শিক্ষার সাথে জড়িত আমরা সকলেই জানি ২০১০ সালের পর এই প্রথম শিক্ষাক্রম পরিবর্তন হতে চলেছে অর্থাৎ জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ প্রকাশ করা হয়েছে । আজকের পোস্ট এর মাধ্যমে আমরা সেই নতুন শিক্ষাক্রম ২০২১ এর রূপরেখা সম্পর্কে জানব।
নতুন শিক্ষাক্রমে বিবেচ্য বিষয় সমূহ
- শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক ও আনন্দময় শিখনের পরিবেশ সৃষ্টি
- বিষয় ও পাঠ্যপুস্তক এর বোঝাও চাপ কমানো
- গভীর শিখনের বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান
- মুখস্ত নির্ভরতার পরিবর্তে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রম ভিত্তিক শিখনে অগ্রাধিকার প্রদান
- খেলাধুলা ও সৃজনশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের উপর গুরুত্ব প্রদান
- নির্দিষ্ট দিনের পাঠ শ্রেণিকক্ষেই যেন শেষ হয় সে ধরনের শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনায় সচেষ্ট হয় বাড়ির কাজ কমানো
- নির্দিষ্ট সময়ে অর্জিত পারদর্শিতার জন্য সনদ প্রাপ্তির প্রতি গুরুত্ব আরোপ
- জীবন ও জীবিকার সাথে সম্পর্কিত শিক্ষা
শিক্ষাক্রম ২০২১ অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরের বিষয়সমূহ
নতুন শিক্ষাগ্রহণ অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরে মোট আটটি বিষয়ে পড়ানো হবে আর টি বিষয় নিচে দেওয়া হল
- বাংলা
- ইংরেজি
- গণিত
- বিজ্ঞান
- সামাজিক
- ধর্ম শিক্ষা
- স্বাস্থ্য সুরক্ষা
- শিল্পকলা
শিক্ষাক্রম ২০২১ মাধ্যমিক স্তরের বিষয়সমূহ (ষষ্ঠ- দশম)
নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক স্তরে মোট দশটি বিষয়ে পড়ানো হবে এই 10 টি বিষয় নিচে দেওয়া হল
- বাংলা
- ইংরেজি
- গণিত
- বিজ্ঞান
- ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান
- জীবন ও জীবিকা
- ডিজিটাল প্রযুক্তি
- স্বাস্থ্য সুরক্ষা
- ধর্ম শিক্ষা
- শিল্প ও সংস্কৃতি
শিক্ষাক্রম ২০২১ এর শিখন সময়
সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন মোট কর্মদিবস ১৮৫ দিন
প্রাথমিক স্তরে শিখন সময়
শ্রেণি কর্মঘন্টা
প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ে ➜ ৫০০
১ম - ৩য় ➜ ৬৩০
৪র্থ -৫ম ➜ ৮৪০
মাধ্যমিক স্তরের শিখুন সময়
শ্রেণি কর্মঘন্টা
৬ষ্ঠ -৮ম ➜ ১০৩০
৯ম - ১০ম ➜ ১১০০
একাদশ থেকে দ্বাদশ ➜ ১১৫০
- শুধু জাতীয় দিবস সমূহ পালনের সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে এবং শিক্ষার্থীরা শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দিবসগুলো পালন করবে
- ওইসিডি ও এর সহযোগী দেশের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৯১৯ ঘন্টা (প্রস্তাবিত ১০৩০)
- ওইসিডি ও এর সহযোগী দেশ সমূহের বাৎসরিক গড় কর্মদিবস হলো ১৮৫এবং ইউরোপিয়ান ২৩ টি দেশের বাৎসরিক গড় কর্মদিবস হলো ১৮১ দিন। এই প্রেক্ষিতে সপ্তাহে দুই দিন ছুটি হিসেব করে প্রস্তাবিত মোট কর্ম দিবস আন্তর্জাতিক মানদন্ডের এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
শিক্ষাক্রম ২০২১ এর মূল্যায়ন পদ্ধতি
- মূল্যায়নকে কেবল শিক্ষার্থীর শিখন মূল্যায়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে পুরো শিক্ষাব্যবস্থার কার্যকারিতা মূল্যায়ন, শিখন পরিবেশের মূল্যায়ন ও ও সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীর শিখন এর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
- শিখন মূল্যায়নের ভিত্তি হবে যোগ্যতা
- শিক্ষাক্রম বহুমাত্রিক মূল্যায়নের যে সকল বিষয় অনুসরণ করা হবে সেগুলো হলো
- যোগ্যতার মূল্যায়ন নিশ্চিতকরণ
- শিখন এর জন্য শিখন কালীন মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ
- স্ব মূল্যায়ন, সতীর্থ মূল্যায়ন, মূল্যায়নে অভিভাবক ও সমাজের সম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্ব আরোপ
- মুখস্থনির্ভর সামষ্টিক মূল্যায়ন হ্রাস
- শিখন অগ্রগতি মূল্যায়নের ধারাবাহিক রেকর্ড সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা
শিক্ষাক্রম ২০২১ এর স্তরভিত্তিক মূল্যায়ন কৌশল
প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ে ➜ শিখনকালীন মূল্যায়ন ১০০%
প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি ➜ শিখনকালীন মূল্যায়ন ১০০%
চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণি ➜ বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান শিখনকালীন মূল্যায়ন ৬০%, সামষ্টিক মূল্যায়ন ৪০%
স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্পকলা শিখনকালীন মূল্যায়ন ১০০%
ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী ➜বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান শিখনকালীন মূল্যায়ন ৬০%, সামষ্টিক মূল্যায়ন ৪০%
জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি শিখনকালীন মূল্যায়ন ১০০%
নবম থেকে দশম শ্রেণী (পাবলিক পরীক্ষা সহ) ➜বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান শিখন কালীন মূল্যায়ন ৫০%, সামষ্টিক মূল্যায়ন ৫০%
জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি শিখনকালীন মূল্যায়ন ১০০%
দশম শ্রেণী শেষে দশম শ্রেণীর পাঠ্য সূচি এর উপর পাবলিক পরীক্ষা
একাদশ থেকে দ্বাদশ(পাবলিক পরীক্ষা সহ) ➜ আবশ্যিক বিষয়- শিখন কালীন মূল্যায়ন৩০% সামষ্টিক মূল্যায়ন৭০%
নৈবত্তিক বিশেষায়িত বিষয়
প্রয়োগিক বিষয়- শিখনকালীন মূল্যায়ন১০০%
একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্যসূচির উপর প্রতি বর্ষশেষে একটি করে পরীক্ষা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার ফলাফলের সমন্বয়ে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারিত হবে।
শিক্ষাক্রম ২০২১ রূপরেখা প্রস্তাবিত মূল পরিবর্তনসমূহ
- দশম শ্রেণী পর্যন্ত সকলের জন্য দশটি বিষয় নির্ধারণ
- পরীক্ষা ও মুখস্থনির্ভর পড়াশোনার পরিবর্তে পারদর্শীতাকে গুরুত্ব দিয়ে দশম শ্রেণী শেষে পাবলিক পরীক্ষা
- পরীক্ষার চাপ কমানোর জন্য একাদশ শ্রেণির শিক্ষাক্রম এর ভিত্তিতে একাদশ শ্রেণি শেষে এবং দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষাক্রম এর ভিত্তিতে দ্বাদশ শ্রেণি শেষে পাবলিক পরীক্ষা
- পারদর্শিতা অর্জন নিশ্চিত করা ও মুখস্থনির্ভরতা কমানোর জন্য শীতকালীন/ ধারাবাহিক মূল্যায়ন প্রবর্তন
- নবম ও দশম শ্রেণীতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য কৃষি, সেবা ও শিল্প খাতের একটি অকুপেশন এর ওপর দক্ষতা অর্জন বাধ্যতামূলক এবং দশম শ্রেণি শেষে যে কোন একটি অপারেশনে কাজ করার মতো পেশাদারী দক্ষতা অর্জন
- মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্তরের সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন প্রবর্তন
- অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিখন শেখানো কার্যক্রম বিদ্যালয়ের বাইরেও ( পারিবারিক ও সামাজিক পরিসরে) অনুশীলন
- সকল শিক্ষার্থীর অভিন্ন মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের জন্য স্তরভিত্তিক নির্বাচিত বিষয়ের পাশাপাশি মাদ্রাসা ও কারিগরি শাখার বিশেষায়িত বিষয়সমূহের যৌক্তিক সমন্বয়
সুত্রঃ ইন্টারনেট
No comments:
Post a Comment