Skip to main content

F.R. Khan

বিশ্বজুড়ে তিনি এফ আর খান নামে পরিচিত। ১৯৭২ সালে ‘ইঞ্জিনিয়ারিং নিউজ রেকর্ড’ এ ম্যান অব দি ইয়ার বিবেচিত হয়েছিলেন এবং পাঁচবার (১৯৬৫, ১৯৬৮, ১৯৭০, ১৯৭১, ১৯৭৯ সালে) স্থাপত্য শিল্পে সবচেয়ে বেশি অবদানকারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত হবার গৌরব লাভ করেছিলেন। ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এর সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৪ সালে আমেরিকার 'নিউজ উইক' ম্যাগাজিনে শিল্প ও স্থাপত্যের উপর প্রচ্ছদ কাহিনীতে তাকে মার্কিন স্থাপত্যের শীর্ষে অবস্থানকারী ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়। অসামান্য কৃতি এই বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ারের নাম ড. ফজলুর রহমান খান।

১৯২৯ সালের ৩রা এপ্রিল মাদারীপুর জেলার শিবচরের ভান্ডারীকান্দী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন ফজলুর রহমান খান। তার বাবা বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক খান বাহাদুর আবদুর রহমান খান ছিলেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগের গোল্ড মেডেলিস্ট। কোলকাতায় প্রথম মুসলমান এডিপিআই ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন আবদুর রহমান খান। ছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটি অব পাকিস্তানের সভাপতিও।

শিক্ষিত ও আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারের সন্তান হওয়ায় কখনো সেভাবে বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয় নি ফজলুর রহমানকে। তিনি ১৯৪৪ সালে ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৪৬ সালে কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর কোলকাতার তৎকালীন শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন, যা বর্তমানে বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি নামে পরিচিত। ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালে পঞ্চাশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে তিনি ঢাকায় ফিরে এলে তৎকালীন আহসানউলাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বর্তমান বুয়েট) থেকে বাকি পরীক্ষা শেষ করেন৷ ১৯৫২ সালে একইসাথে সরকারী বৃত্তি ও ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডির জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি। সেখানে ৩ বছরে ‘স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ এবং ‘থিওরিটিক্যাল অ্যান্ড এপ্লাইড মেকানিক্স’- এ দুটি বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রি লাভ করেন এবং একই বছর স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপরে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

“মানুষ বাঁচে তার স্বপ্নের জন্য, মানুষ বাঁচে তার স্বপ্ন পূরণের জন্য”, সারাজীবন ধরে এরই প্রতিফলন দেখিয়ে গেছেন। ছোটবেলা থেকে সুউচ্চ দালান দেখলেই আগ্রহভরে তাকিয়ে থাকতেন। সে আগ্রহই তাকে বিংশ শতাব্দীর সেরা বিজ্ঞানী বানিয়েছিলো। যার কারণে সারা পৃথিবীতেই স্থাপত্য শিল্পে বিরাট এক দিগন্তের সূচনা হয়েছিলো, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পুরনো কাঠামোই বদলে দিয়েছিলেন তিনি। ‘Tube in Tube’ নামে স্থাপত্য শিল্পের এক নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন, যার মাধ্যমে অতি উচ্চ (কমপক্ষে একশত তলা) ভবন স্বল্প খরচে নির্মাণ সম্ভব৷ গগনচুম্বী ভবনের উপর সাত খণ্ডে প্রকাশিত একটি বইও সম্পাদনা করেন তিনি।

তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কাজের মধ্যে আছে শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ার, জন হ্যানকক সেন্টার, জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, জিন মাও বিল্ডিং, হাজ্জ টার্মিনালের ছাদ ও বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিখ্যাত স্থাপনা। এর মধ্যে সিয়ার্স টাওয়ার ছিলো ১৭২৯ ফুট বিশিষ্ট ভবন যা ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত বিশ্বের উচ্চতম ভবন ছিল। ১০০ তলা বিশিষ্ট ভবন ‘জন হ্যানকক’-ও তার আবিষ্কার করা প্রথম স্কাই লবি। তার ডিজাইন করা হাজ্ব টার্মিনালের ছাদ ছিল ৫০০০০ বর্গফুট, এছাড়াও দুবাই এর বুর্জ খলিফা তৈরীতেও তার 'Tube in Tube' থিওরী অনুসরন করা হয়েছে।

এক কথায়, ১৯৬০-৭০ দশকের স্থাপত্যশিল্পে তিনি আমেরিকার কিংবদন্তি বনে যান। তখনকার সবকটি বিখ্যাত স্থাপনাই তার ডিজাইন করা। তার অবদানকে সম্মান জানাতে ১৯৯৮ সালে শিকাগো শহর কর্তৃপক্ষ শহরের সিয়ার্স টাওয়ারের নিচে জ্যাকসন সড়কের পশ্চিম পাশে এবং ফ্রাঙ্কলিন সড়কের দক্ষিণ পাশে সংযোগস্থলটিকে নামকরণ করে ‘ফজলুর রহমান খান সড়ক’ নামে। উইলিস টাওয়ারের নিচে আছে ফজলুর রহমান খানের স্মৃতিফলক, সেই সাথে তাকে দেওয়া হয় ‘আইনস্টাইন অফ স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার’ উপাধি। মুসলিম স্থাপত্যে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন ও অসামান্য অবদানের জন্য ‘আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার’ এ ভূষিত করা হয় তাকে।

ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পাশাপাশি একজন শিক্ষক হিসেবেও তার রয়েছে যথেষ্ট সফলতা। তার কর্মজীবন শুরু হয় দেশে থাকতেই। স্নাতক উপাধি অর্জনের পরপরই ফজলুর রহমান খান আহসানউলাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যাপকের পদে নিযুক্ত হন তিনি। ১৯৫৫ সালে তিনি শিকাগো শহরের স্কিডমোর, ওউইং ও মেরিল নামের প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানে প্রকল্প প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান দেন। ডক্টরেট অর্জনের পর ১৯৫৬ সালে দেশে ফিরে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেই আগের পদে যোগদান করেন। পরবর্তীতে আমেরিকার স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান স্কিড মোর এর আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে কোম্পানীর শিকাগো অফিসের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন৷ পাশাপাশি তিনি আমেরিকার ‘ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি’ এর স্থাপত্য বিভাগে অধ্যাপক পদে অধিষ্ঠিত হন। সেখানে পরে তিনি প্রফেসর এমিরিটাস হয়েছিলেন। বর্ণিল কর্মজীবনে তার অজস্র অর্জন রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলোঃ ওয়াসন মেডেল (১৯৭১), আলফ্রেড লিনডাও অ্যাওয়ার্ড (১৯৭৩), থমাস মিডলব্রুকস এ্যওয়ার্ড (১৯৭২), আরনেস্ট হোয়ার্ড এ্যওয়ার্ড (১৯৭৭), কিমব্রুক মেডেল (১৯৭৩), ওস্কার ফাবেল মেডেল (১৯৭৩), ইন্টারনাশনাল এ্যওয়ার্ড অব মেরিট ইন স্ট্রাকাচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং (১৯৮৩), দি এআইএ ইনস্টিটিউট অনার ফর ডিস্টিংগুইশ এচিভমেন্ট (১৯৮৩) এবং জন পারমার এ্যওয়ার্ড (১৯৮৭)।

বিশ্ববিখ্যাত এই বিজ্ঞানী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেও রেখেছিলেন বিশাল অবদান। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। তার নেতৃত্বে প্রবাসীদের নিয়ে গঠিত হয় দুটি সংগঠন। প্রথমটি হলো ‘বাংলাদেশ ইমার্জেন্সি ওয়েলফেয়ার আপিল’, যার উদ্দেশ্য ছিলো মুক্তিবাহিনীর সমর্থনে প্রচার-প্রচারণা এবং রিলিফ সংগ্রহ। দ্বিতীয়টি হলো ‘বাংলাদেশ ডিফেন্স লীগ’ - এই সংগঠনটি কূটনৈতিকভাবে মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছিল। ১৯৯৯ সালে ফজলুর রহমান খানের স্মরণে ডাক বিভাগ ফজলুর রহমান খানের আবক্ষ চিত্র ও পটভূমিতে সিয়ার্স টাওয়ারের ছবিসহ ৪ টাকা মূল্যমানের একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে।

ইঞ্জিনিয়ার এফ আর খান ১৯৮২ সালের ২৬শে মার্চ জেদ্দায় মাত্র তেপ্পান্ন বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি এতটাই জনপ্রিয় ও সম্মানিত ছিলেন যে, কিংবদন্তীর দাফন কোথায় করা হবে তা নিয়ে সৌদি ও আমেরিকার কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত তার মৃত দেহ সৌদি আরব থেকে নিয়ে যাওয়া হয় আমেরিকায়। সেখানে শিকাগোর গ্র্যাসল্যান্ড গোরস্থানে বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিদের সাথে একদম প্রথম সারির প্রথমে শায়িত আছেন তিনি। এফ আর খান তাঁর কর্ম রেখে গেছেন পৃথিবীর অনেক শহরে। যদিও বাংলাদেশ তার ব্যাপারে লাপাত্তা, তবু নিজের নামের সাথে তিনি বাংলার নামও নিয়ে গেছেন গৌরবময় স্থানে।

Comments

Popular posts from this blog

Books poem analysis with bangla

Books poem in bangla and with analysis Verse-wise Bangla Translation: What worlds of wonder are our books! As one opens them and looks, New ideas and people rise In our fancies and our eyes. আমাদের বইগুলো কী আশ্চর্য এক জগৎ! যখনই কেউ তা খুলে দেখে, নতুন ভাবনা আর নতুন মানুষ জেগে ওঠে কল্পনায় ও চোখের সামনে। The room we sit in melts away, And we find ourselves at play With some one who, before the end, May become our chosen friend. আমরা যে ঘরে বসে আছি, তা যেন মিলিয়ে যায়, আর আমরা আবিষ্কার করি নিজেদের খেলায় মত্ত কাউকে সঙ্গে নিয়ে, যে হয়তো শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠবে। Or we sail along the page To some other land or age. Here's our body in the chair, But our mind is over there. অথবা আমরা পৃষ্ঠার ওপর দিয়ে ভাসতে থাকি অন্য কোনো দেশ বা কালের দিকে। আমাদের শরীরটা রয়েছে চেয়ারে, কিন্তু মন চলে গেছে দূরে অন্য কোথাও। Each book is a magic box Which with a touch a child unlocks. In between their outside covers Books hold all things for their lovers. প্রতিটি বই একেকটি জাদুর বাক্স, যা শিশুরা এক ...

🚀 ৫০টি দরকারি কিবোর্ড শর্টকাট (Windows)(বাংলা ব্যাখ্যাসহ)

🚀 ৫০টি দরকারি কিবোর্ড শর্টকাট (Windows) (বাংলা ব্যাখ্যাসহ) (অজানা কিন্তু খুবই কাজে লাগে) ⸻ ১. Ctrl + N → নতুন ফাইল বা ডকুমেন্ট খুলবে (Word, Notepad, Browser ইত্যাদিতে)। ২. Ctrl + Shift + T → আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্রাউজার ট্যাব পুনরায় খুলবে। ৩. Ctrl + Shift + Left/Right Arrow → একসাথে পুরো শব্দ নির্বাচন করা যাবে। ৪. Alt + F4 → অ্যাপ বা উইন্ডো বন্ধ হবে। ৫. Ctrl + P → প্রিন্ট ডায়ালগ বক্স খুলবে (প্রিন্ট করার জন্য)। ⸻ ৬. Ctrl + A → সব ফাইল বা টেক্সট সিলেক্ট হবে। ৭. Ctrl + C → কপি করা যাবে। ৮. Ctrl + V → পেস্ট করা যাবে। ৯. Ctrl + X → কাট করা যাবে। ১০. Ctrl + Z → সর্বশেষ কাজ Undo হবে। ⸻ ১১. Ctrl + Y → Undo করা কাজ Redo হবে। ১২. Windows Key + E → File Explorer খুলবে। ১৩. Windows Key + D → ডেস্কটপ দেখাবে (সব মিনিমাইজ হবে)। ১৪. Ctrl + Shift + Esc → সরাসরি Task Manager খুলবে। ১৫. Windows Key + L → কম্পিউটার লক হবে। ⸻ ১৬. Windows Key + S → সার্চ অপশন চালু হবে। ১৭. Windows Key + R → Run কমান্ড চালু হবে। ১৮. F5 → রিফ্রেশ করবে। ১৯. Alt + Enter → Properties খুলবে। ২০. Ctrl + T → ব্রাউজারে নতুন ট্যাব খু...

70 speaking rules(1~20)

Spoken Rule-1 Feel like – ইচ্ছা করা/আকাঙ্খা প্রকাশ করা প্রয়োগ ক্ষেত্র: ব্যক্তির কোন কিছুর “ইচ্ছা করলে” Feel like ব্যবহার হবে Structure: Subject + feel like + Verb (ing) + Extension. Example ✪ I feel like doing – আমার করতে ইচ্ছা করছে। ✪ I feel like eating – আমার খেতে ইচ্ছা করছে। ✪ I don’t ...