ওসমান হাদির ০৩টি কবিতা:
🌱🍀🌱
কবিতা-১
"আমায় ছিঁড়ে খাও হে শকুন"
হে সীমান্তের শকুন
এক্ষুনি ছিঁড়ে খাও আমাকে
হে আটলান্টিকের ঈগল
শিগগির খুবলে খাও আমাকে
হে বৈকাল হ্রদের বাজ
আঁচড়ে কামড়ে ছিন্নভিন্ন করো আমাকে।
আমার রক্তরসে শুধু অসহায়ত্ব আর অভাব;
কাগজের কামলারা তারে আদর করে মুদ্রাস্ফীতি ডাকে।
ঋণের চাপে নীল হয়ে যাচ্ছে আমার অণুচক্রিকা
সংসার চালাতে অন্তরে হয় ইন্টারনাল ব্লিডিং
কী আশ্চর্য, তবুও আমি মরছি না!
ওদিকে দোজখের ভয়ে
আত্মহত্যা করবারও সাহস পাই না আমি!
খোদাকে বললাম, আমি মরতে চাই তিনি বললেন, বেঁচে আছ কে বলল? সহস্রাব্দ উন্নয়নের সাক্ষী হিসেবে রাজা তোমাকে মমি করে রেখেছেন!
বাজারে দীর্ঘশ্বাস ফেললে নাকি রাজ্যের ভীষণ বদনাম হয়
রাজারও মন খারাপ হয় খুব।
কোতোয়ালরা ফরমান জারি করেছে আমাকে সারাক্ষণই হাসতে হবে! নইলে দেশি কুকুর ও বিদেশি মাগুরকে
একবেলা ভালোমন্দ খাওয়ানো হবে আমার মাংস দিয়ে
নিত্যদিন ব্রয়লারের ভুঁড়ি নাকি ওদের ভাল্লাগে না!
অথবা আমাকে ভাগ দিয়ে বেচা হবে মানুষেরও তো মানুষ খাওয়ার সাধ হতে পারে, তাই না?
ভাগ্যিস তা বিদেশি সুপারশপে বিকি হবে না
দেশি মানুষেরই তো হক বেশি আমাকে খাওয়ার!
এ দোজখই যখন নিয়তি
তখন আমি উদাম হয়ে ডাকছি দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মাংসাশী বিহগদের
হে ঈগল, চিল ও ভয়ংকর বাজেরা
হে সাম্রাজ্যবাদী সাহসী শকুনিরা তোমরা এফ-থার্টি ফাইভের মতো মিগ টুয়েন্টি নাইনের মতো-
দল বেঁধে হামলে পড়ো আমার বুকে আমার রান, থান, চক্ষু, কলিজা
আজ সব তোমাদের গনিমতের মাল দেশি শুয়োর খুবলে খাওয়ার আগেই আমায় ইচ্ছেমতো ছিঁড়ে খাও তোমরা!
দোহাই, শুধু মস্তিষ্কটা খেয়ো না আমার তা হলে শীঘ্রই দাস হয়ে যাবে তোমরাও।
-------------------------------------------------
কবিতা-২
না-করা সংসার
বাংলাকে কীভাবে বেয়নেট চার্জ করা হলো ফোর্ট উইলিয়ামে
রেনেসাঁর খামে আঠারোতে এলো ঠিক কোন আলো
মালিক থেকে কেমনে দাস হলাম কর্নওয়ালিসের কালে
জমিদারির জগদ্দল হাজত থেকে আজও জামিন পেত কি না বাংলাদেশ;
মলচত্বরের গরিব ঘাসে
সাতচল্লিশের এ আলাপ আমাদের হয় নাই কোনোদিন।
স্বৈরতন্ত্রের এক সন্ধ্যায়
হঠাৎ আমাদের হয়েছিল দেখা, সেদিন আমার সারা গায়ে নোনতা স্লোগান মাখা
পোড়া মাটির কণ্ঠে বললে-
তোমারে ছাড়া প্রচণ্ড ঊষর আমি ধানের পাতার মতো পুড়ে যাই রোজ তোমার অপ্রেম কি এ প্রেমের চেয়েও দামি?
নিঃশব্দ স-মিলে দুঃখ চিরিয়া যায় উপেক্ষার মোম নিভে যায় অভাবী হাওয়ায়
'আমাদের বুক কাঁপছে, কাঁপছে ঠোঁট ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে কাঁপছে দেশ তারও বহু গুণ
তোমায় হলগেটে রেখে
ফিরে এলাম একলা আমি
বললাম না বিদায়ি কোনো কথা
চোখ মুছে দিলাম না কেউ কারো বেদখল আন্ধার সাক্ষী হলো-
মাতৃভূমির মতো কাঁপছি দুজনেই থরোথরো।
-------------------------------------------------
কবিতা-৩
আমায় ক্ষমা করো ইয়াজিদ
তোমার সাথে আমি জুলুম করেছি ইয়াজিদ!
অবনত মস্তকে আজ ক্ষমা চাইছি-' তুমি ক্ষমা করো, আমায় মাফ করো
হোসাইনের ভালোবাসায় আমি শহীদ হতে চেয়েছি অসংখ্যবার
নীল নদে যেমন নিঃশেষ হয়েছিল ফেরাউন
তেমনি রক্তের ফোরাত হয়ে তোমায় ডোবাতে চেয়েছি আজনম
আমি জানতাম-
আমার প্রতিটি নিশ্বাস শুধু ইনসাফের জন্যই নিবেদিত
আমার রক্তরসে শুধু মজলুমের মিছিল
রক্তাক্ত ঘোড়ায় ছুটে চলে আমার তিরবিদ্ধ রুহ
জনতার তাহরিরে, তিউনিশিয়ায়, আলজেরিয়ায়
অকিউপাই ওয়াল স্ট্রিটে, কাশ্মীরে, রামাল্লায়
আমার নোনতা চোখে ফেনিয়ে ওঠে বঙ্গোপসাগর!
কিন্তু এখন জানি-
এসবই মিথ্যা, সবই মেকি
Comments
Post a Comment