গণিতের ৫টি চমৎকার কৌশল
গণিতে অনেক মজার কৌশল আছে। সেগুলো না জানা থাকলে গণিতের আসল মজা বোঝা যায় না। গণিত তখন খটমট কঠিন বিষয়ে পরিণত হয়। তবে আজ আমরা পাঁচটি গণিতের কৌশল শিখবো। এ সহজ কৌশলগুলো আপনাকে আরও দ্রুত ও সহজে গণণা করতে সাহায্য করবে। নিজের গাণিতিক স্কিল বাড়ানোর পাশাপাশি আপনি এ কৌশলের সাহায্যে শিক্ষক, পিতামাতা ও বন্ধুদের প্রভাবিত করতে পারেন। চলুন কৌশলগুলো জানা যাক।
১. ৬ দিয়ে গুণ
যেকোনো সংখ্যাকে ৬ দিয়ে গুণের একটি সহজ পদ্ধতি আছে। যে সংখ্যা দিয়ে ৬-কে গুণ করবেন সেটি হবে উত্তরের শেষ সংখ্যা (ডিজিট)। আর ওই শেষ ডিজিটের অর্ধেক বসবে তার ঠিক আগে। যেমন, ৬ × ৪ = ২৪। খেয়াল করুন, এখানে ৬-কে গুণ করেছি ৪ দিয়ে। উত্তরে শেষ সংখ্যা হবে ৪। আর ৪-এর অর্ধেক ২ হবে তার আগে।
তবে ৬-কে যদি ৯-এর ওপরের কোনো সংখ্যা দিয়ে গুণ করেন, তাহলে আরেকটু নিয়ম জানতে হবে। ১০-১৯ এর মধ্যে কোনো সংখ্যা দিয়ে গুণ করলে যে সংখ্যা দিয়ে গুণ করবেন, তার অর্ধেকের সঙ্গে ১ যোগ করতে হবে। ২০-২৯ এর মধ্যে কোনো সংখ্যা দিয়ে গুণ করলে যোগ করতে হবে ২। এভাবে যত ওপরের দিকে যাবেন, তত যোগ করতে হবে। যেমন, ১২ × ৬ করুন। প্রথমে বসবে ২। এরপর ১২-এর অর্ধেক ৬ এবং তার সঙ্গে ১ যোগ করে হবে ৭। অর্থাৎ, উত্তর ৭২।
আবার ৪৬ × ৬ করুন। প্রথমে বসবে ৬। এর সঙ্গে ৪৬-এর অর্ধেক ২৩ ও যোগ হবে ৪। মানে ২৩ + ৪ = ২৭। তাহলে উত্তর হবে ২৭৬।
২. উত্তর সবসময় ২
এই জাদুটি আপনার কোনো বন্ধুদের দেখাতে পারেন। আপনি বন্ধুকে কিছু যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করতে বলবেন, আর উত্তর হবে সব সময় ২। নিচের নিয়মানুসারে বন্ধুকে ধাপে ধাপে কাজগুলো করতে বলুন।
ক) যে কোনো একটি সংখ্যা কল্পনা করতে হবে
খ) ওই সংখ্যার সঙ্গে গুণ করতে হবে ৩
গ) গুণফলের সঙ্গে যোগ করতে হবে ৬
ঘ) এবার যোগফলকে ভাগ করতে হবে ৩ দিয়ে
ঙ) প্রথমে যে সংখ্যাটি কল্পনা করেছিল, তা বিয়োগ করতে বলুন।
ব্যস, উত্তর হবে ২।
চলুন এবার দেখা যাক, আসলেই উত্তর ২ হয় কি না। একটি সংখ্যা ধরলাম ৫। এরসঙ্গে ৩ গুণ করলে হবে ১৫। এরপর ১৫-এর সঙ্গে ৬ যোগ করলে হবে ২১। এবার ৩ দিয়ে ভাগ করলে হবে ৭। সর্বশেষ ভাগফল থেকে প্রথমে কল্পনা করা ৫ বিয়োগ করলে হবে ২।
তবে একই বন্ধুর সঙ্গে বারবার এই জাদু দেখালে, সে বুঝে যাবে উত্তর সব সময় ২ হয়। এতে আপনার কেরামতি বুঝে ফেলতে পারে। তাই একজন বন্ধুকে একবারের বেশি এ জাদু দেখাতে যাবেন না। ধরা পরে যাবেন।
৩. তিন অঙ্কের জাদু
এটাও ওপরের জাদুর মতোই। তিনটি ধাপে জাদুটি দেখাতে পারবেন।
ক) একই অঙ্কের তিনটি নিতে হবে। যেমন, ৩৩৩ বা ৭৭৭ অথবা ৫৫৫
খ) যে তিনটি অঙ্ক নিবেন, সেগুলোর যোগ করতে হবে। যেমন ৩৩৩ নিলে এদের যোগফল হবে ৩ + ৩ + ৩ = ৯
গ) এবার যে তিনটি সংখ্যাকে নিয়েছেন তাকে ওই তিন সংখ্যার যোগফল দিয়ে ভাগ করতে হবে।
এবার উত্তর হবে ৩৭। এটাও একটু খাতা কলমে প্রমাণ করে দেখা যাক।
প্রথমে তিন অঙ্কের একটি সংখ্যা নিলাম ৬৬৬। এদের যোগফল ১৮। এবার ৬৬৬ ÷ ১৮ = ৩৭। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। এটার উত্তরও সবসময় হয় ৩৭।
৪. ছয় অঙ্কের জাদু
এই গাণিতিক জাদুর শর্তগুলো দেখুন।
ক) তিন অঙ্কের যেকোনো একটি সংখ্যা নিন। সংখ্যাটি পরপর দুইবার লিখতে হবে। যেমন, তিন অঙ্কের সংখ্যাটি নিলাম ৩৭১। পরপর দুইবার লিখলে হবে ৩৭১৩৭১।
খ) ওপরের সংখ্যাটিকে ৭ দিয়ে ভাগ করতে হবে।
গ) ভাগফলকে আবার ভাগ করতে হবে ১১ দিয়ে।
ঘ) এরপর আরও একবার ভাগফলকে ১৩ দিয়ে ভাগ করতে হবে।
ভাগের কাজ শেষ হলে দেখবেন আপনার কল্পনা করা প্রথম সংখ্যাটাই উত্তর।
চলুন একটু মিলিয়ে দেখি। একটি সংখ্যা কল্পনা করলাম ১২৩। তাহলে পরপর দুইবার সাজিয়ে লিখলে পাবো ১২৩১২৩। এবার এই সংখ্যাটিকে ভাগ করবো ৭ দিয়ে। ১২৩১২৩ ÷ ৭ = ১৭৫৮৯। এই ভাগফলকে ১১ দিয়ে ভাগ করলে হবে ১৭৫৮৯ ÷ ১১ = ১৫৯৯। আবার এই ভাগফলকে ১৩ দিয়ে ভাগ করলে হবে হবে ১৫৯৯ ÷ ১৩ = ১২৩। তাহলে দেখা যাচ্ছে প্রথম কল্পনা করা সংখ্যা এবং উত্তর আসলে একই।
এই একই পদ্ধতি আপনি উল্টোভাবেও করতে পারেন। মানে ভাগ না করে গুণ করতে পারেন। তিন অঙ্কের যেকোনো একটি সংখ্যা নিয়ে সেই সংখ্যাকে পর্যায়ক্রমে ৭, ১১ ও ১৩ দিয়ে গুণ করতে হবে। তাহলে দেখবেন যে সংখ্যাটি আপনি কল্পনা করেছেন, তা পরপর দুই হয়েছে। যেমন, একটি সংখ্যা কল্পনা করি ৪৫৬। একে প্রথমে ৭ দিয়ে গুণ করলে হবে ৪৫৬ × ৭ = ৩১৯২। এবার গুণফলকে গুণ করতে হবে ১১ দিয়ে। অর্থাৎ, ৩১৯২ × ১১ = ৩৫১১২। আর এই গুণফলকে আবার ১৩ দিয়ে গুণ করলে হবে ৩৫১১২ × ১৩ = ৪৫৬৪৫৬। দারুণ না ব্যাপারটা!
৫. ১১-এর গুণের জাদু
১১ দিয়ে খুব সহজে গুণ করার একটা কৌশল আছে। চোখের নিমেষেই উত্তর হয়ে যায়। তিনটি ছোট নিয়ম মানতে হবে।
ক) ১১ দিয়ে যে সংখ্যাটি গুণ করবেন, তা সর্বোচ্চ দুই অঙ্কের হতে হবে। মানে ৯৯-এর বড় সংখ্যাকে ১১ দিয়ে এ পদ্ধতিতে গুণ করা যাবে না।
খ) সংখ্যার অঙ্ক দুটিকে যোগ করতে হবে
গ) এরপর বসিয়ে দিতে অঙ্ক দুটির মাঝে।
ব্যস। উত্তর হয়ে গেছে। চলুন একটি মিলিয়ে দেখি। ধরুন, ৭২ × ১১ = ৭৯২। মানে ৭২-এর মাঝে ৭ ও ২-এর যোগফল (৭ + ২ = ৯) বসিয়ে দিলে উত্তর পাওয়া যাবে। আরেকটা গুণ দেখুন। ৪৩ ও ১১ গুণ করতে হবে। খুব সহজে উত্তর বলে দিতে পারেন ৪৭৩। কারণ ৪ + ৩ = ৭। সুতরাং, ৪৩-এর মধ্যে ৭ বসিয়ে উত্তর পেলাম ৪৭৩।
তবে অঙ্ক দুটির যোগফল যদি ১০-এর বেশি হয় তাহলে কী করবেন? যেমন ৫৭ × ১১ = কত? এখানে ৫ + ৭ = ১২। নিশ্চয় ৫১২৭ গুণফল হবে না। এক্ষেত্রে যোগফল ১২-এর শুধু ২ রাখতে হবে মাঝে। আর ১ যোগ করে দিতে হবে আগের সংখ্যার সঙ্গে। মানে উত্তর হবে ৬২৭।
লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা
সূত্র: থটকো ডট কম অবলম্বনে
No comments:
Post a Comment