla and with analysis Verse-wise Bangla Translation: What worlds of wonder are our books! As one opens them and looks, New ideas and people rise In our fancies and our eyes. আমাদের বইগুলো কী আশ্চর্য এক জগৎ! যখনই কেউ তা খুলে দেখে, নতুন ভাবনা আর নতুন মানুষ জেগে ওঠে কল্পনায় ও চোখের সামনে। The room we sit in melts away, And we find ourselves at play With some one who, before the end, May become our chosen friend. আমরা যে ঘরে বসে আছি, তা যেন মিলিয়ে যায়, আর আমরা আবিষ্কার করি নিজেদের খেলায় মত্ত কাউকে সঙ্গে নিয়ে, যে হয়তো শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠবে। Or we sail along the page To some other land or age. Here's our body in the chair, But our mind is over there. অথবা আমরা পৃষ্ঠার ওপর দিয়ে ভাসতে থাকি অন্য কোনো দেশ বা কালের দিকে। আমাদের শরীরটা রয়েছে চেয়ারে, কিন্তু মন চলে গেছে দূরে অন্য কোথাও। Each book is a magic box Which with a touch a child unlocks. In between their outside covers Books hold all things for their lovers. প্রতিটি বই একেকটি জাদুর বাক্স, যা শিশুরা এক ...

paragraph on PREMATURE MARRIAGE

P remature marriage is a very common feature in a poor country like Bangladesh. It means the marriage of the boys and girls before attaining their physical and mental maturity. In our country girls particularly poor rural girls are the victims of premature marriage. Unfortunately, the birth of girls is considered unwelcome in our country. They are neglected from their birth. They have to live in a male dominated society. As a result, they are the victims of gender discrimination. They have no 'say' in the family decision. Many parents try to find a husband for their daughters before they attain the age of maturity. We find that illiteracy, poverty, selfish attitude, unconsciousness, religious misconception , dowry system, etc. are some of the causes of premature marriage. The effects of premature marriage are very harmful for health and mind of a female child. The girls cannot adjust with the new environment of their in-law's house. They cannot serve their husbands' fam...