Skip to main content

Autophasy



০১। ‘আত্মভক্ষণ বা নিজেকে খেয়ে ফেলা’! বিষয়টি শুনতে খুবই ভয়ানক তাই না? কিন্তু এটা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কিভাবে? বলছি শোন। আত্মভক্ষণ বা অটোফ্যাজি (বা অটোফ্যাগোসাইটোসিস; প্রাচীন গ্রিক αὐτόφαγος অটোফ্যাগোস থেকে, যার অর্থ "আত্ম-ভোজন" । বিষয়টিকে আরেকটি সহজ করে বলি। মুসলিমরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় ‘সিয়াম’। খ্রিস্টানরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় ‘ফাস্টিং’। হিন্দু বা বৌদ্ধরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় ‘উপবাস’। বিপ্লবীরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় ‘অনশন’। আর, মেডিক্যাল সাইন্সে রোজা রাখাকে বলা হয় ‘অটোফেজি’।

০২। অটোফেজি একটি জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া। যে প্রক্রিয়ায় দেহের ক্ষয়িষ্ণু এবং অপ্রয়োজনীয় কোষাণুগুলো ধ্বংস ও পরিচ্ছন্ন হয়। আসলে এ হলো কোষের এক আবর্জনা পরিচ্ছন্নকরণ প্রক্রিয়া। কোষের কার্যক্ষমতাকে ঠিক রাখতে যে প্রক্রিয়ার কোনো বিকল্প নেই। আর দেহ যখন বিশেষ সংকটাবস্থায় থাকে, তখন এই অটোফেজিই দেহকে বাঁচিয়ে রাখে। সক্রিয় অটোফেজি ব্যবস্থা তোমার মস্তিষ্ককে ক্ষুরধার হতেও সাহায্য করে। এমনকি জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির কিছু গবেষণা থেকে দেখা যায়- আলঝেইমার বা পার্কিনসন্স জাতীয় বয়সজনিত রোগগুলো যে কারণে হয়, তার প্রতিরোধও করে অটোফেজি।

০৩। শরীরের বিভিন্ন কাজ করার জন্য প্রতিনিয়ত প্রোটিন তৈরি হয় এবং প্রোটিনের কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রোটিনের গঠনটি অ্যামিনো অ্যাসিড দ্বারা ত্রিমাত্রিক হতে হয়। যদি ত্রিমাত্রিক না হয় তবে প্রোটিনটি শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে এবং নানান ধরণের রোগের সৃষ্টি করতে পারে। সাধারণভাবে উপবাসের ১৮তম ঘণ্টা থেকে অটোফেজি সক্রিয় হয়। কোনো কোনো গবেষণায় অবশ্য দেখা গেছে যে, ১৩ তম ঘণ্টা থেকেও অটোফেজি সক্রিয় হয়েছে। কাজেই আমরা বলতে পারি যে, উপবাসের ১৩তম থেকে ১৮ ম ঘণ্টায় গিয়ে আমাদের দেহে অটোফেজি প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়। সক্রিয় হয় তখন কোষের আবর্জনা ও ক্ষয়ে যাওয়া কোষ রিসাইক্লিং এবং নতুন কোষাণু তৈরি ও শক্তি উৎপাদন।

০৪। ১৯৬০ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম দেখতে পান, কোষ কীভাবে নিজের ভেতরে একটি বস্তার মতো ঝিল্লি তৈরি করে নিজের আবর্জনা বা ক্ষতিগ্রস্ত উপাদানকে তার ভেতরে আটকে ফেলে। বেলজিয়ামের বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান ডে ১৯৭৪ সালে এ লাইসোজম আবিষ্কারের কারণে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিল। তবে সেখানে ঠিক কী ঘটে সেটা তখন বিজ্ঞানীদের জানা ছিল না। জাপানের অটোফেজি গবেষক ইয়োশিনোরি ওহশোমি পৃথিবীতে সর্ব প্রথম অটোফেজি নিয়ে কাজ শুরু করে। তিনি লক্ষ্য করেন লাইসোজম শুধু দেহের আবর্জনা বা ক্ষতিগ্রস্ত উপাদান জমা করে রাখে না। এটা রিসাইক্লিং চেম্বার বা নবায়নযোগ্য শক্তিব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে নতুন উপাদান/কোষ তৈরি করে। কোষেরা নিজেরাই নিজেদের বর্জিতাংশ বা আবর্জনাকে আটকায়। এরপর সেখান থেকে উপকারী উপাদানগুলোকে ছেঁকে আলাদা করে ফেলে। তারপর ওই দরকারি উপাদানগুলো দিয়ে উৎপাদন করে শক্তি কিংবা গড়ে তোলে নতুন নতুন অনেক কোষ। এ মহৎ কাজ তাঁকে ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কার এনে দেয়।

০৫। এসো বিষয়টিকে আরও সহজভাবে বোঝার চেষ্টা করি। যখন শরীরে খাবারের সংকট তৈরি হয় তখন অটোফেজি প্রক্রিয়াটি চালু হয়। তোমার বাসায় অনেক ভালো টাটকা খাবার থাকতে তুমি নিশ্চয়ই পুরাতন খাবার খাবে না! তেমনি তুমি যখন রোজা/উপবাস রাখবে, শরীরে খাদ্য সংকট ঘটাবে- তখন শরীরে জমে থাকা সেসব অপ্রয়োজনীয় ও অপরিপক্ক কোষগুলোকে শরীর খেয়ে নিবে। এভাবেই আত্মভক্ষণের মাধ্যমে তুমি রোগ থেকে বাঁচবে, আর তারুণ্য ধরে রাখতে পারবে।

০৬। তাই এতো এতো টাকা খরচ না করে এন্টি এজিং ক্রিম ব্যবহার না করে এসো অটোফেজির মাধ্যমে নিজের তারুন্য ধরে রাখি। বিষয়টিকে আরেকটু ব্যাখ্যা করি। অটোফেজি প্রক্রিয়ায় শরীরে তৈরি হয় নাইট্রিক অক্সাইড। এই নাইট্রিক অক্সাইড দেহকোষকে পুনরুজ্জীবিত করে বাড়িয়ে দেয় কোষের আয়ু যা এন্টি এজিং বা বার্ধক্যরোধক হিসেবে কাজ করে। কোষ পুনরুজ্জীবনের ইতিবাচক প্রভাব পুরো শরীরের ওপরই পড়ে যা অন্য অঙ্গের উপকারে আসে। তার মানে হচ্ছে, অটোফেজি শরীরকে ভাঙে না বরং গড়ে তোলে।

০৭। এবার এসো কিছু বিষয় সারাংশ করিঃ

(ক) অসুস্থ ব্যক্তির জন্য অটোফেজি কিংবা রোজা কোনোটাই স্বাস্থ্যগত সুফল প্রদানের কারণ হওয়ার কথা নয়। এমনকি কিছু কিছু অসুস্থতায় উপবাস এবং অনাহার দুটোই বরং ক্ষতিকর। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক পদক্ষেপ নেয়া সমীচীন।

(খ) অটোফেজি রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করার মাধ্যমে গ্লুকোজকে ভেঙে দেয়, যাতে শরীর শক্তি পেতে পারে যা ইনসুলিনের উৎপাদন হ্রাস করে। সহজ কথায় ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে।

(গ) অটোফেজি এথেরোস্ক্লেরোসিসের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে। দেহ খাদ্য এবং পানি থেকে বঞ্চিত হওয়ার পরেও শরীরে সঞ্চিত ফ্যাট শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন বিপাকের হারও হ্রাস পায়। অ্যাড্রিনালিন এবং ননঅ্যাড্রিনালিন হরমোনগুলির ক্ষরণও হ্রাস পায়; এটি বিপাকের হারকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে, যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

(ঘ) অটোফেজি কিছু নির্দিষ্ট প্রোটিনের উৎপাদন বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের জন্য উপকারী। এই প্রোটিনগুলো মস্তিষ্কের স্টেমসেলগুলো সক্রিয় করতে সহায়তা করে, যাতে তারা ভালোভাবে কাজ করতে পারে। এই কারণেই মস্তিষ্ক আরও ভালো ভাবে কাজ করে।

০৭। সব কথার শেষ কথা হোল উপরের লেখা পড়ে কোন ধর্মীয় বিষয় টেনে আনার প্রয়োজন নেই। কেননা সারা বছর ইচ্ছা মতো খাবার খেলাম আর রামাদানে না খেয়ে থাকলেই অটোফ্যাজি হবে এটা লজিক্যাল নয়।  অটোফেজি হওয়ার আগে বডি কিটোসিসে যায়, মানে গ্লুকোজের পরিবর্তে বডি কিটোনকে ফুয়েল হিসেবে ব্যবহার করে, এটাতে বডি অল্টারনেটিভ ফুয়েল ব্যবহারের পদ্ধতিটা আরেকবার ঝালাই করে নেয় যা শরীরের জন্য ভালো। অটোফেজি হওয়ার আগে যখন সব কার্ব ও প্রোটিন মেটাবলিজম হয়ে গ্লুকোজে পরিনত হয়ে ওই গ্লুকোজ শরীরে ব্যবহার হয়ে যায়, তখন বডি ফ্যাট ভেঙ্গে কিটোন বানায়, এই ফ্যাট ভাঙ্গাটা খারাপ কিছু না বরং ভালো। ফ্যাট ভাঙ্গা ও কিটোন তৈরী হওয়া এইগুলো ড্রাই ফাস্টিং এর ১২ ঘন্টার মধ্যেই হতে পারে ( মডারেট একটিভ মানুষের)।

০৮। তাই এসো সবাই শরীরকে ভালো রাখি। সুস্থ থাকি। অসুস্থ হলেই বোঝা যায় সুস্থতা কত বড় আশীর্বাদ! একটু কম খাই। আমাদের পাশে যে মানুষটি না খেয়ে আছে তাকে আমাদের খাবার শেয়ার করে নিজেকে ভালো রাখি, তাকেও ভালো রাখি।

Comments

Popular posts from this blog

Books poem analysis with bangla

Books poem in bangla and with analysis Verse-wise Bangla Translation: What worlds of wonder are our books! As one opens them and looks, New ideas and people rise In our fancies and our eyes. আমাদের বইগুলো কী আশ্চর্য এক জগৎ! যখনই কেউ তা খুলে দেখে, নতুন ভাবনা আর নতুন মানুষ জেগে ওঠে কল্পনায় ও চোখের সামনে। The room we sit in melts away, And we find ourselves at play With some one who, before the end, May become our chosen friend. আমরা যে ঘরে বসে আছি, তা যেন মিলিয়ে যায়, আর আমরা আবিষ্কার করি নিজেদের খেলায় মত্ত কাউকে সঙ্গে নিয়ে, যে হয়তো শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠবে। Or we sail along the page To some other land or age. Here's our body in the chair, But our mind is over there. অথবা আমরা পৃষ্ঠার ওপর দিয়ে ভাসতে থাকি অন্য কোনো দেশ বা কালের দিকে। আমাদের শরীরটা রয়েছে চেয়ারে, কিন্তু মন চলে গেছে দূরে অন্য কোথাও। Each book is a magic box Which with a touch a child unlocks. In between their outside covers Books hold all things for their lovers. প্রতিটি বই একেকটি জাদুর বাক্স, যা শিশুরা এক ...

🚀 ৫০টি দরকারি কিবোর্ড শর্টকাট (Windows)(বাংলা ব্যাখ্যাসহ)

🚀 ৫০টি দরকারি কিবোর্ড শর্টকাট (Windows) (বাংলা ব্যাখ্যাসহ) (অজানা কিন্তু খুবই কাজে লাগে) ⸻ ১. Ctrl + N → নতুন ফাইল বা ডকুমেন্ট খুলবে (Word, Notepad, Browser ইত্যাদিতে)। ২. Ctrl + Shift + T → আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্রাউজার ট্যাব পুনরায় খুলবে। ৩. Ctrl + Shift + Left/Right Arrow → একসাথে পুরো শব্দ নির্বাচন করা যাবে। ৪. Alt + F4 → অ্যাপ বা উইন্ডো বন্ধ হবে। ৫. Ctrl + P → প্রিন্ট ডায়ালগ বক্স খুলবে (প্রিন্ট করার জন্য)। ⸻ ৬. Ctrl + A → সব ফাইল বা টেক্সট সিলেক্ট হবে। ৭. Ctrl + C → কপি করা যাবে। ৮. Ctrl + V → পেস্ট করা যাবে। ৯. Ctrl + X → কাট করা যাবে। ১০. Ctrl + Z → সর্বশেষ কাজ Undo হবে। ⸻ ১১. Ctrl + Y → Undo করা কাজ Redo হবে। ১২. Windows Key + E → File Explorer খুলবে। ১৩. Windows Key + D → ডেস্কটপ দেখাবে (সব মিনিমাইজ হবে)। ১৪. Ctrl + Shift + Esc → সরাসরি Task Manager খুলবে। ১৫. Windows Key + L → কম্পিউটার লক হবে। ⸻ ১৬. Windows Key + S → সার্চ অপশন চালু হবে। ১৭. Windows Key + R → Run কমান্ড চালু হবে। ১৮. F5 → রিফ্রেশ করবে। ১৯. Alt + Enter → Properties খুলবে। ২০. Ctrl + T → ব্রাউজারে নতুন ট্যাব খু...

70 speaking rules(1~20)

Spoken Rule-1 Feel like – ইচ্ছা করা/আকাঙ্খা প্রকাশ করা প্রয়োগ ক্ষেত্র: ব্যক্তির কোন কিছুর “ইচ্ছা করলে” Feel like ব্যবহার হবে Structure: Subject + feel like + Verb (ing) + Extension. Example ✪ I feel like doing – আমার করতে ইচ্ছা করছে। ✪ I feel like eating – আমার খেতে ইচ্ছা করছে। ✪ I don’t ...