#বাংলা_ভাষা_প্রতিষ্ঠায়_মুসলমানদের_অবদানঃ পর্ব - ০১
পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাই একমাত্র ভাষা, যার স্বীকৃতী লাভের জন্য সংগ্রাম করেছে পুরো একটি জাতি। প্রাণপণে সর্বোচ্চ দিয়ে লড়ে গেছে আপামর জনতা, অকালে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে টকবগে যুবক থেকে থুরথুরে বৃদ্ধ পর্যন্ত, হাসিমুখে শাহাদাত বরণ করেছে অগণিত মানুষ। একমাত্র বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠা সংগ্রাম জন্ম দিয়েছে একটি স্বাধীন-স্বার্বভৌম দেশ। বাঙালি মুসলমানদের দুটি বড় অহংকারের জায়গা রয়েছে, একটি তার দেশ, অন্যটি ভাষা।
জগতের সবকিছুই মহান আল্লাহ পাকের সৃষ্টি ও অকৃপণ দান; ভাষাও এর ব্যতিক্রম নয়। মহান আল্লাহ তাআলার সেরা নেয়ামত। ইসলাম সব ভাষাকে সম্মান করতে শেখায়; কারণ, সব ভাষাই আল্লাহর দান ও তাঁর কুদরতের নিদর্শন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।’
দেখা যায়, ফেব্রুয়ারী মাস এলেই একদল বুদ্ধিজীবী বাংলা ভাষার চেতনাকে মুসলিম চেতনার বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে দেয়। অথচ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- বাংলা ভাষা,সাহিত্য ও বাংলা সংস্কৃতি মুসলমানদেরই অবদান, মুসলমানদের থেকেই এসেছে। অথচ অধিকাংদেরই সেটা সম্পর্কে ধারণা নেই। আমি ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
#বাংলা_ভাষা_বঙ্গ_নামের_উৎপত্তি:
হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার আমলে মহাপ্লাবন, কুরআন শরীফসহ সকল ধর্মগ্রন্থে স্বীকৃত। মহাপ্লাবনের পর হযরত নূহ আলাইহিস সালাম , উনার স্ত্রী, সন্তানসহ ৮০ জন নর-নারী আল্লাহপাক উনার হুকুমে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বংশ বৃদ্ধিতে নিয়োজিত থাকেন। হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার পরবর্তী বংশধরগণই নতুনভাবে পৃথিবী সাজিয়েছেন।
হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার এক পুত্র হাম এশিয়া অঞ্চলে বংশ বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করেন। হামের পুত্র ‘হিন্দের’ নামানুসারে হিন্দুস্থান, সিন্দের নামানুসারে ‘সিন্ধুস্থান’ বা ‘সিন্ধু’ এবং হিন্দের পুত্র ‘বঙ্গ’-এর নামানুসারে বঙ্গদেশ। বঙ্গদেশের বা বঙ্গের সন্তানরা বাঙ্গালি বা বাংলাদেশী হিসেবে সারা পৃথিবীতে পরিচিত।
তাহলে বলতে আর বাধা নেই , হযরত নূহ আলাইহি সালাম উনার পৌত্র বা নাতির নামানুসারে বঙ্গ বা বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য বেঙ্গল ও বাংলা শব্দগুলো এসেছে ফারসী ‘বাঙ্গালহ্’ থেকে। ‘বাংলা’ শব্দটির প্রথম ব্যবহার পাওয়া যায় ফারসী ভাষী মোঘল বাদশাহদের শাসন আমলে ‘আইনী আকবরী’ গ্রন্থে।
আরো উল্লেখ্য, হি/ন্দু ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের আর্য বলে দাবি করে থাকে। অথচ আর্যদের মূল বাসস্থান কিন্তু ভারত উপমহাদেশ নয়, এরা এসেছে পারস্য থেকে। সে হিসেবে আর্য বা বর্তমান হি/ন্দু ধর্মাবলম্বীরা হচ্ছে বিদেশী, বাঙালী তো নয়ই।
তাই ‘বাঙালী সংস্কৃতি মানেই হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংস্কৃতি’ ইতিহাস কোন সূত্রই এ বক্তব্য কখন সমর্থন করে না। [রিয়াজ-উস-সালাতীন’]
আমার মনে হয়, যারা এ ধরনের বাংলা কথা বলে, তারা নিরেট অজ্ঞ। কারণ বাংলা সংস্কৃতি তো অনেক পরের কথা, এই ‘বাংলা’ শব্দটির মালিকই হিন্দু নয়, বরং মুসলমানরা।
চলবে…
%%&%%&
#বাংলা_ভাষা_প্রতিষ্ঠায়_মুসলমানদের_অবদানঃ পর্ব -০২
প্রথম পর্বে আমি ‘বাংলা ভাষা-বঙ্গ নামের উৎপত্তি’ নিয়ে কিছুটা আলোচনা করেছি। আজকে ‘বাংলা ভাষার প্রচার প্রসার ও বিস্তারে তৎকালীন হি/ন্দুরাজাদের পৃষ্ঠপোষকতা কেমন ছিল’ এই নিয়ে আলোচনা করবো। কারণ, একদল কথিত বুদ্ধিজীবী তাদের লেখনীতে আর কিছু হুজুর ওয়াজ-মাহফিলে বাংলা ভাষারকে হি*ন্দুয়ানী ভাষা বলে উল্লেখ করে থাকে। অথচ ইতিহাস বলে অন্যকথা;আসুন আলোচনা করা যাক।
প্রাচীনকালে বাংলাদেশের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে ঐতিহাসিক (Marshman 1859) বলেছেন-
“অতি প্রাচীনকালে বঙ্গদেশে কি অবস্থা ছিল তাহা নিশ্চয় করা অতি দুষ্কর ৷ বিশেষতঃ হি/ন্দুধর্ম কোন সময় হইতে চলিল, তাহা জানা যায় না ৷ যে মানুষেরা বঙ্গদেশে প্রথম বাস করিয়াছিল, তাহারা হি/ন্দু ছিল না। কিন্তু পশ্চিম সীমার পার্বতীর লোকদের তুল্য এক জাতি ছিল। যে ভাষা এখন চলিত আছে, তাহা কোন সময় উৎপন্ন হইল, ইহাও নিশ্চয় করা আমাদের পক্ষে অসাধ্য। সংস্কৃত, আরবী ও ফারসী ভিন্ন আরও অন্য অনেক শব্দ বঙ্গভ্যষার চলিত আছে । তাহাতে অনুমান হয় যে, বঙ্গদেশবাসী লোকেরা যে ভাষা ব্যবহার করিত তাহার সহিত সংস্কৃত ভাষার কোনো সম্পর্ক ছিল না ।” [বঙ্গদেশের পুরাবৃত্ত]
শুধু তাই নয়। সুপ্রসিদ্ধ বাঙালী ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দোপাধ্যায় আরও কঠিন কথা বলেছেন। তার মতে আর্যভাষা তো দূরের কথা, বাংলাদেশে আদৌ কোন আর্য আছে কিনা, তাই তো সন্দেহের বিষয়। তিনি বলেন: “যে সময় ঐতরেয় ব্রাহ্মণ অথবা আরণ্যকে আমরা বঙ্গ অথবা পুণ্ড্র জাতির উল্লেখ দেখিতে পইি, সেই সময় অঙ্গে-বঙ্গে অথবা মগধে আর্য জাতির বাস ছিল না।” [ সূত্র - বাংলা ভাষার নূতন পরিচয় - কবি গোলাম মোস্তফা]
এবার আলোচনা করা যাক, বাংলা ভাষার প্রতি তৎকালীন হি/ন্দুরাজাদের বিমাতৃসুলভ আচরণ নিয়ে।
প্রায় দুইশত বৎসর ধরে বাংলাদেশে সেন রাজাদের শাসনাধীন ছিল। এই সময়ের মধ্যে বাংলাভাষার প্রতি তাদের দরদ কেমন ছিল আসুন আলোচনা করি।
বহুভাষাবিদ পণ্ডিত ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বলেনঃ
“আমরা হিন্দু-কালের কোনো বাঙ্গালা সাহিত্য পাই নাই। হি/ন্দু সেনরাজগণ সংস্কৃতের উৎসাহদাতা ছিলেন৷ ব্রাহ্মণেতর ধর্মের সহিত সংশ্লিষ্ট বলিয়াই সম্ভবতঃ তাহারা বাংলা ভাষার প্রতি বিদ্বিষ্ট ছিলেন।” [বাঙ্গালা ব্যাকরণ] কারণ সেযুগের ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা কেবল সংস্কৃত শিক্ষা করতো। এর কারণ হল- তাঁরা সংস্কৃতকে দেবভাষা মনে করতো।
কোনোরূপ সাহায্য করা তো দূরে থাকুক, বাংলা ভাষার উচ্ছেদ-সাধনের জন্যই তারা উঠেপড়ে লেগেছিল।
এ নিয়ে সুপণ্ডিত ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক বলেছেন:
“বাংলার শেষ হিন্দু রাজা ছিলেন লক্ষ্মণ সেন ৷ তাঁহার সভায় ধোয়ী, উমাপতি ধর প্রভৃতি কবি এবং হলায়ুধ মিশ্র প্রভৃতি পণ্ডিত ছিলেন। কিন্তু নানা পণ্ডিত ও কবির সমাবেশে তাঁহার রাজধানীতে যে সংস্কৃত ভাষা চর্চার ও পাণ্ডিত্য-প্রকাশের সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়িয়া উঠে, তাহা জয়দেবের গীত-গোবিন্দের মাধ্যমে সমগ্র উত্তর ভারতে প্রভাব বিস্তার করিলেও বাংলা ভাষা চর্চার কোনো আয়োজন তথায় ছিল না”।
আর একটি তার মূল্যবান মন্তব্য:
“১২০৩ খ্রীষ্টাব্দে তুর্কীবীর ইখতিয়ার বিন মুহম্মদ বখতিয়ার লক্ষণ সেনকে লক্ষণাবতী হইতে বিতাড়িত করিয়া বাংলায় সংস্কৃত চর্চার মূলে কুঠারাঘাত হানিয়া বাংলা চর্চার পথ উন্মুক্ত করেন।”[মুসলিম বাংলা-সাহিত্য]
মূলতঃ মুসলমানদের দ্বারা বঙ্গ-বিজয় না হলে আর্যদের হাতে যে বাংলাভাষা বিলুপ্ত হতো, তাতে কোনোই সন্দেহ নাই। অনেকে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মাদ বখতিয়ার খিলজীর শাসনকাল (১২০১ থেকে ১৩৫০ সাল এই দেড়শত বছর) বাংলা সাহিত্যের ‘অন্ধকার যুগ’ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। ‘অন্ধকার যুগ’ না কি বাংলা সাহিত্য উন্মোচনের যুগ সেটা নিয়ে চলমান বিভ্রান্তির অবসান হওয়া প্রয়োজন। এই নিয়ে পরের পর্বে আলোচনা করা হবে।
(চলবে………)
%%%%%
বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের অবদানঃ পর্ব -০৩
আগের পোষ্টে বলেছিলাম- মুসলমানদের দ্বারা বঙ্গ-বিজয় না হলে আর্যদের হাতে যে বাংলা ভাষা বিলুপ্ত হতো, তাতে কোনোই সন্দেহ নাই। আবার অনেকে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মাদ বখতিয়ার খিলজীর শাসনকাল (১২০১ থেকে ১৩৫০ সাল এই দেড়শত বছর) বাংলা সাহিত্যের ‘অন্ধকার যুগ’ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। ‘অন্ধকার যুগ’ না কি বাংলা সাহিত্য উন্মোচনের যুগ সেটা নিয়ে চলমান বিভ্রান্তির অবসান হওয়া প্রয়োজন।
একসময় বাংলার হি*ন্দু শাসকরা বাংলা ভাষা চর্চাকে নিষিদ্ধ করেছিল। এমনকি তখন বাংলা ভাষায় কেউ কথা বললে তাকে পানিসমেন্টও দেয়া হতো। (বলা আছে- ‘ সেন রাজাদিগের অল্প-পরিসর সময়-রেখার মধ্যই আর্য ব্রাহ্মণগণ আইন করিয়া বাংলা ভাষার উৎখাত সাধনের প্রয়াস পাইয়াছিলেন। তাঁহারা এই নির্দেশ দিয়াছিলেন যে, যদি কোনো আর্য হিন্দু বেদ, পুরাণ, রামায়ন, মহাভারত ইত্যাদি ধর্মশাস্ত্রসমূহ কোনো মানব ভাষায় (অর্থাৎ বাংলা ভাষায়) আলোচনা করে, তবে তাহাকে ‘রৌরব’ নামক নরকদণ্ড ভোগ করিতে হইবে-
“অষ্টাদশ পুরাণানি রামস্য চারিতানি চ।
ভাষায়ং মানবঃ শ্রত্বা রৌরবং নরকং ব্ৰজেৎ।।”
ইহাই সংস্কৃতের সহিত বাংলা ভাষার প্রথম সংঘাতের ফল। [ সূত্র - বাংলা ভাষার নূতন পরিচয় - কবি গোলাম মোস্তফা])
ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মাদ বখতিয়ার খিলজী ১২০১/৫ সালে মাত্র ১৮ জন সৈন্য নিয়ে হি*ন্দু রাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত করার পর থেকে হি*ন্দু শাসকদের নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে তিনি উন্মুক্ত করে দেন বাংলা ভাষা চর্চা, বাংলা ভাষায় কথা বলা ও সাহিত্য চর্চা। কিন্তু প্রচলিত ন্যারেটিভে বাংলা ভাষার চেতনাকে মুসলিম চেতনার বিপক্ষে দাঁড় করানো হয়েছে এবং হি*ন্দুয়ানী চেতনার অনুকূলে এখন বাংলাভাষার চর্চা করানো হচ্ছে। যেই কারণে আমাদের পাঠ্যপুস্তক ও পত্রপত্রিকার বাংলা সাহিত্য চর্চায় সম্পূর্ন সজ্ঞানে হি*ন্দু লেখকদের গল্প-কবিতা ঢুকানো হয়েছে।
বর্তমান সময়ের পাঠ্যপুস্তক ও পত্র-পত্রিকায় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকে মতো বিকৃত করা হয়েছে। এই সাথে সাহিত্য চর্চার ব্যবহারের ধরণ দেখে অধিকাংশদের চিন্তাধারা এমন হয়ে গিয়েছে যে- বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বুঝি হি*ন্দুদেরই দান করা!!
যে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মাদ বখতিয়ার খিলজী মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে হি*ন্দু শাসক কর্তৃক নিষিদ্ধ বাংলা ভাষাকে উন্মুক্ত করে দিলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চার দ্বার খুলে দিলেন সেই মুসলিম শাসনামলের ১২০১ থেকে ১৩৫০ সাল এই দেড়শত বছরকে বলা হচ্ছে বাংলা সাহিত্যের ‘অন্ধকার যুগ’। যারা বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়ছেন বা বিসিএস পরীক্ষাসহ অন্যান্য চাকরীর পরীক্ষা দিচ্ছেন তারা বাংলা সাহিত্যের ‘অন্ধকার যুগ’ ভাল করেই পড়েছেন।
মূলত, কলকাতা কেন্দ্রীক এখন যে বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহিত্য চর্চা হচ্ছে সেটা শুরু হয়েছে ১৮০০ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর-জেনারেল ওয়েলেসলি এটি প্রতিষ্ঠা করে ব্রিটিশ আধিকারিকদের ভারতীয় ভাষায় শিক্ষিত করে তোলার উদ্দেশ্যে। “কলেজটিতে আরবী, ফারসী, উর্দু, হিন্দী, সংস্কৃত ভাষার পাশাপাশি ‘বাংলা বিভাগ’ও খোলা হয়। কিন্তু বাংলা বিভাগে পাঠ দানের জন্য কোনো শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছিল না। বিভিন্ন ভাষা শিক্ষাদানের জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হলেও ওই সময় কলকাতায় বাংলা শিক্ষা দেওয়ার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। কারণ সেযুগের ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা কেবল সংস্কৃত শিক্ষা করতো। তাঁরা সংস্কৃতকে দেবভাষা মনে করতো। বাংলা শিক্ষা তাঁরা করতো না। এজন্য বাংলা বিভাগের প্রধান করা হয় একাধিক ভারতীয় ভাষাবিদ ও খ্রিস্টান মিশনারী উইলিয়াম কেরিকে।” (সূত্র: বই: রামমোহন ও তৎকালীন সমাজ ও সাহিত্য, লেখক: প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়)।
অবশেষে দুটি শর্তে হি*ন্দু পণ্ডিতরা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা পাঠদান করতে রাজি হয়।
১. হাজার বছর যাবৎ চলমান বাংলা কথ্য ও লেখ্য ভাষায় যে আরবী ও ফারসীর মিশ্রন হয়ে আছে সেটা বাদ দিতে হবে,
২. হিন্দুদের দেবভাষা সংস্কৃত নির্ভর নতুন এক বাংলা ভাষার চর্চা, প্রচলন এবং এর পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে,
ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর-জেনারেল ওয়েলেসলি তাদের দাবী মেনে নেয়। ফলশ্রুতিতে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ থেকে শুরু হয় সংস্কৃত ভাষার মিশ্রণে নতুন এক বিকৃত বাংলা ভাষার চর্চা। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুপ্রেরণা থেকেই বঙ্কিম, শরৎ, রবীন্দ্রনাথরা সংস্কৃত ভাষার মিশ্রণ কেন্দ্রীক নতুন নতুন বাংলা সাহিত্য রচনা করতে থাকে এবং ব্রিটিশরাও তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে থাকে। ফলে কয়েক প্রজন্ম পরে স্থানীয় জনগণের মূল বাংলা ভাষাটা চাপা পড়ে যায়।
(চলবে………)
%%%%%%
বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের অবদানঃ পর্ব -০৪
গত দুইপর্বে ‘বাংলা ভাষা-বঙ্গ নামের উৎপত্তি ও বাংলা ভাষার প্রতি তৎকালীন হি/ন্দুরাজাদের বিমাতৃসুলভ আচরণ’ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই পর্বে ‘বাংলা ভাষার প্রচার প্রসার ও বিস্তারে মুসলিম শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতা, মুসলিমদের দ্বারা বাংলা ভাষার বিস্তার,
কেমন ছিল’ এই নিয়ে আলোচনা করবো।
মুসলিম শাসকদের দ্বারা বাংলা ভাষার পৃষ্ঠপোষকতাঃ
সুলতান হুসেন শাহ্ এবং তাঁহার বংশধরদিগের আমলই মধ্য-বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণযুগ। এই উদারমনা সাহিত্য-রসিক গুণগ্ৰাহী সুলতান সত্যই বাংলা সাহিত্যের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের কবি-সাহিত্যিকদিগকে ডাকিয়া তিনি দরবারে স্থান দেন। আরবী-ফারসী হইতে নানা ধর্মগ্রন্থ, ইতিহাস, গল্প ইত্যাদি অনুবাদ করাইবার কাজে তিনি মুসলিম কবিদিগকে নিয়োগ করেন। সেই সঙ্গে মৌলিক রচনাবলীরও মর্যাদা দেন।
কবি গোলাম মোস্তফা বলেন- ‘শুধু মুসলিম কবি নন, হি/ন্দু কবিদিগকেও তিনি এবং তাঁহার অনুবর্তিগণ সাদরে আহবান করেন। তাহাদেরই উৎসাহে রামায়ণ, মহাভারত ও অন্যান্য হি/ন্দুগ্রন্থাদি বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়। হুসেন শাহের আমলে শ্রী চৈতন্যদেবের আবির্ভাব হওয়ায় বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব-ধারাও সংযোজিত হয়। এইরূপে বাংলা ভাষা জাতিধর্ম-নির্বিশেষে গোটা বাঙালী জাতির প্রতিনিধিত্ব করিবার সুযোগ পায়।মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদিগের দান এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করিয়া আছে।তাহাদের রচিত সাহিত্যে বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যও ছিল প্রচুর।ধর্ম, ইতিহাস, জীবনী, আধ্যাত্মিক তত্ত্ব, লৌকিক কেচ্ছা ও কাহিনী এবং অনুবাদই ছিল তাহাদের সাহিত্য-কর্মের মূলধারা।
কাসাসোল আম্বিয়া, ফতুহুশ্বাম, ফতহুল মেছের, আলেফ-লায়লা, জঙ্গনামা, শহীদে-কারবালা, লায়লি-মজনু, ইউসুফ-জোলেখা, আমির হামজা, চাহার দরবেশ, ছয়ফুল মুলুক বদিউজ্জামান, সোনাভান, গাজী কালু ইত্যাদি অসংখ্য পুঁথি মুসলমান কবিরা রচনা করিয়া গিয়াছেন। ডক্টর আব্দুল গফুর সিদ্দিকীর মতে মুসলিম পুঁথির সংখ্যা প্রায় ৫০,০০০ হইবে।
কিন্তু একটি কথা এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন। হুসেন শাহের দরবারে যখন বাংলা সাহিত্য চর্চার এমন সমারোহ চলিতেছে, তখনই-বা বাংলা ভাষার প্রতি আর্য-হি/ন্দুদিগের মনোভাব কিরূপ ছিল? পূর্বের সেই জাতক্রোধ, বিদ্বেষ ঘৃণার ভাব তাহারা তখনও অন্তরে অন্তরে পোষণ করিতেছিল, এই জন্য সুলতানের আবেদনে অগ্রে তাহারা সাড়া দেয় নাই। [ সূত্র - বাংলা ভাষার নূতন পরিচয় - কবি গোলাম মোস্তফা]
এই প্রসঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামের একটি কথা উল্লেখযোগ্যঃ
“আমি মনে করি, বিশ্ব-কাব্যলক্ষ্মীর একটা মুসলমানী ঢং আছে। ও-সাজে তাঁর শ্ৰীর হানি হয়েছে বলেও আমার জানা নেই। …বাঙলা কাব্য-লক্ষ্মীকে দুটো ইরানী ‘জেওর’ পরালে তাঁর জাত যায় না, বরং তাকে আরও খুবসুরতই দেখায়।আজকের কলা-লক্ষ্মীর প্রায় অর্ধেক অংলকারই ত মুসলমানী ঢং-এর। বাইরের এ—ফর্মের প্রয়োজন ও সৌকুমাৰ্য সকল শিল্পীই স্বীকার করেন।” (বড়র পিরীতি বালির বাঁধা॥ কাজী নজরুল ইসলাম ॥ “আত্মশক্তি’ ॥ ৩০ ডিসেম্বর ১৯২৭)
* মুসলিমদের দ্বারা বাংলা ভাষার বিস্তারঃ
এই প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ, গবেষক, লোক-সাহিত্যবিশারদ, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকার শ্রী দীনেশচন্দ্র সেন লেখেন- “মুসলমান আগমনের পূর্বে বঙ্গভাষা কোনো কৃষক রমণীর ন্যায় দীনহীন বেশে পল্লী কুটিরে বাস করিতেছিল৷ ... এই সকল অপূর্ব গুণ লইয়া বাঙ্গলা ভাষা মুসলমান প্রভাবের পূর্বে অতীব অনাদর ও উপেক্ষায় বঙ্গীয় চাষার গানে কথঞ্চিত আত্মপ্রকাশ করিতেছিল৷ পণ্ডিতেরা নস্যাধার হইতে নস্য গ্রহণ করিয়া শিখা দোলাইয়া সংস্কৃত শ্লোকের আবৃত্তি করিতেছিলেন এবং “তৈলাধার পাত্র” কিম্বা “পাত্রাধার তৈল” এই লইয়া ঘোর বিচারে প্রবৃত্ত ছিলেন ৷ ... ইতরের ভাষা বলিয়া বঙ্গভাষাকে পণ্ডিতমণ্ডলী ‘দূর দূৱ’ করিয়া তাড়াইয়া দিতেন, হাড়ি-ডোমের স্পর্শ হইতে ব্রাহ্মণেরা যেরূপ দূরে থাকেন বঙ্গভাষা তেমনই সুধী সমাজের অপাংক্তেয় ছিল-তেমনি ঘৃণা, অনাদর ও উপেক্ষার পাত্র ছিল৷
কিন্তু হীরা কয়লার খনির মধ্যে থাকিয়া যেমন জহুরীর আগমনের প্রতীক্ষা করে, শুক্তির ভিতর মুক্তা লুকাইয়া থাকিয়া যেরূপ ডুবুরীর অপেক্ষা করিয়া থাকে, বঙ্গভাষা তেমনই কোন শুভদিন, শুভক্ষণের জন্য প্রতীক্ষা করিতেছিল।
মুসলমান বিজয় বাঙ্গলা ভাষার সেই শুভদিন, শুভক্ষণের সুযোগ আনয়ন করিল৷গৌড়দেশ মূসলমানগণের অধিকৃত হইয়া গেল৷ তাঁহারা ইরান-তুরান যে দেশ হইতেই আসুন না কেন, বঙ্গদেশ বিজয় করিয়া বাঙ্গালী সাজিলেন। আজ হি/ন্দুর নিকট বাঙ্গলাদেশ যেমন মাতৃভৃমি, সেদিন হইতে মুসলমানের নিকট বাঙ্গলাদেশ তেমনই মাতৃভুমি হইল৷তাঁহারা এদেশে আসিয়া দস্তুরমত এদেশবাসী হইয়া পড়িলেন৷হিন্দুর নিকট বাঙ্গলা ভাষা যেমন আপনার, মুসলমানদের নিকট উহা তদপেক্ষা বেশী আপনার হইয়া পড়িল৷”
তিনি আরও লেখেন –
“এহেন প্রতিকূল ব্রাহ্মণ সমাজ কি হি/ন্দু রাজত্ব থাকিলে বাঙ্গলা ভাষাকে রাজসভার সদর দরজায় ঢুকিতে দিতেন? সুতরাং এ কথা মুক্তকঠে বলা যাইতে পারে যে, মুসলমান সম্রাটেরা বাঙ্গলা ভাষাকে রাজ দরবারে স্থান দিয়া ইহাকে ভদ্র সাহিত্যের উপযোগী করিয়া নূতনভাবে সৃষ্টি করিয়াছিলেন।“ [বঙ্গ-ভাষার উপর মুসলমানের প্রভাব, ‘সওগাত’, ১৩৩৫ সালের চৈত্র সংখ্যায় প্রকাশিত -শ্রী দীনেশচন্দ্র সেন]
(চলবে………)
%%%%
বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের অবদানঃ পর্ব -০৫
গত পর্ব গুলোতে ‘বাংলা ভাষা-বঙ্গ নামের উৎপত্তি ও বাংলা ভাষার প্রতি তৎকালীন হি/ন্দুরাজাদের বিমাতৃসুলভ আচরণ, বাংলা ভাষার প্রচার প্রসার ও বিস্তারে মুসলিম শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতা, মুসলিমদের দ্বারা বাংলা ভাষার বিস্তার’ নিয়ে আলোচনা করেছি।
এই পর্বে নিয়ে আলোচনা করবো- আমরা যে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি, লিখতে পারছি, এর পেছনে কার অবদান বেশি? হি/ন্দুদের না মুসলমানদের ??
এই প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আলোচনা করা যাক তৎকালীন লেখকগণের কি বলেছিলেন।
আসলে প্রাচীন আমলে বাংলাভাষা ছিলো আঞ্চলিক ভাষার মত, ভাষাটি এত বেশি সমৃদ্ধ ছিলো না যে একটি বিরাট জাতি তা সাচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারে। প্রাচীন বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চার খুব একটা নিদর্শনও পাওয়া যায় না (শুধু চর্যাপদ ছাড়া)। এরপর মধ্যযুগে বাংলাভাষা কৈশরে উপনিত হয়। কিন্তু দুঃখজনক, সেই ক্ষুদ্র বয়সে হি/ন্দু রাজারা বাংলাভাষাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
হিন্দু সেন রাজত্বের আমলে ব্রাহ্মণরা বলা শুরু করল “সংস্কৃত হচ্ছে দেবভাষা আর বাংলা হচ্ছে মনুষ্য সৃষ্ট ভাষা। বাংলা ভাষা মর্যাদায় অনেক নিচু।” এ সম্পর্কে ইতিহাস বলে- "ব্রাক্ষ্মণ্যবাদী সেন রাজারা বাংলা ভাষা চর্চা নিষিদ্ধ করেছিল। আর হিন্দু পুরোহিতরা এ কথা বলে বেড়াতো যে, যে ব্যক্তি বাংলা ভাষায় কথা বলবে সে নরকে যাবে। [ সুত্র : খন্দকার কামরুল হুদা, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও শেখ মুজিব, ১৯৯৫ পৃ. ৩২] "
ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেন অত্যন্ত সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছে। তার ভাষায়, ‘ইতরের ভাষা বলিয়া বঙ্গ ভাষাকে হিন্দু পন্ডিত মন্ডলী ‘দূর দূর’ করিয়া তাড়াইয়া দিতেন। (সওগাত, চৈত্র, ১৩৩৫)
অপরদিকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজি বাংলা দেশে মুসলিম রাজত্ব কায়েমের ফলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের নবজন্ম ঘটে। মুসলমান শাসক হুসেন শাহ, গৌড়ের সামসুদ্দিন ইউসুফ শাহ এবং অপরাপর মুসলমান সম্রাটেরা বাংলাদেশে বাংলা ভাষাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে আমাদের সাহিত্যে এক নতুন যুগ সৃষ্টি করেছিলেন। আর সে কারণেই দিনেশ চন্দ্র সেন মন্তব্য করে, "মুসলমান সম্রাটগণ বর্তমান বঙ্গ – সাহিত্যের জন্মদাতা এইরূপ বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। বঙ্গ সাহিত্য মুসলমানদেরই সৃষ্ট, বঙ্গভাষা বাঙ্গালী মুসলমানের মাতৃভাষা। [ সুত্র : দীনেশ চন্দ্র সেন - প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান, (১৯৪০) কলকাতা।]"
দীনেশ চন্দ্র সেন আরো বলে- ‘কয়লার খনির মধ্যে থাকিয়া হীরা যেমন জহুরির আগমনের প্রতীক্ষা করে, শুক্তির ভেতর মুক্তা লুকাইয়া থাকিয়া যেরূপ ডুবুরির অপেক্ষা করিয়া থাকে, বাংলা ভাষা তেমনই কোনো শুভদিন শুভক্ষণের জন্য প্রতীক্ষা করিতেছিল। মুসলিম বিজয় বাংলা ভাষার সেই শুভদিন শুভক্ষণের সুযোগ আনয়ন করিল।’ [দ্রষ্টব্য : বাংলা ভাষার ওপর মুসলমানের প্রভাব : শ্রী দীনেশ চন্দ্র সেন]।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যে মুসলিমদের অবদান সেটা পূর্বেকার হিন্দু-মুসলিম বাঙ্গালী পণ্ডিতরাই স্বীকার করে গিয়েছেন। এ প্রসজ্ঞে বিশিষ্ট গবেষক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান “বাংলার সামাজিক ও সংস্কৃতির ইতিহাস” গ্রন্থের ভূমিকায় বলেন- “যদি বাংলায় মুসলিম বিজয় ত্বরান্বিত না হতো এবং এদেশে আরো কয়েক শতকের জন্য পূ্র্বের শাসন অব্যাহত থাকতো, তবে বাংলা ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যেত এবং অবহেলিত ও বিস্মৃত-প্রায় হয়ে অতীতের গর্ভে নিমজ্জিত হতো।
"বাংলা হলো মুসলমানদের প্রানের ভাষা - আর এ কারণেই আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ ১৯০৩ সালে "আল ইসলাম" পত্রিকায় সর্বপ্রথম বাংলাকে মুসলমানদের মাতৃভাষা রূপে তুলে ধরেন। [ সুত্র: ড. ইফতেখারউদ্দিন চৌধুরী, দৈনিক ইত্তেফাক, সোমবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩]"
আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ ১৩২৫ বঙ্গাব্দে - 'আল-ইসলামে' প্রকাশ্যে নির্ভীকচিত্তে উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা দেন যে, 'বাঙলা বাঙালী মুসলিমের কেবল মাতৃভাষাই নয়, জাতীয় ভাষাও।'
উপরের আলোচনা দ্বারা এটি স্পষ্ট- হি/ন্দুরা চেয়েছিলো বাংলা ভাষাকে জন্মলগ্নেই গলা টিপে হত্যা করতে, সেখানে মুসলমানরা বাংলাভাষাকে দিয়েছিলো পুনর্জন্ম। সে হিসেবে বাংলা ভাষায় কার অবদান বেশি, হিন্দু না মুসলমানের, এ ধরনের প্রশ্ন করা অবান্তরই বলা চলে।
(চলবে………)
(ফেসবুকের চশমাওয়ালা পেইজ থেকে সংগৃহিত)
No comments:
Post a Comment