Wednesday, June 17, 2020

ডার্টন ভ্যাংচির হোটের ওয়েটার কাহিনি

ফারহান আরিফ
২৮/০৫/২০২০

ডার্টন ভ্যাংচি ছোট বেলা স্কুল টিচারকে বলেছিল স্যার আমি আপনার বাইকের হাওয়া ছেড়ে দিয়েছি আপনি এখন বাড়ী ফিরবেন কি করে?
হাওয়া ছেড়ে দেওয়ার কথা শুনে স্যারের প্রচন্ড রাগ হয়ে যায় আর কোন কথা ছাড়াই ডার্টন ভ্যাংচিকে খুব পরিমান বেতের আঘাত করে,
অথপর ক্লাস শেষে স্যার বাইকের চাকা টিপে দেখে হাওয়া ঠিক আছে,
তখন স্যার আবার ফিরে আসে ডার্টন ভ্যাংচির কাছে এবং লজ্জায় লজ্জায় বলে ডার্টন  বাইকের হাওয়া তো ঠিক আছে,
তুমি মিথ্যা বল্লে কেন?
আর কেন  বা বিনা দোষে মার খেলে?
ডার্টন ভ্যাংচি হাসি হাসি মুখে বল্ল,স্যার আমি পরিক্ষা করছিলাম মানুষ হটাৎ তার প্রিয় অথবা প্রয়োজনীয় বস্তুুর ক্ষতির কথা শুনলে কি করে,
সাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারে কিনা,
ঠিক তখন সে সত্য মিথ্য যাচায়ের অপেক্ষা করে কিনা।
আইন নিজের হাতে তুলে নেয় কিনা"

স্যার ডার্টন ভ্যাংচির এইটুকু বয়সে এমন আচারন দেখে অবাক হয়ে বলেছিল জানি না ভবিষ্যৎ তোমার জন্য কি নিয়ে অপেক্ষা করছে,
ডার্টন ভালো লেগেছে তোমার এই পরিক্ষা চালিয়ে যাও"

ডার্টন ভ্যাংচি ছিল জারজ সন্তান তার পিতা মাতার কোন খবর কেউ বলতে পারে না,নাইট ক্লাবের টয়লেটে রাতের বেলা তাকে (টডবেল) নামক এক লোক সদ্য জন্ম হওয়া অবস্থায় পায়,সেখানে তার কোন অবিভাবক না পাওয়াই  টডবেল নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে যিনি তাকে বাবার পরিচয় দিয়ে ছিল।
ভ্যাংচির বয়স যখন ৫ বছর তখন টডবেল স্টক করে মারা যান,তার পর তার মা (ট্যানিক মার্টিনার)কাছেই বড় হতে থাকে,তার আরো তিনটি সন্তান থাকায় সংসার অনেক বড়।
সেই তুলনাই আয়ের উৎস নাই বল্লে চলে,
কেবল জমানো কিছু টাকা ছাড়া,
আর বাবা টডবেল মারা যাওয়াতে মাও ধীরে ধীরে কেমন যেন সৎ মায়ে পরিনত হতে থাকে,নিজের তিন সন্তানকে পড়াতে যেয়ে খরচ সামলাতে পারে না তাই ডার্টন ভ্যাংচির পড়াশোনা ক্লাস এইটেই বন্দ করে দেয়।
তাকে দিয়ে শুরু করায় বাড়ীর কাজ,তার পর বাড়ীর বাইরের কাজ,তার পর ঘরে বাইরের সব কাজ এভাবে কাজ করতে করতে একটা সময় বাড়ীর চাকরে পরিনত হয়ে যায়,
তার উপর রিতিমত তখন অত্যাচারও করতে থাকে,
আর তাকে সেই গালিটাও দেয় যেটা তার জন্মের কারন ছিল জারজ সন্তান।
কিন্তু এত কিছুর পরেও সে নিজেকে মানিয়ে চলতে থাকে,
এক দিন তার মা ট্যানিক মার্টিনার তাকে বিনা দোষেই খুব বকাবকি করে এমন কি হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বাড়ী থেকে বেরিয়ে যেতে বলে...
ডার্টন ভ্যাংচি যে রুমে থাকত সে রুমে নাকি নতুন ভাড়াটিয়া আসবে,

ডার্টন ভ্যাংচির বয়স তখন ১৮,
বাড়ী থেকে বেরিয়ে তার প্রেমিকার কাছে চিঠি লিখল,

প্রিয়
ত্যারিলুচি আমি আগামী কাল তোমাকে নিয়ে পালাতে চাচ্ছি,
তুমি যদি তৈরী থাকো আজকেও পালাতে পারব,
যদি তুমি কাল সকালে বের হও একটু বেশি করে খেয়ে বের হবা যেন দুপুরে খাওয়া না লাগে আমার কাছে টাকা নাই,

ত্যারিলুচি চিঠি পাওয়া মাত্র এমন এক গালি দিল, ধ্যাৎ এমন কারো সাথে আমি পালাতে যাচ্ছি  যে কিনা আমাকে দুপুরের খাবারটিও বাড়ী থেকে খেয়ে বের হতে বলছে,আমাকে এক বেলা খাবার দেয়ার সামার্থ ও নাই,
চিঠির উল্টা পিঠে লিখে দিল ত্যারিলুচি কোন ফকিরকে বিয়ে করবে না,
আর হ্যাঁ,আমি চাইনা এমন কেউ আমার সামী হোক যার পকেটে পর্যাপ্ত টাকা থাকবে না,
আর কখনো যেন আমার আশায় পথ চেয়ে না থাকা হয়,বাই।

ডার্টন ভ্যাংচি  ত্যারিলুচির চিঠি পেয়ে হাসল,যাকে  শুধু মাত্র চিঠিতে এক বেলা খাবার না দিতে পারার কথা বলার জন্য  আমাকে ভুলে গেল,
একটা বার সত্যতা যাচায়ের চিষ্টা করল না,তাকে আমার জীবন সংগী বানানো অসম্ভব কেবল দূর্ঘটা ছাড়া"
 ডার্টন ভ্যাংচি মানুষ পরিক্ষার এক বিরাট হাতিয়ার আবিস্কার করে ফেল্ল,

ডার্টন ভ্যাংচি  শুরু করল নতুন জীবন,
অচেনার মত শহরে শহরে ঘুরতে থাকল,কেউ খেতে দেয় না,
কেউ ঘুমাতে জায়গা দেয় না,
কেউ তার কথা সময় দিয়ে শুনতেও চায় না,সবায় নিজের কাজে ব্যস্ত,
তবে সে নিজেকে কখনো দূর্বল ভাবত না,
ভবিষ্যতে কি হবে তাও ভাবত না,
জ্ঞানী ছিল প্রচন্ড, কিভাবে মানুষকে চট করে রাগিয়ে দিতে হয় তা খুব ভালো করেই জানত এবং এটাও জানত কিভাবে সেই সুযোকটা কাজে লাগাতে হয়।
যাকে বলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার,
পেটে খুধার যন্ত্রনা কেউ কোন কাজ দেয় না,এক দিন পার হয়ে গেল দিতীয় দিন,ইচ্ছা করেই পায়ে কাদা মাটি লাগিয়ে হুট করে এক নামিদামি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হোটেলে ঢুকে পড়ে,
হোটেলের ভিতর কাদা মাটি লেগে যায় মালিক পক্ষ তাকে খুব ধমক দিল এবং পরিস্কার করে দিতে বাধ্য করল,আর ডার্টন ভ্যাংচি ও চাচ্ছিল তাকে দিয়েই যেন পরিস্কার করায়।
পরিস্কার করা শেষ হলে তাকে জিজ্ঞাস করল নাম কি তোমার?
ডার্টন ভ্যাংচি "
থাকো কোথায় ইত্যাদী ইত্যাদী,
এর আগে কেউ তাকে আশ পাশেও ঘেস্তে দিচ্ছিল না ঘটনা শোনা তো দুরের কথা।
তাই কৌশল করেই মালিক পক্ষের সাথে কথা বলার সুযোক বানিয়ে নিল,
ডার্টন ভ্যাংচির সব ঘটনা শুনে লোকটির দয়া হয়,তাকে খেতে দিল এবং সেখানেই তাকে ক্লিনারের কাজ দিল।
দুই বছর কাজের পর ওয়েটারের কাজ নিল,
পাঁচ বছর তাই করল,
বয়স যখন ২৫,একদিন একটি কাগজে কিছু লিখে গোপনেই মালিকের সামনে রেখে আসে,
সেখানে লেখা ছিল,
স্যার আমি আপনার হোটেলে একজন কর্মচারি,সংসার চলার জন্য যতেষ্ট সেলারী আমি পায়,আপনার মেয়েকে আমার খুব পছন্দ।
 আপনি চাইলে আমি আপনার মেয়ের দায়ীত্ব নিতে চাই।
কিন্তু আমার কেন জানি মনে হল আপনি তা কখনো চাইবেন না তাই আপনার অনুমতির প্রয়োজন মনে করছি না,আপনার মেয়ের ইচ্ছায় তাকে নিয়ে গেলাম,
কাগজটি পড়া মাত্রই মালিক ছুটে গেল বাড়ীতে,সব কিছু শোনার পর জানতে পারল তার মেয়ে এমন কাউকে সত্যি চেনে না।
ফিরে এসে সব গুলার চাকরি বাতিল করে দিল,
ডার্টন ভ্যাংচি  তার পরিক্ষায় সফল হল,কারো অধীনে থেকে যতই ইনকাম করা হোক কখনোই মালিকের কাছে তার মেয়ের যোগ্য হওয়া সম্ভব না,
ডার্টন ভ্যাংচির লক্ষ ছিল অনেক বড় কিছু হওয়া,তার কাছে মনে হত সব কিছুই একদিন হবে শুধু সময়ের ব্যাপার।
কিন্তু কারো অধীনে থেকে অধীনায়োক হওয়া সম্ভব না,দীর্ঘ ৭ বছর যতটাকা ইনকাম করেছিল কিছু খরচ করে বাকিটা জমিয়ে ফেলে,
এখন নিজেও সব ধরনের খাবার তৈরী করতে পারে,শহরে অনেক নামিদামি লোকের সাথে পরিচিত,
চটপটির একটি অস্থায়ী দোকান দিল ভালোই বিক্রি হতে থাকে,একা পেরে ওঠে না দুইটা লোক রাখলো,
তার পর অস্থায়ী থেকে স্থায়ী ঘর ভাড়া নিল,তার পর আরো দুজন লোক রেখে নিল,দীর্ঘ দিনের পরিচয় তার জন্য বেনিফট হয়ে গেল,সেই হোটেলে পরিচিত লোক গুলি এখন প্রায় ডার্টন ভ্যাংচির চটপটি ঘরে সময় কাটাতে আসে,
সময়ের সাথে সাথে আইটেম বাড়াতে থাকে, বাড়াতে বাড়াতে ছোট থেকে বড়তে পরিনত হয়ে গেল।
বড় জায়গা নিল আরো বেশি লোক খাটাতে লাগলো।
বয়স যখন ৩৩,
 তখন সবায় জানে শহরের নাম করা একটি হোটেলের নাম "ভ্যাংচি "
শত শত আইটেম সেখানে খুব সস্তায় পাওয়া যায়,আর এই একটা কারনেই লোকের ভিড় এত বেশি যে ১০০০+ কর্মচারি সেল করে পারে না, একদিন পত্রিকায় ছাপা হল "ভ্যাংচি"
হোটেলের মালিক বিয়ে করতে পাত্রি চাই,,যাকে পছন্দ হবে তাকে পৃথিবীর সব থেকে বেশি টাকা কাবিন দিয়ে বিয়ে করবেন"
সেই মালিক তার মেয়েকে নিয়ে হাজির হল ডার্টন ভ্যাংচির হোটেলের উপর তলায়,মেয়ে দেখে তো অবাক এযে সেই ত্যারিলুচি, পছন্দ হল কাবিন কত দিব?
মেয়ের বাবা বল্ল কাবিন লাগবে না ফ্রীতেই আপনাকে দিতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করব।
ডার্টন ভ্যাংচি ছিল প্রচন্ড জ্ঞানী বলতে গেলে মানুষের মনের অবস্থা অনেকটা বুজতে পারতেন তিনি বিয়ে বাতিল করে দিল এবং তখন বল্ল আপনার টেবিলে কাগজটি আমি রেখেছিলাম,
আপনার মেয়েকে আমি কখনো দেখিনি শুধু এটা জানার জন্য যে,
কর্মচারি হয়ে মালিকের খুব প্রিয় অথবা প্রয়োজনীয় বস্তু দাবী করলে তার প্রতিকৃয়াটি কি হয়।
জানতে পারলাম মালিক যতই কর্মচারিকে ভালোবাসুক অথবা ভালো বেতন দিক সে কখনোই তার মেয়েকে তার অধীনে থাকা কর্মচারির হাতে তুলে দিবে না,
আসলে আপনার মেয়েকে পাওয়া আমার উদেশ্য ছিল না,আমার উদেশ্য ছিল কোন লেভেলে পৌছালে মানুষ আমাকে উবজে ডেকে কথা বলবে,
আমি কিছু চাইলে তা দিতে পেরে আনন্দ বোধ করবে,
আর আপনার মত বাবারা কেবল তাদের হাতেই মেয়েকে তুলে দিতে চান,
আপনার মেয়ের প্রতি যার মোটেও আগ্রহ নাই,যত আগ্রহ আপনার সম্পদের উপর,কারন আপনার নিজেও নিজের মেয়ের প্রতি কোন আগ্রহ ভালোবাসা নাই, যত আগ্রহ সব জামায়ের অর্থের প্রতি,গরিব হলে অথবা নিচু করলে তাকে তো মানুষ ভাবেন না যদিও সে তার ভরন পোষনের ক্ষমতা রাখে।
আপনি এখন আসতে পারেন,,
আমি তখন গরিব ছিলাম তাই ধনি কারো মেয়ে বিয়ে করে নিজেও সাবলম্বী হতে চেয়েছিলাম,আপনি তখন ওয়েটার হওয়ার দরুন আমাদের সবার চাকরি বাতিল করে দিয়েছিলেন।
আজ আমার অনেক টাকা তাই এমন কাউকে বিয়ে করব তার চৌদ্দ পুরুষ যেন সাবলম্বী হয়ে যেতে পারে।
আজ যদি আমি আমার সোমান ধনি কারো মেয়ে বিয়ে করি তাহলে অসহায় চিরকাল অসহায় থেকে যাবে।
তার পর ডার্টন ভ্যাংচি তার অধীনে ওয়েটারের কাজ করা  সব থেকে গরিব অসহায় মেয়ে লেলিমাদ্রিতাকে বিয়ে করে নগত ১০০কোটি টাকা কাবিন দেন যা ইতিহাসে বিরল.....

No comments:

Post a Comment