ঢাকা থেকে হারিয়ে যাওয়া/ প্রায় বিলুপ্ত কিছু আদি পেশা।
(দ্বিতীয় পর্ব)
চনরিওয়ালা:
ঢাকা ও আশেপাশের অঞ্চলে সাধারণত মাছি তাড়াবার জন্য এক ধরনের তালের পাখা বা চামর (চওনরি) ব্যবহৃত হতো। যারা এই পাখা বা চামর বানাতো তাদের বলা হতো চনরিওয়ালা। এরা সাধারণত ছিল মুসলমান সম্প্রদায়ের লোক। উনিশ শতকের শেষের দিকে ঢাকা থেকে এই পেশা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
চিকনদোজ:
চিকনদোজ ছিল একটি শৈল্পিক পেশা। মসলিনের চাহিদা যতদিন ছিল ততদিন চিকনদোজরাও ছিলেন। মসলিনের সুতা দিয়ে যারা নকশা তুলতেন তাদেরকে বলা হতো চিকনদোজ। তখনকার সময়ে মহিলা -পুরুষ উভয়েই এ কাজ করতেন। মসলিনের চাহিদা ও ব্যবহার কমে যাওয়ার সাথে সাথে হারিয়ে যায় এ পেশা।
ছাপড়বন্দ:
ছাপরবন্দ পেশাটি অনেকটা ঘরামী পেশার মতোই ছিল। উনিশ শতকের শেষার্ধে ঢাকার অধিকাংশ বাড়ি ছিল কুঁড়েঘর। কুঁড়েঘর তৈরির জন্য গরমের সময় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বসতো কুঁড়েঘর তৈরির উপকরণের বাজার যাকে বলা হতো ঘরকাচি মহল। যারা কুঁড়েঘর তৈরি করতো ঢাকায় এদের বলা হতো ছাপড়বন্দ, গ্রামে অবশ্য এদের ছায়াল নামে ডাকা হয়। ইট-পাথরের ঢাকার বুকে কুঁড়েঘর বিলুপ্তির সাথে সাথে হারিয়ে যায় এ পেশাটিও।
ছিপিগর:
ঢাকা ছিল বস্ত্র বয়নের জন্য বিখ্যাত একটি কেন্দ্র। একেক ধরনের বস্ত্র বয়নের জন্য প্রয়োজন ছিল একেক ধরনের কর্ম বিন্যাস। এমন এক ধরনের পেশা ছিল, মসলিনে নকশা তোলার আগে নকশার ছাপ দেওয়া। যারা এ কাজ করতো তাদের বলা হতো ছিপিগর। প্রধানত এ কাজটি মেয়ে কারিগরেরাই করতেন। পুরুষ কারিগরেরা এ কাজকে তাচ্ছিল্যের সাথে দেখতেন বা করতে চাইতেন না।
তাম্বুলি:
ইতিহাসবিদ টেইলর ১৮৪০ সালে তার লেখায় উল্লেখ করেছিলেন, তাম্বুলিরা প্রধানত পান-সুপারী ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করতেন। ১৮৮০ সালের দিকে আরেক ইতিহাসবিদ ওয়াইজ ঢাকায় ৫০ ঘর তাম্বুলির বসবাসের কথা উল্লেখ করেন। ঢাকায় আবার যারা খিলিপান বিক্রি করতেন তাদের বলা হতো খিলিওয়ালা। বর্তমানে পান-সুপারী বিক্রির দোকান থাকলেও তাম্বুলি নামটা অপ্রচলিত হয়ে পড়েছে।
তারওয়ালা:
সঙ্গীতের কিছু বাদ্যযন্ত্র যেমন বেহালা অথবা সারেঙ্গীতে তার হিসেবে ব্যবহার করা হতো ছাগল ও ভেড়ার অন্ত্র। অন্ত্রগুলো প্রক্রিয়াজাত করে এগুলো দিয়ে যারা এ যন্ত্রগুলোর তার তৈরি করতেন এদের বলা হতো তারওয়ালা। তারওয়ালারা মূলত মুসলমান সম্প্রদায়ের ছিলেন বলে সূত্র থেকে তথ্য পাওয়া যায়।
দোসাদ:
উনিশ শতকেও ঢাকায় প্রায় বিশঘর দোসাদ ছিলেন বলে জানা যায়। এখন অবশ্য আর নেই। দোসাদরা আধা উপজাতীয় বলে ইতিহাসবিদ ওয়াইজ মন্তব্য করেছেন। ঢাকায় এরা গৃহ পরিচারক, কুলি বা পাংখা কুলির কাজ করতেন। তাদের সবগুলো কাজ বিলুপ্ত না হলেও নামটি একেবারেই অপ্রচলিত হয়ে পড়েছে।
নারদিয়া:
এ পেশার উদ্ভব হয়েছে মুঘল আমলে, যখন মসলিনের উদ্ভব হয়। মসলিন তৈরি হয় গিয়ে মাড় দেওয়ার পর পাঠানো হতো এক শ্রেণির কারিগরের কাছে। এদের কাজ ছিল কাপড়ের আলগা সূতা সাফ করে বস্ত্রটিকে পরিপাটি করা। লতার কাঁটা দিয়ে যারা এ কাজটি করতেন তাদের বলা হতো নারদিয়া। মসলিনের ব্যবহার কমে যাওয়ার সাথে সাথে তারাও বিলুপ্ত হয়েছে পেশাজীবীর তালিকা থেকে।
নালবন্দ:
উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ঢাকায় ঘোড়ার বেশ প্রচলন ছিল। ঘোড়ার গাড়ির উদ্ভব ও বিকাশই ছিল এর মূল কারণ। ঘোড়া এবং ঘোড়ার গাড়িকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছিল নতুন এই পেশার। এদের কাজ ছিল ঘোড়ার পায়ে নাল মারা। এ পেশার সাথে নিযুক্ত শ্রমজীবী মানুষদের বলা হতো নালবন্দ। বর্তমান ঢাকায় তেমন ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ি না থাকায় পেশাটিও বিস্মৃত হয়ে গিয়েছে।
তথ্যসূত্র:
ক। বাংলাপিডিয়া
খ। ঢাকা: স্মৃতি-বিস্মৃতির নগরী: মুনতাসীর মামুন।
গ। উইকিপিডিয়া।
#প্রত্নতত্ত্ব #ইতিহাস #fypシ゚viralシ #ঢাকা #Dhaka
ঋষণা রূপকথা-The First Myth
No comments:
Post a Comment