আপনি যে সারাদিন Gemini আর চ্যাটজিপিটি নিয়ে পড়ে থাকেন, কখনো ভেবেছেন এগুলোর ব্রেইনটা কে বানিয়েছে?
ভাবছেন কোনো বিশাল টিম?
নাহ।
গল্পটা এক লড়াকু মানুষের।
নাম জিওফ্রে হিন্টন।
আজ তাকে সবাই মাথায় করে রাখে।
ডাকে "গডফাদার অফ এআই"।
কিন্তু ফ্ল্যাশব্যাকটা এত সুন্দর ছিল না।
তখন তিনি তরুণ। মাত্র ৩০ বছর বয়স।
আমেরিকার বড় বড় ল্যাব তাকে ডাকছে।
হাতে অফুরন্ত টাকা। হাই স্যালারি।
শর্ত একটাই—তার টেকনোলজি আমেরিকান মিলিটারি ব্যবহার করবে।
সাধারণ কেউ হলে কী করত?
চুপচাপ সাইন করে দিত।
কিন্তু হিন্টন করলেন উল্টোটা।
তিনি মুখের ওপর "না" বলে দিলেন।
বললেন, "আমার রিসার্চ আমি যুদ্ধের জন্য বেচব না।"
চাকরিটা ছেড়ে দিলেন।
টাকা আর পাওয়ার—দুটোই পায়ে ঠেলে চলে এলেন কানাডায়।
শুরু হলো তার আসল যুদ্ধ।
তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষের ব্রেইন যেভাবে শেখে, কম্পিউটারকেও সেভাবে শেখানো সম্ভব।
নাম দিলেন "নিউরাল নেটওয়ার্ক"।
কিন্তু সমস্যা কী জানেন?
পুরো বিজ্ঞান সমাজ বলল—"এটা ফালতু আইডিয়া।"
বড় বড় প্রফেসররা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতেন।
বলতেন, "হিন্টন তার ট্যালেন্ট নষ্ট করছে।"
রিসার্চ পেপার সাবমিট করলে রিজেক্ট হয়ে যেত।
ফান্ডিং তো দূরের কথা, ল্যাবে কাজ করার জায়গাও পেতেন না ঠিকমতো।
এক বছর না। দুই বছর না।
টানা ৩০ বছর এই অবহেলা চলল।
ছাত্ররা তার ল্যাবকে বলত "কম্পিউটার সায়েন্সের চিলেকোঠা"।
কারণ কেউ ওখানে কাজ করতে চাইত না।
হিন্টন নিজেই ভাঙাচোরা পার্টস দিয়ে হার্ডওয়্যার বানাতেন।
কিন্তু হাল ছাড়েননি।
সবাই যখন তাকে পাগল ভাবছে, তিনি তখন ল্যাবের এক কোণায় বসে বিশ্বাস ধরে রেখেছিলেন।
"একদিন পৃথিবী বুঝবে।"
তারপর এল ২০১২ সাল।
ম্যাজিক মোমেন্ট।
হিন্টন আর তার দুই ছাত্র একটা প্রতিযোগিতায় নামলেন।
ইমেজ রিকগনিশন। অর্থাৎ কম্পিউটার ছবি দেখে চিনবে।
বাকিরা যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, হিন্টনের মডেল সেখানে সবাইকে গুঁড়িয়ে দিল।
অবিশ্বাস্য রেজাল্ট!
বিজ্ঞানীরা হা করে তাকিয়ে রইল।
যেই আইডিয়াকে তারা ৩০ বছর ধরে "রাবিশ" বলেছিল, সেটাই আজ বিশ্বজয় করল।
গুগল সাথে সাথে দৌড়ে এল।
হিন্টনের স্টার্টআপ কিনে নিল।
তাকে বানালো ডিস্টিংগুইশড রিসার্চার।
তার ছাত্ররা রাতারাতি সুপারস্টার হয়ে গেল।
আজকের এই ডিপ লার্নিং, ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট, সেলফ ড্রাইভিং কার—সবকিছুর মূলে ওই একগুঁয়ে মানুষটার ৩০ বছরের সাধনা।
গল্প শেষ? হ্যাপি এন্ডিং?
না বস।
এখানেই গল্পের সবচেয়ে বড় টুইস্ট।
২০২৩ সাল।
হিন্টনের বয়স এখন ৭৫।
তিনি সারা জীবন যা বানিয়েছেন, আজ সেটা দুনিয়া কাঁপাচ্ছে।
কিন্তু হঠাৎ তিনি গুগল থেকে পদত্যাগ করলেন।
কেন? আরাম করার জন্য?
না।
তিনি পদত্যাগ করলেন যাতে তিনি মন খুলে কথা বলতে পারেন।
তিনি বললেন, "আমি যা বানিয়েছি, তা নিয়ে আমি ভীত।"
তিনি দেখলেন করপোরেট কোম্পানিগুলো টাকার লোভে এআই-কে বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।
যেই লোকটা ৩০ বছর বয়সে মিলিটারির টাকার অফার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
সেই একই লোক ৭৫ বছর বয়সে গুগলের টপ পজিশন ছেড়ে দিলেন।
শুধু নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকার জন্য।
তিনি বললেন, "আমি চাই না আমার কাজ মানুষের ক্ষতির কারণ হোক।"
ভাবুন একবার!
যাকে পুরো দুনিয়া ইগনোর করেছে, তিনি জেদ ধরে রেখে সফল হয়েছেন।
আবার যখন সফল হয়েছেন, তখন অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি।
লেসনটা কী জানেন?
আপনি হয়তো এখন ভাবছেন আপনাকে কেউ পাত্তা দেয় না।
হয়তো আপনার আইডিয়া শুনে বন্ধুরা হাসে।
হাসতে দিন।
জিওফ্রে হিন্টন সফল হয়েছেন কারণ তিনি দুনিয়ার কথায় কান দেননি।
তিনি সফল হয়েছেন কারণ তিনি নিজের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন।
৩০ বছর ধরে যদি কেউ একটা "ফালতু" আইডিয়া নিয়ে বসে থাকতে পারে এবং সেটা দিয়ে দুনিয়া বদলে দিতে পারে...
তাহলে আপনি কেন পারবেন না?
ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যাবেন না।
নিজের রাস্তায় হাঁটুন, যতই একা লাগুক।
ফোনটা পকেটে রাখুন।
এবার নিজের ফিউচারটা নিজের মতো করে কোড করুন।
Comments
Post a Comment