Skip to main content

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের এই কদর্য কার্টুনটি ১৮৭৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল বসন্তক পত্রিকায়।কিন্তু কেন? আসুন জেনে নিই!

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের এই কদর্য কার্টুনটি ১৮৭৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল বসন্তক পত্রিকায়।
কিন্তু কেন? আসুন জেনে নিই! 

গ্রামের এক জমিদারবাড়িতে আয়োজন করা হয়েছে প্রকাণ্ড ভোজনের। সকলের পাতে সবেমাত্র পরিবেশন করা হয়েছে ঘিয়ে ভাজা লুচি ও মিষ্টি, এমন সময় অন্দরমহল থেকে দৌড়ে এল একটি ছ সাত বছরের ছোট্ট মেয়ে। তার চুল আলুথালু, পরনে সাদা থান। সরল মুখখানি শুকনো। 

“বাবা বাবা, তোমরা লুচি খাচ্ছ? মা’কে বলো না আমাকেও লুচি দিতে!”

সকলের সামনে অপ্রস্তুত জমিদারবাবু করুণ স্বরে বললেন, “ছিঃ আজ একাদশী না। খাবার কথা বলতে নেই, মা। তুমি ঘরে যাও।”

বাচ্চা মেয়েটার চোখ ছলছল করতে লাগল। সে একঝলক চোখ বুলিয়ে নিল সবার পাতের খাবার দিকে। তারপর বাবার কাছে কাঁদোকাঁদো গলায় বলল, “কিন্তু বাবা, আমি সকাল থেকে কিচ্ছু খাইনি। একফোঁটা জলও না। আমার বুঝি খিদে পায় না? তুমি, মা, দাদারা কেউ তো একাদশী করে না? আমাকে কেন করতে হবে? আমার পেটে খুব লাগছে বাবা!”

“তুমি ঘরে যাও মা। এখানে আমরা কাজের কথা বলছি।” জমিদারমশাইয়ের কন্ঠস্বর মেয়ের প্রতি মায়ায় আর্দ্র হয়ে এসেছিল, তবু তিনি দ্রুত নিজেকে সংবরণ করলেন।

একরত্তি মেয়েটার মুখ বাবার প্রত্যাখ্যানে কালো হয়ে গেল, সে ম্লান মুখে ভেতরে চলে গেল। 
 
জমিদারমশাই দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে বললেন, “আপনারা শুরু করুন। দেরি করবেন না। লুচি ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।”

কিছুজন ইতিমধ্যেই খাওয়া শুরু করেছেন। একেবারে মধ্যমণি বিদ্যাসাগরের জন্য স্পেশাল ব্যবস্থা, দেওয়া হয়েছে রুপোর থালা বাটি গ্লাস। 

বিদ্যাসাগর বললেন, “আমার শরীরটা হঠাৎ ঠিক লাগছে না। কিছু মনে করবেন না। আমি খাব না। বামুন ঠাকুর, তুমি থালা সরিয়ে নিয়ে যাও।”

জমিদারবাবুর পীড়াপীড়ি না শুনে বিদ্যাসাগর উঠে পড়লেন। সকলে আহারের পর প্রস্থান করলে জমিদারবাবু বললেন, “এবার একটু মিষ্টি মুখে দিন। এখন নিশ্চয়ই একটু সুস্থ লাগছে!”
 
“শরীর আমার সুস্থই আছে জমিদারমশাই।” বিদ্যাসাগর তেতো মুখে বললেন, “ক্ষত তৈরি হয়েছে আমার মনে। মেয়েদের শিক্ষার জন্য আমি এতকাল ছুটছিলাম, কিন্তু এত বড় অন্যায় যে আমাদের বিধবা মেয়েদের প্রতি ঘরে ঘরে হয়ে চলেছে, তা সম্পর্কে কিনা ছিলাম পুরোপুরি অন্ধ? ছি! রামমোহন ওদের বাঁচিয়েছিলেন জ্বলন্ত চিতা থেকে। কিন্তু ওরা তো এখনো মরছে, প্রতিদিন একটু একটু করে মরছে। জ্বলছে খিদেয়, অমানবিকতায়। আপনার মেয়ে আজ আমায় চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে দিল।”

জমিদার নিরুত্তর। কী বলবেন বুঝতে পারছেন না।

বিদ্যাসাগর ব্যগ্রভাবে প্রশ্ন করলেন, “আচ্ছা, আপনার মেয়ে তো একেবারে ছোট, সারাজীবনটা পড়ে রয়েছে সামনে। আপনি ... আপনি পারেন না ওর আবার বিয়ে দিতে? ও তো তাহলে আবার বাঁচতে পারবে নতুন করে! বিদেশে তো কত হচ্ছে এমন।”

“এটা বিদেশ নয় বিদ্যাসাগর মশাই।” মুহূর্তে গম্ভীর হয়ে উঠল ভদ্রলোকের মুখ, “আমাদের সমাজে বিধবাবিবাহের কোন স্বীকৃতি নেই। হিন্দু মেয়েদের রি-ম্যারেজের কোন আইন নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা, কোন শাস্ত্রেও তো এ’কথা বলা নেই। আমি কী করব বলুন। মহারাজা রাজবল্লভ সেন তার মেয়ের বিয়ে দিতে পারল না, নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র সব বানচাল করে দিলেন, আর আমি তো সামান্য এক ভূস্বামী! আমার মেয়ের পোড়া কপাল, তাই ওকে এভাবেই বাঁচতে হবে।”

বিদ্যাসাগর উঠে দাঁড়ালেন, “কপাল লড়াই করে পাল্টাতে হয় জমিদারমশাই। আজ থেকে আমি ওর জন্য, ওদের মত ছোট ছোট অসহায় মেয়েদের জন্য সেই লড়াই-ই শুরু করব। শাস্ত্রের বিধান আর সরকারি আইন ছাড়া তো কিছুতেই মানুষ বিধবা বিবাহ মানবে না? বেশ। শাস্ত্র ঘেঁটে আমি বের করব প্রতিকার। আইনও বদলাব। আজ বিদায় নিলাম। ভাল থাকবেন।”

শুরু হল তাঁর নতুন সংগ্রাম। একদিকে কলেজে অধ্যাপনা, নিজের ছাপাখানার ব্যবসা চালানো, গড়ে তোলা স্কুলগুলোর জন্য টাকা সংগ্রহ, অন্যদিকে রাতের পর রাত জেগে বেদ উপনিষদ পুরাণ ঘাঁটা। কোথায় আছে নারীর পুনর্বিবাহের বিধান?  

অন্যদিকে ধেয়ে আসছে তীব্র আক্রমণ। বিদ্যাসাগরের বাড়ির সামনে চলছে প্রতিবাদ, ব্যঙ্গবিদ্রুপের ঝড়। এমনকি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পর্যন্ত তাঁর বিষবৃক্ষ উপন্যাসে সূর্যমুখীকে দিয়ে বলাচ্ছেন, “যে বিধবা বিবাহের ব্যবস্থা করে, সে যদি পণ্ডিত হয়, তবে মূর্খ কে!”

সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের জনপ্রিয়তা তখন কিংবদন্তী, তাঁর এই মন্তব্য, ক্রমাগত কটূক্তি আরো উৎসাহ জোগাল রক্ষণশীলদের। গোটা দেশে যেন বিস্ফোরণ হল। ছিছিক্কার পড়ে গেল চারদিকে। সুদূর বোম্বাই থেকে ত্রিপুরা, উত্তর ভারত থেকে গ্রামবাংলা, হাজার হাজার প্রতিবাদপত্র এসে পৌঁছতে লাগল ব্রিটিশ সরকারের কাছে। এতদিন যারা বিদ্বান বলে, পণ্ডিত বলে ঈশ্বরচন্দ্রকে শ্রদ্ধাভক্তি করতেন, তাঁদের অধিকাংশই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। 

ছি ছি, এই শিক্ষার নমুনা? বিদ্যাসাগরকে উদ্দেশ্য করে নানা অশালীন চিঠি আসতে লাগল খবরের কাগজগুলোর দপ্তরে। 

কবি ঈশ্বর গুপ্ত শ্লেষভরে লিখলেনঃ

বাধিয়াছে দলাদলি লাগিয়াছে গোল।
বিধবার বিয়ে হবে বাজিয়াছে ঢোল।।
‘পরাশর’ প্রমাণেতে বিধি বলে কেউ।
কেহ বলে, এ যে দেখি সাগরের ঢেউ।।
কেহ কহে এই বিধি কেমনে হইবে।
হিঁদুর ঘরের রাঁড়ী সিঁদুর পরিবে।।

গোঁড়া পণ্ডিতদের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও দেশের সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ কিন্তু দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করতে লাগল বিদ্যাসাগরকে। তখন কুলীন প্রথার জন্য বাচ্চা বাচ্চা মেয়েরা অকালে বিধবা হতো, সারাজীবন সেই বৈধব্যের যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো তাদের। শাস্ত্রে যখন রয়েছে, তখন তারা কেন আবার নতুন করে বাঁচার সুযোগ পাবে না? হাটেবাজারে এই নিয়ে সারাক্ষণ আলোচনা। শান্তিপুরের তাঁতিরা একরকম শাড়িই বের করে ফেলল, যার পাড়ে লেখা রয়েছে একটি গান। সুখে থাকুক বিদ্যাসাগর চিরজীবী হয়ে। 
 
বিদ্যাসাগরকে সমর্থন করে যে আবেদন সরকারের কাছে গেল, তাতে সই করলেন প্রায় হাজার জন। কিন্তু বিদ্যাসাগরের মতের বিপক্ষে সই গেল তেত্রিশ হাজার জনের।

শান্তিপুরী তাঁতিদের ব্যঙ্গ করে নতুন গান বাঁধা হল,
শুয়ে থাক বিদ্যাসাগর চিররোগী হয়ে।”

লেখক: Debarati Mukhopadhyay
.
Collected from facebook

Comments

Popular posts from this blog

Books poem analysis with bangla

Books poem in bangla and with analysis Verse-wise Bangla Translation: What worlds of wonder are our books! As one opens them and looks, New ideas and people rise In our fancies and our eyes. আমাদের বইগুলো কী আশ্চর্য এক জগৎ! যখনই কেউ তা খুলে দেখে, নতুন ভাবনা আর নতুন মানুষ জেগে ওঠে কল্পনায় ও চোখের সামনে। The room we sit in melts away, And we find ourselves at play With some one who, before the end, May become our chosen friend. আমরা যে ঘরে বসে আছি, তা যেন মিলিয়ে যায়, আর আমরা আবিষ্কার করি নিজেদের খেলায় মত্ত কাউকে সঙ্গে নিয়ে, যে হয়তো শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠবে। Or we sail along the page To some other land or age. Here's our body in the chair, But our mind is over there. অথবা আমরা পৃষ্ঠার ওপর দিয়ে ভাসতে থাকি অন্য কোনো দেশ বা কালের দিকে। আমাদের শরীরটা রয়েছে চেয়ারে, কিন্তু মন চলে গেছে দূরে অন্য কোথাও। Each book is a magic box Which with a touch a child unlocks. In between their outside covers Books hold all things for their lovers. প্রতিটি বই একেকটি জাদুর বাক্স, যা শিশুরা এক ...

🚀 ৫০টি দরকারি কিবোর্ড শর্টকাট (Windows)(বাংলা ব্যাখ্যাসহ)

🚀 ৫০টি দরকারি কিবোর্ড শর্টকাট (Windows) (বাংলা ব্যাখ্যাসহ) (অজানা কিন্তু খুবই কাজে লাগে) ⸻ ১. Ctrl + N → নতুন ফাইল বা ডকুমেন্ট খুলবে (Word, Notepad, Browser ইত্যাদিতে)। ২. Ctrl + Shift + T → আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্রাউজার ট্যাব পুনরায় খুলবে। ৩. Ctrl + Shift + Left/Right Arrow → একসাথে পুরো শব্দ নির্বাচন করা যাবে। ৪. Alt + F4 → অ্যাপ বা উইন্ডো বন্ধ হবে। ৫. Ctrl + P → প্রিন্ট ডায়ালগ বক্স খুলবে (প্রিন্ট করার জন্য)। ⸻ ৬. Ctrl + A → সব ফাইল বা টেক্সট সিলেক্ট হবে। ৭. Ctrl + C → কপি করা যাবে। ৮. Ctrl + V → পেস্ট করা যাবে। ৯. Ctrl + X → কাট করা যাবে। ১০. Ctrl + Z → সর্বশেষ কাজ Undo হবে। ⸻ ১১. Ctrl + Y → Undo করা কাজ Redo হবে। ১২. Windows Key + E → File Explorer খুলবে। ১৩. Windows Key + D → ডেস্কটপ দেখাবে (সব মিনিমাইজ হবে)। ১৪. Ctrl + Shift + Esc → সরাসরি Task Manager খুলবে। ১৫. Windows Key + L → কম্পিউটার লক হবে। ⸻ ১৬. Windows Key + S → সার্চ অপশন চালু হবে। ১৭. Windows Key + R → Run কমান্ড চালু হবে। ১৮. F5 → রিফ্রেশ করবে। ১৯. Alt + Enter → Properties খুলবে। ২০. Ctrl + T → ব্রাউজারে নতুন ট্যাব খু...

70 speaking rules(1~20)

Spoken Rule-1 Feel like – ইচ্ছা করা/আকাঙ্খা প্রকাশ করা প্রয়োগ ক্ষেত্র: ব্যক্তির কোন কিছুর “ইচ্ছা করলে” Feel like ব্যবহার হবে Structure: Subject + feel like + Verb (ing) + Extension. Example ✪ I feel like doing – আমার করতে ইচ্ছা করছে। ✪ I feel like eating – আমার খেতে ইচ্ছা করছে। ✪ I don’t ...