#বইতরণী না না না ...তেড়ে মারতে আসবেন না। কেউ মা এর পেট থেকে বেরিয়েই লেখক হয়ে যায় না । রবীন্দ্রনাথও হননি,আপনিও হবেন না। এক একজনের মধ্যে একটা সহজাত প্রতিভা থাকে , সে একটু তাড়াতাড়ি লেখক হয়ে ওঠে । বাকিদের যথেষ্ট ঘষামাজা করতে হয় ।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে নিজেকে ঘষামাজা করবেন ?
১. স্থির হতে শিখুন , অন্তত লেখক হয়ে ওঠার আগের দিনগুলো। মন স্থির না হলে ভাবনায় স্বচ্ছতা আসবে না। ভাবনাই যেখানে অস্বচ্ছ, লেখা কিভাবে পাঠযোগ্য হবে ?
লেখা তো ভাবনার প্রকাশ তাই না ?
ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মানুষের মন এমনিতেই অশান্ত । তাই কিছু না করলে মন এমনিতে শান্ত রাখা মুস্কিল।
যোগানিদ্রা মন শান্ত করে , আধ ঘন্টা করলে সাড়ে তিন ঘন্টার গাঢ় ঘুমের বেনিফিট পাওয়া যায়। যেকেউ করতে পারেন , হাঁটুতে ব্যথা থাকলেও করতে পারেন কারণ এটা করতে হয় শুয়ে শুয়ে। লেখক দের কথা ছাড়ুন, যাঁরা ডিপ্রেসন এর মধ্যে আছেন , স্টুডেন্ট এদের প্রত্যেকেরই দারুন কাজে দেবে। মন শান্ত রাখাটা সবার জন্যই দরকার।
আমি নিজে বহু বছর ধরে এটা করে আসছি , তাই রেকমেন্ড করলাম।
২. লেখক হতে গেলে লিখতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। যতো লিখবেন ততো আপনার লেখার ধার বাড়বে। কে কি বলছে কান দেবেন না, লিখে যান ... প্রথমে লোকজন পড়বে না , কারণ আপনার লেখার ধার কম ... ধার বাড়লেই দেখবেন লোকজন পড়ছে ।
লেখক আর পাঠক চুম্বক এর মতো, ঠিক জুড়ে যাবে। তবে টান টা আনার জন্য প্র্যাকটিস চাই।
৩. এক ধরনের লেখা লিখলে একই জায়গায় পড়ে থাকবেন। বিভিন্ন ধরনের লেখা লিখুন । রম্যরচনা লিখুন , সিরিয়াস জিনিস নিয়ে লিখুন , প্রেম কাহিনী লিখুন... নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে না এলে কলমের ধার বাড়বে না। কোনো একটা দিকে দিকপাল হবেন , কিন্তু বাদে....শুরুর দিনগুলো নিজেই নিজেকে চ্যালেঞ্জ জানান।
৪. নিজের লেখা কাটুন.... অনেক বড়ো বড়ো লেখকই একবার লেখার পর রিভিশন করে কিছু না কিছু শব্দ বদলান। বেশি না , অন্তত একবার নিজে পাঠক হয়ে নিজের লেখা পড়ুন ...ধার বাড়বে।
নিজের দু বছর আগের লেখা পড়ুন, নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার কলমের জোর ঠিক কতটা বেড়েছে।
৫. পাঁচটা লোকের সাথে মিশুন , সমাজের ওপর থেকে একদম নিচের তলার মানুষের সাথে। পাঁচটা মানুষের জীবনের গল্প না শুনলে মনের চোখ খুলবে না । সম্ভব হলে অন্তত বছরে দুবার ঘুরতে যান। লিখতে গেলে অভিজ্ঞতার দরকার আছে।
৬. একভাবে লিখুন । বার বার উঠলে লেখার গতি খাপছাড়া হয়ে যায়। মন খাপছাড়া মানেই কিন্তু লেখা খাপছাড়া ..
৭. বিশ্বসাহিত্যের বাঘা বাঘা সাহিত্য গুলো পড়ুন। খুব খুব দরকার। এগুলো পড়বেন মনটাকে আরো চকচকে করে তোলার জন্য , টোকাটুকি করার জন্য না। সম্ভব হলে দ্বিতীয়বার পড়ার সময় শব্দ গুলো কিভাবে প্রয়োগ হচ্ছে সেটা নিয়ে ঠান্ডা মাথায় বসে ভাবুন ...
৮. প্রথম দিকের দিনগুলোতে প্রশংসার থেকেও সমালোচনা কে বেশি গুরুত্ব দিন। যে সমালোচনা করছে সে কিন্তু নিজের সময় নষ্ট করে আপনার কাজকে সময় দিচ্ছে , এটা মাথার রাখলেই দেখবেন আর মাথা গরম হচ্ছে না।
৯. নিঃসংকোচে হেল্প চান। যাঁরা বই পড়েন , তাদের লেখা পাঠিয়ে রিভিউ করতে বলুন। কেউ হেল্প করবে , কেউ করবে না... এটা মাথায় রেখেই হেল্প চান। কেউ না কেউ তো উপকারী মানুষ আছেন , যিনি আপনার লেখার ভুলগুলো ধরিয়ে দেবেন... আরে বাবা , আপনি ধার চাইছেন না , চুরি করছেন না , নিজের লেখার ভুলত্রুটি জানতে চাইছেন... এতো লজ্জা কিসের!
আর হেল্প চাইলে মানুষ হেল্প করে, যাঁরা বই পড়ে তারা মানুষ হিসাবে খুব খারাপ হয় না।
১০. সাহিত্য একটা শিল্প , যেকোনো শিল্পে asthetics এর একটা আলাদা জায়গা থাকে। asthetics এর বাংলা ঠিক মনে পড়ছে না ...যাইহোক, asthetics মনস্তত্ত্বর একটা দিক, জানা থাকলে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন কিভাবে লিখলে মানুষের মনের মধ্যে ভালো করে ঢুকতে পারবেন।
যেকোনো আর্টিস্ট এর মানব মনস্তত্ত্ব নিয়ে কিছুটা ধারণা থাকা দরকার ।
এগুলো হচ্ছে লেখক হতে গেলে কি কি ঘষামাজা লাগবে। এবারে বিখ্যাত লেখক ( ফেসবুকে ) হতে গেলে কি কি লাগবে সেটা অন্য আর একদিন লিখবো ...তবে সেটা রম্যরচনা হবে 😂
এবার কয়েকটা নিনজা টিপস -
১. বিয়ে করুন। ম্যাচিং হোক বা নাহোক এর থেকে সহজে আর কিছুতে এতো বেশি এক্সপেরিয়েন্স পাবেন না । 😂
১. বউ এর সাথে সদ্ভাব বজায় রাখুন। বউ এর সাথে পাঙ্গা নিলে এই জন্মে লেখক হতে পারবেন না। 😜
Comments
Post a Comment