Wednesday, June 17, 2020

শিক্ষনীয় গল্প মেয়ে ও ট্যাক্সি ড্রাইভার

#শিক্ষনিয়_গল্প ধৈর্য্য ধারণ করে পড়ে দেখুন?

এ রকম মাঝপথে এসে গাড়ি নষ্ট হবে তা ভাবতেও পারেনি তরুণীটি। অভিজাত পরিবারের এই মেয়েটি নিজেই ড্রাইভ করছিল তার দামি গাড়িটি। সূর্য ডুবেছে কিছুক্ষণ আগে। আকাশের অবস্থাও ভাল না। বৃষ্টি আসবে আসবে করছে। ধীরে ধীরে অন্ধকার বেড়ে চলেছে। সাথে বেড়ে চলেছে তার দুশ্চিন্তাও। মাঝে মাঝে দুই একটি গাড়ি দ্রুত গতিতে আসছে আবার চলে যাচ্ছে। সাহায্যের আশায় সে প্রতিটি গাড়িকেই হাত তুলে থামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কেউ থামছে না। এর মধ্যে হালকা বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেছে। মেয়েটি তার গাড়ির চেয়েও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। 

  অনেকক্ষণ পর একটি পুরাতন মডেলের কম দামি গাড়ি এসে মেয়েটির সামনে দাঁড়ালো। গাড়ি থেকে নেমে এলো এক যুবক। দেখেই মনে হচ্ছে গরিব ঘরের ছেলে। পোশাকও তেমন ভাল না। মেয়েটিকে সে ভদ্রভাবেই বলল: ম্যাডাম, আসুন। আপনাকে পৌঁছে দেই। 
  মেয়েটি ভাবছে এ গাড়িতে উঠবে কিনা। দেখে তো তেমন সুবিধার মনে হচ্ছে না। তবুও যেহেতু অন্য কোনো উপায় নেই, তাই মেয়েটি উঠলো। মেয়েটির দিকে না দেখেই যুবক ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করলো ম্যাডাম, কোথায় যাবেন? 
 মেয়েটি শহরের তার ঠিকানাটি বলল। গাড়ি ছুটে চলেছে দ্রুত গতিতে। 
মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো আপনার নাম কী?
 = আদম। 
 কী করেন= ? 
যুবকের সাদামাটা উত্তর:  ভাড়ায় ট্যাক্সি চালাই।=   
মেয়েদের অনুমান শক্তিও প্রকট হয়। সে বুঝতে পারলো যে ছেলেটি আসলেই ভদ্র। তাকে নিয়ে এতক্ষণ শুধু শুধু উল্টাপাল্টা ভেবেছি আমি। এই ছেলে যত টাকা চাইবে তত টাকাই আজ তাকে দিয়ে দেব আমি। 
 কিছুক্ষণ পর গন্তব্যস্থানে গাড়ি পৌঁছলে মেয়েটি বলল: ভাই, আমাকে রাস্তার ঐ পাশে নামিয়ে দিন।
 আদম রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে সুন্দর করে বলল: আল্লাহ হাফেজ।
 মেয়েটি বলল: কত হয়েছে? ?
 = লাগবে না।
 মেয়েটি বলল: লাগবে না মানে? 
  কিছু না। এমনি। 
 মেয়েটি বুঝলো ছেলেটি আসলেই টাকা নেবে না। নেমে ড্রাইভারের পাশে জানালায় এসে আবার টাকা দেয়ার চেষ্টা করলো: ভাই, আপনি আমার অনেক উপকার করেছেন। অন্তত কিছুটা হলেও তো নেন।
= না ম্যাডাম। লাগবে না। আপনিও কারো উপকার করে দিয়েন, আল্লাহ হাফেজ বলেই আদম চলে গেলো।

 মেয়েটি গভীর ভাবনায় পড়ে গেল। যে ছেলেকে প্রথমে দেখে আমি চোর-চাট্টা ভেবেছি সে এত ভাল? সে আসলে মানুষ নাকি ফেরেশতা? মেয়েটি নিজেকে ভর্তসনা করতে লাগলো। এইসব ভাবতে ভাবতেই সে আনমনা হয়ে সামনে হাঁটছে। 
সামনে একটি কফি শপ দেখে ভাবলো একটি কফি খেয়ে নেই। তারপরে বাড়ি যাব। সে সামনের কফিশপে ঢুকলো। একটি যুবতি মেয়ে ওয়েটার আসলো অর্ডার নিতে। মনে হচ্ছে মেয়েটি সামান্য দুর্বল। কিছুটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে হাঁটছে। দেখে মনে হচ্ছে গর্ভবতী। তরুণীটি  একটি কফির অর্ডার দিলো। ওয়েটার মেয়েটি কফি নিয়ে আসলে বলল: আপনি তো মনে হয় অসুস্থ। এই অবস্থায় আপনার বিশ্রামে থাকা উচিৎ। 
ওয়েটার মেয়েটি বলল: জি। সামনে আমাদের অনেক খরচ। এখনই কিছু টাকা-পয়সা জমানো দরকার। তাই কষ্ট করে হলেও কাজ করছি।
= ও আচ্ছা।  
একটু পর বিল নিয়ে ওয়েটার  মেয়েটি আসলে তার হাতে একটি নোট দিলো তরুণীটি। ওয়েটার  মেয়েটি বিল আর টাকা নিয়ে কাউন্টারে গেলো। বাকি টাকা ফেরত দিতে এসে দেখলো টেবিল খালি। তরুণীটি চলে গেছে। ডানে বামে দেখলো। না। নেই। তখন চোখ গেল টেবিলে পড়ে থাকা ছোট্ট একটি কাগজের প্রতি। লেখা আছে: বোন, বাকি টাকাটা তোমার জন্য হাদিয়া। আর যা টেবিলের নিচে রেখেছি তা তোমার আগত সন্তানের জন্য। 
 মেয়েটি দেখল টেবিলের নিচেও অনেক টাকা রাখা আছে। যা তার প্রায় ছয় মাসের বেতনের সমান হবে। সে টাকাগুলো নিয়ে খুশিতে কেঁদে ফেলল।  

  কফিশপ থেকে ছুটি নিয়ে সে তাড়াতাড়ি বাড়ির পথে রওয়ানা দিল। ইচ্ছে করছে এখুনি উড়ে গিয়ে তার স্বামীকে এই সুসংবাদটি পৌঁছে দিতে। যে নাকি সামনের খরচাপাতির বিষয়ে তার চেয়েও বেশি চিন্তিত। 
 বাড়িতে অসময়ে স্ত্রীকে দেখে স্বামী একটু পেরেশান হল। জিজ্ঞেস করলো কোনো সমস্যা? তোমার অসুখ কি বেশি লাগছে? 
 বলল: না আদম। অসুখ না। আল্লাহ আমাদের জন্য এক ফেরেশতা পাঠিয়ে দিয়েছেন। দেখো এতগুলো টাকা আল্লাহ আমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন। সেই সুসংবাদটা তোমাকে দিতে এসেছি। আমি ছুটি নিয়েছি।

 এই আদম হল সেই যুবক ড্রাইভার, যে বিপদে পড়া ধনীর দুলালী তরুণীকে সাহায্য করে কোনো টাকা পয়সা নেয় নি।

= অনুবাদকের সংযোজন = 
রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যদি তুমি আল্লাহর জন্য তোমার কোনো হক ছেড়ে দাও, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার চেয়েও ভাল কোনো বদলা তোমাকে অবশ্যই দেবেন। আহমদ, ২১৯৯৬। 

হাফেজ ইবনুল ক্বাইয়িম রহ. বলেন: এই বদলা কখনো একই ধরণের হয়ে থাকে। আবার কখনো এর বিনিময়ে আল্লাহ বান্দাকে আল্লাহর মুহাব্বাত ও বেলায়ত দিয়ে থাকেন এবং আখেরাতে উচ্চ মর্যাদা দান করে। যা অত্যন্ত মূল্যবান। কিন্তু বদলা দেয়া হয়নি এ রকম কখনো হয় না।

No comments:

Post a Comment