Saturday, November 4, 2023

আক্ষেপ

বুয়েট পড়ুয়া এক আপুর সাথে প্রায়ই কথা হয় ।উনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা করেন।মাঝে মাঝেই আক্ষেপ করে বলেন, 
--- 'জানিস ছোটু এই সাবজেক্ট আমার ভালো লাগে না।কত আশা ছিলো কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা করবো।কিন্তু নিজের কিছু ভুলের জন্য প্যাশন স্টাবলিশড্ করতে পারিনি।' 
কথাটা শুনে আমি স্বান্তনা দিলেও খুব অবাক হই এটা ভেবে,যেখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে শুধু বুয়েটের একটা সিট সেখানে উনি চার বছর ধরে আক্ষেপে পোড়েন পছন্দের সাবজেক্ট পাননি বলে।
.

শিহাব ভাইয়ের সাথে মাঝে মাঝে মেসেঞ্জারে কথা হয়।রংপুর মেডিকেলে ভর্তি হয়েও বেচারার মন খারাপ।কথায় কথায় শুধু বলে,
--- 'ঢাকা মেডিকেল আমার স্বপ্ন ছিলো।এই রংপুর হওয়ার চেয়ে না হওয়াই ভালো ছিলো।' 
আমি শুধু মুচকি হাসি মানুষের চাওয়া পাওয়ার একি হাল! কারো মনে সুখ নেই।
.

সায়ান ভাইকে দেখলে কেমন জানি করে বুকের ভেতর ঈদের মধ্যেই বেশি দেখা হয়।এবার দেখা হলে বলেছিলাম,কি ভাই ঢাবি জীবন কেমন চলে?উনি একটা ফিকে হাসি দিয়ে বললেন,
--- 'যখন শুনি পোলাপান বুয়েটে পড়ে তখন দুমড়ে মুচড়ে যাই আহা কত স্বপ্ন ছিলো !'  
.

সেদিন রাসেল ভাইকে মেসেজ দিলাম, কি অবস্থা ভাই?ভাই একগাদা ব্রোকেন হার্ট ইমোজি দিয়ে বললেন,
---  'এত ট্রাই করছি রে ভাই কিন্তু হচ্ছে না।যে করেই হোক আমাকে বিদেশে যেতেই হবে ! বিদেশে সেটেল্ড হয়ে যাবো।' 
আমি বেশি কিছু বললাম না।ওহ্ হ্যাঁ রাসেল ভাই গত বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে ভেটেরিনারি মেডিসিন এর উপর।
.

আমি যখন হাইস্কুলে পড়াশোনা করি তখন দেখতাম এক স্যার মাঝে মাঝেই ফিসফিস করতো,
--- 'কেন যে এখানে চাকরি নিলাম, বেতন তো খুবই কম।আর একবছর কষ্ট করলেই কলেজে হয়ে যেত!' আমি তখন এটা বুঝেছিলাম যে হাইস্কুলে বোধহয় বেতন টেতন খুব একটা বেশি হয় না।আমি এটাও ভেবেছিলাম হাইস্কুলে চাকরি পেলেও করবো না।
.

গ্রামের প্রভাবশালী রমিজ মিয়ার কথা আর কি বলবো!নেশা একটাই শুধু জমি জমি আর জমি। গ্রামের সবচেয়ে ধনী লোক যার কোনকিছুর অভাব নেই, তবুও উনার কেন জমি কিনতেই হবে? কেন গাদা গাদা টাকা বানাতে হবে?দুদিন পর মরলে তো সব শেষ।
.

হাইস্কুলে থাকতে রাশেদের মোটর সাইকেল দিয়ে ড্রাইভিং শিখেছিলাম।'হোন্ডা' কোম্পানির মোটর সাইকেল ছিলো।হঠাৎ রাশেদ দুই-তিনদিন স্কুলে আসে না।পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এর থেকে ভালো মোটর সাইকেল না দিলে ও স্কুলে আসবেনা।আমি সেদিন লজ্জা পেয়েছিলাম, যেখানে আমার একটা সাইকেলই নাই আর ও মোটর সাইকেল চেঞ্জ করার জন্য জিদ ধরেছে । 
.

সোহা আপুর সাথে পরিচয় টা অনলাইনে হলেও বাস্তবের ভাইবোনের স্বাদ পাই আমরা।এত পজিটিভ মানুষ আমি খুব কম দেখেছি।সাংসারিক জীবনে তিনি অনেক হ্যাপি।বরং যা আছে তাই নিয়ে হ্যাপি।ভাগ্যকে মেনে নেন, নেগেটিভিটি পরিহার করেন, খারাপ জিনিস টাকে পজিটিভ ভাবে ঘুরিয়ে দেওয়ার এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে উনার।বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন, কোনদিন শুনিনি তিনি অসুখী । হ্যাঁ সাংসারিক জীবনে দুএকটা কথা সবার হতে পারে তবে ভাইয়া কখনো আপুর নামে অভিযোগ করেননি।এজন্য আমি উনার কাছে সুখে থাকার মন্ত্র শিখি ।
.

আমার মহল্লার সবচেয়ে সুখী মানুষ বোধহয় হরিহরণ।সারাদিন রিক্সা চালিয়ে সন্ধ্যায় চা খেয়ে চাউল কিনে ঘরে ফিরে।গাদা গাদা টাকার স্বপ্ন নেই, জমি কেনার ধান্দা নেই।একদিন মজা করে জিজ্ঞেস করেছিলাম, 
--- 'মেসো টাকা পয়সা কিছু জমাও।বুড়ো বয়সে কাজে লাগবে যে ।' 
উনি ফোকলা দাঁতে উত্তর দেন, 
--- 'রাখ তো বাপু! শেষ বয়সে ট্যাকা হারানুর ভয়ে আর ঘুম হারাম করবের চাইনে, চলছে চলুক!' 
.

কেউ বুয়েট, কেউ ঢাবি আবার কেউ মেডিকেল!কেউবা আবার প্রফেশনাল লাইফ নিয়ে হতাশ! আর ব্যক্তিগত জীবন তো হতাশার কারখানা।এই হতাশা কমবেশি আমাদের সবার মধ্যে আছে। ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আমার পেতেই হবে নাহলে আমি শেষ।খুব কম মানুষই দেখেছি যারা নিজের বর্তমান অবস্থা কিংবা ভাগ্যকে মেনে নিয়ে ক্যারি অন করে।আমি বলছিনা যে লেখাপড়া বাদ দিতে হবে কিংবা ইচ্ছে রাখা যাবেনা।ব্যাপারটা হচ্ছে আপনি এত চেষ্টা করেও যখন সেটা পাননি তখন বুঝতে হবে সেটা আপনার জন্য নয়।এই সত্যটা মেনে নিতে সমস্যা কোথায় ? 

আমরা পাই তো ঠিকই, তবুও চাহিদার ঘাটতি পূরণ হয়না।শুধু হলোনা হয়নি আর কেন?এসবের হিসেব মেলাতেই আমাদের জীবনের অনেক টা সময় কেটে যায়।বিনিময়ে শুধু হতাশা আর বিষণ্ণতা।জীবনের রং কোন দিক দিয়ে এসে কোনদিক দিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে তা বুঝতেই পারছি না 
.
বিশেষ করে লেখাপড়ার কথাটা বলতেই হবে।বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক সেক্টর।একজনকে দেখে আরেকজনের হিংসা, ও কেন উপরে উঠে গেলো, ও কিভাবে এটা করলো আরো কতকিছু।সুখ নাই ভাই কারো মনে সুখ নাই।বর্তমান পরিস্থিতি মেনে নিয়ে সুখে থাকা মানুষ খুবই কম । 
.
আপনি একটা জিনিস পাননি মানে সৃষ্টিকর্তা আপনার ভাগ্যে সেটা রাখেননি কিংবা সেটা আপনার জন্য ভয়'ঙ্কর । যেটা রেখেছেন সেটা অবশ্যই আপনার জন্য মঙ্গলজনক । কারণ সৃষ্টিকর্তা কখনো তার সৃষ্টির জন্য মন্দ জিনিস পছন্দ করতে পারেন না।

অণুগল্প : #সুখ 
কলমে : সাদমান সাকিব 
Collected

No comments:

Post a Comment