Skip to main content

আমরা সবাই কেন একই টাইম জোন ব্যবহার করি না

আমরা সবাই কেন একই টাইম জোন ব্যবহার করি না?

ভ্রমণকারীরা নতুন এলাকায় গিয়ে ঘড়ি বা ল্যাপটপের সময় স্থানীয় সময়ের সাথে মিলিয়ে নিতে প্রায়ই ঝামেলায় পড়েন। আবার টাইম জোন খেয়াল না করার কারণে বিদেশি ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং মিস হওয়ার ঘটনাও অনেকের সাথে হয়। 

টাইম জোনের ধারণাটি শুরু হয় যাতে সূর্যের অবস্থানের সাথে আমাদের ঘড়ির সময় মিল থাকে সেই জন্য। তবে দূরে কারও সাথে যোগাযোগ করার সময় কিংবা এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যাওয়ার সময় এ বিষয়টি আমাদের ভালই ভোগান্তি দেয়।  

ভাবলে অবাক হতে হয়, টাইম জোন তৈরি করা হয়েছিল বিভ্রান্তি কমানোর জন্য, বিভ্রান্তি বাড়ানোর জন্য নয়। আপনি যখন পৃথিবীতে আড়াআড়িভাবে, এমন কি অল্প দূরত্বও পাড়ি দেন, তখন সৌর সময় বদলে যায়। তাই মানব ইতিহাসে প্রতিটি স্থানের দিনের সময় ভিন্ন ভিন্ন হতেই আমরা বেশি দেখেছি। 

“সময় নির্ধারণ করা হত কেবল সূর্যের অবস্থান দেখে, সূর্যঘড়িই ঠিক করে দিত এখন কয়টা বাজে,” বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন বাল্টিমোরের জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির ফলিত অর্থনীতির অধ্যাপক স্টিভ হানকে। লন্ডনে ব্রিস্টলের চেয়ে ১০ মিনিট আগে দুপুর হয়, কারণ লন্ডন ব্রিস্টল থেকে ১২০ মাইল (১৯৩ কিলোমিটার) পূর্বে অবস্থিত। ১৩০০ সালের দিকে ইউরোপ যান্ত্রিক ঘড়ি ব্যবহার শুরু করার পরও স্থানভেদে সময়ের এই গড়মিল ঠিকই রয়ে গেল।
.

# রেলব্যবস্থা থেকে কীভাবে টাইম জোন শুরু হল

১৮০০ সালের আগ পর্যন্ত মানুষ আসলে সঠিক সময় নিয়ে অত মাথা ঘামাতও না। তবে যখন কম সময়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার জন্য রেল জনপ্রিয় হয়ে উঠল, তখন সঠিক সময়ের প্রয়োজন বোঝা গেল। দেখা গেল মানুষ ট্রেন মিস করা শুরু করেছে, এমন কি দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে সময়ের ভুলের কারণে।

টাইম জোন নিয়ে কেবল ইউরোপই হিমশিম খাচ্ছিল, তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রও সমস্যায় পড়েছিল। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি শহরে আলাদা সময় ছিল। মোট ৩০০টি স্থানীয় টাইম জোন যুক্তরাষ্ট্রে, তবে রেলপথের জন্য তা ১০০-তে কমিয়ে আনা হয়েছে।

১৮৭৬ সালে একদিন সময়সূচির ভুলের কারণে ট্রেন মিস করেছিলেন স্কটল্যান্ডে জন্ম নেওয়া প্রকৌশলী স্যার স্যান্ডফোর্ড ফ্লেমিং। সেই থেকে তিনি সময় পরিমাপের একটি বৈশ্বিক মান ঠিক করার কথা ভাবেন। ফ্লেমিং এর উদ্ভাবনী আইডিয়া থেকে পুরো পৃথিবীকে ২৪টি টাইম জোনে ভাগ করা হয়। দ্রাঘিমা রেখা দিয়ে হিসাব করলে প্রতি টাইম জোনের মধ্যে পার্থক্য প্রায় ১৫ ডিগ্রি।

এই বৈশ্বিক সিস্টেমে প্রতিটি স্থানের সৌরদিন গণনা না করে, যুক্তরাজ্যে অবস্থিত রয়াল গ্রিনউইচ অবজারভেটরিকে মান হিসেবে ধরা হয়। ধরা হয় সূর্য এখানেই মূল মধ্যরেখায় অবস্থান করে। গ্রিনউইচকে মূল মধ্যরেখা (বা শূন্য দ্রাঘিমা) হিসেবে ধরার কারণে এটিই হচ্ছে পৃথিবীর পশ্চিম ও পূর্ব গোলার্ধের বিভাজক রেখা।

১৮৮৩ সালের ১৮ নভেম্বর, যে দিনটি পরিচিত “দুই দুপুরের দিন” হিসেবে, সেই দিন থেকে উত্তর অ্যামেরিকার রেলপথ কেবল ৪টি টাইম জোন মেনে চলা শুরু করে। এগুলি হচ্ছে ইস্টার্ন টাইম, সেন্ট্রাল টাইম, মাউন্টেন টাইম এবং প্যাসিফিক টাইম।

অনেক শহর এই সিস্টেম গ্রহণ করার জন্য অর্ডিন্যান্স পর্যন্ত পাস করেছে। এক সময় পুরো যুক্তরাষ্ট্রে এটাই স্বীকৃত হয়ে ওঠে। জিএমটি গ্রহণ করার ফলে আরেকটা ঘটনা ঘটে। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলির মধ্যে মূল মধ্যরেখা হওয়ার যে প্রতিযোগিতার সম্ভাবনা ছিল তাও শেষ হয়ে যায়।
.

# আমরা কি টাইম জোন কমিয়ে আনতে পারব?

মাত্র ২৪টি টাইম জোন থাকার পরেও ২০ শতকে আবারও সময় নিয়ে বিভ্রান্তি শুরু হয়। এই শতকে আকাশ ভ্রমণের কারণে দূরত্ব আরও কমে আসে। আর মোবাইল ও ইন্টারনেটের কারণে বিশ্বের সকল প্রান্তের মানুষের সাথে মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ সহজ হয়ে ওঠে। ফলে গড়ে ওঠে টুয়েন্টিফোর-সেভেন সংস্কৃতি যেখানে আমরা প্রতিটি মুহূর্তে যে কোনো দূরত্বের ঘটনার সাথে যুক্ত হতে পারি।

তাই কয়েক বছর আগে হানকে এবং তার সহকর্মী জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক রিচার্ড কন হেনরি আরও সহজ একটি সমাধান প্রস্তাব করেন। 

তারা টাইম জোন বিষয়টিই পুরাপুরি উঠিয়ে দিতে চান এবং পুরো বিশ্বকে কেবল একটি সময়ে নিয়ে আসতে চান। এই সময়ের নাম দেয়া হয়েছে ইউনিভার্সাল টাইম (UTC)। এই সিস্টেমে যখন পৃথিবীর কোনো স্থানে ৯ বাজে তার অর্থ হচ্ছে পৃথিবীর সব স্থানেই তখন ৯টাই বাজছে। হয়ত কোথাও তখন দুপুর থাকবে, বা কোথাও সন্ধ্যা, তবে তাতে কোনো সমস্যা নেই। 

একটাই সময় থাকলে ভ্রমণের সময় অনেক সুবিধা হবে। আপনি যদি বাংলাদেশে বসে জার্মানির কলিগদের সাথে জুম মিটিং ডাকতে চান সেটাও অনেক ঝামেলাহীন হয়ে যাবে। একটা ডাচ কোম্পানির বোর্ড চেয়ারম্যান হওয়ার কারণে হানকে নিজেও এমন বহুজাতিক অনলাইন মিটিং ডেকে থাকেন, তাই তিনি এ বিষয়টি ভালই টের পেয়েছেন। “সময় নিয়ে এই সীমাহীন বিভ্রান্তি তখন চিরতরে অবসান হবে। আর আমাদের জীবন হবে একদম সহজ,” একটি ই-মেইলের মাধ্যমে হানকে’র সাথে একমত পোষণ করেন রিচার্ড হেনরি।

২০১২ সালে হানকে আর হেনরি টাইম জোন বাতিল করার প্রস্তাব দেয়ার পর থেকে বেস্টসেলার লেখক এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের কলামিস্ট জেমস গ্লেইকও এই আইডিয়া সমর্থন করেছেন। স্বল্প পরিসরে হলেও বৈশ্বিক সময়ের প্রচলন কিন্তু এরই মধ্যে শুরুও হয়ে গেছে।
.

# কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে ইউটিসি বা বৈশ্বিক সময়

যুক্তরাষ্ট্রের পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রকারী প্রকৌশলীরা কিন্তু বৈশ্বিক সময় বা ইউটিসি এর উপর নির্ভর করে কাজ করেন। বিভিন্ন টাইম জোনে যারা আর্থিক লেনদেন করেন, তারাও কিন্তু বৈশ্বিক সময় মেনে কাজ করেন। নতুবা পণ্যের মূল্যে তারতম্য ঘটতে পারে। আর ইন্টারনেট তো সব সময় বৈশ্বিক সময় মেনেই চলে।

এখন কেউ মনে করতে পারেন, বৈশ্বিক সময় শুরু হলে মানুষের স্বাভাবিক রুটিনে ব্যাঘাত ঘটবে। কিন্তু হানকে তা মনে করেন না।

“মানুষ বলে আমরা যদি সবাই একই সময় মেনে  চলি, তাহলে তো আমাকে গভীর রাতে দোকান খুলতে হবে। অবশ্যই না। আপনার দোকান আপনি এখন যে সময়ে খোলেন তখনও সেই সময়ে খুলবেন। নিউইয়র্ক কিংবা বাল্টিমোরে মানুষ সাধারণত ৯টার সময় দোকান খোলে। তাহলে কেবল ধরে নিন আপনার ঘড়িতে তখন সময় ১৪টা বা দুপুর ২টা। (যদি সকাল ৯টা জিএমটি হিসেবে ধরা হয়)।

এই সিস্টেমে শুরুতে মানুষের অভ্যস্ত হতে কিছু সময় লাগবে। তবে হানকে মনে করেন পরবর্তী প্রজন্মের যে শিশুরা ইউটিসি দেখে বড় হবে, তারা আর সকাল ৭টাকে নাস্তার সময়, সকাল ৯টাকে কাজের সময়—এভাবে চিন্তা করবে না।

“চীন এখন একটা বড় সমস্যার মধ্যে আছে কারণ এর পূর্ব-পশ্চিমের বিশাল রিয়াল এস্টেট এর জন্য কেবল একটা টাইম জোন আছে।” হেনরি আরও বলেন, “তাদের এই সমস্যাটি সম্পূর্ণ সমাধান হয়ে যায় যখন তারা স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয় কখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা ও বন্ধ রাখা হবে। বিশ্বব্যাপী একটি সিস্টেম চালু করতে হলে, আমাদের অবশ্যই এমন কিছু করতে হবে।”

#সময় #বিশ্ব #টাইমজোন

Comments

Popular posts from this blog

Books poem analysis with bangla

Books poem in bangla and with analysis Verse-wise Bangla Translation: What worlds of wonder are our books! As one opens them and looks, New ideas and people rise In our fancies and our eyes. আমাদের বইগুলো কী আশ্চর্য এক জগৎ! যখনই কেউ তা খুলে দেখে, নতুন ভাবনা আর নতুন মানুষ জেগে ওঠে কল্পনায় ও চোখের সামনে। The room we sit in melts away, And we find ourselves at play With some one who, before the end, May become our chosen friend. আমরা যে ঘরে বসে আছি, তা যেন মিলিয়ে যায়, আর আমরা আবিষ্কার করি নিজেদের খেলায় মত্ত কাউকে সঙ্গে নিয়ে, যে হয়তো শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠবে। Or we sail along the page To some other land or age. Here's our body in the chair, But our mind is over there. অথবা আমরা পৃষ্ঠার ওপর দিয়ে ভাসতে থাকি অন্য কোনো দেশ বা কালের দিকে। আমাদের শরীরটা রয়েছে চেয়ারে, কিন্তু মন চলে গেছে দূরে অন্য কোথাও। Each book is a magic box Which with a touch a child unlocks. In between their outside covers Books hold all things for their lovers. প্রতিটি বই একেকটি জাদুর বাক্স, যা শিশুরা এক ...

🚀 ৫০টি দরকারি কিবোর্ড শর্টকাট (Windows)(বাংলা ব্যাখ্যাসহ)

🚀 ৫০টি দরকারি কিবোর্ড শর্টকাট (Windows) (বাংলা ব্যাখ্যাসহ) (অজানা কিন্তু খুবই কাজে লাগে) ⸻ ১. Ctrl + N → নতুন ফাইল বা ডকুমেন্ট খুলবে (Word, Notepad, Browser ইত্যাদিতে)। ২. Ctrl + Shift + T → আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্রাউজার ট্যাব পুনরায় খুলবে। ৩. Ctrl + Shift + Left/Right Arrow → একসাথে পুরো শব্দ নির্বাচন করা যাবে। ৪. Alt + F4 → অ্যাপ বা উইন্ডো বন্ধ হবে। ৫. Ctrl + P → প্রিন্ট ডায়ালগ বক্স খুলবে (প্রিন্ট করার জন্য)। ⸻ ৬. Ctrl + A → সব ফাইল বা টেক্সট সিলেক্ট হবে। ৭. Ctrl + C → কপি করা যাবে। ৮. Ctrl + V → পেস্ট করা যাবে। ৯. Ctrl + X → কাট করা যাবে। ১০. Ctrl + Z → সর্বশেষ কাজ Undo হবে। ⸻ ১১. Ctrl + Y → Undo করা কাজ Redo হবে। ১২. Windows Key + E → File Explorer খুলবে। ১৩. Windows Key + D → ডেস্কটপ দেখাবে (সব মিনিমাইজ হবে)। ১৪. Ctrl + Shift + Esc → সরাসরি Task Manager খুলবে। ১৫. Windows Key + L → কম্পিউটার লক হবে। ⸻ ১৬. Windows Key + S → সার্চ অপশন চালু হবে। ১৭. Windows Key + R → Run কমান্ড চালু হবে। ১৮. F5 → রিফ্রেশ করবে। ১৯. Alt + Enter → Properties খুলবে। ২০. Ctrl + T → ব্রাউজারে নতুন ট্যাব খু...

70 speaking rules(1~20)

Spoken Rule-1 Feel like – ইচ্ছা করা/আকাঙ্খা প্রকাশ করা প্রয়োগ ক্ষেত্র: ব্যক্তির কোন কিছুর “ইচ্ছা করলে” Feel like ব্যবহার হবে Structure: Subject + feel like + Verb (ing) + Extension. Example ✪ I feel like doing – আমার করতে ইচ্ছা করছে। ✪ I feel like eating – আমার খেতে ইচ্ছা করছে। ✪ I don’t ...