সফল,পাওয়ারফুল এবং দুনিয়া কাপানো CEO কিন্তু তারপরেও কেনো চাকরী হারান !!!
🙃স্যাম অল্টম্যান এবং OpenAI:
স্যাম অল্টম্যানকে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে পাওয়ার CEO বলা চলে। স্যাম অল্টম্যান হচ্ছেন-OpenAI নামক একটি প্রতিষ্ঠানের কো-ফাউন্ডার এবং CEO। এবং এই OpenAI এর তুমুল জনপ্রিয় এবং আলোড়োন সৃষ্টিকারি একটি প্রডাক্ট হচ্ছে ChatGPT.
বেশ কয়েকদিন আগে OpenAI এর বোর্ড এর CEO বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ‘স্যাম অল্টম্যান’কে খুবই ঝাপসা এবং একটি জনপ্রিইয় কর্পোরেট কালা কানুন দেখিয়ে ফায়ার করে-- মানে বোর্ড অল্টম্যানকে ফায়ার করার অজুহাত হিসেবে যেটা বলেছিল- ‘As Board Loses Confidence In His Leadership...’।প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ তাঁর ওপর অনাস্থা জানিয়ে তাঁকে সরানোর পর শুরু হয় নানা নাটকীয়তা। পদত্যাগ করেন আরোও অনেকে এরমাঝে একজন কো-ফাউন্ডারও আছেন। এমনকি ওপেনএআইয়ের ৭০০ কর্মী গণপদত্যাগের হুমকিও দেন এবং তারা দাবি জানান বোর্ডকে সরে যেতে হবে।মজার ব্যাপার হলো-Sam Altman পদচ্যুত হওয়ার পাঁচ দিন পর আবার স্বপদে ফিরে আসেন। Sam Altman এর জায়গায় বোর্ড যখন Chief Technology Officer(CTO) মিরা মুরাতিকে ইন্টারিম দায়িত্ব দেয়। কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে মিরা মুরাতিও বলেন যে স্যাম অল্টম্যানকে ফিরিয়ে আনা হউক। এরপর মিরা মুরাতিকেও CEO পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তখন Twitch (টুইচ হল একটি আমেরিকান ভিডিও লাইভ-স্ট্রিমিং ও মিউজিক স্ট্রিমিং প্রতিষ্ঠান) এর CEO ‘Emmett Shear’ কে ইন্টারিম CEO করা হয়। তিনি মোটামুটি দিন দুয়েক CEO হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মানে দাড়ার স্যাম অল্টম্যানকে ফায়ার করা এবং পরবর্তী পাচদিনের মধ্যে তিনজন CEO ওপেনএআইয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
যদিও তখন রিউমার ছড়ায় যে, Sam Altman মাইক্রোসফটে যোগ দিচ্ছেন এবং সাথে সেই কো-ফাউন্ডারও।উল্লেখ্য যে, ওপেনএআইয়ে Microsoft এর ৪৯% শেয়ার এবং বাকী ৫১% অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের । মাইক্রোসফট কেনো এই অবস্থায় Altman কে নিয়োগ দিবে?অবশেষে ঘটনাপ্রবাহের আপাত যবনিকাপাত ঘটে স্যাম অল্টম্যানের ওপেনএআইয়ে সিইও হিসেবে ফিরে আসার মাধ্যমে। তিনি OpenAI এ রি-এপয়েন্টেড হন এবং আগের পুরো বোর্ড পদত্যাগ করেন।
এখন দেখা যাক স্যাম অল্টম্যানের মধ্যে এমন কি আছে যাকে ফায়ার করার পরেই সেই প্রতিষ্ঠানের ৭০০ কর্মী গন-পতত্যাগের হুমকি দিলেন এবং পাচদিনের মধ্যেই তাকে পুনঃবহাল করতে হলো। ১৯৮৫ সালে আমেরিকায় জন্মগ্রহন করা অল্টম্যান ছিলেন এণ্টারপ্রেনিউর এবং Y Combinator এর প্রেসিডেন্ট। Y Combinator হচ্ছে- একটি ইনকিউবেটর কোম্পানি যারা একটি স্টার্ট-আপ আইডিয়াকে/ প্রতিষ্ঠানকে কে পেলেপুষে বড় করে দেয়।অল্টম্যানের মোটামুটি সব জায়গা থেকেই সাকসেসফুল এক্সিট ছিলো এবং ইনি ছিলেন ঐ সময়ের সিলিকন ভ্যালির খুবই প্রসিদ্ধ এবং পে-পল মাফিয়া। উনাকে নিয়ে অনেক ধরনের quote আছে। যেমন কর্পোরেট বোদ্ধারা বলেন- কোনোও জংগলে যদি ক্যানাবিলিষ্টদের মাঝে স্যাম অল্টম্যানকে ছেরে আসা হয় তাহলে দেখা যাবে ছয় মাস পরে ওই ক্যানবিলিষ্টরাও স্যাম অল্টম্যানের অনুসারী হয়ে গেছে। উনি যদিও খুব বড় কোনোও কোডার নন তবে তাকে বিশ্বের অন্যতম strategies দের একজন বলে ধরা হয়। তার কনভিন্সিং পাওয়ার খুবই ইর্ষনীয় এবং হায়েস্ট লেভেলের বলে মনে করা হয়। এ সম্পর্কে একটি গল্প প্রচলিত আছে, OpenAI শুরু করার সময়ে অল্টম্যান Stripe এর CTO Greg Brockman কে OpenAI তে জয়েন করার অফার করেন। কিন্তু Brockman বলেন যে তিনি Stripe ই ভালো আছেন এবং তিনি আপাতত মুভ করতে চাচ্ছেননা। তখন অল্টম্যান বলেন আচ্ছা ঠিক আছে তোমাকে জয়েন করতে হবেনা; চল আমি ড্রাইভ করে তোমাকে পৌছে দিয়ে আসি।এবং তিনি Brockman কে পাশের সিটে নিয়ে ড্রাইভ করতে করতে যতক্ষনে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছে গেছেন ততক্ষনে Brockman অল্টম্যানে পুরোপুরি কনভিন্স হয়ে গেছে এবং গাড়ি থেকে নামার সময় অল্টম্যানকে জানায় সে OpenAI তে জয়েন করতে প্রস্তুত।
🙃স্টিভ জবস, অ্যাপলঃ
এটা মোটামুটি সবাই জানেন যে, অ্যাপল কম্পিউটারের পরিচালনা পর্ষদ ও পরবর্তী সময় অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জন স্কালির সঙ্গে দীর্ঘ দ্বন্দ্বের পর স্টিভ জবসকে অ্যাপল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।অল্টম্যানের সাথে জবসের পার্থক্য হলো, জবসকে সরিয়ে দেয়ার পর তার সহকর্মীরা কেউ চাকরী ছাড়ার হুমকী দেননি এবং জবসের রি-এপয়েন্ট হতেও এক যুগ লেগেছে।তবে, এপ্যেল ছারার সে বছরই কয়েকজন অ্যাপলকর্মীকে নিয়ে নেক্সট প্রতিষ্ঠা করেন জবস। আবার ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে ৪০ কোটি মার্কিন ডলারে অ্যাপলের কাছে নেক্সট বিক্রি করে দেন স্টিভ জবস।এবং অ্যাপল ছাড়ার ঠিক ১২ বছর পর ১৯৯৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আবারও অ্যাপলে যোগ দেন জবস। এর পরে ষ্টিভ জবসের এপ্যেলের জার্নিটা পুরোই ইতিহাস এবং তাকে কিংবদন্তিতে পরিনত করেছে।
🙃ট্রাভিস কালানিক, উবারঃ
উবার নামটি এলেই আমাদের সবার অনুভুতিই অন্যরকম ভালোলাগায় ভরে যায়। কারন রাস্তায় দাঁড়িয়ে খিস্তি খেওর, ১০০০ টাকার ভাড়াকে মুলোমুলি করে ২৫০ টাকায় বা ৫০০ টাকায় নামিয়ে আনা এবং নেগোসিয়েশনে কে জিতলাম বা কে হারলাম এই হতাশা। এর থেকে মানুষকে স্বস্তি দেয় এপস ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান। বাসায় বসে শুধু এপসের মাধ্যমে বাড়ির সামনে থেকে সটান গাড়িতে উঠে বসা। রাতারাতি ট্যাক্সি/ সিএনজি/ বাস ওয়ালাদের দৌরাত্ম অনেকটাই লাঘব করে ঊবার।
সালটা ২০১৭। উবারের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাভিস কালানিককে প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য করে উবারের পরিচালনা পর্ষদ। কর্মক্ষেত্রে বাজে পরিবেশ সৃষ্টি, আইনি ঝামেলা, চালকের সঙ্গে বাজে ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তবে কোম্পানিতে ওই পদে ফিরতে নানা চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরাজয় মেনে নেন। অথচ, ২০০৯ সালে উবার প্রতিষ্ঠার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল কালানিকের।
🙃জিম বালসিলি ও মাইক লাজারিদিস, ব্ল্যাকবেরিঃ
ব্ল্যাকবেরির সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং কো-সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জিম বালসিলি ও মাইক লাজারিদিস তাঁদের পদ থেকে সরে গিয়েছিলেন। ব্ল্যাকবেরির ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগকারীরা পরিবর্তন চেয়েছিলেন। সে জন্যই এ দুজনকে পদচ্যুত করা হয়েছিল। ব্ল্যাকবেরির মূল প্রতিষ্ঠান রিসার্চ ইন মোশন (আরআইএম) প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন জিম বালসিলি।
ব্ল্যাকবেরি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বিশিষ্ট স্মার্টফোন মার্কাগুলির মধ্যে একটি, নিরাপদ যোগাযোগ এবং মোবাইল উত্পাদনশীলতায় বিশেষজ্ঞ এবং এর বেশিরভাগ ডিভাইসে কীবোর্ডের জন্য সুপরিচিত৷ ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে তার শীর্ষে থাকাবস্থায়, বিশ্বব্যাপী ৮৫ মিলিয়ন ব্ল্যাকবেরি গ্রাহক ছিল।যদিও, অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস প্ল্যাটফর্মের সাফল্যের কারণে ব্ল্যাকবেরি বাজারে তার প্রভাবশালী অবস্থান এখন আর নেই।
🙃শন রাড, টিন্ডারঃ
২০১৫ সালে টিন্ডারের সিইও পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় শন রাডকে। এর ছয় মাস পর তিনি স্বপদে ফিরেও আসেন। তবে এর কিছুদিন পর আবার এ পদ থেকে পদত্যাগ করেন। টিন্ডারের বিরুদ্ধে আনা যৌন হয়রানির এক মামলার কারণে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
টিন্ডার একটি অনলাইন ডেটিং এবং জিওসোশ্যাল নেটওয়ার্কিং অ্যাপ্লিকেশন। টিন্ডারে, ব্যবহারকারীরা পছন্দ করতে "ডানদিকে সোয়াইপ " করে বা অন্য ব্যবহারকারীদের প্রোফাইল অপছন্দ করতে "বামে সোয়াইপ"। ২০১২ সালে পশ্চিম হলিউডের হ্যাচ ল্যাবস ইনকিউবেটরে অনুষ্ঠিত একটি হ্যাকাথনে শন রাড টিন্ডার চালু করেছিলেন।২০১৪ সাল নাগাদ, টিন্ডার দৈনিক প্রায় এক বিলিয়ন "সোয়াইপ" নিবন্ধন করছিল এবং রিপোর্ট করেছে যে ব্যবহারকারীরা দিনে গড়ে ১১ বার অ্যাপে লগ ইন করেছেন। ২০১৫ সালে, টিন্ডার পঞ্চম সর্বোচ্চ-অর্জনকারী মোবাইল অ্যাপ ছিল, এবং ২০১৯ সাল নাগাদ এটি সর্বোচ্চ-আয়কারী অ্যাপ ছিল।২০২০ সালে, টিন্ডারের ৬.২ মিলিয়ন গ্রাহক এবং ৭৫ মিলিয়ন মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী ছিল।২০২১ সাল পর্যন্ত, টিন্ডার বিশ্বব্যাপী ৬৫ বিলিয়নেরও বেশি ম্যাচ রেকর্ড করেছে।
😢😢😢স্যাম অল্টম্যান বা ষ্টিভ জবস, জিম বালসিলি ও মাইক লাজারিদিস, ট্রাভিস কালানিক বা শন র্যাডদেরকে যখন ফায়ার করা হয় তখন এরা সবাই ছিলেন একজন টপ পারফর্মার CEO এবং একের পর এক হিট প্রডাক্ট দিয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু তারপরও বোর্ড কেনো এটা করল বা বোর্ডের সাথে কেনো তাদের দুরত্ব তৈরী হয়???---
প্রফিট কমে যাওয়া নয় নিশ্চিত, তাহলে কি শুধুই Loses Confidence এর খোড়া যুক্তি নাকি পারস্পারিক Ego সমস্যা।
বা এসবের বাইরে সবাই কি ভেতরে ভেতরে কনোলিয়ান??? সাব-কন্টিনেন্টের কর্পোরেট বা আমলাতন্ত্রের হেমলকের মতই কি সবাই নতজানু নীতির একজন CEO বা লিডার চায়??
Collected
No comments:
Post a Comment