Skip to main content

রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড

ধনী হওয়ার স্বপ্ন কম-বেশি আমাদের সবারই থাকে। বিলাসবহুল বাড়ি,গাড়ি কিংবা দেশে-বিদেশে ভ্রমণের স্বপ্ন কে না দেখে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে সম্পদশালী হওয়া যায়। ধনী হওয়ার  ক্ষেত্রে আপনি কত টাকা সঞ্চয় করেছেন সেটা বিষয় নয়,বরং এটা নির্ভর করে আপনার মানসিকতার উপর যে,আপনি আপনার সঞ্চিত টাকা কিভাবে ব্যয় করবেন। তবে অনেকেরই স্বপ্ন  স্বপ্নই থেকে যায় কারণ তারা মনে করেন তারা কখনোই সেই জায়গায় যেতে পারবেন না। আবার অনেকে স্বপ্ন দেখেই থেমে থাকেন না। ওয়ারেন বাফেট,স্টিভ জভস,বিল গেইটস,জ্যাক মা এর মতো ব্যক্তিরা একদিনে সফল হন নি,তাদের ইচ্ছাশক্তি, সংকল্প এবং বুদ্ধিমত্তার কারনেই আজ তারা পৃথিবীর ধনী ব্যক্তিদের একজন। তাহলে ধনী হওয়ার উপায় কি। এই প্রসঙ্গেই আমাদের আজকের লেখা রবার্ট টি কিয়োসাকির ‘রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড’ বইটি নিয়ে। বইটি মূলত একটি আর্থিক শিক্ষার বই। এই বইয়ে লেখক তার দুই বাবার কথা বলেছেন-একজন ছিল তার নিজের বাবা যিনি একজন শিক্ষক, পি.এইচ.ডি ডিগ্রির অধিকারী হলেও ছিলেন গরিব। আর অন্যজন ছিলেন তার বন্ধু মাইকের বাবা,যাকে তিনি ধনী বাবা এবং আদর্শ মনে করতেন। তার গরিব বাবা তাকে বলতেন ভালোভাবে পড়াশোনা করতে, যাতে তিনি ভালো চাকুরী পেতে পারেন।অন্যদিকে তার ধনী বাবাও তাকে পড়াশোনা করতে বলতেন, যাতে তিনি একদিন নিজের কোনো কোম্পানি খুলে অন্যকে চাকুরী দিতে পারেন।রবার্টের এই দুই বাবার চিন্তাধারা একদম ভিন্ন ছিল। তবে তিনি তার ধনবান বাবার কাছে ত্রিশ বছর যা শিখেছিলেন তার মূল ছয়টি শিক্ষা তিনি তার জীবনে পুনরাবৃত্তি করে গিয়েছিলেন।

শিক্ষা-১ঃ

ধনীরা অর্থের জন্য কাজ করে না।গরিবেরা গরিব হতে থাকে এবং ধনীরা আরও বিত্তশালী হয়।এই বিষয়টি আমাদের সমাজে সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। এমন কেন ঘটে! রবার্ট টি কিয়োসাকির মতে,এটি মূলত মানুষের মানসিকতার উপর নির্ভর করে।পরিবার বা সমাজ থেকে সবসময় বলা হয় চাকুরীর কথা। ভালো চাকুরী পেলে আমাদের জীবনযাপনও ভালো হবে। তবে এ ধরনের চিন্তা অনুসরণ করেও মানুষ গরিব থেকে যায়।কারণ সে একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্য থেকে আর বের হতে পারে না বা ভিন্ন চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ পায় না। কিন্তু যারা সত্যিকার অর্থে ধনী হতে চায়,তারা কাজ করে কোনো নতুন দক্ষতা শেখার জন্য যার দ্বারা তাদের অর্জিত টাকাকে তারা অন্য জায়গায় কাজে লাগিয়ে বা ব্যবসা করে বেশি টাকা লাভ করতে পারবেন।

শিক্ষা-২ঃ

অর্থনৈতিক সাক্ষরতার প্রয়োজনীয়তা।রবার্টের ধনী বাবা তাকে অর্থনৈতিক সাক্ষরতার শিক্ষা দেন। অর্থনৈতিক সাক্ষরতা হলো কিভাবে অর্থের যথোপযোগী ব্যবহার করা যায়।বিষয়টিকে আরও ভালোভাবে বোঝানোর জন্য তিনি সম্পত্তি এবং দায়-দায়িত্বের পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করেন।ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পত্তি থেকে টাকা তৈরি করেন।যেমনঃব্যবসায় অংশীদারিত্ব,বাড়ি ভাড়া ইত্যাদি। অন্যদিকে গরিব ও মধ্যবিত্তরা তাদের অর্জিত অর্থ দিয়ে সম্পত্তি ক্র‍য় করেন।যেমনঃ গয়না,বাড়ি,গাড়ি ইত্যাদি। যা তাদের মধ্যে দায়দায়িত্ব ও ভয় সৃষ্টি করে।

শিক্ষা-৩ঃ

নিজের ব্যবসায় মনোনিবেশ। লেখক এই বইয়ে সবসময় নিজেকে গুরুত্ব  দেয়ার কথা বলেছেন। চাকুরীজীবীরা তাদের জীবনের একটা নির্দিষ্ট সময় শুধু কোম্পানি  বা সরকারি অফিসে ব্যয় করেন এবং মাসিক আয় দিয়ে জীবনযাপন করেন।কিন্তু যখন তাদের চাকুরীর সময় শেষ হয়ে যায় তখন তারা শূন্য হয়ে পড়েন। কিন্তু ধনী ব্যক্তিরা সবসময় বিকল্প আয়ের পথ তৈরি করেন।যাতে তিনি কখনো যদি কাজ নাও করতে পারেন, তার বিকল্প  উৎস থেকে যাতে টাকা আয় হয়। রবার্ট টি কিয়োসাকি এই শিক্ষাটি গরিব ও মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য বলে উল্লেখ করেছেন।চাকুরীর পাশাপাশি তারা যদি তাদের সঞ্চিত টাকা দিয়ে বিকল্প অর্থ উপার্জনের উৎস তৈরি করেন,তাহলে চাকুরী জীবন অতিবাহিত হওয়ার পর ভালোভাবে জীবনধারণ করতে পারবেন।

শিক্ষা-৪ঃ

ট্যাক্সের ইতিহাস এবং কর্পোরেট ক্ষমতা ট্যাক্সের ইতিহাস আমরা অনেকেই হয়ত জানি না।আমরা ট্যাক্স কেন দেই! আসলে আমাদের সবাইকে আয়ের উপর ভিত্তি করে সরকারকে নির্দিষ্ট পরিমান ট্যাক্স দিতে হয়,যা দিয়ে সরকার সকলের মৌলিক চাহিদাগুলো মিটিয়ে থাকে।আমরা মনে করি,যেহেতু ধনীরা বেশি অর্থ উপার্জন করে তারা বেশি পরিমান ট্যাক্স দিয়ে থাকে।কিন্তু বিষয়টি মোটেও এমন নয়।ধনীরা তাদের কর্পোরেট সুবিধা দিয়ে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে কম ট্যাক্স প্রদান করেন।আর অন্যদিকে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্তদের অর্থনৈতিক সাক্ষরতা না থাকায় তারাই সরকারকে সবচেয়ে বেশি ট্যাক্স দেয়।কিয়োসাকি তার বইয়ে কর্পোরেশন ব্যবহার করে ট্যাক্স প্রদানের সুবিধার কথা আলোচনা করেছেন।অর্থ দিয়ে যে কোনো কিছুই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

শিক্ষা-৫ঃ

ধনীরা অর্থ আবিষ্কার করে।অর্থ উপার্জনের জন্য অর্থনৈতিক সাক্ষরতার বিকল্প নেই। অর্থনৈতিক সাক্ষরতা সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকলে যে কেউ অর্থ প্রাপ্তি করতে পারেন।যদি কখনো আপনার সামনে কোনো ভালো সুযোগ আসে,আর সেটার জন্য আপনার কাছে টাকা বা পর্যাপ্ত সহায়ক না থাকে তাহলে কিভাবে আপনি সেই সুযোগটিকে হাসিল করতে পারবেন অর্থনৈতিক সাক্ষরতা আপনাকে এই শিক্ষা দেয় অর্থাৎ ধনীরা তাদের টেকনিক্যাল নলেজ এবং সাহসের মাধ্যমে ভালো সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

শিক্ষা-৬ঃ

শেখার জন্য কাজ করুন,অর্থের জন্য নয়।রবার্টের ধনী বাবা রবার্ট ও মাইককে তাদের নয় বছর বয়স থেকে বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত করেন,যাতে তারা অর্থ উপার্জনের বিভিন্ন সেক্টর সম্পর্কে ধারণা পান।রবার্ট  এই শিক্ষাই তার পরবর্তী জীবনে প্রয়োগ করেন।এর মানে হচ্ছে কোনো কিছু করার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই শিখতে হবে,শুরুতেই আপনি অর্থের চিন্তা করলে তা আপনার জন্য সুফল বয়ে আনবে না।ধনীরা কখনো একবারেই সফল হন নি।চলার পথে তাদের অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে এবং তারা তাদের এই কঠিন সময়ের শিক্ষা দিয়েই সকল প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন।রবার্ট টি কিয়োসাকির ‘রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড’ বইটি বিশ্বের অন্যতম বেস্টসেলার বইগুলোর একটি।এই বইটি পাঠককে বাস্তব জীবনের শিক্ষার পাশাপাশি অনুপ্রেরণা জোগাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আমার প্রিয় এই বইটির রিভিওটি লিখেছেনঃ ছাদাপ জাহান দিনা।

Comments

Popular posts from this blog

Books poem analysis with bangla

Books poem in bangla and with analysis Verse-wise Bangla Translation: What worlds of wonder are our books! As one opens them and looks, New ideas and people rise In our fancies and our eyes. আমাদের বইগুলো কী আশ্চর্য এক জগৎ! যখনই কেউ তা খুলে দেখে, নতুন ভাবনা আর নতুন মানুষ জেগে ওঠে কল্পনায় ও চোখের সামনে। The room we sit in melts away, And we find ourselves at play With some one who, before the end, May become our chosen friend. আমরা যে ঘরে বসে আছি, তা যেন মিলিয়ে যায়, আর আমরা আবিষ্কার করি নিজেদের খেলায় মত্ত কাউকে সঙ্গে নিয়ে, যে হয়তো শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠবে। Or we sail along the page To some other land or age. Here's our body in the chair, But our mind is over there. অথবা আমরা পৃষ্ঠার ওপর দিয়ে ভাসতে থাকি অন্য কোনো দেশ বা কালের দিকে। আমাদের শরীরটা রয়েছে চেয়ারে, কিন্তু মন চলে গেছে দূরে অন্য কোথাও। Each book is a magic box Which with a touch a child unlocks. In between their outside covers Books hold all things for their lovers. প্রতিটি বই একেকটি জাদুর বাক্স, যা শিশুরা এক ...

🚀 ৫০টি দরকারি কিবোর্ড শর্টকাট (Windows)(বাংলা ব্যাখ্যাসহ)

🚀 ৫০টি দরকারি কিবোর্ড শর্টকাট (Windows) (বাংলা ব্যাখ্যাসহ) (অজানা কিন্তু খুবই কাজে লাগে) ⸻ ১. Ctrl + N → নতুন ফাইল বা ডকুমেন্ট খুলবে (Word, Notepad, Browser ইত্যাদিতে)। ২. Ctrl + Shift + T → আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্রাউজার ট্যাব পুনরায় খুলবে। ৩. Ctrl + Shift + Left/Right Arrow → একসাথে পুরো শব্দ নির্বাচন করা যাবে। ৪. Alt + F4 → অ্যাপ বা উইন্ডো বন্ধ হবে। ৫. Ctrl + P → প্রিন্ট ডায়ালগ বক্স খুলবে (প্রিন্ট করার জন্য)। ⸻ ৬. Ctrl + A → সব ফাইল বা টেক্সট সিলেক্ট হবে। ৭. Ctrl + C → কপি করা যাবে। ৮. Ctrl + V → পেস্ট করা যাবে। ৯. Ctrl + X → কাট করা যাবে। ১০. Ctrl + Z → সর্বশেষ কাজ Undo হবে। ⸻ ১১. Ctrl + Y → Undo করা কাজ Redo হবে। ১২. Windows Key + E → File Explorer খুলবে। ১৩. Windows Key + D → ডেস্কটপ দেখাবে (সব মিনিমাইজ হবে)। ১৪. Ctrl + Shift + Esc → সরাসরি Task Manager খুলবে। ১৫. Windows Key + L → কম্পিউটার লক হবে। ⸻ ১৬. Windows Key + S → সার্চ অপশন চালু হবে। ১৭. Windows Key + R → Run কমান্ড চালু হবে। ১৮. F5 → রিফ্রেশ করবে। ১৯. Alt + Enter → Properties খুলবে। ২০. Ctrl + T → ব্রাউজারে নতুন ট্যাব খু...

70 speaking rules(1~20)

Spoken Rule-1 Feel like – ইচ্ছা করা/আকাঙ্খা প্রকাশ করা প্রয়োগ ক্ষেত্র: ব্যক্তির কোন কিছুর “ইচ্ছা করলে” Feel like ব্যবহার হবে Structure: Subject + feel like + Verb (ing) + Extension. Example ✪ I feel like doing – আমার করতে ইচ্ছা করছে। ✪ I feel like eating – আমার খেতে ইচ্ছা করছে। ✪ I don’t ...