Tuesday, September 26, 2023

একজন অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধার কাহিনি

উনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার অপরাধে রাজাকাররা তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণ করার হুমকি দিয়েছিলো। এটা শুনে যুদ্ধের ময়দান থেকে বাড়ী এসেছিলো স্ত্রী সন্তানের খবর নিতে। এসে দেখলো তাঁর  স্ত্রী সতীত্ব বাচাতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্বহত্যা করেছে। বাচ্চারা একজনও বেচে নেই।

পাহাড় সমান শোককে শক্তি করে বাড়ি ছেড়েছিলেন আর দেশ স্বাধীন করেই তবে বাড়ী ফিরেছিলেন।  মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি পাঁচ হাজার মুক্তিযোদ্ধার এক দুধর্ষ গেরিলা বাহিনী গড়েছিলেন যারা বরিশাল, ঝালকাঠি, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর আর বাগেরহাট এলাকায় দুর্দান্ত প্রতাপের সাথে যুদ্ধ করে পাকিস্তানী হানাদার আর তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকারদের পরাভুত করেছে।

একদিন সম্মুখ যুদ্ধে একটা বুলেট লোকটার গালের একপাশ দিয়া ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে বেড়িয়ে যায়। আটটা দাঁত পড়ে গেল। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিলো তবুও লোকটা যুদ্ধ থামায় নি, অজ্ঞান হওয়ার  আগ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে গেছে এবং শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদাররা পরাজিত হয়ে পালিয়েছিলো।

লোকটির নাম হেমায়েত উদ্দিন। 
হেমায়েত বাহিনীর প্রধান বীর বিক্রম হেমায়েত উদ্দিন।

শুধু বাংলাদেশের না, সমগ্র মডার্ন মিলিটারি ইতিহাসের অন্যতম গেরিলা লিজেন্ড।

২০১৬ সালের ২২ অক্টোবর এই লোকটা ঘুমিয়ে গেছে।অনন্ত ঘুম।

বিনম্র শ্রদ্ধা। পরপারে ভালো থাকুন।
#collected Collected

Monday, September 18, 2023

যেভাবে মাপা হলো পৃথিবীর ওজন

যেভাবে মাপা হলো পৃথিবীর ওজন


ক্যাভেন্ডিসের পরীক্ষা

যেভাবে মাপা হলো পৃথিবীর ওজন

এভাবে পৃথিবীর ওজন মাপা যায় না

এভাবে পৃথিবীর ওজন মাপা যায় নাছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর ওজন কত? কৌতূহলী প্রশ্ন বটে। যাঁরা একটু বিজ্ঞান সচেতন, তাঁরা জানেন, প্রশ্নটা বলে আসলে ওজন বোঝানো হচ্ছে না। জানতে চাওয়া হচ্ছে ভর। সঠিক প্রশ্নটা তাই হবে, পৃথিবীর ভর কত? গুগল করলেই পাওয়া যাবে উত্তর। ৫.৯৭২×১০২৪ কেজি।

এখন আসল প্রশ্নটা। কৌতূহলী হলে নিশ্চয়ই আপনার মাথায় এসেছে। পৃথিবীর এই ভর (বা চলতি ভাষায় ‘ওজন’) মাপা হলো কীভাবে? মজা করে কেউ কেউ বলতেই পারেন, একটা বিশাল পাল্লায় পৃথিবীটাকে বসিয়ে মেপে ফেললেই তো হয়, নাকি! তা, অমন দুষ্টবুদ্ধি আপনার আগেও আরও অনেকের মাথায়ই এসেছে। এই যেমন ১৯ শতকের একটা মজার ছবির কথাই ধরুন। সিনাগগ নামের একটি বিখ্যাত বইতে এর বিষয়বস্তুর উল্লেখ আছে। বইটার লেখক গ্রিক সভ্যতার পড়ন্ত বেলার অন্যতম সেরা গণিতজ্ঞ প্যাপাস অব আলেকজান্দ্রিয়া। তিনি আর্কিমিডিসের একটা উক্তি তুলে ধরেছেন, সে অনুযায়ী ১৯ শতকের এই দুষ্ট (কিংবা হয়তো সিরিয়াসই, কে জানে!) ছবি। যেখানে দেখা যাচ্ছে, একটা সি-স রাইডের একপাশে বসে আছেন আর্কিমিডিস, অন্য পাশে পৃথিবীটা রাখা। (সি-স রাইড মানে, পার্কে ঢেঁকির মতো যে রাইড থাকে। দুপাশে দুজন বসতে পারেন। যাঁর ভর বেশি, তার পাশটা নেমে যায়। হালকা ভরের মানুষটি উঠে যান ওপরের দিকে।)

'আমাকে যথেষ্ট বড় একটা লিভার দাও, একটা ফালক্রাম দাও ওটাকে বসানোর জন্য, আমি পৃথিবীটাকে তার কক্ষপথ থেকে সরিয়ে দেব।’

'আমাকে যথেষ্ট বড় একটা লিভার দাও, একটা ফালক্রাম দাও ওটাকে বসানোর জন্য, আমি পৃথিবীটাকে তার কক্ষপথ থেকে সরিয়ে দেব।’
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর দিকটা নেমে গেছে নিচে ভরের জন্য। সঙ্গে আর্কিমিডিসের উক্তি, ‘আমাকে যথেষ্ট বড় একটা লিভার (এক্ষেত্রে তক্তা) দাও, একটা ফালক্রাম দাও ওটাকে বসানোর জন্য, আমি পৃথিবীটাকে তার কক্ষপথ থেকে সরিয়ে দেব।’

মানুষটা আর্কিমিডিস বলে কথা। এই বিজ্ঞানী সত্যি সত্যিই পৃথিবীটাকে আড় দিয়ে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে দেখতেই পারতেন। বিজ্ঞানীদের মন-মেজাজের তো কোনো ঠিক নেই!

বলা বাহুল্য, এভাবে পৃথিবীর ওজন মাপা যায়নি। এই চেষ্টাটা প্রথম করেছেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী হেনরি ক্যাভেন্ডিস। ১৭৯৮ সালে তিনি পৃথিবীর ওজন মাপার এই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন।

বিজ্ঞানীদের কথা ভাবলেই আপনার মাথায় যে ছবি ফুটে ওঠে, গোমড়া মুখ, অসামাজিক—তার মধ্যে ক্যাভেন্ডিসকে সহজেই বসানো যায়। যদিও বর্তমানে বিজ্ঞানীরা ওরকম মুখ গোমড়া করে থাকেন না। আজকের বিজ্ঞানীরা ইউটিউবে ভিডিও বানান, বই লেখেন, রসিকতাও করেন। তবে ক্যাভেন্ডিস যেহেতু সেই চিরায়ত ‘বিজ্ঞানী’ ধারণার মূর্ত প্রতীক, কথিত আছে, তাঁর কাপড়-চোপড়ের ধাঁচ ছিল তাঁর কালের চেয়ে ৫০ বছর পুরোনো। অসামাজিক ধরনের ছিলেন, নারীদের ভয় পেতেন। পড়শিরা যেন না দেখে, সেজন্য হাঁটতে বের হতেন রাতের বেলা। ধনী মানুষ ছিলেন। নিজের ভৃত্যদের সঙ্গে যেন দেখা না হয়, সে জন্য তাঁর আলাদা সিঁড়িও ছিল!

সে কালের বেশিরভাগ বিজ্ঞানীর মতোই ক্যাভেন্ডিস ছিলেন ধনী। নিজ খরচেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারতেন। নিজের বাসাকেই বানিয়ে নিয়েছিলেন গবেষণাগার।

তাঁর প্রায় ১০০ বছর আগে স্যার আইজ্যাক নিউটন মহাকর্ষ সূত্র প্রকাশ করে গেছেন। সেই সূত্রটা আমাদের পরিচিত। সূত্রটায় যে দুটো বস্তুর মধ্যকার মহাকর্ষ বল মাপতে চাওয়া হয়, তাদের ভর ও মহাকর্ষীয় ধ্রুবক গুণ করতে হয়। তারপর বস্তু দুটোর দূরত্বের বর্গ দিয়ে ভাগ করে দিলেই হলো। কেল্লাফতে!

ঘটনা হলো, নিউটন কিন্তু নিজে এই মহাকর্ষীয় ধ্রুবকের মান বের করার কোনো চেষ্টা করেননি। পৃথিবীর ভরও মাপতে চাননি। ১৭ শতকে এসে বিজ্ঞানীদের এই কৌতূহল মাথাচাড়া দেয়। তখন নানা জন নানাভাবে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। কেউ কেউ প্রস্তাব করেন, ভর মাপার জন্য ঘনত্ব মাপা যেতে পারে। ১৭৭২ সালে রয়্যাল সোসাইটি রীতিমতো ‘কমিটি অব অ্যাট্রাকশন’ বা আকর্ষণ পরিষদ গঠন করে। তাদের কাজ, পৃথিবীর আকর্ষণ ও ঘনত্ব পরিমাপ করা। এ সময় একটা প্রস্তাব আসে, খুব সুষম গঠনের একটা পাহাড়ের ওপর পেন্ডুলাম দুলিয়ে ওটার ওপর মাধ্যাকর্ষণের টান পরিমাপ করা যেতে পারে। যদিও এই প্রভাব হবে খুব সামান্য। সেই পরিষদ কিন্তু তাতে দমে যায়নি। ক্যাভেন্ডিসও সেই দলে ছিলেন। তাঁরা স্কটল্যান্ডের বিশাল এক পর্বতের ওপর এরকম পেন্ডুলাম দুলিয়ে হিসাব করে দেখলেন, পৃথিবীর ঘনত্ব পানির সাড়ে ৪ গুণ। (এটা সঠিক হিসাব নয়।) ক্যাভেন্ডিস দেখলেন, এই পরীক্ষায় এমন কিছু অনুমানের ওপর নির্ভর করা হয়েছে, যেগুলোর কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই। কাজেই, তিনি বুঝলেন, এভাবে হবে না।

বয়স বাড়ছে। ক্যাভেন্ডিস ভাবছেন কী করা যায়। মেঘে মেঘে হোক কিংবা সমুদ্রে পানি গড়িয়ে হোক, ক্যাভেন্ডিসের বয়স যখন ৬৭, তখন তাঁর মাথায় চমৎকার এক আইডিয়া এল। বিজ্ঞানের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আইডিয়া।

১৭৯৭ সালের কথা। ক্যাভেন্ডিস তাঁর আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করলেন। এক বন্ধু—ভূতত্ত্ববিদ রেভারেন্ড (পাদ্রী) জন মিচেল—তাঁকে একটা টরসন ব্যালেন্স দিয়েছিলেন। জিনিসটা তাঁর কাজের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ক্যাভেন্ডিস সেটাকে একটু ঠিকঠাক করে নিলেন প্রথমে।

এখন কথা হলো, টরসন ব্যালেন্স জিনিসটা কী? এই যন্ত্রে ৬ ফুট দৈর্ঘ্যের একটা কাঠের দণ্ড ছিল। আড়াআড়িভাবে দণ্ডটাকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল একটা তার দিয়ে। এই দণ্ডের দুই প্রান্তে যুক্ত ছিল ২ ইঞ্চি ব্যাসের ০.৭৩ কেজি ভরের দুটো সীসার বল। তারপর তিনি ছবির মতো করে ছোট বল দুটোর সঙ্গে দুটো বড় সীসার বল বিপরীতভাবে দুপাশে আটকে দিলেন। এই বল দুটোর ব্যাস ১২ ইঞ্চি, ভর ১৫৮ কেজির মতো। এখানে আইডিয়াটা হলো, বল দুটোর পারস্পরিক আকর্ষণের কারণে সুতোটা সামান্য মোচড় খাবে। এরকম দুটো সাধারণ বস্তুর মধ্যকার মহাকর্ষ বল আসলে অতি অতি সামান্য। কিন্তু বল দুটোর মধ্যকার আকর্ষণ বল পরিমাপ করা সম্ভব।

টরসন ব্যালেন্স

টরসন ব্যালেন্স
ছবি: সংগৃহীত

ক্যাভেন্ডিস দিন-রাত এই পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করে আকর্ষণ বল মাপলেন। বস্তু দুটোর ভর তিনি জানেন, জানেন এদের দূরত্ব। এর মাধ্যমে সহজেই হিসাব করে মহাকর্ষীয় ধ্রুবক, G-এর মান বের করে ফেলা সম্ভব।

ব্যস! এখান থেকে এবারে শুধু আরেকটি সূত্রে G-এর মান বসানোর অপেক্ষা। সূত্রটি হয়তো অনেকেরই পরিচিত। এই সূত্রে বসিয়ে পৃথিবীর ভর বা ঘনত্ব হিসাব করেছেন মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের অনেক শিক্ষার্থী। সূত্রটির একদম খুঁটিনাটি ব্যাখ্যায় আমরা যাব না। তবে আগ্রহীরা সূত্রটি দেখে নিতে পারেন—

এখানে G মহাকর্ষীয় ধ্রুবক, Rearth পৃথিবীর ব্যাস, g মহাকর্ষীয় ত্বরণ বা আকর্ষণ, ρearth পৃথিবীর ঘনত্ব। (কেউ হয়তো জিজ্ঞাসা করতেই পারেন, পৃথিবীর ব্যাস কীভাবে মাপা হলো? সে জন্য এই লেখাটি পড়তে পারেন—পৃথিবী কত বড়)

এবারে দুটো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বলা প্রয়োজন। এক, ক্যাভেন্ডিস ঠিক ভর নয়, মেপেছিলেন পৃথিবীর ঘনত্ব। (সূত্রের একদম ডানের অংশটিতে ‘ρearth’ পৃথিবীর ঘনত্ব বোঝাচ্ছে।) ৫৭ পৃষ্ঠার যে গবেষণাপত্র তিনি প্রকাশ করেন, এর শিরোনাম ছিল ‘এক্সপেরিমেন্টস টু ডিটারমাইন দ্য ডেনসিটি অব দি আর্থ’। এ গবেষণাপত্রে এই ঘনত্বের মান ছিল। সেই সঙ্গে ছিল মহাকর্ষীয় ধ্রুবকের মান। ক্যাভেন্ডিস মেপে দেখেছিলেন, পৃথিবীর ঘনত্ব পানির চেয়ে ৫.৪৮ গুণ বেশি। বর্তমানে আমরা জানি, এটা আসলে ৫.৫২ হবে। সে কালে ক্যাভেন্ডিস এত কাছাকাছি গিয়েছিলেন, এটা রীতিমতো বিস্ময়কর!

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, ক্যাভেন্ডিসের এই পরীক্ষাটিকে পরে বিজ্ঞানীরা আরও উন্নত করেছেন, আরও ভালোভাবে করে দেখেছেন। মহাকর্ষীয় ধ্রুবক, G-এর মান এই বিজ্ঞানীর পরীক্ষা থেকে আদর্শ হিসাবে গৃহীত হয়নি, হয়েছে আরও ৭৫ বছর পরে এসে। একটা কারণ তো আগেই বললাম, তিনি বিষয়টাকে পৃথিবীর ঘনত্বের পরিমাপ হিসেবে প্রকাশ করেছেন। দ্বিতীয় কারণ, ৫৭ পৃষ্ঠার সেই গবেষণাপত্রে তিনি এই পরীক্ষার নাম দিয়েছিলেন ‘ওয়েইং দ্য ওয়ার্ল্ড’, যার অর্থ বিশ্বের ওজন পরিমাপ। রিচার্ড ফাইনম্যান তাঁর ক্যারেক্টার অব ফিজিক্যাল ল বইতে লিখেছেন, পরীক্ষাটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ওয়েইং দ্য আর্থ’ বা পৃথিবীর ওজন পরিমাপ।

ফাইনম্যানের ভাষায়—

ক্যাভেন্ডিস তাঁর এ পরীক্ষার নাম দিয়েছিলেন ‘পৃথিবীর ওজন মাপা’। আজকের দিনের যত্নশীল ও খুঁতখুঁতে শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা শিক্ষার্থীদের এটা বলতে দিই না। আমাদের বলতে হয় ‘পৃথিবীর ভর পরিমাপ’।

ভরকে ওজন বলার চিরায়ত রীতি যে ক্যাভেন্ডিসের মতো চিরায়ত ঘরানার মানুষ অনুসরণ করবেন, তা আর বলতে!

সে যাইহোক, বর্তমানে অবশ্য এ পরীক্ষাটিকে শুধুই মহাকর্ষীয় ধ্রুবকের মান নির্ণয়ের পরীক্ষা হিসাবে দেখা হয়। বিজ্ঞানীরা বলেন, ক্যাভেন্ডিসের পরীক্ষা।

সে যাই হোক, তাঁর এ পরীক্ষার মাধ্যমেই প্রথম জানা গিয়েছিল, আমাদের পায়ের নিচের গোলকটি কতটা ভারী। সে জন্য বিজ্ঞানের ইতিহাসে হেনরি ক্যাভেন্ডিস আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন।

লেখক: সহসম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি, উইকিপিডিয়া

রিচার্ড ফাইনম্যান/ক্যারেকটার অব ফিজিক্যাল ল

Sunday, September 17, 2023

জীবনে কিছু করতে চাইলে বাসের ড্রাইভারের মত হও

জীবনে কিছু করতে চাইলে নাইটকোচ এর ড্রাইভারের মতো হও........

হানিফ এন্টারপ্রাইজের একটি বাস জয়পুরহাট-হিলির উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করল। বাসটির ৪০ টি সিট যাত্রীতে পূর্ণ। বাসের সুপারভাইজার,  ড্রাইভার এবং হেলপার বেশ খুশি মনে ‘বিসমিল্লাহ...’ পড়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন।

ড্রাইভারের পিছনের সিটে দু’জন মাঝবয়সী লোক বসেছেন। তাদের একজন আজকের ‘ প্রতিদিনের বাংলাদেশ’ পত্রিকা পড়তে শুরু করলেন। পত্রিকার পাতাগুলো উদ্দেশ্যহীনভাবে উল্টানোর এক পর্যায়ে তার চোখ দু’টো বিনোদন পাতায় আটকে গেল। হালের উঠতি এক নায়িকা স্বল্প বসন পরিহিত ছবিতে তার নয়ন দু’টি থমকে গেছে। তার নয়নের এরূপ কড়া দৃষ্টি দেখে তার পাশের জনও পত্রিকার পাতার দিকে তাকালেন। তিনিও মোহগ্রস্থ হলেন। তিনি একবার সামনের দিকে তাকান আর একবার আড়চোঁখে পত্রিকায় দৃশ্যমান স্বল্প বসনের সেই নায়িকার দিকে তাকান।

এভাবেই এক সময় বাসটি নবীনগর,চন্দ্রা অতিক্রম করে এখন হাইওয়েতে উঠেছে। মাঝের দিকে বসেছেন দুই তরুন-তরুনী। তারা সম্ভবত নববিবাহিত দম্পতি। যাত্রী ভর্তি এই বাসেও তাদের ভালোবাসাময় দুষ্টামী থেমে থাকে না। এরই ফাঁকে মেয়েটি লজ্জা,শঙ্কা আর খানিকটা ভয়ার্ত দৃষ্টি নিয়ে চারদিকে তাকায়,এই বুঝি কেউ দেখে ফেললো.......

বাসটি যমুনা সেতুতে এসে পড়ল। যমুনা সেতুতে বাসটি আসা মাত্রই বাসের যাত্রীদের মধ্যে হঠাৎ চাঞ্জল্য লক্ষ্য করা গেল। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন যুবক জানালায় তার দুই হাত এলিয়ে তার উপর থুঁতনি রেখে, এক দৃষ্টিতে যমুনার কালো জলের যৌবনের জোঁয়ার দেখতে লাগল। দূর নদীতে দেখা যায়, হারিকিনের টিমটিম আলো। হয়তো নৌকার মাঝি, মাছভর্তি নৌকা নিয়ে খুশির চোটে প্রিয়ার আলিঙ্গন পাবার দূর্নিবার ইচ্ছা নিয়ে পাড়ের দিকে ছুটছে। ঠিক তখনই যুবকটির মনে আপনা থেকেই বেজে উঠল আব্বাস উদ্দিনের সেই গান, ‘মাঝি বাইয়া যাও রে...’

এভাবে আরো খানিকটা পথ চলে বগুড়ার শেরপুর পার হবার পর পিছনের দিক থেকে এক বাচ্চার কান্নার শব্দ ভেসে এলো। কান্নার শব্দে বাচ্চাটির মায়েরও ঘুম ভেঙ্গে যায়। পিঠে মৃদু থাপ্পড় দিতে দিতে মা বলে,
‘ওরে আমার বাবাটা! স্বপ্ন দেখছো, ভয় পাইছো। এইতো আম্মু তোমার পাশে আছি। ঐ যে দেখ চাঁদ। জানালা দিয়ে চাঁদ দেখ।’

আড়াই বছরের বাচ্চাটি আচমকা কান্না থামিয়ে অবাক হয়ে আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার কান্না থেমে যাওয়ায় আশ্বস্ত হন মা। কিন্তু কিছুক্ষণ বাদেই বাচ্চাটি বলে, ‘দেখছো আম্মু, চাঁদটাও আমাদের সঙ্গে যাচ্ছে। চাঁদটা আমাদের সঙ্গে যাচ্ছে কেন?’
এই ‘কেন’ এর কোনো উত্তর হয় না। একটি বাসে এতোকিছু হচ্ছে কিন্তু তার কোনো কিছুই বাসের ড্রাইভারটিকে স্পর্শ করে না। সে যেমন স্বল্প বসনার সেই মডেলকে দেখতে যেমন নিজ আসন ত্যাগ করে না। ঠিক তেমনি যমুনার কালো জলও তাকে আকৃষ্ট করতে পারে না। আর ঠিক সেকারণেই গভীর রাত পেরিয়ে সবার যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন সবাই নিজেদের বগুড়া ছাড়িয়ে মোকামতলা হয়ে জয়পুরহাট বাসষ্ট্যান্ডে আবিষ্কার করতে পারে।

আর সবার মত ড্রাইভার সাহেবও যদি সেই নববিবাহিত দম্পতির দুষ্টামো দেখার জন্য মুখিয়ে উঠতেন, তবে সেই বাসটি আর কখনোই ঢাকা থেকে রওনা করে বগুড়া পেরিয়ে জয়পুরহাট পৌঁছাতো না। হয়তো তা যমুনার অতল খাঁদে হারিয়ে যেত।

জীবন একটি চলন্ত বাসের মত। জীবনে চলতে গিয়ে অনেক মানুষের সাথেই পরিচয় হয়। নানা জন, নানান কথা বলে। কেউবা পিঠ চাপড়ে উৎসাহ দেয়। আর কেউবা ঠোঁটের কোনায় বাঁকা হাসি দিয়ে উপহাস করে। পিঠ চাপড়ানোর মুহুর্তটা যতোটানা অনুপ্রেরণা দেয় , বাঁকা হাসিটা তার চেয়ে সহস্রাধিক গুন বেশি জ্বালা দেয়। সেই জ্বালা স্মরণ রাখলে মুশকিল। আর কখনো জীবনের গন্তব্যে স্থলে পৌঁছানো হবে না। জীবন নামক বাসটি কোন এক খাঁদের কিনারাতেই থমকে থাকবে।

জীবনে কিছু করতে চাইলে নাইটকোচের বাসের ড্রাইভারদের মত হওয়া প্রয়োজন। বাসের ভিতরে যাই ঘটুক ড্রাইভারের যেমন তাতে কোন-ই যায় আসে না। তেমনি আমাদের আশে-পাশের মানুষ যাই বলুক না কেন, সেগুলো গায়ে মাখানো যাবে না। তবেই একদিন দেখবেন, আপনার ‘বাস’ নামক জীবনখানি সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে।

#সংগৃহীত

দুই কলশীর নীতি গল্প

একটি নীতিমূলক গল্প

একজন বয়স্ক মহিলার দুটি বড় পাত্র ছিল, যা তার কাঁধের বাকের দুই প্রান্তে ঝোলানো ছিল। 

একটি পাত্রের মধ্যে সূক্ষ্ম একটি ফাটল ছিল কিন্তু অন্য  পাত্রটি ছিল নিখুঁত এবং নদী থেকে জল আনার সময় একটি পাত্র পুরোপুরি জলে ভর্তি থাকতো অপরটি অর্ধেক জল পূর্ণ থাকত। 

পুরো দুই বছর ধরে,এভাবেই ভদ্রমহিলা দেড় পাত্র জল নিয়ে ঘরে ঢুকতেন। 

অবশ্যই, নিখুঁত পাত্র তার পূর্ণতার জন্য  গর্বিত ছিল কিন্তু বেচারা পটকা পাত্র নিজের অপূর্ণতার জন্য লজ্জিত ছিল এবং তার মনে দুঃখ ছিল যে পুরো জল কখনোই বহন করতে পারে না। 

দুই বছর পর খুঁত যুক্ত পাত্রটি বৃদ্ধার কাছে খুব দুঃখ করে বলল-আমি সত্যি সত্যি নিজে নিজের অক্ষমতার জন্য লজ্জিত। আমার যা করা উচিত ছিল আমি সেটা কখনোই করে উঠতে পারি না। আমার ভেতর একটা ফাটল আমাকে আমার কাজ করতে দেয় না।

বৃদ্ধা মুচকি হেসে বললেন, 'আচ্ছা খেয়াল করেছ,তোমাকে যে রাস্তা দিয়ে নিয়ে আসা হয় সেই রাস্তার পাশে কত ফুলের সারি!আমি তোমার ত্রুটি জানি, যে স্থান দিয়ে তোমাকে আনা হয় সেখানে আমি কিছু ফুলের বীজ ছড়িয়ে দিয়েছি, সেখান থেকে গাছ হয়ে ফুল জন্মেছে। পথের পাশের ওই ফুল গুলিকে তুমি নিজের অজান্তে প্রতিদিন যখন আমরা ফিরে যাই,
তুমি তাদের জল দাও।
আমি দু'বছর ধরে ওখান থেকে ফুল তুলে এনে আমার টেবিলের সাজিয়ে রাখি।তুমি অপূর্ন না হতে তাহলেই ফুল ফুটতো না, এ ফুল আমি পেতাম না 

গল্পের নৈতিক:
আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব স্বতন্ত্র ত্রুটি রয়েছে।এগুলি নিয়ে খুব বেশি ভাবার প্রয়োজন নেই।জীবনকে নিজের ছন্দে, নিজের মতো করে চলতে দেয়া উচিত।এতে জীবনের স্বাভাবিক  সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।ত্রুটিযুক্ত মানুষের ভেতরে যে সৎ গুনাবলী আছে, সেগুলোর সদব্যবহার যদি আমরা করতে পারি তাতে সুন্দর হয় সমাজ,সমৃদ্ধ হয় দেশ।

(সংগৃহীত)

Friday, September 15, 2023

নফস কে নিয়ন্ত্রনের ব্যাপারে কিছু পরামর্শ

১. ফজরের পরে না ঘুমানোর অভ্যাস করুন। প্রয়োজনে কাইলুলা (দুপুরের হালকা ঘুম) করা যাবে।

২. দিনে ম্যক্সিমাম তিনবার খাবার অভ্যাস করুন। সকাল, দুপুর ও রাতের খাবারের মাঝখানে হাবিজাবি খাবার যেমন ফাস্টফুড, স্ট্রিটফুড খাওয়া যাবেনা ক্ষুধা লাগলে খেজুর, আপেল এগুলো খাওয়া যায়।

৩. প্রতিবেলা খাবার সময় যেটুকু খাবার যথেষ্ট বলে মনে হবে তার থেকে একটু কম খাবেন।

৪. অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। কোন মন্তব্য করার আগে একবার চিন্তা করুন এই কথাটা আপনি না বললে কি কোন লস আছে? বলা কি আবশ্যিক? উত্তর না হলে ওই কথা বলার দরকার নাই।

৫. সকাল সন্ধ্যার জিকির-আযকার করুন।

৬. ইশরাকের সালাত আদায়ের অভ্যাস করতে হবে।

৭. প্রতিদিন নিয়মত কুরআন পড়ার অভ্যাস করতে হবে। হতে পারে ১ রুকু থেকে ১ পারা - যেকোন পরিমাণ।

৮. ঘুমের পরিমাণ কমাতে হবে।

৯. ফজরের পরে কিছুক্ষণ ব্যায়ামের অভ্যাস করা। আর কিছু না পারলে ১৫-২০ মিনিট জগিং করে এসে গোসল করে ইশরাকের সালাত পড়ার অভ্যাস করা।

১০. দৃষ্টি অবনত রাখা। না পারলে ওইসব জায়গা এড়িয়ে চলার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।

১১. ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার (সোশ্যাল মিডিয়া) কম ব্যবহার করা।

১২. প্রতিদিন হিফজের একটা টার্গেট নেয়া। এটা প্রতিদিন এক আয়াতও হতে পারে৷ কিন্তু টার্গেট পুরা করতে হবে। এটা খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ।

১৩. বিশেষকরে রাতে ভরপেট খাওয়া পরিহার করতে হবে৷

১৪.রাতে ঘুমানোর পূর্বে অযু করে দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করে নিন এবং ঘুম না আসা পর্যন্ত আসতাগফিরুল্লাহ পড়তে থাকুন।

১৫.তাহাজ্জুদ সালাতের অভ্যাস করুন নিয়মিত। ইনশাআল্লাহ রাব্বে কারিম আপনার অন্তরকে প্রশান্ত করে দিবেন।

লেখাটার প্রতিটি কথার উপরে আমল করার তৌফিক আল্লাহ আমাদের দান করুক।

আমিন।

Sunday, September 10, 2023

জীবনের হিসাব

জীবনের হিসাব

সুকুমার রায়

বিদ্যে বোঝাই বাবু মশাই চড়ি শখের বোটে
মাঝিরে কন, “বলতে পারিস সূর্য কেন ওঠে?
চাঁদটা কেন বাড়ে কমে? জোয়ার কেন আসে?”
বৃদ্ধ মাঝি অবাক হয়ে ফেলফেলিয়ে হাসে,
বাবু বলেন, “সারা জীবন মরলিরে তুই খাটি,
জ্ঞান বিনা তোর জীবনটা যে চারি আনাই মাটি!”

খানিক বাদে কহেন বাবু, “বলত দেখি ভেবে
নদীর ধারা কেমনে আসে পাহাড় হতে নেবে?
বলত কেন লবন পোরা সাগর ভরা পানি?”
মাঝি সে কয়, “আরে মশাই অত কি আর জানি?”
বাবু বলেন, “এই বয়সে জানিসনেও তা কি?
জীবনটা তোর নেহাত খেলো, অষ্ট আনাই ফাঁকি!”

আবার ভেবে কহেন বাবু, “বলত ওরে বুড়ো,
কেন এমন নীল দেখা যায় আকাশের ঐ চূড়ো?
বলত দেখি সূর্য চাঁদে গ্রহন লাগে কেন?”
বৃদ্ধ বলেন, “আমায় কেন লজ্জা দিছেন হেন?”
বাবু বলেন, “বলব কি আর বলব তোরে কি, তা,-
দেখছি এখন জীবনটা তোর বারো আনাই বৃথা।”

খানিক বাদে ঝড় উঠেছে ঢেউ উঠেছে ফুলে,
বাবু দেখেন নৌকাখানি ডুবল বুঝি দুলে।
মাঝিরে কন, “একি আপদ ওরে ও ভাই মাঝি,
ডুবল নাকি নৌকো এবার? মরব নাকি আজি?”
মাঝি শুধায়, “সাতার জানো?” মাথা নারেন বাবু,
মূর্খ মাঝি বলে, “মশাই এখন কেন কাবু?
বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব করো পিছে,
তোমার দেখি জীবন খানা ষোল আনাই মিছে।”

জীবন বিনিময়

জীবন বিনিময় - গোলাম মোস্তফা 


বাদশা বাবর কাঁদিয়া ফিরিছে, নিদ নাহি চোখে তাঁর-
পুত্র তাঁহার হুনায়ন বুঝি বাঁচে না এবার আর!
চারিধারে তার ঘনায়ে আসিছে মরন-অন্ধকার।

রাজ্যের যত বিজ্ঞ হেকিম কবিরাজ দরবেশ
এসেছে সবাই, দিতেছে বসিয়া ব্যবস্থা সবিশেষ,
সেবাযত্নের বিধিবিধানের ত্রুটি নাহি এক লেশ।

তবু তাঁর সেই দুরন্ত রোগ হটিতেসে নাকো হায়,
যত দিন যায়, দুর্ভোগ তার ততই বারিয়া যায়—
জীবন-প্রদীপ নিভিয়া আসিছে অস্তরবির প্রায়।

শুধাল বাবর ব্যগ্রকন্ঠে ভিষকব্রিন্দে ডাকি,
‘বলো বলো আজি সত্যি করিয়া, দিও নাকো মোরে ফাঁকি,
এই রোগ হতে বাদশাজাদার মুক্তি মিলিবে নাকি?”

নতমস্তকে রহিল সবাই, কহিল না কোনো কথা,
মুখর হইয়া উঠিল তাঁদের সে নিষ্ঠুর নীরবতা
শেলসম আসি বাবরের বুকে বিঁধিল কিসের ব্যাথা!

হেনকালে এক দরবেশ উঠি কহিলেন—‘সুলতান,
সবচেয়ে তব শ্রেষ্ট যে-ধন দিতে যদি পার দান,
খুশি হয়ে তবে বাঁচাবে আল্লা বাদশাজাদার প্রান।’

শুনিয়া সে কথা কহিল বাবর শঙ্কা নাহিক মানি-
‘তাই যদি হয়, প্রস্তুত আমি দিতে সেই কোরবানি,
সবচেয়ে মোর শ্রেষ্ঠ যে ধন জানি তাহা আমি জানি।’
এতেক বলিয়া আসন পাতিয়া নিরিবিলি গৃহতল
গভীর ধেয়ানে বসিল বাবর শান্ত অচঞ্চল,
প্রার্থনারত হাতদুটি তাঁর, নয়নে অশ্রু জল।

কহিল কাঁদিয়া- ‘হে দয়াল খোদা, হে রহিম রহমান,
মোর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় আমারি আপন প্রাণ,
তাই নিয়ে প্রভু পুত্রের প্রান কর মোরে প্রতিদান।’

স্তব্ধ-নীরব গৃহতল, মুখে নাহি তার বাণী,
গভীর রজনী, সুপ্তি-মগন নিখিল বিশ্বরাণী,
আকাশে বাতাসে ধ্বনিতেছে যেন গোপন কী কানাকানি।

সহসা বাবর ফুকারি উঠিল—’নাহি ভয় নাহি ভয়,
প্রার্থনা মোর কবুল করেছে আল্লাহ হে দয়াময়,
পুত্র আমার বাঁচিয়া উঠিবে—মরিবে না নিশ্চয়।’

ঘুরিতে লাগিল পুলকে বাবর পুত্রের চারিপাশ
নিরাশ হৃদয় সে যেন আশায় দৃপ্ত জয়োল্লাস,
তিমির রাতের তোরণে তোরণে ঊষার পূর্বাভাস।

সেইদিন হতে রোগ-লক্ষণ দেখা দিলে বাবরের,
হৃষ্টচিত্তে গ্রহন করিল শয্যা সে মরণের,
নতুন জীবন হুমায়ুন ধিরে বাঁচিয়া উঠিল ফের।

মরিল বাবর – না, না ভুল কথা, মৃত্যু কে তারে কয়?
মরিয়া বাবর অমর হয়েছে, নাহি তার কোন ক্ষয়,
পিতৃস্নেহের কাছে হইয়াছে মরনের পরাজয়!

Friday, September 8, 2023

গল্প হলেও অনেক স্বামী স্ত্রীর বাস্তবতার শিকার

 

গল্প হলেও অনেক স্বামী স্ত্রীর বাস্তবতার শিকার।
স্ত্রী যখন আট মাসের গর্ভবতী তখন আমার শাশুড়ি এসে স্ত্রীকে নিয়ে গেলো বাপে

র বাড়ি।
ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার দুদিন পর শাশুড়ি স্ট্রোক করলো। এতে তার শরীরের বাঁ দিক অবশ হয়ে গেলো। যে মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলো দেখাশোনা করার জন্য, সেই মেয়ে এখন উল্টো মাকে দেখাশোনা করতে লাগলো।
অসুস্থ শাশুড়িকে দেখতে গিয়ে স্ত্রীকে বললাম,"সন্তান জন্মের পরই বাড়িতে চলে এসো।"
স্ত্রী বললো,"বাবা সারাদিন চাকরিতে ব্যস্ত থাকেন। ছোটো ভাইও ভার্সিটি, টিউশনি নিয়ে দিনভর বাইরে থাকে। গোটা দিন মাকে দেখার কেউ নেই। এই অবস্থায় অসুস্থ মাকে রেখে কী করে যাই?"
"কী বলতে চাও তুমি?"
"মা নিজে নিজে উঠতে বসতে পারলে, এবং কিছুটা হাঁটতে পারলে আমি চলে যাবো। সেই পর্যন্ত আমাকে থাকতে দাও।"
বিরক্ত হয়ে বললাম,"তোমার মায়ের ঐ অবস্থায় আসতে ছয় মাস লাগবে। ততোদিন থাকবে এখানে?"
"ছয় মাস লাগবে না। ডাক্তার বলেছেন দু মাসের মধ্যে মা সুস্থ হয়ে যাবে।"
অসন্তুষ্ট হয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে এলাম।
যথা সময়ে আমার একটা ছেলে সন্তান হলো।
স্ত্রী ঐ সদ্যজাত ছেলেকে নিয়ে মায়ের সেবা করে যেতে লাগলো।
এই সময় আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়লো। এবার তো স্ত্রীকে আনতেই হবে।
স্ত্রীকে যেদিন আনতে গেলাম সেদিন অসুস্থ শাশুড়ি বাচ্চাদের মতো কাঁদলো।
শাশুড়ি মেয়ের হাত ধরে বারবার বলছিলো,"তুই চলে গেলে আমি মরে যাবো।
একদম মরে যাবো।"
উত্তরে মেয়ে বললো,"মাগো, মেয়েদের জীবন এতো কঠিন কেনো...?
নিজের অসুস্থ মাকে ফেলে কেনো চলে যেতে হয়...?
মেয়ে চলে যাক এটা ওদের বাড়ির কেউ চাইছিলো না। কিন্তু আমি নিরুপায়। স্ত্রী যেমন তার মায়ের কথা ভাবছিলো, আমিও তেমনি আমার মায়ের কথা ভাবছিলাম।
স্ত্রীকে নিয়ে আসার পর শাশুড়ির শরীরের অবস্থার অবনতি হলো।
আমার মা কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে স্ত্রী একদিন আমাকে বললো,"আমাকে এবার মায়ের কাছে যেতে দাও।
তুমি তো জানোই মায়ের শরীর খুব খারাপ হয়ে গেছে।"
স্ত্রী চলে গেলে মায়ের সেবা যত্নের ঘাটতি হবে।
এতে মা'র অসুস্থতা বেড়ে যেতে পারে।
তাই বললাম,"অবশ্যই না। আমার মা পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তুমি যেতে পারবে না।
সে স্তব্ধ হয়ে আমার দিকে চেয়ে রইলো।
এর কিছু দিন পর আমার শাশুড়ি মারা গেলো।
সেদিন স্ত্রী আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো, যার অর্থ হলো, "তোমার জন্য আমার মা মারা গেলো।
জানি, মায়ের মৃত্যুর জন্য সে আজীবন আমাকে দায়ী করবে।
কিন্তু সে কখনোই আমার অবস্থার কথা ভাববে না।
তবে সাতাশ বছর পর এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো, যখন আমি প্রমাণ করতে পারলাম, শাশুড়ির মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী নই ¡!¡
#ঘটনা_কী_হয়েছিলো_বলি
আমার স্ত্রী তখন অসুস্থ। ছেলের বউ তার সেবা করছিলো। এই সময় আচমকা ছেলের শাশুড়িও অসুস্থ হয়ে পড়লো।
তাকে দেখাশোনা করার কেউ নেই।
ছেলের বউ তখন বাপের বাড়ি যেতে চাইলে ছেলে ঠিক আমার কথাটাই বললো,"অবশ্যই না। আমার মা পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তুমি যেতে পারবে না।
ছেলের বউ স্তব্ধ হয়ে তার স্বামীর দিকে তাকালো, ঠিক যেভাবে আমার স্ত্রী একদিন আমার দিকে তাকিয়েছিলো।
আমি সেদিন আমার স্ত্রীকে বললাম,তোমার মায়ের মৃত্যুর জন্য তুমি আমাকে দায়ী ভাবো।
কিন্তু এখন নিজের ছেলেকে দেখে বুঝলে তো, আমি পরিস্থিতির স্বীকার ছিলাম।
আমার মা যদি সে সময় অসুস্থ না থাকতো, তাহলে তোমাকে যেতে দিতাম। আমার কিছু করার ছিলো না।"
স্ত্রী শোয়া অবস্থায় বললো,"কিছু করার ছিলো না?"
--না--..?
সে তখন ছেলেকে আর ছেলের বউকে ডাকলো।
ওরা এলে প্রথমে ছেলেকে বললো,"তুই নিজের মায়ের কথা ভাবছিস, এটা মা হিসেবে আমার জন্য আনন্দের। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না, তোর শাশুড়ি হলো তোর স্ত্রীর মা।
তোর যেমন মন কাঁদছে মায়ের জন্য, তোর বউয়েরও তেমন মন কাঁদছে তার মায়ের জন্য।
ছেলে তখন বললো,"কিন্তু আমি কী করতে পারি...?
তোমাকে এই অবস্থায় রেখে বউকে তো আর বাপের বাড়িতে পাঠাতে পারি না।"
আমার স্ত্রী তখন যে কথা বললো তার জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না।
সে বললো,"তোর শাশুড়িকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আয়।
নতুবা আমাকে নিয়ে চল তোর শ্বশুরবাড়িতে।
তারপর ছেলের বউকে বললো, এক সাথে দুই অসুস্থ মায়ের সেবা করতে আপত্তি নেই তো তোমার...?
ছেলের বউ অপ্রত্যাশিত এই কথা শুনে আমার স্ত্রীর হাত ধরে কেঁদে দিলো।
এবং বললো,"কোনো আপত্তি নেই মা।
ছেলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,"শাশুড়িকে এখানে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি।
খরচ নিয়ে ভাবতে হয় নি।
ছেলের শ্বশুরবাড়ি থেকে সব খরচ বহন করা হয়েছিলো। এমনকি আমার স্ত্রীর চিকিৎসার খরচও তারা অনেকখানি দিয়েছিলো।
মেয়ের সান্নিধ্যে থেকে ছেলের শাশুড়ি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠলো।
এবং যেদিন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলো, সেদিন থেকে অপরাধ বোধের কারণে স্ত্রীর চোখের দিকে আর তাকাতে পারি নি।
কেননা, অবশেষে শাশুড়ির মৃত্যুর জন্য দায়ী হয়ে গেলাম।
আমার স্ত্রী ছেলের শাশুড়িকে এনে যে সমাধান দিয়েছিলো সেটা আমার শাশুড়ির ক্ষেত্রেও করতে পারতাম।
কিন্তু করতে পারি নি, কারণ সেদিন শুধু আমার মায়ের কথা ভেবেছিলাম।
স্ত্রীর মায়ের কথা নয়।
আর তাছাড়া আমার স্ত্রী যদি সেদিন এই সমাধানের কথা বলতো, তবে ঝামেলা হবে ভেবে রাজি হতাম না।
আসলে অন্যের জন্য ভাবতে গেলে বড়ো মন লাগে।
যা আমার স্ত্রীর আছে। আমার নেই।
এই শেষ বেলায় চাওয়া এখন একটাই, ছেলে তার মায়ের মতো হোক। বাবার মতো নয়।
_Collected

গণিতের ৫টি চমৎকার কৌশল

 

গণিতের ৫টি চমৎকার কৌশল 

গণিতের ৫টি চমৎকার কৌশল 

গণিতে অনেক মজার কৌশল আছে। সেগুলো না জানা থাকলে গণিতের আসল মজা বোঝা যায় না। গণিত তখন খটমট কঠিন বিষয়ে পরিণত হয়। তবে আজ আমরা পাঁচটি গণিতের কৌশল শিখবো। এ সহজ কৌশলগুলো আপনাকে আরও দ্রুত ও সহজে গণণা করতে সাহায্য করবে। নিজের গাণিতিক স্কিল বাড়ানোর পাশাপাশি আপনি এ কৌশলের সাহায্যে শিক্ষক, পিতামাতা ও বন্ধুদের প্রভাবিত করতে পারেন। চলুন কৌশলগুলো জানা যাক। 

১. ৬ দিয়ে গুণ 

যেকোনো সংখ্যাকে ৬ দিয়ে গুণের একটি সহজ পদ্ধতি আছে। যে সংখ্যা দিয়ে ৬-কে গুণ করবেন সেটি হবে উত্তরের শেষ সংখ্যা (ডিজিট)। আর ওই শেষ ডিজিটের অর্ধেক বসবে তার ঠিক আগে। যেমন, ৬ × ৪ = ২৪। খেয়াল করুন, এখানে ৬-কে গুণ করেছি ৪ দিয়ে। উত্তরে শেষ সংখ্যা হবে ৪। আর ৪-এর অর্ধেক ২ হবে তার আগে। 

তবে ৬-কে যদি ৯-এর ওপরের কোনো সংখ্যা দিয়ে গুণ করেন, তাহলে আরেকটু নিয়ম জানতে হবে। ১০-১৯ এর মধ্যে কোনো সংখ্যা দিয়ে গুণ করলে যে সংখ্যা দিয়ে গুণ করবেন, তার অর্ধেকের সঙ্গে ১ যোগ করতে হবে। ২০-২৯ এর মধ্যে কোনো সংখ্যা দিয়ে গুণ করলে যোগ করতে হবে ২। এভাবে যত ওপরের দিকে যাবেন, তত যোগ করতে হবে। যেমন, ১২ × ৬ করুন। প্রথমে বসবে ২। এরপর ১২-এর অর্ধেক ৬ এবং তার সঙ্গে ১ যোগ করে হবে ৭। অর্থাৎ, উত্তর ৭২। 

আবার ৪৬ × ৬ করুন। প্রথমে বসবে ৬। এর সঙ্গে ৪৬-এর অর্ধেক ২৩ ও যোগ হবে ৪। মানে ২৩ + ৪ = ২৭। তাহলে উত্তর হবে ২৭৬। 

২. উত্তর সবসময় ২ 

এই জাদুটি আপনার কোনো বন্ধুদের দেখাতে পারেন। আপনি বন্ধুকে কিছু যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করতে বলবেন, আর উত্তর হবে সব সময় ২। নিচের নিয়মানুসারে বন্ধুকে ধাপে ধাপে কাজগুলো করতে বলুন। 

ক) যে কোনো একটি সংখ্যা কল্পনা করতে হবে

খ) ওই সংখ্যার সঙ্গে গুণ করতে হবে ৩

গ) গুণফলের সঙ্গে যোগ করতে হবে ৬

ঘ) এবার যোগফলকে ভাগ করতে হবে ৩ দিয়ে

ঙ) প্রথমে যে সংখ্যাটি কল্পনা করেছিল, তা বিয়োগ করতে বলুন। 

ব্যস, উত্তর হবে ২। 

চলুন এবার দেখা যাক, আসলেই উত্তর ২ হয় কি না। একটি সংখ্যা ধরলাম ৫। এরসঙ্গে ৩ গুণ করলে হবে ১৫। এরপর ১৫-এর সঙ্গে ৬ যোগ করলে হবে ২১। এবার ৩ দিয়ে ভাগ করলে হবে ৭। সর্বশেষ ভাগফল থেকে প্রথমে কল্পনা করা ৫ বিয়োগ করলে হবে ২। 

তবে একই বন্ধুর সঙ্গে বারবার এই জাদু দেখালে, সে বুঝে যাবে উত্তর সব সময় ২ হয়। এতে আপনার কেরামতি বুঝে ফেলতে পারে। তাই একজন বন্ধুকে একবারের বেশি এ জাদু দেখাতে যাবেন না। ধরা পরে যাবেন। 

৩. তিন অঙ্কের জাদু 

এটাও ওপরের জাদুর মতোই। তিনটি ধাপে জাদুটি দেখাতে পারবেন। 

ক) একই অঙ্কের তিনটি নিতে হবে। যেমন, ৩৩৩ বা ৭৭৭ অথবা ৫৫৫

খ) যে তিনটি অঙ্ক নিবেন, সেগুলোর যোগ করতে হবে। যেমন ৩৩৩ নিলে এদের যোগফল হবে ৩ + ৩ + ৩ = ৯ 

গ) এবার যে তিনটি সংখ্যাকে নিয়েছেন তাকে ওই তিন সংখ্যার যোগফল দিয়ে ভাগ করতে হবে। 

এবার উত্তর হবে ৩৭। এটাও একটু খাতা কলমে প্রমাণ করে দেখা যাক। 

প্রথমে তিন অঙ্কের একটি সংখ্যা নিলাম ৬৬৬। এদের যোগফল ১৮। এবার ৬৬৬ ÷ ১৮ = ৩৭। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। এটার উত্তরও সবসময় হয় ৩৭।  

৪. ছয় অঙ্কের জাদু 

এই গাণিতিক জাদুর শর্তগুলো দেখুন। 

ক) তিন অঙ্কের যেকোনো একটি সংখ্যা নিন। সংখ্যাটি পরপর দুইবার লিখতে হবে। যেমন, তিন অঙ্কের সংখ্যাটি নিলাম ৩৭১। পরপর দুইবার লিখলে হবে ৩৭১৩৭১। 

খ) ওপরের সংখ্যাটিকে ৭ দিয়ে ভাগ করতে হবে। 

গ) ভাগফলকে আবার ভাগ করতে হবে ১১ দিয়ে। 

ঘ) এরপর আরও একবার ভাগফলকে ১৩ দিয়ে ভাগ করতে হবে। 

ভাগের কাজ শেষ হলে দেখবেন আপনার কল্পনা করা প্রথম সংখ্যাটাই উত্তর। 

চলুন একটু মিলিয়ে দেখি। একটি সংখ্যা কল্পনা করলাম ১২৩। তাহলে পরপর দুইবার সাজিয়ে লিখলে পাবো ১২৩১২৩। এবার এই সংখ্যাটিকে ভাগ করবো ৭ দিয়ে। ১২৩১২৩ ÷ ৭ = ১৭৫৮৯। এই ভাগফলকে ১১ দিয়ে ভাগ করলে হবে ১৭৫৮৯ ÷ ১১ = ১৫৯৯। আবার এই ভাগফলকে ১৩ দিয়ে ভাগ করলে হবে হবে ১৫৯৯ ÷ ১৩ = ১২৩। তাহলে দেখা যাচ্ছে প্রথম কল্পনা করা সংখ্যা এবং উত্তর আসলে একই। 

এই একই পদ্ধতি আপনি উল্টোভাবেও করতে পারেন। মানে ভাগ না করে গুণ করতে পারেন। তিন অঙ্কের যেকোনো একটি সংখ্যা নিয়ে সেই সংখ্যাকে পর্যায়ক্রমে ৭, ১১ ও ১৩ দিয়ে গুণ করতে হবে। তাহলে দেখবেন যে সংখ্যাটি আপনি কল্পনা করেছেন, তা পরপর দুই হয়েছে। যেমন, একটি সংখ্যা কল্পনা করি ৪৫৬। একে প্রথমে ৭ দিয়ে গুণ করলে হবে ৪৫৬ × ৭ = ৩১৯২। এবার গুণফলকে গুণ করতে হবে ১১ দিয়ে। অর্থাৎ, ৩১৯২ × ১১ = ৩৫১১২। আর এই গুণফলকে আবার ১৩ দিয়ে গুণ করলে হবে ৩৫১১২ × ১৩ = ৪৫৬৪৫৬। দারুণ না ব্যাপারটা! 

৫. ১১-এর গুণের জাদু

১১ দিয়ে খুব সহজে গুণ করার একটা কৌশল আছে। চোখের নিমেষেই উত্তর হয়ে যায়। তিনটি ছোট নিয়ম মানতে হবে। 

ক) ১১ দিয়ে যে সংখ্যাটি গুণ করবেন, তা সর্বোচ্চ দুই অঙ্কের হতে হবে। মানে ৯৯-এর বড় সংখ্যাকে ১১ দিয়ে এ পদ্ধতিতে গুণ করা যাবে না। 

খ) সংখ্যার অঙ্ক দুটিকে যোগ করতে হবে

গ) এরপর বসিয়ে দিতে অঙ্ক দুটির মাঝে। 

ব্যস। উত্তর হয়ে গেছে। চলুন একটি মিলিয়ে দেখি। ধরুন, ৭২ × ১১ = ৭৯২। মানে ৭২-এর মাঝে ৭ ও ২-এর যোগফল (৭ + ২ = ৯) বসিয়ে দিলে উত্তর পাওয়া যাবে। আরেকটা গুণ দেখুন। ৪৩ ও ১১ গুণ করতে হবে। খুব সহজে উত্তর বলে দিতে পারেন ৪৭৩। কারণ ৪ + ৩ = ৭। সুতরাং, ৪৩-এর মধ্যে ৭ বসিয়ে উত্তর পেলাম ৪৭৩।

তবে অঙ্ক দুটির যোগফল যদি ১০-এর বেশি হয় তাহলে কী করবেন? যেমন ৫৭ × ১১ = কত? এখানে ৫ + ৭ = ১২। নিশ্চয় ৫১২৭ গুণফল হবে না। এক্ষেত্রে যোগফল ১২-এর শুধু ২ রাখতে হবে মাঝে। আর ১ যোগ করে দিতে হবে আগের সংখ্যার সঙ্গে। মানে উত্তর হবে ৬২৭।  

লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: থটকো ডট কম অবলম্বনে

এ পি যে আবুল কালাম

পৃথিবীতে এমন মানুষ এই একজনই এসেছিলেন ।
         কিন্তু জানেন , এই মানুষটিনা খুব বোকা ছিলেন ।
         আরে বাবা যে দেশের রাষ্ট্রপতি তার কাছে মানে রাষ্ট্রপতি ভবনে স্বপরিবারে বেড়াতে আসলেন তারই নিজের ভাই ১১ জন সদস্য ৩ দিন ছিলেন তারা । 
         বেশ তাতে কিহয়েছে !!  
         হয়েছে মানে !! জানেন কি হয়েছে !!
         তাদের থাকা ও খাওয়াতে যা খরচ হয়েছে সেই খরচের হিসাব চাইলেন রাষ্ট্রপতি ভবনের অধিকারীকের কাছে এবং সেই খরচ নিজের নামে ব্যাঙ্কে জমে থাকা রাষ্ট্রপতি ভাতা থেকে ৩ ২২ ০০০ টাকার চেক কেটে দিলেন যেটা সরকারি কোষাগারে জমা পড়ল ।
          বলেন কি মশাই !! এ যে সত্যিই আশ্চর্য !!
          নামেই মুসলমান কিন্তু কোনোদিন মসজিদে যাননি নামাজ পড়েননি বরঞ্চ গীতা পড়তেন , তানপুরা বাজিয়ে গান করতেন , সাধু সন্যাসীদের পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করতেন , মঠে আশ্রমে যেতেন , দুস্থ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ক্ষেত্রে অকাতরে সাহায্য করতেন ।
          আরে যাচ্ছেন কোথায় অনেক কিছুই বলার ছিল কিন্তু সময় যে কম  যাই হোক শেষ টুকু শুনুন ।
          এই মানুষটির মৃত্যুর পর ওনার কি কি জিনিস আছে খুঁজে দেখা হল ।
          পাওয়া গেল দুই আলমারি ভর্তি বই সংখ্যায় ২৫ ০০০ এর উপর , ৪ জোড়া সুট , ৩ সেট সাধারন ঘরে পড়া জামা প্যান্ট ,  ৪ জোড়া জুতো , ২ জোড়া চপ্পল , ৪ টি কলম ব্যাঙ্কে ৭২ ০০০ টাকা ।
          অবিবাহিত এই বোকা মানুষটি হলেন এই দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক আবুল কালাম্ ।
          এযে সত্যিই নমস্য ব্যক্তি ভারতবর্ষের গর্ব ।

প্রয়াত ভারতের রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের ১৫টি উক্তি আপনার ক্যারিয়ার পাল্টে দিতে পারে। সেগুলো হচ্ছে-

১) ‘স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখো। স্বপ্ন
সেটা যেটা তোমায় ঘুমোতে দেয় না।’

২) ‘সূর্যের মতো দীপ্তিমান হতে হলে প্রথমে
তোমাকে সূর্যের মতোই পুড়তে হবে।’

৩) ‘যদি তুমি তোমার কাজকে স্যালুট কর, দেখো
তোমায় আর কাউকে স্যালুট করতে হবে না। কিন্তু
তুমি যদি তোমার কাজকে অসম্মান কর, অমর্যাদা
কর, ফাঁকি দাও, তাহলে তোমায় সবাইকে স্যালুট
করতে হবে।’

৪) ‘যারা হৃদয় দিয়ে কাজ করতে পারে না; তাদের
অর্জন অন্তঃসারশূন্য, উৎসাহহীন সাফল্য চারদিকে
তিক্ততার উদ্ভব ঘটায়।’

৫) ‘প্রতিদিন সকালে এই পাঁচটা লাইন বলো :
– আমি সেরা।
– আমি করতে পারি।
– সৃষ্টিকর্তা সব সময় আমার সঙ্গে আছে।
– আমি জয়ী।
– আজ দিনটা আমার। ’

৬) ‘ভিন্নভাবে চিন্তা করার ও উদ্ভাবনের সাহস
থাকতে হবে, অপরিচিত পথে চলার ও অসম্ভব জিনিস
আবিষ্কারের সাহস থাকতে হবে এবং সমস্যাকে জয়
করে সফল হতে হবে। এ সকল মহানগুণের দ্বারা
তরুণদের চালিত হতে হবে। তরুণ প্রজন্মের প্রতি এই
আমার বার্তা।’

৭) ‘জীবন একটি কঠিন খেলা। ব্যক্তি হিসেবে
মৌলিক অধিকার ধরে রাখার মাধ্যমেই শুধুমাত্র
তুমি সেখানে জয়ী হতে পারবে।’

৮) ‘আকাশের দিকে তাকাও। আমরা একা নই। পুরো
মহাবিশ্ব আমাদের প্রতি বন্ধুত্বসুলভ। যারা স্বপ্ন
দেখে এবং কাজ করে শুধুমাত্র তাদেরকেই শ্রেষ্ঠটা
দেওয়ার জন্য চক্রান্তে লিপ্ত এই বিশ্ব।’

৯) ‘উৎকর্ষতা একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি
কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়।’

১০) ‘যদি একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর
মনের মানুষের জাতি হতে হয়, তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে
বিশ্বাস করি এ ক্ষেত্রে তিনজন সামাজিক সদস্য
পার্থক্য এনে দিতে পারে। তারা হলেন বাবা, মা
এবং শিক্ষক।’

১১) ‘সমস্যাকে কখনো এড়িয়ে যেতে চাইবে না।
বরং সমস্যা এলে তার মুখোমুখি
দাঁড়াবে। মনে রাখবে, সমস্যাবিহীন সাফল্যে
কোনো আনন্দ নেই। সব সমস্যার সমাধান আছ

১২) ‘জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে মূলত চারটি গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়ের প্রতি আমি আলোকপাত
করি। সেগুলো হলো: জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ,
জ্ঞান আহরণ, অনেক বড় সমস্যায়
পড়লেও লক্ষ্য থেকে সরে না আসা এবং কোনো
কাজে সাফল্য ও ব্যর্থতা দুটোকেই নেতৃত্বগুণে
সামাল দিতে পারা।’

১৩) ‘এখন থেকে সবকিছুতে দেশের কথা মাথায়
রাখবে। কোনো স্বপ্ন দেখলে নিজের
সঙ্গে দেশকে নিয়েও দেখবে, কোনো চিন্তা করলে
দেশকে নিয়ে করবে আর কোনো কাজে মগ্ন হলে
দেশের জন্য করবে।’

১৪) ‘সমস্যাকে কখনো আমার ওপর চেপে বসতে দেব
না। যত কঠিন সময়ই আসুক না কেন, কখনোই হাল
ছেড়ে দেব না।’

১৫) ‘হতাশ না হয়ে নিজেকে স্বপ্নপূরণের কতটা
কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারছ, সেদিকে
নজর রাখবে। কখনোই সাহস হারাবে না। নিজের
একটি দিনও যাতে বৃথা মনে না হয়,
সে চেষ্টা করো।’....

Thursday, September 7, 2023

রবি ঠাকুরের দুখের ফিরিস্তি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- জীবনে যত দুঃখ বহন করেছেন তা পৃথিবীর আর কোন সাহিত্যিকের জীবনে ঘটেছে বলে জানা নেই। 

১. তের বছর বয়সে মাতৃহারা হন।

২. তাঁর বিয়ের রাতে ভগ্নিপতি মারা যান। 

৩. চারমাস পরে আত্মহত্যা করেন যার প্রেরণা ও ভালোবাসায় তিনি কবি হয়ে উঠেছেন, সেই নতুন বৌঠান কাদম্বরী দেবী। 

৪. ১৯০২ কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী ২৯ বছর বয়সে মারা গেলেন l রবীন্দ্রনাথ তখন একচল্লিশ। 

৫. দুই মেয়ের বিয়ের সময় শর্ত অনুযায়ী জামাইদের বিলেতে ব্যারিস্টারি ও ডাক্তারি পড়াতে বিলেত পাঠালেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই রেনুকা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাঁকে বাঁচানো গেল না । 

৫. ১৯০৫-এ চলে গেলেন পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। 

৭.  ১৯০৭ কনিষ্ঠ পুত্রের (১২ বছরের) কলেরায় মৃত্যু। 

৮. ১৯১৩ রবীন্দ্রনাথ নোবেল পেলেন l 

৯.  ১৯১৮ বড় মেয়ে বেলা অসুস্থ, বেলাকে প্রতিদিন গাড়িতে করে দেখতে যেতেন কবি। বাবার হাত ধরে মেয়ে বসে থাকত বিছানায়। আর তখন রবীন্দ্রনাথের জামাই শরৎ টেবিলের ওপর পা তুলে সিগারেট খেতে খেতে রবীন্দ্রনাথকে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করতেন। একদিন বেলাকে দেখতে গিয়ে মাঝপথে শুনলেন সে মারা গেছে। মেয়েকে শেষ দেখা না দেখে ফিরে এলেন বাড়ি। পুত্র রথীন্দ্রনাথ লিখেছেন বাড়িতে এসে তিনি কাউকে বুঝতে দিলেন না কি শোকে, কি অপমানে, কি অসহ্য বেদনার মধ্য দিয়ে তিনি সন্তানকে হারিয়েছেন। 

১০. কবির ছোট মেয়ে মীরার বিয়ে দিয়েছিলেন নগেন্দ্রনাথের সঙ্গে যাকে বিলাতে কৃষিবিজ্ঞানী করার জন্য প্রতিমাসে সেই সময় পাঁচশ টাকা করে পাঠাতেন, আর নগেন্দ্র চিঠি লিখে আরও টাকা পাঠানোর তাগাদা দিতেন। 
প্রত্যুত্তরে কবি লিখতেন, আমার জমিদারী থেকে প্রতিমাসে পাঁচশ টাকাই পাই, তার পুরোটাই তোমাকে পাঠাই। সেই নগেন্দ্র বিলাত থেকে ফিরে দুই সন্তান সহ মীরাকে পরিত্যাগ করে অন্যত্র চলে যান। কবির তিন জামাই যাদের প্রত্যেককে বিদেশে পড়িয়ে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তারা প্রতেকেই কোন না কোন ভাবে কবিকে দুঃখ দিয়েছেন। সারাজীবনে কবি দুঃখ পেয়েছেন বারেবারে, অপমানিত-উপেক্ষিতও হয়েছেন অসংখ্যবার। 

১১. আর্জেন্টিনার কবিপ্রেমী লেখিকা ভিক্টোরিয়া ওকাম্পর সাথে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে কুৎসা করে সংবাদপত্রও প্রকাশিত হয়েছে। 

১২. কবির তখন ৬৪বছর।  নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশ্ববরেণ্য সাহিত্যিক l কবির নোবেল প্রাপ্তি নিয়েও কিছু লোক তাঁকে ব্যাঙ্গও করেছিলেন। 
চিঠি লিখে কবির কাছে জানতে চাইছেন নোবেল পুরস্কার পাওয়ার টেকনিক, সেক্ষেত্রে ভাবী পুরস্কারপ্রাপক কবিকে অর্ধেক টাকা দিতেও রাজি। 

১৩.  শান্তিনিকেতনে সাক্ষাৎ করতে এসে কেউ কবিকে বলছেন, রবিবাবু আপনি কি এখনো কবিতা-টবিতা লেখেন নাকি? মানে অতোগুলো টাকা পাওয়ার পর আবার কেউ লেখে নাকি! অথচ অনেকেই জানেননা, নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তির খবরটা প্রশান্তচন্দ্র মহলনাবিশ যখন কবিকে দেন তখন কবির প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘ যাক, ওই টাকায় এবার বিশ্বভারতীর সেচখাল কাটার সংস্থানটা হবে’। যারা কবি বা লেখক তারা সকলেই সমাজের কাছে একটা স্বীকৃতি চায়, রবীন্দ্রনাথ বহুদিন সেটা বাঙালি সমাজের কাছে পাননি। তাই নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তাঁকে যখন সম্বর্ধনা দেওয়া হলো তখন তিনি বললেন, ‘আমি এই সম্মানের পাত্রকে ওষ্ঠ পর্যন্ত তুলব কিন্তু গলা পর্যন্ত যেতে দেব না’।  কতবড় অভিমান ও দুঃখ থাকলে এ কথা বলা যায়! 

১৪. রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেছেন,  'পৃথিবীতে এসে যে ব্যক্তি দুঃখ পেলনা, সে লোক ঈশ্বরের কাছ থেকে সব পাওয়া পেলনা’। বারেবারে মৃত্যু-দুঃখ-অপমান রবীন্দ্রনাথকে শাণিত করেছে সৃষ্টিপথে, নির্মোহ করেছে জগৎ সংসারে, নস্টালজিক করেছে ক্ষণেক্ষণে। 
তাই তিনি বলতে পেরেছেন, ‘ আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবুও আনন্দ, তবুও অনন্ত জাগে’। আমরাও যেন সদা তাঁর সুরে সুর মিলিয়ে বলতে পারি, “ মনেরে আজ কহ যে/ ভালো মন্দ যাহাই আসুক/ সত্যরে লও সহজে”।

Collected

যোগ্যতা নাকি সৌন্দর্য?

প্রাচীন মিশরে পাতলা কোমরের মেয়ের খুব কদর ছিল। যে মেয়ে যত স্লিম, তাকে তত আকর্ষণীয় ধরা হত।
কিন্তু এসব পাতলা কোমরের মেয়েরা যখন বিয়ে করতো, তখন তারা বেছে বেছে মোটা ভুঁড়িওয়ালাদেরই বিয়ে করতো।
কারণ সেসময়ে ভাবা হত, ধনীরা গরীবদের চেয়ে ভাল মন্দ খায় । তাই মোটা লোকরা আর্থিকভাবে সচ্ছল ও ধনবান হয়।
তখন দেখা যেত, অনেক পুরুষই কৃত্রিমভাবে মোটা হওয়ার চেষ্টা করত। আবার মাথায় টাকওয়ালা পুরুষদের ভাবা হত মহাজ্ঞানী । তাদেরও বেশ কদর ছিল।
মধ্যযুগে এসে মোটা মেয়েদের কদর খুব বেড়ে যায়। কারণ তাদের ধনী-অভিজাত পরিবারের ভাবা হত। কারণ, একগাদা দাসী থাকার কারণে তাদের কোন কাজই করতে হতো না। ফলে কাজ না করার জন্য মোটা হয়ে যেত,  সেটাই ছিল আভিজাত্যের প্রতীক।
আসলে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা যুগ ভেদে একেক রকম।
আজ সারা বিশ্বে প্রচার করা হচ্ছে মেয়েদের জন্য ফর্সা মানেই সুন্দর, জিরো ফিগার মানেই আকর্ষণীয়। এই জন্য দু'বেলা হাফ প্লেট ভাত খেয়ে দুর্বল শরীর নিয়ে হলেও ফিগার জিরো মেইনটেইন করায় ব্যস্ত সবাই।
অথচ আগের যুগে জিরো ফিগারের মেয়ে দেখলে লোকে নির্ঘাত ভাবতো, মেয়েটা নিশ্চয় কাঙ্গাল পরিবারের। না খেতে পেয়ে এমন শুকিয়ে গেছে।
এগুলো আসলে কিছুই না। সবই কর্পোরেট ব্যবসা। মোটা বা চিকন, কালো বা ফর্সা- কোনটা ফ্যাশন এটা নির্ধারণ করে কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা। তারাই তাদের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে সৌন্দর্যের বিভিন্ন সংজ্ঞা দেয়, আর আমরা সেই অনুযায়ী সুন্দর হওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ি।
ফোর্বস ম্যগাজিন অনুযায়ী বিশ্বে প্রতিবছর কসমেটিক ব্যবসা হয় প্রায় ২৭০ বিলিয়ন ডলার
 (১ বিলিয়ন= ১০০কোটি)!!! 
এর মধ্যে L'oreal এবং Maybelline কোম্পানি সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করে। সৌন্দর্যের বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় দুধরনের মানুষেরা। 

এক:- কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা, ব্যবসায়িক স্বার্থে।

 দুই:- যাদের নিজস্ব কোন যোগ্যতা নেই, তাই সৌন্দর্যকেই এরা যোগ্যতা মনে করে।

তবে, আমার কাছে যদি সৌন্দর্যের সংজ্ঞা চাওয়া হয়, তবে আমি বলবো যোগ্যতাই মানুষের আসল সৌন্দর্য।
এরপরেও যারা নিজেদের সুন্দর ভাবে না, তারা নিজের সৌন্দর্য বাড়ানোর চেষ্টা বাদ দিয়ে যোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত। যোগ্য মানুষ দেখতে যেমনি হোক না কেন, তাদের দেখতে কিন্তু সুন্দরই লাগে।
জীবনের এক পর্যায়ে এসে এটাই একমাত্র বাস্তব সৌন্দর্য হয়ে দাঁড়ায়।

একজন সৎ প্রধান্মন্ত্রীর গল্প "লাল বাহাদুর শাস্ত্রী"

এমন একজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন যিনি ১৯৬৫ সালে নিজের একটি ৪ চাকার গাড়ি ক্রয় করতে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক থেকে মাত্র ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, জীবদ্দশায় সেই ঋণের একটি কিস্তিও উনি জমা করতে পারেননি ।

১৯৬৬ সালে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর ব্যাঙ্ক কতৃপক্ষ উনার বাড়িতে নোটিশ পাঠান। নোটিশ পেয়ে উনার স্ত্রী নিজের পেনশনের টাকা থেকে ওই ঋণের সকল কিস্তি জমা করেন। যার কথা বলছি উনি আর কেউ নন, উনি লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। উনার সহধর্মিণী ললিতা শাস্ত্রীও ঠিক উনারই মতো সৎ স্বভাবী ছিলেন এবং সারা জীবন একজন প্রকৃত জীবনসঙ্গীর মতোই পাশে ছিলেন।

শাস্ত্রীর ওই ৪ চাকার গাড়িটি আজও রয়েছে জনপথের আবাসে (বর্তমানে সংগ্রহশালা)! এবার এখানে একটু থামুন, আর ভাবুন কিছু এমন লোকের কথা যারা ব্যাঙ্ক এর ঋণের কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা। 
এমন আর একটি ঘটনার কথা আজ বলা খুব দরকার।

১৯৬২ সালের কথা, সেসময় শাস্ত্রীজি অখিল ভারতীয় কংগ্রেস কমিটির মহাসচিব। তখন প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরু। উনার কোনো এক কাজের দরুন কাশ্মীর যাওয়ার দরকার ছিল। নেহরু উনাকে কাশ্মীর যেতে লাগাতার অনুরোধ করলেও তিনি বার বার যেতে অস্বীকার করেন। পণ্ডিত নেহরুও হতচকিত হন। কেন উনি যেতে রাজী হচ্ছেন না। রীতিমত অবাক হন পণ্ডিত নেহরু। পণ্ডিত নেহরু কিন্তু উনাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভালবাসতেন। তখন নেহরু উনাকে কাশ্মীর না যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। প্রথমে তো উত্তর দিতেই নারাজ। শুধু একটাই কথা আমি যাবো না। কিন্তু বহু বার অনুরোধ করার পর উনি যে উত্তর দিলেন তাতে নেহরুর চোখে জল চলে এসে যায়। শাস্ত্রী বললেন, কাশ্মীরে খুব ঠাণ্ডা পড়ছে। আর তার কাছে গরম পোষাক-আশাক নেই।
পণ্ডিত নেহরু অত্যন্ত ভাবুক হয়ে পড়েন এবং নিজের একখানা গরম বস্ত্র উনাকে দেন। পণ্ডিত নেহরুও এই কথাটি আর কাউকে বলেননি। এই লাল বাহাদুর শাস্ত্রী যখন প্রধানমন্ত্রী হন তখন সেদিনের নেহরুর দেওয়া ওই কোটটি পরিধান করেই শপথ নেন। এই একটি কোট দুই প্রধানমন্ত্রী ব্যবহার করেছিলেন।

এবার এখানে আবারও একটু থামুন এবং ভাবুন- আজকের নেতারা দশ লাখের স্যুট পরিধান করে নিজেকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গরিব বলে দাবী করেন।কত বাহুল্য! কত রঙ্গ! কত বিলাসিতা!

কিংবদন্তি সার্জন ডাঃ হ্যামিল্টন মাস্টার অফ মেডিসিন

এক নিরক্ষর ডাক্তার। তিনি লেখা পড়া জানতেন না। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনের বাসিন্দা ,, বিখ্যাত সার্জন ডাঃ হ্যামিল্টন। যাকে "মাষ্টার অফ মেডিসিন" সম্মানে সম্মানিত করা হয়।। 

এটা কিভাবে সম্ভব ?? 

চলুন,, একটু জেনে নেওয়া যাক।

"কেপটাউন মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি" চিকিৎসা জগত এবং ডাক্তারি পড়াশোনা করার জন্য বিশ্ব বিখ্যাত এক প্রতিষ্ঠান।
এই বিশ্ববিদ্যালয় এমন একজন ব্যাক্তিকে মাষ্টার অফ মেডিসিন সম্মান জানিয়েছে,,যিনি জীবনে কখনো স্কুলে যাননি।

পৃথিবীর প্রথম "বাইপাস সার্জারি" হয়েছিল,
কেপটাউনের এই ইউনিভার্সিটিতে।

2003 সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রফেসর "ডাঃ ডেভিড ডেট" এক আড়ম্বর- পূর্ণ অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেন,, " আজ আমরা এমন একজন ব্যাক্তিকে সম্মান জানাতে চলেছি,, যার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হাজারো পড়ুয়া সার্জারি শিখেছেন। যিনি 
কেবলমাত্র একজন শিক্ষক নন,, বরং একজন উচ্চ মানের সার্জন এবং ভালো হৃদয়ের মানুষ। ইনি চিকিৎসা বিজ্ঞানে যে অবদান রেখে গেছেন,, সেটা পৃথিবীর খুব কম মানুষই রাখতে পেরেছেন।" 

এরপর প্রফেসর "ডেভিড" সাহেব "সার্জন হ্যামিল্টন" এর নাম নিতেই,, উপস্থিত সকলে দাঁড়িয়ে পড়েন। উল্লাসে ফেটে পড়ে সভা ঘর।এটাই ছিলো এই বিশ্ব--বিদ্যালয়ের সবচেয়ে আড়ম্বর এবং ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান।

হ্যামিল্টনের জন্ম কেপটাউনের প্রত্যন্ত এলাকা " সোনিট্যানি ভিলেজ।"তার পিতা-মাতা ছিলেন পশুপালক। ভেঁড়া এবং ছাগল পুষে জীবিকা নির্বাহ করতেন।  পিতা অসুস্থ হয়ে পড়লে,, হ্যামিল্টন কাজের খোঁজে কেপটাউন সিটি চলে যান।

শহরে গিয়ে তিনি রাজমিস্ত্রি জোগাড়ে হিসাবে কাজ শুরু করেন। কেপটাউন মেডিক্যালে তখন চলছে নির্মাণ কাজ। বেশ কয়েক বছর তিনি সেখানে কাজ করেন।এরপর নির্মাণ কার্য সমাপ্ত 
হয়ে যায়।

হ্যামিল্টনের কাজের মানসিকতা এবং কর্মের প্রতি নিষ্ঠা দেখে,, তাকে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ সেখানেই রেখে দেয়। তার কাজ ছিল টেনিস কোটে ঘাস ছাঁটাই করা। 
তিন বছর এভাবেই চলতে থাকে। এরপর তার সামনে আসে,, এক সুবর্ণ সুযোগ এবং সেই সুযোগ তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এমন এক স্তরে পৌঁছে দেয়,, যেখানে যাওয়া একজন সাধারণ মানুষের কাছে,, আকাশ ছুঁয়ে দেখার সমতুল্য।

সেদিন প্রফেসর "রবার্ট ডায়াস" একটি জিরাফ নিয়ে গবেষণা করছেন। জিরাফ ঘাড় নিচু করে জলপান করার সময়,, তার গলার ব্লাড সার্কুলেশন কমে কেনো ?? এটাই তার গবেষণার বিষয়।নিয়মমাফিক জিরাফকে অজ্ঞান করে দেওয়া হলো।
অপারেশন চলছে,, ঠিক সেই মুহূর্তে জিরাফ ঘাড় নাড়তে শুরু করে দিলো। এমতবস্থায় জিরাফের ঘাড়টা শক্ত করে ধরে রাখার জন্য,, একজন শক্তপোক্ত মানুষের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

হ্যামিল্টন তখন ঘাস কাটায় মগ্ন। প্রফেসর তাকে ডেকে নিলেন,, অপারেশন থিয়েটারে। হ্যামিল্টন জিরাফের গর্দান ধরে রয়েছেন,, অপারেশন করে চলেছেন প্রফেসর।

অপারেশন কন্টিনিউ আট ঘন্টা চলতে থাকে।
 এর মধ্যে ডাক্টার-টিম ব্রেক নিতে থাকেন কিন্তু হ্যামিল্টন টানা আট ঘন্টা ধরে থাকলেন জিরাফের গলা। অপারেশন সমাপ্ত হতেই,, হ্যামিল্টন চুপচাপ বাইরে বেরিয়ে গিয়ে টেনিস কোর্টে ঘাস কাটতে 
লেগে যান।

প্রফেসর রবার্ট ডায়াস তার দৃঢ়তা এবং কর্মনিষ্ঠা দেখে আপ্লুত হয়ে গেলেন। তিনি হ্যামিল্টনকে "ল্যাব এসিষ্ট্যান্ট" হিসাবে পদোন্নতি করিয়ে দেন।
প্রতিদিন বিভিন্ন সার্জন তার সামনে হাজারো অপারেশন করে চলেছেন,, তিনি হেল্পার হিসাবে কাজ করে চলেছেন।
এভাবেই চলতে থাকে বেশ কয়েক বছর।

এরপর ডাঃ বার্নড একদিন অপারেশন করে, হ্যামিল্টনকে ষ্টিচ দেওয়ার দায়িত্ব দেন। তার হাতের সুনিপুণ সেলাই দেখে, ডাঃ বার্নড অবাক হয়ে যান। এরপর,, বিভিন্ন সার্জন তাকে সেলাইয়ের কাজ 
সপে দিতে থাকেন।

দীর্ঘকাল অপারেশন থিয়েটারে থাকার কারনে,, মানব শরীর সম্বন্ধে তার যথেষ্ট ধারণা তৈরী হয়ে যায়। তিনি ডিগ্রীধারী কোনো সার্জনের চেয়েও বেশী জানতেন,, মানব দেহ সম্পর্কে। এরপর ইউনিভার্সিটি তাকে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রাকটিক্যাল শেখানোর কাজে নিয়োগ করে।

জুনিয়র ডাক্তারদের শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি তিনি ইউনিভার্সিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠেন। তিনি অবলীলায় যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন করে দিতে পারতেন। বহু সার্জন যে অপারেশন করতে কুন্ঠিত হতেন,, তিনি অতি সহজেই সেই কাজ করে ফেলতে পারতেন।

1970 সালে এই ইউনিভার্সিটিতে লিভার নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা শুরু হয়। তিনি লিভারের মধ্যে অবস্থিত এমন একটি ধমনী চিহ্নিত করেন,, যার কারনে লিভার প্রতিস্থাপন অত্যন্ত সহজ হয়ে যায়। বিশ্ব বিখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা অবাক 
হয়ে যান। আজ তার দেখানো পথ ধরেই,, 
লিভার ট্রান্সফার করা হয়ে থাকে।

নিরক্ষর হ্যামিল্টন জীবনের পঞ্চাশ বছর কেপটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটিয়ে দেন। এই পঞ্চাশ বছরে তিনি একদিনও ছুটি নেননি। 
প্রতিদিন ১৪ মাইল পায়ে হেঁটে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেন। তার অবদান কেপটাউন মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি তথা বিশ্ব চিকিৎসা বিজ্ঞান কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারবে না।

তিনি মোট ত্রিশ হাজার সার্জনের শিক্ষা- গুরু ছিলেন।

2005 সালে এই কিংবদন্তি মানুষটি মারা যান। 
তার মৃতদেহ ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের মধ্যেই দাফন করা হয়। এই বিরলতম সম্মান একমাত্র তিনিই অর্জন করতে পেরেছেন।

কিংবদন্তি সার্জন ডাঃ হ্যামিল্টন প্রমাণ করে গেছেন,,,  
কেবলমাত্র পুঁথিগত শিক্ষা-টুকুই যথেষ্ট নয়।

সংগৃহীত।

সত্য চিরকাল সত্য

জেরুজালেমে ঘোড়ার আস্তাবলে যীশুর জন্মাতে তখনও তিনশো চুরাশি বছর দেরি ; জন্ম নিলেন এ্যারিস্টটল! 

শুধু গ্রীস নয় সারা বিশ্ব নড়ে চড়ে উঠল মানুষটার কথাবার্তায়! গ্রীক বীর আলেকজাণ্ডারকে টিউশন পড়িয়ে ফেরার পথে গার্জেনদের জটলায় দাঁড়িয়ে  
বললেন, "শিক্ষার শেকড়ের স্বাদ তেতো হলেও ফল মিষ্টি" ; এতগুলো বছর পরে মানুষটা নেই, রয়ে গেছে কথাগুলো আগুনের মতো সত্যি হয়ে! 

তারও আগে এথেন্স এ্যাকাডেমির বারান্দায় দাঁড়িয়ে সোচ্চার কন্ঠে বলে গেলেন প্লেটো, 
"রাজনীতিতে অংশগ্রহণে অনীহার অন্যতম শাস্তি হলো নিজের চেয়ে নিকৃষ্টদের দ্বারা শাসিত হওয়া!"
 মিথ্যে নয় কথাগুলো! 

দু'হাজার ছ'শো বছর আগেই বোধহয় মানুষটা জানতেন...এম.এল.এ.,এম.পি. হয়ে বিধানসভা কিংবা পার্লামেন্টে পৌঁছোতে গেলে এম.এ., এম.এস.সি.,পি.এইচ.ডি. অথবা মিনিমাম কোনো কোয়ালিফিকেশনের প্রয়োজন নেই বরং এম.এ, এম.এস.সি,পি.এইচ.ডি'রাই নন ম্যাট্রিক এম.এল.এ, এমপি'দের পিছনে হাত কচলাতে কচলাতে স্যার স্যার করে ঘুরবে ! 

তার চেয়েও বহু আগে পৃথিবীতে যীশু আসার 
চারশো সাতাশ বছর আগে হেমলক ভর্তি কাপে
 চুমুক দিতে দিতে প্লেটোর মাস্টারমশায় সক্রেটিস বলে গেলেন, "এমন একটা সময় আসবে 
যখন জ্ঞানীরা জ্ঞানী হবার কারণে অনুশোচনা করবে, মুর্খরা তাদের মুর্খতার জন্য গর্ব করবে, 
আর দুর্নীতিবাজেরা তাদের দুর্নীতির জন্য 
উল্লাস করবে!"

সক্রেটিস থেকে শুরু করে প্লেটো এ্যারিস্টটল হয়ে 
জিওর্দানো ব্রুনো কোপারনিকাস গ্যালিলিও ---
রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্লজ্জতার ধারাবাহিক ইতিহাস ;
সত্যের কন্ঠরুদ্ধ করার ট্র্যাডিশনাল বর্বরতা ;
যার লেটেস্ট বাংলা ভার্সন :
"মাস্টারমশাই,আপনি কিছুই দেখেননি!"

পৃথিবীর মোস্ট সিনিয়র মাস্টারমশাই সব কিছু দেখে শুনে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও হাসতে হাসতে তুলে নিলেন এ কাপ ফুল অফ হেমলক ;
দাউদাউ আগুনে  পুড়ে গেলেন জিওর্দানো ;
নিশ্ছিদ্র খুপরিতে মস্তিষ্ক অবশ হয়ে আসার শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত গ্যালিলিও উচ্চারণ করে গেলেন, 
ইট মুভস্ ঘুরছে, ঘুরছে, পৃথিবী ঘুরছে! 

হ্যাঁ! ঘুরছে! পৃথিবী ঘুরছে!
আজও ঘুরেই চলেছে ঘুরবেও অনন্তকাল ---
এটা বিলাসিতা নয়, বিজ্ঞান ;আর মাস্টারমশাইও
সবকিছু দেখছেন, এটা বিশ্বাস!

সংগৃহীত

নির্মম নিষ্ঠুর কলম্বাসের কাহিনী

ইতিহাস বড়ই নির্মম। সে কাউকেই ক্ষমা করেনি, করবেও না। আজ হোক বা শত শত বছর, ইতিহাস তার ফেলে আসা সময়ের বিচার করবেই।

পাঁচ শতক পেরিয়ে গেলেও আমেরিকার আবিস্কারক হিসেবে পরিচিত কলম্বাসকে কিন্তু ইতিহাস ছাড়েনি। আমেরিকা জয়ের পরে তাঁর সেই নির্মমতার প্রতীকী বিচার শুরু হয়েছে।

১৪৯২ সালের ১২ অক্টোবর। ক্রিস্টোফার কলম্বাসের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী তিনটি জাহাজে চড়ে আমেরিকার বাহামাস দ্বীপে পৌঁছান। সরলমনা স্থানীয় আদিবাসীরা তাদেরকে অতিথি হিসেবে স্বাগত জানান। কলম্বাসের একটি ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ মেরামতও করে দেন তারা।

অভ্যর্থনা জানাতে আসা আদিবাসীদের দেহে স্বর্ণের অলঙ্কার দেখে কলম্বাস অনুমান করেন আশেপাশের কোথাও স্বর্ণের খনি রয়েছে। আদিবাসীদের সরলতা কলম্বাসকে মুগ্ধ করে এ জন্য যে, তিনি খুবই কম পরিশ্রমে ওই ভূখণ্ডের সব কিছু নিজের দখলে নিতে পারবেন। তিনি আমেরিকার মূল মালিক আদিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা পাকাপোক্ত করেন এবং স্পেনে গিয়ে আরও এক হাজার দুইশ’ ইউরোপীয়কে সঙ্গে নিয়ে আসেন।

শুরু হয় নির্মমতা, চলে গণহত্যা। কলম্বাস বাহিনী হিস্পানিওলা দ্বীপের একটি প্রদেশে ১৪ বছরের উপরের সব আদিবাসীকে তিন মাস পরপর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ জমা দেওয়ার নির্দেশ জারি করেন। এই নির্দেশ মানতে যারাই ব্যর্থ হতো তাদেরই দুই হাত কেটে ফেলা হতো। হাত কাটার পর তারা রক্তপাতে মারা যেত। অনেকে বাঁচার জন্য পালানোর চেষ্টা করতো। তাদেরকে হিংস্র কুকুর দিয়ে খুঁজে বের করে নির্মম অত্যাচারের মাধ্যমে মেরে ফেলা হত। অনেক আদিবাসীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।

হিস্পানিওলা দ্বীপে বসবাসকারীরা ছিল আরাওয়াক গোত্রের। অনেক ঐতিহাসিকের মতে, কলম্বাসের নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয় বাহিনীরনির্মমতা সইতে না পেরে ৫০ হাজার আদিবাসী বিষ খেয়ে গণ-আত্মহত্যা করেছিলেন। মায়েরা তাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতেন যাতে ইউরোপীয়রা ওই বাচ্চাদেরকে কুকুরের খাবারে পরিণত করতে না পারে। এরপরও যারা বেঁচে ছিলেন তাদেরকে দাসে পরিণত করেন কলম্বাস।
 
কলম্বাসের সময়ের কিছু নির্মমতার ইতিহাস উঠে এসেছে তার নিজস্ব জার্নাল ও চিঠিতে। আরও তথ্য পাওয়া যায় স্পেনের ঐতিহাসিক বার্তোলমে দা লাস কাসাস এর লেখা ‘হিস্টোরি অব দ্য ইন্ডিজ’ গ্রন্থে। তিনি লিখেছেন,কলম্বাস বাহিনী তাদের ছুরি ও তলোয়ারের ধার পরীক্ষা করার জন্যও আদিবাসীদের টুকরো টুকরো করে কাটত, নিষ্পাপ শিশুদের শিরচ্ছেদ করত। 

কলম্বাস যাদেরকে রেড ইন্ডিয়ান বলে নামকরণ করেছিলেন সেই আদিবাসীদের একটা বড় অংশকে নিশ্চিহ্ন করার পর ইউরোপীয়রা নিজেদের বিলাসী জীবন নিশ্চিত করতে একদল সেবকের প্রয়োজন বোধ করে। তারা আফ্রিকা মহাদেশে গিয়ে মানুষ ধরে আনতে শুরু করে। এভাবেই আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের আগমন। তারা স্বেচ্ছায় আমেরিকায় আসেননি, তাদেরকে জোর করে ধরে আনা হয়েছে।

বিখ্যাত কৃষ্ণাঙ্গ লেখক অ্যালেক্স হেলি আমেরিকায় তার নিজের প্রথম পূর্বপুরুষের অনুসন্ধানে ব্যাপক গবেষণা চালিয়েছিলেন। সেই গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে লেখা ‘রুটস: দ্য সাগা অফ এন অ্যামেরিকান ফ্যামিলি’ বইয়ে আফ্রিকা থেকে মানুষ ধরে আনার কিছু ঘটনার প্রামাণ্য বর্ণনা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে গবেষণার পর জানতে পারেন আমেরিকায় তার প্রথম পূর্বপুরুষের নাম কুন্তা কিন্তে।

গাম্বিয়া থেকে কুন্তা কিন্তে-কে ধরে নিয়ে আসে ইউরোপীয়রা। কুন্তা কিন্তে’র আমেরিকায় পৌঁছার খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন অ্যালেক্স হেলি। 

কুন্তা কিন্তে জঙ্গলে কাঠ কাটতে গিয়ে ইউরোপীয়দের অনুচরদের মাধ্যমে অপহৃত হন। এরপর তার আত্মীয়-স্বজনেরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাননি। ১৭৬৭ সালে এক ইউরোপীয় দাস ব্যবসায়ী অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে গাম্বিয়ার যে ১৪০ জন মানুষকে জাহাজে করে আমেরিকায় নিয়ে এসেছিল তার মধ্যে কুন্তা কিন্তেও ছিলেন। জাহাজটি অ্যানাপোলিসের বন্দরে এসে থামে। অ্যানাপোলিস বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত। আমেরিকায় পৌঁছার আগেই পথে নির্মমতায় মারা যায় ৪২ জন গাম্বিয়ান। বেঁচে যাওয়া ৯৮ জনের একজন হলেন কুন্তা কিন্তে। তিনি ছিলেন মুসলমান। 

অথচ কলম্বাসের আগেও অনেকে আমেরিকা গিয়েছিলেন। অনেক মুসলিম নাবিকও আমেরিকা গিয়েছিলেন তার প্রমাণ রয়েছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান কয়েক বছর আগে নতুন করে এই প্রসঙ্গটি সামনে আনলে এ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। কিন্তু তাদের কারো চিন্তায়ই কলম্বাসের মতো এমন বর্বরতা ঢোকেনি।

কিন্তু ইতিহাস কত নির্মম। ৫০০ বছর পরে হলেও ইতিহাসে মহাবীর হিসেবে জায়গা করে নেয়া কলম্বাস আজকে বর্বর, নির্মম, পাষণ্ড হিসেবে তার চরিত্র উন্মোচিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জায়গা নেয়া তার ভাষ্কর্য আজকে অপসারিত হচ্ছে, ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে, ভাষ্কর্যের গায়ে লাল রঙ মেখে তার রক্ত পিপাসু চরিত্র উন্মোচন করা হচ্ছে। জনবিরোধী, স্বৈরাচার, বর্বরদের ইতিহাস কখনো ক্ষমা করে না। আজ না হোক কাল, মৃত্যুর পরে হলেও জনগণ তাদের গলায় দড়ি বেঁধে ইতিহাসের কাঠগড়ায় হাজির করবে। ক্রিস্টোফার কলম্বাস তার জ্বলন্ত উদাহরণ।

সংগৃহীত

যেমন ছিলেন প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.)।

যেমন ছিলেন প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.)।

১/ তিনি দীর্ঘ সময় নীরব থাকতেন। 
২/ তিনি কম হাসতেন। 
৩/ তিনি মুচকি হাসতেন, হাসি ওনার ঠোঁটে লেগে থাকতো।
৪/ তিনি অট্টহাসি হাসতেন না।
৫/ তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ ত্যাগ করতেন না।
৬/ তিনি দৈনিক শতবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। 
৭/ তিনি কখনোই প্রতিশোধ নিতেন না।
৮/ তিনি যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়া কাউকেই আঘাত করেননি। 
৯/ তিনি বিপদে পড়লে তাৎক্ষনিক নামাজে দাঁড়িয়ে পড়তেন।
১০/ তিনি অসুস্থ হলে বসে নামাজ পড়তেন। 
১১/ তিনি শিশুদের সালাম দিতেন। 
১২/ তিনি সমাবেত মহিলাদের সালাম দিতেন। 
১৩/ তিনি শিশুদের পরম স্নেহ করতেন।
১৪/ তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে কোমল আচরণ করতেন।
১৫/ তিনি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। 
১৬/ তিনি ঘুম থেকে জেগে মেসওয়াক করতেন।
১৭/ তিনি মিথ্যাকে সার্বাধিক ঘৃণা করতেন।
১৮/ তিনি উপহার গ্রহণ করতেন।
১৯/ তিনি সাদকাহ (দান) করতেন।
২০/ তিনি সব সময় আল্লাহকে স্মরণ করতেন।
২১/ তিনি আল্লাহকে সব সময় ভয় করতেন
২২/ হাতে যা আসতো তা আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিতেন।
২৩/ কেউ কথা বলতে বসলে সে ব্যক্তি উঠা না পর্যন্ত তিনি উঠতেন না। 
২৪/ বিনা প্রয়োজনে কথা বলতেন না।
২৫/ কথা বলার সময় সুস্পষ্টভাবে বলতেন যাতে শ্রবণকারী সহজেই বুঝে নিতে পারে। 
২৬/ কথা, কাজ ও লেন-দেনে কঠোরতা অবলম্বন করতেন না। 
২৭/ নম্রতাকে পছন্দ করতেন।
২৮/ তাঁর নিকট আগত ব্যক্তিদের অবহেলা করতেন না। 
২৯/ কারো সাথে বিঘ্নতা সৃষ্টি করতেন না।
৩০/ শরীয়তবিরোধী কথা হলে তা থেকে বিরত থাকতেন বা সেখান থেকে উঠে যেতেন। 
৩১/ আল্লাহ তায়ালার প্রতিটি নিয়ামতকে কদর করতেন।
৩২/ খাদ্যদ্রব্যের দোষ ধরতেন না। মন চাইলে খেতেন না হয় বাদ দিতেন।
৩৩/ ক্ষমাকে পছন্দ করতেন।
৩৪/ সর্বদা ধৈর্য্য ধারণ করতেন।
রাসুল (সা.) এর গুণাবলি বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নবী (সা.) এর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমিন ।

(সংগ্রহ)

টমাস আলভা এডিসনের ছোটবেলার চিঠি

পিতৃহারা ৭/৮ বছর বয়সের ছেলেটি স্কুল হতে বাড়ীতে এসে মাকে বলল,,,,
"মা"-- প্রিন্সিপাল আমাকে আদর করে কিছু ক্যান্ডি দিয়েছে,, আর-- তোমার জন্য এই চিঠিটা,,,

মা চিঠিখানা খুলে পড়ে কেঁদে ফেললেন,,

মায়ের চোখে জল দেখে ছেলেটি বললো --"মা"
কাঁদছ কেনো?

চোখ মুছতে মুছতে মা বললেন-- "বাবা"
এটা আনন্দের কান্না,,,,,

বলেই ছেলেটিকে চুমু দিয়ে বললেন,; আমার
জিনিয়াস বাবা,; তোকে চিঠিটা পড়ে শোনাই,,

মা আনন্দের সাথে চিৎকার করে স্যার‌ের ল‌েখার ভাষা বদল‌ে নিজের মত কর‌ে পড়তে লাগলেন,,,, "ম্যাম"
আপনার ছেলেটি সাংঘাতিক জিনিয়াস,,
আমাদের ছোট্ট শহরে ওকে শিক্ষা দেওয়ার মত
শিক্ষক আমাদের নেই;;
তাই--যদি পারেন আপনার ছেলেকে বড় শহরে
কোনো স্কুলে ভর্তি করে দিলে ভালো হয়,,
এই ছেলেটি একদিন বিশ্বে প্রচুর সুনাম অর্জন করবে,,

পত্রখানা পড়েই মা, ছেলেটিকে চুমু দিয়ে বললেন, এই জিনিয়াস ছেলেটিকে আমি নিজেই পড়াবো,,,

মা নিজেই শিক্ষা দিয়ে ছেলেটিকে যুক্তরাষ্ট্রের তথা সমগ্ৰ পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক বানালেন,,

"""#টমাস_আলভা_এডিসন"""

বৈদ্যুতিক বাল্ব, শব্দ রেকর্ডিং, মুভি ক্যামেরা বা চলমান ছবি ইত্যাদি সহ হাজারো আবিষ্কার তাঁর;;

মায়ের মৃত্যর পর টমাস এডিসন একদিন সেই ছোট্ট গ্রামে মায়ের সেই ছোট্ট বাড়ীতে গিয়ে ঘর পরিষ্কারের সময় স্কুলের প্রিন্সিপ্যালের দ‌েয়া চিঠিটা পেল,, চিঠিখানা পড়ে টমাস কেঁদে দিল!!

তাতে লেখা ছিল,
"ম্যাডাম--
আপনার ছেলে টমাস এডিসন একজন মেন্টালি রিটার্ডেড;;
সে এতটাই নির্বোধ যে- তাকে শিক্ষা দেওয়ার মত ক্ষমতা আমাদের নেই//
কার'"ও আছে বলেও আমাদের জানা নেই,, আপনার ছেলের কারণে আমাদের স্কুলটির সুনাম ক্ষুন্ন হবে,,
তাই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনার ছেলেকে স্কুল থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হল;;;

শিক্ষনীয়ঃ-
সন্তানের সাথে সর্বদাই পজিটিভ আচরন করবেন, বাসস্থান হল সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মা হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক!!
সংগৃহীত

Tuesday, September 5, 2023

সাড়ে ৩ হাত জমি

বড় বোন ব্যবসায়ীর স্ত্রী, থাকে শহরে। ছোট বোন কৃষকের স্ত্রী, থাকে গ্রামে। বড় বোন এসেছে ছোট বোনের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে। চা খেতে খেতে দুই বোন গল্প করছিল। বড় বোন বলছিল শহরে থাকার সুযোগ-সুবিধার কথা। বেশ বাড়িয়ে বলা। যাকে বলে গল্প দেওয়া। ছোট বোনও গ্রামে থাকার ভালো দিকগুলোর কথা বলে।

ছোট বোনের স্বামী পাখোম সব শুনছিল। সে বলল, ‘কথা ঠিক। ছোটবেলা থেকেই মাটির কোলে পড়ে আছি। তাই বলে তেমন কোনো অভাব নেই। অভাব কেবল একটিই, আমার জমি খুব কম। জমি যদি পাই তা হলে কাউকে পরোয়া করব না, স্বয়ং শয়তানকেও না।’

শয়তান শুনে বেশ খুশি হলো। ভাবল, একে নিয়ে মজার একটা খেলা খেলবে। আগে অনেক জমি দেবে, তারপর কেড়ে নেবে।
পাখোমের জমি ক্রয়

পাখোমের বাড়ির কাছে একজন মহিলা বাস করতেন। তিনি ছিলেন ২৪০ একর জমির মালিক। ভালো মানুষ তিনি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে তার সম্পর্কও ভালো। অবসরপ্রাপ্ত একজন সৈনিককে জমিদারির ওভারশিয়ার নিযুক্ত করলেন তিনি। ওভারশিয়ার লোকটি ভালো নয়। নানা ছলছুতায় কৃষকদের জরিমানা করে সে। কারো গরু, ঘোড়া, বাছুর জমি জিরাতে ঢুকলেই সে জরিমানা করে, অত্যাচার করে। এরই মধ্যে শোনা গেল জমিদার মহিলা তার সব জমি বিক্রি করে দেবেন। আর ওভারসিয়ার কিনে নেবে তার সম্পত্তি। কৃষকরা খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে। শেষে সবাই মিলে বেশি দামে জমি কেনার প্রস্তাব দেয় মহিলাকে। মহিলা রাজি হলো। কিন্তু শয়তানের ইন্ধনে তারা একত্রিত হতে পারছিল না। তাই যার যার মতো জমি কেনার সিদ্ধান্ত হয়।

পাখোমের ১০০ রুবল আগেই ছিল। তারপর একটি গাধার বাচ্চা ও অর্ধেক মৌমাছি বিক্রি করল সে। ছেলেকেও পাঠিয়ে দিল চাকরিতে। এভাবে বাকি অর্ধেক টাকা জোগাড় হলো। সব টাকা জুটিয়ে সে তিরিশ একর জমি ও ছোট একটি বাগান ক্রয় করল। বেশ, পাখোম হয়ে গেল জমির মালিক। তারপর নতুন জমিতে বীজ বুনল, ফসল ফলল প্রচুর। এক বছরের মধ্যেই সে মহিলার সমস্ত টাকা শোধ করে দিল। এখন সে জমির পুরো মালিক। গভীর যত্ন আর মায়া দিয়ে সে ফসল ফলাত। ঘোড়ায় চড়ে সে জমিজমা দেখতে গিয়ে আনন্দে অভিভূত হয়। গভীর যত্ন আর মায়া দিয়ে সে ফসল ফলাত। তার জমির ঘাসগুলো, ফুলগুলো-সবই যেন আলাদা। মন তার আনন্দে ভরে ওঠে।
পাখোমের বাড়িতে অতিথি চাষি

একজন চাষি পাখোমের বাড়ি আসে। পাখোম তাকে থাকতে দেয়, খেতে দেয়। সে জানায়, ভলগার ওপার থেকে সে এসেছে। সে আরও বলে, সেখানে নতুন একটি পত্তনি হয়েছে। গ্রাম্য পঞ্চায়েতে নাম লেখালেই ১০০ একর জমি পাওয়া যায়। আর সে কী জমি! সোনার টুকরো। লোকটি আরও বলে, একজন গরিব চাষি এল। কাজ করার দুখানা হাত ছাড়া কিছুই তার ছিল না। এবার সে ১০০ একর জমিতে শুধু গমই ফলিয়েছে। গত বছর শুধু গম বেচে সে আর্ন করেছে ৫০০০ রুবল। শুনে পাখোম উত্তেজিত হয়ে ওঠলো।

তার বর্তমান সহায়-সম্পত্তি নিয়ে সে আর সন্তুষ্ট থাকতে পারল না। সুতরাং গরম পড়তেই সে বেরিয়ে পড়ল। ভলগা নদীতে স্টিমারে চড়ে পৌঁছল সামারা। সেখান থেকে প্রায় ২৭৪ মাইল পায়ে হেঁটে পৌঁছল গন্তব্যে। গিয়ে দেখল, যেটি সে শুনেছে সবই ঠিক। অতি অল্প দামে উর্বর জমি কেনা যায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, প্রতি একরের দাম মাত্র ১.৫০ রুবল। পাখোম বাড়িতে ফিরে জমিজিরাত বিক্রি করে দেয়। বসন্তের শুরুতে সে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে সেই নতুন দেশে পাড়ি জমায়।
নতুন দেশে পাখোম

নতুন দেশে এসে পাখোম এ সমাজের সদস্য হয়। আর সদস্য হওয়াতেই সে লাভ করে ১০০ একর জমি। গো-চারণ ভূমি তো আছেই। এখানে জীবনযাপন আগের চেয়ে দশগুণ ভালো। পাখোম নতুন নতুন জমি কেনে। ফসল বোনে। লাভ হয় প্রচুর। একবার তো ১০০০ একর জমিই মাত্র ১৫০০ রুবলে কিনে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু এ সময় একজন মহাজন বাড়িতে এসে ওঠে। সে জানায় অনেক অনেক দূরের বাসকিরদের দেশ থেকে সে এসেছে। সেখানে জমির দাম খুবই সস্তা। ১০০০ রুবল দিয়ে সে ১০,০০০ একর জমি কিনেছে। পাখোমকে জমির দলিলটিও দেখাল। লোকটি আরও জানায় যে, মানুষগুলো একেবারে ভেড়ার মতো সরল। আপনি অনায়াসে যে-কোনো জিনিস তাদের কাছ থেকে বাগিয়ে নিতে পারেন। সুতরাং পাখোম কেন ১৫০০ রুবল দিয়ে ১০০০ একর জমি কিনবে? ঐ রুবল দিয়ে সেতো একজন জমিদারই বনে যেতে পারে।
বাসকিরদের দেশে পাখোম

একজন মজুর সঙ্গে নিয়ে বাসকিরদের দেশে যাওয়ার জন্য যাত্রা করল পাখোম। সঙ্গে নিল কিছু উপহার। প্রায় ৩৩২ মাইল পথ হেঁটে গেল তারা। তারপর সাত দিনের দিন বাসকিরদের তাঁবুতে গিয়ে হাজির হলো। মহাজন যেমন বলেছিল সব ঠিক সেরকমই। খোলা প্রান্তরের নদীটির তীরে এরা বাস করে। ঘরবাড়ি নেই। আছে চামড়ার ছাউনি দেয়া গাড়ি। এর মধ্যেই তাদের বসবাস। এরা জমি চাষ করে না, ফসল ফলায় না। জমিতে চরে বেড়ায় ঘোড়া, গরু, মহিষ। ঘোড়ার দুধ এদের প্রিয় খাদ্য। ভেড়ার মাংসও খায়। দুধ থেকে তৈরি কুসিম তাদের পানীয়। এরা সহজ-সরল, দয়ালু ও হাসিখুশি। পাখোমকে দেখেই তারা গাড়ি থেকে নেমে অভ্যর্থনা জানাল, আদর-অপ্যায়ন করল। পাখোমও তাদের উপহার দিল। বিনিময়ে তারা জানতে চাইল যে পাখোম কী চায়? তারা জানল, পাখোম জমি কিনতে চায়। শুনে তারা অতিথির প্রতি খুবই সন্তুষ্ট হলো। তারা বলল, ‘আপনি যত জমি চান তত জমি আমরা বিক্রয় করতে রাজি।’ এ সময় তাদের নেতা স্টার্শিনা এসে সবকিছু শুনলেন। তিনিও জানালেন, পাখোম যত খুশি জমি ক্রয় করতে পারে। জমির দাম দিনপ্রতি ১০০ রুবল। ‘দিনপ্রতি’ ব্যাপারটা পাখোম উঠতে পারল না। নেতা জানালেন, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যতটা জমি ঘুরে আসতে পারবে ততটুকু জমির মূল্য।
পাখোমের স্বপ্ন

পাখোম শুয়েছিল পাখির পালকের বিছানায়। খুব আরামদায়ক। কিন্তু তবুও তার ঘুম হয়নি। অনেক জমির মালিক হতে যাচ্ছে সে। ২০,০০০ একর তো বটেই। চিন্তায় উত্তেজনায় সারা রাত সে ঘুমোতে পারল না। কিন্তু ভোরের দিকে সে ঘুমিয়ে পড়ল। একটা স্বপ্নও দেখল। বাইরে যেন কার হাসির শব্দ। স্বপ্নেই সে বেরিয়ে গেল। দেখল স্টার্শিনা। একটু এগিয়ে দেখল লোকটি স্টার্শিনা নয়, সেই মহাজন। এই লোকটিই তাকে এখানে আসতে বলেছিল। কিছু জিজ্ঞাসা করতেই লোকটি যেন বদলে গেল। এখন সে ভলগার ভাটি থেকে আসা সেই চাষি। সব শেষে পাখোম দেখল, এ হচ্ছে একটি শয়তান; মাথায় শিং, পায়ে খুর। বিকট শব্দ করে সে হাসছে। অদূরে একটি লোক পড়ে আছে। তার মুখ কাগজের মতো সাদা। লোকটির দিকে তাকিয়ে পাখোম দেখল, লোকটি সে নিজে। তার দম যেন আটকে এল। সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে গেল ঘুম। চারদিকে ফর্সা হয়ে গেছে। এখনই সূর্য উঠবে। তাকেও জমি-দখলের দৌড় শুরু করতে হবে।
পাখোমের প্রয়োজনীয় জমি

শিকান নামে একটি গোল পাহাড়। এই পাহাড়ের উপর স্টার্শিনা তার টুপি রাখল। টুপির মধ্যে পাখোমের ১০০ রুবল। এখান থেকেই তার যাত্রা শুরু। পাখোম দেখল সবই উর্বর জমি, সোনার টুকরো। অনেক চিন্তা করে সে সূর্য-উদয়ের দিকে যাত্রা করল। আস্তেও নয়, খুব জোরেও নয়। ১১৬৬ গজ যাবার পর সে একটু থামল। একটি খুঁটি পুতল। এখন সে লম্বা লম্বা পা ফেলে চলতে লাগল। থেমে আর একটি খুঁটি পুতে দিল। সূর্যের দিকে তাকাল একবার। গোল পাহাড়টার ওপর আলো পড়েছে। পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর ওপরও আলো পড়েছে। হিসাব করে দেখল, প্রায় সাড়ে তিন মাইল পথ হাঁটা হয়েছে। আরও সাড়ে তিন মাইল হেঁটে সে বাঁ-দিকে মোড় নেবে। শরীর তার গরম হয়ে উঠেছে। কোট খুলে ফেলল, জুতাও। হাঁটতে তার খুব ভালো লাগছিল। তাই ভালো ভালো জমি দেখে বাঁক- মোড় নিতে লাগল।

গোল পাহাড়টা এখন আর দেখা যায় না। পাখোম ভাবল : মোড়টা বেশ বড় হয়েছে নিশ্চয়। তার শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। সে ক্লান্ত বোধ করছে। সে খানিকটা পানি খেল। একটি খুঁটিও পোতা হলো। পথে বড় বড় ঘাস। ভ্যাপসা গরম। তার ভিতর দিয়ে সে ছুটতে লাগল।

ঠিক দুপুরে সে সামান্য রুটি খেল। দাঁড়িয়ে সামান্য জিরিয়েও নিল। মাটিতে সে বসল না। কারণ বসলে শুতে ইচ্ছে হবে, আর শুলে ঘুমিয়ে পড়তে পারে। রুটি খাওয়ার পর হাঁটতে সুবিধা হলো। কিন্তু সামান্য পরেই তার শরীর ভেঙে পড়তে চাইছে। কিন্তু শরীরকে আসকারা দিলে চলে না। কেননা সামান্য কষ্টেই তার অনেক লাভ।

সাড়ে ছয় মাইল পথ সে পেরিয়েছে। তার পরও কিছু উর্বর জমি ছেড়ে আসতে পারেনি। কী করে ছাড়ে। চমৎকার তিসি হবে এ জমিগুলোতে। গোল পাহাড় থেকে ১০ মাইল পথ দূরে এসেছে সে। আর পশ্চিম আকশে সূর্য অনেকটা হেলে গিয়েছে। অথচ সে ফিরতে পেরেছে ১ মাইলের চেয়ে সামান্য বেশি। এখন সে আর কোনো বাঁক নিচ্ছে না। সোজাসুজি হেঁটেও সে যেন এগুতে পারছে না। জুতা সে খুলে ফেলেছিল অনেক আগেই। এখন খালি পা কেটে ছিঁড়ে গিয়েছে। হাঁটতে তার খুবই কষ্ট হচ্ছে। শরীর কাঁপছে। পা কাঁপছে। একটু বিশ্রামের বদলে সে সব কিছু দিয়ে দিতে পারে। কিন্তু বিশ্রাম করলে চলবে না। তাই কে যেন চাবুক মেরে মেরে তাকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কত পথ বাকি। অথচ সে মৃত প্রায়। এত পথ সে পেরিয়ে এসছে। কী করে তা ফিরে যাবে।

কিন্তু ফিরতে তাকে হবেই। সব অর্থ, সব পরিশ্রম বৃথা যেতে পারে না। পা ফেটে রক্ত ঝরছে। তবুও সে দৌড়াচ্ছে, দৌড়াচ্ছে। তবুও যেন এগুতে পারছে না। কোট, জুতা, ফ্লাস্ক, টুপি সব ছুড়ে ফেলে দিল। তবুও দৌড়াতে তার দারুণ কষ্ট হচ্ছে। বুকের ভিতর কে যেন হাপর টানছে। হৃৎপিন্ডের ভিতরে মারছে হাতুড়ি। পা দুটি দেহের ভার সইছে না, ভেঙে পড়ছে।

জমির কথা সে ভুলে গেল। নিজেকে বাঁচানোই এখন একমাত্র চিন্তা। সূর্য এখন অস্ত যাওয়ার পথে। গোল পাহাড়ের লোকগুলো তাকে ডাকছে। চিৎকার করে তাকে উৎসাহ দিচ্ছে। সে শেয়ালের চামড়ার টুপিটি মাটিতে পড়ে থাকতে দেখল। তার ভিতরে টাকা। তার পাশে দাঁড়িয়ে স্টার্শিনা। তার স্বপ্নের কথা মনে হলো। তবুও সে পৌঁছাতে চায়। নিজেকে সে খুন করেছে। তুবুও দৌড় বন্ধ করল না। সূর্য যখন অস্ত গেল তখন সে পাহাড় ছুঁয়েছে। একটি মুমূর্ষু জন্তুর মতো সে পাহাড় ডিঙিয়ে টুপিটি স্পর্শ করল। স্পর্শ করতে করতে সে নিচে পড়ে গেল। স্টার্শিনা চিৎকার করে উঠল, ‘হায় যুবক, অনেক জমি তুমি পেলে বটে।’ পাখোমের মজুর ছুটে গেল তার কাছে। তাকে টেনে তুলতে চেষ্টা করল। তখন তার মুখ দিয়ে রক্তের ধারা বইছে।

পাখোম মারা গেল। স্টার্শিনা হাসতে লাগল। শেষে সাড়ে তিন হাত জমির মধ্যে পাখোমের সমাধি হলো।

রূপান্তর : প্রফেসর ড. সরকার আবদুল মান্নান

রুটির দাম ও রাজার গল্প

এক রাজার রাজ্যে ১ লোক রুটি বিক্রি করতো। একমাত্র রুটি বিক্রেতা। 

সে একদিন রাজার কাছে যেয়ে বললঃ 'হুজুর, অনেক বৎসর ৫ টাকা করে রুটি বিক্রি করি। এখন দাম বাড়িয়ে ১০ টাকা করতে চাই। আপনি যদি অনুমতি দেন!' 

রাজা বললেন, 'যা, কাল থেকে ২০ টাকা রুটির দাম!' 

দোকানী বলল, 'না হুজুর, আমার ১০ টাকা হলেই চলবে!' 

রাজা বললেন, 'চুপ করে থাক! আর আমি যে দাম বাড়াতে বলেছি, কাউকে বলবিনা!' 

রুটি ওয়ালা খুশিমনে ফিরে গেল। 
পরদিন থেকে তার রুটির দাম ২০ টাকা!

সারা রাজ্যে প্রতিবাদ! জনগণ ক্ষেপে গিয়ে রাজার কাছে বিচার দিল, 'হুজুর, আমাদের বাঁচান! এ কি অন্যায়! ৫ টাকার রুটি ২০ টাকা হলে আমরা বাচবো কি খেয়ে!'

রাজা হুংকার দিলেন, 'রুটি ওয়ালাকে ধরে আনো! এই অন্যায় মানা যায় না!' 

তারপর ঘোষণা দিলেন কাল থেকে রুটির দাম অর্ধেক (মানে ১০ টাকা!) 

সারা রাজ্যে ধন্য ধন্য পড়ে গেল! শুধু এমন একজন রাজা ছিলো বলে! না হলে জনগণের কি হতো!

রুটি ওয়ালা খুশি! 
জনগণও খুশি!
রাজাও খুশি! 🙄
এটাই হলো বর্তমানের বাস্তব চিত্র।
সময় নিয়ে ভেবে দেখবেন।

Friday, September 1, 2023

অভিশাপ (কাজী নজরুল ইসলাম)

অভিশাপ
- কাজী নজরুল ইসলাম---(দোলনচাঁপা কাব্যগ্রন্থ)

যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে-
                      বুঝবে সেদিন বুঝবে!
                  ছবি আমার বুকে বেঁধে
                  পাগল হ’লে কেঁদে কেঁদে
                  ফিরবে মর” কানন গিরি,
                  সাগর আকাশ বাতাস চিরি’
                  যেদিন আমায় খুঁজবে-
                      বুঝবে সেদিন বুঝবে!

স্বপন ভেঙে নিশুত্‌ রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে,
কাহার যেন চেনা-ছোঁওয়ায় উঠবে ও-বুকে ছমকে,-
                      জাগবে হঠাৎ চমকে!
                  ভাববে বুঝি আমিই এসে 
                  ব’সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে,
                  ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
                  শূন্য শয্যা! মিথ্যা স্বপন!
                  বেদ্‌নাতে চোখ বুঁজবে-
                      বুঝবে সেদিন বুজবে।
গাইতে ব’সে কন্ঠ ছিঁড়ে আস্‌বে যখন কান্না,
ব’লবে সবাই-“ সেই য পথিক তার শেখানো গান না?’’
                      আস্‌বে ভেঙে কান্না!
                  প’ড়বে মনে আমার সোহাগ,
                  কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ!
                  প’ড়বে মনে অনেক ফাঁকি
                  অশ্র”-হারা কঠিন আঁখি
                  ঘন ঘন মুছবে-
                      বুঝ্‌বে সেদিন বুঝবে!

আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ’রবে তোমার অঙ্গন,
তুলতে সে ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ-
                      কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন!
                  শিউলি ঢাকা মোর সমাধি
                  প’ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি’!
                  বুকের মালা ক’রবে জ্বালা
                  চোখের জলে সেদিন বালা
                  মুখের হাসি ঘুচবে-
                      বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আসবে আবার আশিন-হাওয়া, শিশির-ছেঁচা রাত্রি,
থাকবে সবাই – থাকবে না এই মরণ-পথের যাত্রী!
                      আসবে শিশির-রাত্রি!
                  থাকবে পাশে বন্ধু স্বজন,
                  থাকবে রাতে বাহুর বাঁধন,
                  বঁধুর বুকের পরশনে
                  আমার পরশ আনবে মনে-
                  বিষিয়ে ও-বুক উঠবে-
                      বুঝবে সেদিন বুঝবে!

আসবে আবার শীতের রাতি, আসবে না ক আ সে-
তোমার সুখে প’ড়ত বাধা থাকলে যে-জন পার্শ্বে,
                      আসবে না ক’ আর সে!
                  প’ড়বে মনে, মোর বাহুতে
                  মাথা থুয়ে যে-দিন শুতে,
                  মুখ ফিরিয়ে থাকতে ঘৃণায়!
                  সেই স্মৃতি তো ঐ বিছানায়
                  কাঁটা হ’য়ে ফুটবে-
                      বুঝবে সেদিন বুঝবে!

আবার গাঙে আসবে জোয়ার, দুলবে তরী রঙ্গে,
সেই তরীতে হয়ত কেহ থাকবে তোমার সঙ্গে-
                      দুলবে তরী রঙ্গে,
                  প’ড়বে মনে সে কোন্‌ রাতে
                  এক তরীতে ছিলেম সাথে,
                  এমনি গাঙ ছিল জোয়ার,
                  নদীর দু’ধার এমনি আঁধার
                  তেম্‌নি তরী ছুটবে-
                      বুঝবে সেদিন বুঝবে!
তোমার সখার আসবে যেদিন এমনি কারা-বন্ধ,
আমার মতন কেঁদে কেঁদে হয়ত হবে অন্ধ-
                      সখার কারা-বন্ধ!
                  বন্ধু তোমার হান্‌বে হেলা
                  ভাঙবে তোমার সুখের মেলা;
                  দীর্ঘ বেলা কাটবে না আর,
                  বইতে প্রাণের শান- এ ভার
                  মরণ-সনে বুঝ্‌বে-
                      বুঝবে সেদিন বুঝ্‌বে!

ফুট্‌বে আবার দোলন চাঁপা চৈতী-রাতের চাঁদনী,
আকাশ-ছাওয়া তারায় তারায় বাজবে আমার কাঁদ্‌নী-
                      চৈতী-রাতের চাঁদ্‌নী।
                  ঋতুর পরে ফির্‌বে ঋতু,
                  সেদিন-হে মোর সোহাগ-ভীতু!
                  চাইবে কেঁদে নীল নভো গা’য়,
                  আমার মতন চোখ ভ’রে চায়
                  যে-তারা তা’য় খুঁজবে-
                      বুঝ্‌বে সেদিন বুঝ্‌বে!

আস্‌বে ঝড়, নাচবে তুফান, টুটবে সকল বন্ধন,
কাঁপবে কুটীর সেদিন ত্রাসে, জাগবে বুকে ক্রন্দন-
                      টুটবে যবে বন্ধন!
                  পড়বে মনে, নেই সে সাথে
                  বাঁধবে বুকে দুঃখ-রাতে-
                  আপনি গালে যাচবে চুমা,
                  চাইবে আদর, মাগ্‌বে ছোঁওয়া,
                  আপনি যেচে চুমবে-
                      বুঝবে সেদিন বুঝবে।
আমার বুকের যে কাঁটা-ঘা তোমায় ব্যথা হান্‌ত,
সেই আঘাতই যাচবে আবার হয়ত হ’য়ে শ্রান–
                      আসবে তখন পান’।
                  হয়ত তখন আমার কোলে
                  সোহাগ-লোভে প’ড়বে ঢ’লে,
                  আপনি সেদিন সেধে কেঁদে
                  চাপ্‌বে বুকে বাহু বেঁধে,
                  চরণ চুমে পূজবে-
                      বুঝবে সেদিন বুঝবে!