Tuesday, April 30, 2024

বই পড়ার গুরুত্ব ও উপকারিতা

বই পড়ার অভ্যাস এবং উপকারিতাবই পড়ার অভ্যাস এবং উপকারিতা
‘বই’ দুই বর্ণের একটি শব্দ মাত্র। যা এসেছে আরবি ‘ওহি’ থেকে। আরবি ‘ওয়াও’  হরফের বাংলা উচ্চারণ হয় ‘ব’। ওহির বাংলা উচ্চারণ হয় বহি। ধীরে ধীরে ভাষার  পরিবর্তনে বহিটি বই রূপ ধারণ করেছে। এভাবে বইয়ের সঙ্গে ঐশী জ্ঞানের একটা  সম্পর্ক রয়েছে। বই পড়লে মানুষের জ্ঞানের দ্যুতি বাড়ে। আমাদের জীবসত্তা  জাগ্রত থাকলেও মানবসত্তা জাগ্রত করার সিঁড়ি হচ্ছে বই।
মানব সভ্যতার সূচনা থেকেই মানুষের পাঠ অভ্যাসের তথ্য পাওয়া যায়। মানুষ বই  পড়ে মনের খোরাকের জন্য, অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এবং নিজেকে জ্ঞানের আলোয়  আলোকিত করার জন্য। জ্ঞানের সূচনা বই থেকেই এবং সে জ্ঞানকে সামগ্রিকভাবে  কাজে লাগানোর দক্ষতা মানুষ বই পড়ে পেয়ে থাকে। মানুষের মননশীল, চিন্তাশীল,  সৃষ্টিশীল চিন্তার যাবতীয় সূচনার বিস্ফোরণ একমাত্র বইয়ের মাধ্যমে হতে পারে।
কিন্তু মানুষ আগে যেভাবে যেকোনো বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিতে পারত, প্রযুক্তির  এ সময়ে এসে একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে আগের মতো আর মনোযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে  না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বইয়ের সাথে মানুষের দূরত্ব। একটা সময় অলস দুপুরে  বালিশে হেলান দিয়ে কিংবা ভ্রমণে বাসে-ট্রেনে বসে বই বই পড়ে সময় কাটানো  কিংবা এক টানে একটি বই পড়ে শেষ করার প্রবণতা এখনকার দিনে নেই বললেই চলে।  এখন আধা পৃষ্ঠার একটা প্রবন্ধ পড়ার দরকার হলে হয়তো দু-এক লাইন পড়েই বাদ  দিয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ আমাদেরকে একটা বিষয় স্বীকার করতেই হবে, সবারই  বইপত্র বা খবরের কাগজের প্রবন্ধ ইত্যাদি পড়ার অভ্যাস একেবারেই বন্ধ হয়ে  যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
অথচ, জীবনে সফলতা অর্জন করতে হলে যেসব গুণাবলি বা দক্ষতার প্রয়োজন তার  মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বই পড়া বা বই থেকে জ্ঞান অর্জন। পৃথিবীর সফলতম মানুষদের  মধ্যে জ্ঞান এর প্রতি যে অসীম তৃষ্ণা রয়েছে তা মেটানোর জন্যই হচ্ছে বই  পড়া। Warren Buffett তাঁর পেশা জীবনের শুরুতে প্রতিদিন ৬০০-১০০০ পৃষ্ঠা  নিয়মিত পড়তেন। Bill Gates প্রতিবছর ৫০ টি বই শেষ করেন। Elon Mask রকেট  সায়েন্স এর বিদ্যা বই পড়ার মাধ্যমেই অর্জন করেছেন। Mark Cuban প্রতিদিন ৩  ঘণ্টার বেশি বই পড়েন।
এসব পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, তারা সফল হওয়া সত্ত্বেও তাদের জানার প্রতি  রয়েছে অসীম আগ্রহ। তাই তাদের কাছে বই পড়ার গুরুত্ব কমে যায় নি। কারণ  তারা জানেন বই পড়েই হওয়া যায় সুদক্ষ এবং অনেক গুণাবলীসম্পন্ন। আসুন দেখে  নিই কীভাবে আমাদের বিভিন্ন দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে বই।
মানসিক উত্তেজনা
বই পড়ার সর্বপ্রথম উপকারিতা হচ্ছে মানসিক উত্তেজনা। এক গবেষণায় দেখা  গেছে, অধ্যয়ন Dementia এবং Alzheimer’s নামের  এই রোগ দুটিকে হ্রাস এমনকি  প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। মস্তিষ্ককে সচল রাখলে তা কখনোই তার ক্ষমতা  হারাবে না। মস্তিষ্ককে শরীরের একটি সাধারণ পেশী হিসেবে বিবেচনা করে,  নিয়মিত ব্যায়াম করলে তা শক্তিশালী এবং ফিট থাকবে।
মানসিক চাপ হ্রাস
কিছু মানুষ তাদের মানসিক চাপ কমাতে ব্যায়ামের আশ্রয় নেয়, কেউ কেউ আবার  যোগব্যায়ামের দ্বারস্থ হয় তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে। জীবনে এমন কোন  মানসিক চাপ নেই সেটি যেই পরিমাণই হোক না কেন, যা একটি ভালো গল্প সমাধান  করতে পারে না। বই পড়ার মজা হচ্ছে এটি একজন মানুষকে মুহূর্তের মধ্যেই কোনো  এক অজানা জগতে নিয়ে যাবে কিংবা এমন কোন সময়ে ভ্রমণ করাবে যা সে কখনো  কল্পনাও করেনি। একটি ভালো অনুচ্ছেদ তাকে প্রতিদিনের বাস্তবতা থেকে একটু  হলেও রেহাই দেবে। এমনি মানসিক চাপ কমিয়ে মানসিক প্রশান্তি ফিরিয়ে আনে  সহায়ক মাধ্যম বই।
শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধি
যত বেশি বই পড়া হবে তত বেশি শব্দভাণ্ডারে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শব্দ যোগ  হতে থাকবে। ফলে বই পড়া শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধিতে অনেক বেশি সাহায্য করে।  নিজেকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা চাকুরিজীবনে এমনকি ব্যক্তিগত জীবনেও সহায়ক  হবে। এমনকি
একজন মানুষকে আত্মবিশ্বাস জোগাতেও অনেক সাহায্য করে। নতুন কোনো ভাষা  শিখতেও বই পড়ার বিকল্প নেই। এটি খুব দ্রুত নতুন যেকোনো ভাষাকে আয়ত্ত করতে  সহায়তা করে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি
কটি বই পড়ার সময় দেখা যায় বিভিন্ন তথ্য দেয়া থাকে যা পাঠককে গল্পের  স্বার্থেই মনে রাখতে হয়। যেমন: বিভিন্ন চরিত্র, ইতিহাস, পটভূমি, গল্পের  উদ্দেশ্য, উপ-খণ্ড ইত্যাদি। এসব তথ্য আমাদের কাছে অতিরিক্ত মনে হলেও  মস্তিষ্কের অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে সবকিছু মনে রাখার। প্রত্যেকটি নতুন  স্মৃতি একটি নতুন Synapse তৈরি করে এবং বিদ্যমান স্মৃতিকে আরও শক্তিশালী  করে এবং স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিকে আরও উন্নত করে।
Analytical thinking কে উন্নত করে
বই পড়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হচ্ছে  Analytical thinking কে  উন্নত করা। অনেকের কাজের ক্ষেত্রে দেখা যায় Analytical thinking খুব দরকার  পড়ে, সেই ক্ষেত্রে বই পড়া খুব কাজে লাগতে পারে। এমনকি কখনো হয়েছে যে  পাঠক কোনো রহস্যমূলক বই পড়ার সময় পুরো বই পড়ার আগেই রহস্যটি সমাধান করে  ফেলেছেন? তার মানে তার ভালো দক্ষতা রয়েছে। মানুষের জীবনেও এমন অনেক  পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখানে Analytical thinking দিয়েই সেসব পরিস্থিতি  মোকাবেলা করতে হয়।
অন্যের জ্ঞান থেকে অভিজ্ঞতা নেয়া
পাঠক যে বইটি পড়ছেন সেটি মূলত সেটি ওই বইয়ের লেখকের বিশেষ জ্ঞান বা  অভিজ্ঞতা থেকেই লেখা। সেই জ্ঞান পাঠকের সফলতাকে ত্বরান্বিত করবে। বিভিন্ন  বইয়ে দেখা যায় লেখক তার জীবনের সফলতা এবং ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা করে এবং  সেই ব্যর্থতা থেকে কীভাবে কী উপায়ে তিনি উপরে উঠতে থাকে সেই বৃত্তান্ত  লিপিবদ্ধ থাকে ওই বইয়ে। সেই লেখা বা গল্প থেকে জানতে পারা যায় কোন পথে গেলে  সফলতা নিশ্চিত এবং ভুলের সম্ভাবনাও কমে আসে। জীবন খুবই ছোট এসব ভুলের  পুনরাবৃত্তি করা সফলদের একজন হতে চাইলে তাদের অতীত থেকে শিক্ষা নাও এবং  জেনে নাও ব্যর্থতাকে সফলতায় রূপান্তর করার মন্ত্র ।
কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতা বাড়ায়
বই যেন মানুষকে এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যাবে, তাকে দেখাবে কোনো কিছুই যেন  অসম্ভব নয়। পড়ার মাধ্যমেই দেখাবে বিষয়গুলোর অধিকাংশ তার জানা। বাকিটা  বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সহজেই আবিষ্কার করা সম্ভব। বই যেন এক বিশাল  মাকড়শার জাল, যা সবকিছুকেই এক সূত্রে গেঁথে দেয়, পাঠকের জানা বিষয়ের  সঙ্গে নতুন আবিষ্কৃত বিষয়কে জোড়া লাগিয়ে নতুন এক উত্তর কিংবা সমাধান বের  করা যেন বইয়ের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।
নতুন চিন্তা বা আবিষ্কার ক্ষমতা বৃদ্ধি
বই পড়ার মাধ্যমে একজন মানুষ নতুন বিষয় বা তথ্য উদঘাটনে সহায়তা পান। কোন  সমস্যা সমাধান করা অথবা কোনো কিছু অর্জন করার নতুন কোনো মাধ্যম আবিষ্কার  করতে বই ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বই পড়ার সুবাদে তার পছন্দের তালিকায় নতুন  কোনো শখ কিংবা নতুন কোনো পেশা যুক্ত হয়েছে যেটি শেষে সে তার পেশা হিসেবে  বেছে নিয়েছে এবং সফলতা অর্জন করেছে। অন্বেষণের শুরু কিন্তু পড়া এবং  উপলব্ধির মাধ্যমেই।
Meditation for soul
মানসিক প্রশান্তি পেতে কোনো এক নিরিবিলি জায়গায় কোনো এক পছন্দের বই  নিয়ে যেতে হবে। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মুক্ত বাতাস ওই পাঠকের  চিন্তাকে যেন আরও প্রসারিত করবে, যা কখনোই লাইব্রেরিতে বসে বসে পড়ার মধ্যে  পাওয়া সম্ভব নয়। কিছুক্ষণের বই পড়া তার সারাদিনের ক্লান্তিকে নিমিষেই  দূর করে দিবে।
মনোযোগ বৃদ্ধি
তথ্যপ্রযুক্তির যুগের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে মানুষ যেন প্রযুক্তির গতিই  আগে গ্রহণ করেছে। মানুষকে এখন সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটির সম্মুখীন হয় তা  হল মনোযোগের অভাব। ৫ মিনিটের বিস্তারে একদিকে যেখানে কোনো কাজের পরিকল্পনা  করা হচ্ছে, আরেকদিকে হয়ত ইমেইল চেক করা হচ্ছে, আবার সেই সঙ্গে কারো সাথে  হয়ত করা হচ্ছে চ্যাট কিংবা ব্যবহার করা হচ্ছে স্মার্টফোন। এই ধরনের আচরণ  কার্যক্ষমতা কমিয়ে বাড়িয়ে দেয় স্ট্রেস।
যখন আমরা একটা গল্প পড়ি তখন আমাদের মনোযোগ শুধুমাত্র সেই গল্পের মধ্যেই  সীমাবদ্ধ থাকে, যেন পুরো পৃথিবীটা তখন নিশ্চুপ হয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন  যদি বই পড়ার অভ্যাস করা হয় তবে দেখবে মনোযোগ ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজে  যাওয়ার আগে ১৫-২০ মিনিট পড়ার অভ্যাস করলেএবং দেখা যাবে আগের থেকেও অনেক  বেশি মনোযোগী হওয়া যায়।
বই পারস্পরিক যোগাযোগের মন্ত্র
আমাদের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্র হচ্ছে যোগাযোগ। যা শুধু বই  পড়ার মাধ্যমে ভালো পারস্পরিক যোগাযোগ গড়ে তোলা যায়। যারা বই পড়ে তারা  খুব সহজেই অন্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। তারা জানে কোন  পরিস্থিতিতে কি কথা বলতে হয় এবং কার সাথে কীভাবে কথা বলতে হয়। যারা বই  পড়ে না তারা অনেক বিষয়েই সচেতন নয়।
যারা কিছুই জানে না তাদের আসলে অন্যকে বলারও কিছু থাকে না। সমাজে চলতে  গেলে যোগাযোগের কোনো বিকল্প নেই। বই পড়া যেমন জ্ঞানের পরিধি বিস্তারে  সাহায্য করে, তেমনি ভালো সংবাদদাতা বা উপস্থাপনকারী হতেও সহায়তা করে। বেই  পারে মানুষকে পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত করতে।
বই আত্মোন্নতিতে সহায়ক
বই পড়া নিজেকে এক উন্নত আমি হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে। বই পড়ার  মাধ্যমেই মানুষ  এক নতুন পৃথিবী আবিষ্কার করা সম্ভব। যেই বিষয় নিয়ে  মানুষের আগ্রহ রয়েছে সেই বিষয়ে জ্ঞান আরও বৃদ্ধি করতে বইই একমাত্র  অবলম্বন। বই পড়ার মধ্য দিয়েই মানুষ তার অন্তরদৃষ্টির একটি সুগঠিত পন্থা  এবং ভবিষ্যতের উত্তম কর্ম নির্ণয় করতে সক্ষম হয়।
“Reading is to the mind, what exercise is to the body” – এই কথাটির  মধ্যেই বই পড়ার গুরুত্ব বোঝা যায়। ব্যায়াম যেমন আমাদের শরীরকে সুস্থ  রাখে তেমনি বই পড়ার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মনকে সুস্থ এবং প্রফুল্ল রাখতে  পারি। আসলে বই পড়ার আনন্দ কখনোই শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব নয় এটি  শুধু অনুভব করা যায় অভিজ্ঞতা দ্বারা।
‘বই’ দুই বর্ণের একটি শব্দ মাত্র। যা এসেছে আরবি ‘ওহি’ থেকে। আরবি ‘ওয়াও’  হরফের বাংলা উচ্চারণ হয় ‘ব’। ওহির বাংলা উচ্চারণ হয় বহি। ধীরে ধীরে ভাষার  পরিবর্তনে বহিটি বই রূপ ধারণ করেছে। এভাবে বইয়ের সঙ্গে ঐশী জ্ঞানের একটা  সম্পর্ক রয়েছে। বই পড়লে মানুষের জ্ঞানের দ্যুতি বাড়ে। আমাদের জীবসত্তা  জাগ্রত থাকলেও মানবসত্তা জাগ্রত করার সিঁড়ি হচ্ছে বই।
মানব সভ্যতার সূচনা থেকেই মানুষের পাঠ অভ্যাসের তথ্য পাওয়া যায়। মানুষ বই  পড়ে মনের খোরাকের জন্য, অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এবং নিজেকে জ্ঞানের আলোয়  আলোকিত করার জন্য। জ্ঞানের সূচনা বই থেকেই এবং সে জ্ঞানকে সামগ্রিকভাবে  কাজে লাগানোর দক্ষতা মানুষ বই পড়ে পেয়ে থাকে। মানুষের মননশীল, চিন্তাশীল,  সৃষ্টিশীল চিন্তার যাবতীয় সূচনার বিস্ফোরণ একমাত্র বইয়ের মাধ্যমে হতে পারে।
কিন্তু মানুষ আগে যেভাবে যেকোনো বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিতে পারত, প্রযুক্তির  এ সময়ে এসে একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে আগের মতো আর মনোযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে  না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বইয়ের সাথে মানুষের দূরত্ব। একটা সময় অলস দুপুরে  বালিশে হেলান দিয়ে কিংবা ভ্রমণে বাসে-ট্রেনে বসে বই বই পড়ে সময় কাটানো  কিংবা এক টানে একটি বই পড়ে শেষ করার প্রবণতা এখনকার দিনে নেই বললেই চলে।  এখন আধা পৃষ্ঠার একটা প্রবন্ধ পড়ার দরকার হলে হয়তো দু-এক লাইন পড়েই বাদ  দিয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ আমাদেরকে একটা বিষয় স্বীকার করতেই হবে, সবারই  বইপত্র বা খবরের কাগজের প্রবন্ধ ইত্যাদি পড়ার অভ্যাস একেবারেই বন্ধ হয়ে  যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
অথচ, জীবনে সফলতা অর্জন করতে হলে যেসব গুণাবলি বা দক্ষতার প্রয়োজন তার  মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বই পড়া বা বই থেকে জ্ঞান অর্জন। পৃথিবীর সফলতম মানুষদের  মধ্যে জ্ঞান এর প্রতি যে অসীম তৃষ্ণা রয়েছে তা মেটানোর জন্যই হচ্ছে বই  পড়া। Warren Buffett তাঁর পেশা জীবনের শুরুতে প্রতিদিন ৬০০-১০০০ পৃষ্ঠা  নিয়মিত পড়তেন। Bill Gates প্রতিবছর ৫০ টি বই শেষ করেন। Elon Mask রকেট  সায়েন্স এর বিদ্যা বই পড়ার মাধ্যমেই অর্জন করেছেন। Mark Cuban প্রতিদিন ৩  ঘণ্টার বেশি বই পড়েন।
এসব পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, তারা সফল হওয়া সত্ত্বেও তাদের জানার প্রতি  রয়েছে অসীম আগ্রহ। তাই তাদের কাছে বই পড়ার গুরুত্ব কমে যায় নি। কারণ  তারা জানেন বই পড়েই হওয়া যায় সুদক্ষ এবং অনেক গুণাবলীসম্পন্ন। আসুন দেখে  নিই কীভাবে আমাদের বিভিন্ন দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে বই।
মানসিক উত্তেজনা
বই পড়ার সর্বপ্রথম উপকারিতা হচ্ছে মানসিক উত্তেজনা। এক গবেষণায় দেখা  গেছে, অধ্যয়ন Dementia এবং Alzheimer’s নামের  এই রোগ দুটিকে হ্রাস এমনকি  প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। মস্তিষ্ককে সচল রাখলে তা কখনোই তার ক্ষমতা  হারাবে না। মস্তিষ্ককে শরীরের একটি সাধারণ পেশী হিসেবে বিবেচনা করে,  নিয়মিত ব্যায়াম করলে তা শক্তিশালী এবং ফিট থাকবে।
মানসিক চাপ হ্রাস
কিছু মানুষ তাদের মানসিক চাপ কমাতে ব্যায়ামের আশ্রয় নেয়, কেউ কেউ আবার  যোগব্যায়ামের দ্বারস্থ হয় তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে। জীবনে এমন কোন  মানসিক চাপ নেই সেটি যেই পরিমাণই হোক না কেন, যা একটি ভালো গল্প সমাধান  করতে পারে না। বই পড়ার মজা হচ্ছে এটি একজন মানুষকে মুহূর্তের মধ্যেই কোনো  এক অজানা জগতে নিয়ে যাবে কিংবা এমন কোন সময়ে ভ্রমণ করাবে যা সে কখনো  কল্পনাও করেনি। একটি ভালো অনুচ্ছেদ তাকে প্রতিদিনের বাস্তবতা থেকে একটু  হলেও রেহাই দেবে। এমনি মানসিক চাপ কমিয়ে মানসিক প্রশান্তি ফিরিয়ে আনে  সহায়ক মাধ্যম বই।
শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধি
যত বেশি বই পড়া হবে তত বেশি শব্দভাণ্ডারে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শব্দ যোগ  হতে থাকবে। ফলে বই পড়া শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধিতে অনেক বেশি সাহায্য করে।  নিজেকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা চাকুরিজীবনে এমনকি ব্যক্তিগত জীবনেও সহায়ক  হবে। এমনকি
একজন মানুষকে আত্মবিশ্বাস জোগাতেও অনেক সাহায্য করে। নতুন কোনো ভাষা  শিখতেও বই পড়ার বিকল্প নেই। এটি খুব দ্রুত নতুন যেকোনো ভাষাকে আয়ত্ত করতে  সহায়তা করে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি
কটি বই পড়ার সময় দেখা যায় বিভিন্ন তথ্য দেয়া থাকে যা পাঠককে গল্পের  স্বার্থেই মনে রাখতে হয়। যেমন: বিভিন্ন চরিত্র, ইতিহাস, পটভূমি, গল্পের  উদ্দেশ্য, উপ-খণ্ড ইত্যাদি। এসব তথ্য আমাদের কাছে অতিরিক্ত মনে হলেও  মস্তিষ্কের অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে সবকিছু মনে রাখার। প্রত্যেকটি নতুন  স্মৃতি একটি নতুন Synapse তৈরি করে এবং বিদ্যমান স্মৃতিকে আরও শক্তিশালী  করে এবং স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিকে আরও উন্নত করে।
Analytical thinking কে উন্নত করে
বই পড়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হচ্ছে  Analytical thinking কে  উন্নত করা। অনেকের কাজের ক্ষেত্রে দেখা যায় Analytical thinking খুব দরকার  পড়ে, সেই ক্ষেত্রে বই পড়া খুব কাজে লাগতে পারে। এমনকি কখনো হয়েছে যে  পাঠক কোনো রহস্যমূলক বই পড়ার সময় পুরো বই পড়ার আগেই রহস্যটি সমাধান করে  ফেলেছেন? তার মানে তার ভালো দক্ষতা রয়েছে। মানুষের জীবনেও এমন অনেক  পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখানে Analytical thinking দিয়েই সেসব পরিস্থিতি  মোকাবেলা করতে হয়।
অন্যের জ্ঞান থেকে অভিজ্ঞতা নেয়া
পাঠক যে বইটি পড়ছেন সেটি মূলত সেটি ওই বইয়ের লেখকের বিশেষ জ্ঞান বা  অভিজ্ঞতা থেকেই লেখা। সেই জ্ঞান পাঠকের সফলতাকে ত্বরান্বিত করবে। বিভিন্ন  বইয়ে দেখা যায় লেখক তার জীবনের সফলতা এবং ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা করে এবং  সেই ব্যর্থতা থেকে কীভাবে কী উপায়ে তিনি উপরে উঠতে থাকে সেই বৃত্তান্ত  লিপিবদ্ধ থাকে ওই বইয়ে। সেই লেখা বা গল্প থেকে জানতে পারা যায় কোন পথে গেলে  সফলতা নিশ্চিত এবং ভুলের সম্ভাবনাও কমে আসে। জীবন খুবই ছোট এসব ভুলের  পুনরাবৃত্তি করা সফলদের একজন হতে চাইলে তাদের অতীত থেকে শিক্ষা নাও এবং  জেনে নাও ব্যর্থতাকে সফলতায় রূপান্তর করার মন্ত্র ।
কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতা বাড়ায়
বই যেন মানুষকে এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যাবে, তাকে দেখাবে কোনো কিছুই যেন  অসম্ভব নয়। পড়ার মাধ্যমেই দেখাবে বিষয়গুলোর অধিকাংশ তার জানা। বাকিটা  বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সহজেই আবিষ্কার করা সম্ভব। বই যেন এক বিশাল  মাকড়শার জাল, যা সবকিছুকেই এক সূত্রে গেঁথে দেয়, পাঠকের জানা বিষয়ের  সঙ্গে নতুন আবিষ্কৃত বিষয়কে জোড়া লাগিয়ে নতুন এক উত্তর কিংবা সমাধান বের  করা যেন বইয়ের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।
নতুন চিন্তা বা আবিষ্কার ক্ষমতা বৃদ্ধি
বই পড়ার মাধ্যমে একজন মানুষ নতুন বিষয় বা তথ্য উদঘাটনে সহায়তা পান। কোন  সমস্যা সমাধান করা অথবা কোনো কিছু অর্জন করার নতুন কোনো মাধ্যম আবিষ্কার  করতে বই ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বই পড়ার সুবাদে তার পছন্দের তালিকায় নতুন  কোনো শখ কিংবা নতুন কোনো পেশা যুক্ত হয়েছে যেটি শেষে সে তার পেশা হিসেবে  বেছে নিয়েছে এবং সফলতা অর্জন করেছে। অন্বেষণের শুরু কিন্তু পড়া এবং  উপলব্ধির মাধ্যমেই।
Meditation for soul
মানসিক প্রশান্তি পেতে কোনো এক নিরিবিলি জায়গায় কোনো এক পছন্দের বই  নিয়ে যেতে হবে। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মুক্ত বাতাস ওই পাঠকের  চিন্তাকে যেন আরও প্রসারিত করবে, যা কখনোই লাইব্রেরিতে বসে বসে পড়ার মধ্যে  পাওয়া সম্ভব নয়। কিছুক্ষণের বই পড়া তার সারাদিনের ক্লান্তিকে নিমিষেই  দূর করে দিবে।
মনোযোগ বৃদ্ধি
তথ্যপ্রযুক্তির যুগের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে মানুষ যেন প্রযুক্তির গতিই  আগে গ্রহণ করেছে। মানুষকে এখন সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটির সম্মুখীন হয় তা  হল মনোযোগের অভাব। ৫ মিনিটের বিস্তারে একদিকে যেখানে কোনো কাজের পরিকল্পনা  করা হচ্ছে, আরেকদিকে হয়ত ইমেইল চেক করা হচ্ছে, আবার সেই সঙ্গে কারো সাথে  হয়ত করা হচ্ছে চ্যাট কিংবা ব্যবহার করা হচ্ছে স্মার্টফোন। এই ধরনের আচরণ  কার্যক্ষমতা কমিয়ে বাড়িয়ে দেয় স্ট্রেস।
যখন আমরা একটা গল্প পড়ি তখন আমাদের মনোযোগ শুধুমাত্র সেই গল্পের মধ্যেই  সীমাবদ্ধ থাকে, যেন পুরো পৃথিবীটা তখন নিশ্চুপ হয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন  যদি বই পড়ার অভ্যাস করা হয় তবে দেখবে মনোযোগ ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজে  যাওয়ার আগে ১৫-২০ মিনিট পড়ার অভ্যাস করলেএবং দেখা যাবে আগের থেকেও অনেক  বেশি মনোযোগী হওয়া যায়।
বই পারস্পরিক যোগাযোগের মন্ত্র
আমাদের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্র হচ্ছে যোগাযোগ। যা শুধু বই  পড়ার মাধ্যমে ভালো পারস্পরিক যোগাযোগ গড়ে তোলা যায়। যারা বই পড়ে তারা  খুব সহজেই অন্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। তারা জানে কোন  পরিস্থিতিতে কি কথা বলতে হয় এবং কার সাথে কীভাবে কথা বলতে হয়। যারা বই  পড়ে না তারা অনেক বিষয়েই সচেতন নয়।
যারা কিছুই জানে না তাদের আসলে অন্যকে বলারও কিছু থাকে না। সমাজে চলতে  গেলে যোগাযোগের কোনো বিকল্প নেই। বই পড়া যেমন জ্ঞানের পরিধি বিস্তারে  সাহায্য করে, তেমনি ভালো সংবাদদাতা বা উপস্থাপনকারী হতেও সহায়তা করে। বেই  পারে মানুষকে পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত করতে।
বই আত্মোন্নতিতে সহায়ক
বই পড়া নিজেকে এক উন্নত আমি হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে। বই পড়ার  মাধ্যমেই মানুষ  এক নতুন পৃথিবী আবিষ্কার করা সম্ভব। যেই বিষয় নিয়ে  মানুষের আগ্রহ রয়েছে সেই বিষয়ে জ্ঞান আরও বৃদ্ধি করতে বইই একমাত্র  অবলম্বন। বই পড়ার মধ্য দিয়েই মানুষ তার অন্তরদৃষ্টির একটি সুগঠিত পন্থা  এবং ভবিষ্যতের উত্তম কর্ম নির্ণয় করতে সক্ষম হয়।
“Reading is to the mind, what exercise is to the body” – এই কথাটির  মধ্যেই বই পড়ার গুরুত্ব বোঝা যায়। ব্যায়াম যেমন আমাদের শরীরকে সুস্থ  রাখে তেমনি বই পড়ার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মনকে সুস্থ এবং প্রফুল্ল রাখতে  পারি। আসলে বই পড়ার আনন্দ কখনোই শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব নয় এটি  শুধু অনুভব করা যায় অভিজ্ঞতা দ্বারা।
(সংগৃহীত ফ্রম ইন্টারনেট)

Sunday, April 28, 2024

দেশ বিদেশের ভাষা

 

চায়ের কাপে বিস্কুট ডুবিয়ে খাওয়ার সময় হঠাৎ মাথায় আসলো যে এই চা চীনা শব্দ। আবার বিস্কুট ফরাসি শব্দ। বিস্কুটের সাথে থাকা চানাচুর হিন্দি। চায়ে যে চিনি ও পানি থাকে সেখানে চিনি চীনা অথচ পানি হিন্দি শব্দ। আবার চা ভর্তি পেয়ালাটা ফারসি কিন্তু কাপটা ইংরেজি শব্দ। এদিকে ইংরেজি শব্দটাই আবার পর্তুগিজ। চা চীনা হলেও কফি কিন্তু তুর্কি শব্দ। আবার কেক পাউরুটির কেক ইংরেজি, পাউরুটি পর্তুগিজ।
একটু দামি খানাপিনায় যাই। আগেই বলে রাখি, খানাপিনা হিন্দি আর দাম গ্রিক। রেস্তোরাঁ বা ব্যুফেতে গিয়ে পিৎজা বা বার্গার অর্ডার দেয়ার সময় কখনো কি খেয়াল করেছেন, রেস্তোরাঁ আর ব্যুফে দুইটাই ফরাসি ভাষার, সাথে পিৎজাও। পিৎজাতে দেয়া মশলাটা আরবি। মশলাতে দেয়া মরিচটা ফারসি!
.
বার্গার কিংবা চপ দুটোই আবার ইংরেজি। কিন্তু চকোলেট আবার মেক্সিকান শব্দ। অর্ডারটা ইংরেজি। যে মেন্যু থেকে অর্ডার করছেন সেটা আবার ফরাসি।
ম্যানেজারকে নগদে টাকা দেয়ার সময় মাথায় রাখবেন, নগদ আরবি, আর ম্যানেজার ইতালিয়ান।
আর যদি দারোয়ানকে বকশিস দেন, দারোয়ান ও তার বকশিস দুটোই ফারসি।
.
এবার চলুন বাজারে, সবজি ফলমূল কিনতে। বাজারটা ফারসি, সবজিও। যে রাস্তা দিয়ে চলছেন সেটাও ফারসি।
ফলমূলের মধ্যে আনারস পর্তুগিজ, আতা কিংবা বাতাবিলেবুও। লিচুটা আবার চীনা, তরমুজটা ফারসি, লেবুটা তুর্কি। পেয়ারা-কামরাঙা দুইটাই পর্তুগিজ। পেয়ারার রঙ সবুজটা কিন্তু ফারসি।
.
ওজন করে আসল দাম দেয়ার সময় মাথায় রাখবেন ওজনটা আরবি, আসল শব্দটাও আসলে আরবি। তবে দাম কিন্তু গ্রিক, আগেই বলেছি।
.
ধর্মকর্মেও একই অবস্থা। মসজিদ আরবি দরগাহ/ঈদগাহ ফারসি। গির্জা কিন্তু পর্তুগিজ, সাথে গির্জার পাদ্রিও। যিশু নিজেই পর্তুগিজ। প্যাগোডা শব্দটা জাপানি। আর, মন্দিরের ঠাকুর হলেন তুর্কি।
.
আর কি বাকি আছে? ও হ্যাঁ। কর্মস্থল! অফিস আদালতে বাবা, স্কুল কলেজে কিন্ডারগার্টেনে সন্তান। বাবা নিজে কিন্তু তুর্কি, যে অফিসে বসে আছেন সেটা ইংরেজি, তবে আদালত আরবি, আদালতের আইন ফারসি, তবে উকিল আরবি।
.
ছেলে যে স্কুলে বা কলেজে পড়ে সেটা ইংরেজি, কিন্তু কিন্ডারগার্টেন আবার জার্মান!
.
স্কুলে পড়ানো বই কেতাব দুইটাই আরবি শব্দ। যে কাগজে এত পড়াশোনা সেটা ফারসি। তবে কলমটা আবার আরবি। রাবার পেনসিল কিন্তু আবার ইংরেজি!
.
পুরো স্ট্যাটাস মনে না থাকলে অন্তত এটা মনে রাখবেন যে, মন শব্দটা আরবি।
.
শব্দের কেচ্ছা-কাহিনি এখানেই খতম। তবে কেচ্ছাটা আরবি, কাহিনিটা হিন্দি, উভয়ের খতমটা আরবিতে। মাফ চাইলামনা বা সরি বললাম না, কারণ মাফটা আরবি আর সরিটা ইংরেজি।😊😊
সংগৃহীত পোস্ট

Friday, April 19, 2024

web 3 details in bangla

ওয়েব ৩.০

ধরুন, আপনি মুভি দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। মুভি শেষ করে কিছু একটা খাবেন। আজকে আপনার কমেডি মুভি দেখার মুড। আর খাবার হতে হবে প্রচণ্ড ঝাল মেক্সিকান কিছু। আপনি কম্পিউটার চালু করে ওয়েব ব্রাউজার খুললেন। প্রয়োজন মত সিনেমা, সিনেমা হল এবং হলের আশেপাশে খাবারের দোকানের খোঁজে গুগল সার্চ করলেন।

আপনার বাসার কাছের সিনেমা হলে কোন মুভি দেখাচ্ছে তা জানতে চান আপনি। কয়েকটি মুভির মধ্য থেকে কোনটি দেখবেন তা ঠিক করার জন্য মুভিগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণী পড়লেন। পাশাপাশি, হলের আশেপাশে কোনো ম্যাক্সিকান রেস্টুরেন্ট আছে কিনা তাও খুঁজে দেখলেন। খাবারপ্রেমীরা এই রেস্টুরেন্ট নিয়ে কী ভাবে তা যাচাই করার জন্য কিছু রিভিউও পড়লেন। সব মিলিয়ে বাইরে বের হবার আগেই আপনি প্রায় হাফ ডজন ওয়েবসাইট দেখে ফেললেন। সব মিলিয়ে আপনার আধা ঘণ্টা থেকে ৪০ মিনিট সময় গেল!

ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পরবর্তী প্রজন্মের ওয়েব অর্থাৎ ওয়েব ৩.০ (থ্রি জিরো), আপনার মুভি দেখা ও খাবার খোঁজার মত কাজকে আরো দ্রুততর ও সহজ করে তুলবে। 

এখনও কোনো কিছু খুঁজতে গেলে আপনাকে অনেক কথা লিখে সার্চ করতে হয়। কিন্তু ওয়েব ৩.০-তে আপনি একটা দুইটা জটিল বাক্য লিখে সার্চ দিলেই হবে, বাকি কাজ ওয়েব ৩.০ নিজেই করে নেবে। 

যেমন আপনি লিখতে পারেন, "আমি একটা কমেডি মুভি দেখতে চাই, তারপর একটা ভাল ম্যাক্সিক্যান রেস্টুরেন্টে খেতে চাই। আমার হাতে কী কী অপশন আছে?" 

ওয়েব ৩.০ ব্রাউজার আপনার প্রশ্ন বিশ্লেষণ করবে, তারপর নিজে নিজেই সার্চ করে সম্ভাব্য সব উত্তর যোগার করবে। এবং ফলাফলগুলিকে সাজিয়ে আপনার সামনে হাজির করবে।

শুধু তাই না, ওয়েব ৩.০ আরও অনেক কিছু করতে পারবে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তাদের মতে ওয়েব ৩.০ একজন ব্যক্তিগত সহকারীর মতই কাজ করবে। আপনি যখন ওয়েব ৩.০ তে কিছু সার্চ করবেন, এটা সেই সার্চ থেকে শিখে রাখবে আপনি কোন কোন বিষয়ে আগ্রহী। 

এই ওয়েব আপনি যত ব্যবহার করবেন, ব্রাউজারটি ততই শিখতে থাকবে। তখন আর আপনাকে খুব বেশি নির্দিষ্ট করে প্রশ্ন করতে হবে না। আসলে তখন শুধু "দুপুরে খাওয়ার জন্য কোথায় যাব?"-এর মত সাধারণ প্রশ্ন করলেই হবে। উত্তর দেয়ার জন্য আপনার ব্রাউজার আপনি কী কী পছন্দ করেন আর কী কী পছন্দ করেন না সেই রেকর্ডগুলি দেখবে, আপনার বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করবে এবং তারপরে একটা রেস্টুরেন্টের তালিকা সাজেস্ট করবে।

ভবিষ্যতে ওয়েব কোথায় যাচ্ছে তা ভালোভাবে বুঝতে, ওয়েব আগে কেমন ছিল, সেটা আমাদের বুঝতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ওয়েবের ইতিহাস ও বিবর্তন।
.

# ওয়েব ৩.০ এর পথ চলা

ইন্টারনেট বিষয়ে যেসব বাজওয়ার্ড ও জারগন বা পরিভাষা সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে, তার মধ্যে সবথেকে পরিচিত শব্দটি সম্ভবত 'ওয়েব ২.০'। শব্দটা অনেকে জানলেও খুব কম মানুষই জানেন এটা দিয়ে আসলে কী বোঝায়। 

কেউ কেউ মনে করেন এটা নেহাতই একটা মার্কেটিং কৌশল। যার উদ্দেশ্য ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট (যারা ঝুঁকিপূর্ণ উদ্যোগে অর্থ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী থাকেন) প্রতিষ্ঠানগুলিকে ওয়েবসাইটে কোটি কোটি অর্থ বিনিয়োগ করতে আকৃষ্ট করা।

তবে এটা ঠিক, ও'রেইলি মিডিয়ার ডেল ডাউটি যখন এই শব্দটি তৈরি করেন তখন এর কোনো সঠিক সংজ্ঞা ছিল না। এমনকি ওয়েব ১.০ বলে আদৌ কিছু আছে কিনা, সে বিষয়েও কোনো নির্দিষ্ট মতামত ছিল না।

আবার অন্যেরা জোর দিয়ে বলছেন যে, ওয়েব ২.০ বাস্তবে আছে। তাহলে বিষয়টা ঠিক কী দাঁড়াল?
.

সংক্ষেপে ওয়েব ২.০ এর বৈশিষ্ট্য:

১. ভিজিটরদের কাছে ওয়েব পেইজ পরিবর্তন করার ক্ষমতা থাকে: অ্যামাজন তাদের ওয়েবসাইটে ভিজিটরদের পণ্যের রিভিউ পোস্ট করতে দেয়। অ্যামাজনের ওয়েবসাইটে অনলাইন ফর্ম ব্যবহার করা যায়। এবং ওয়েব পেইজগুলিতে কোনো ভিজিটর চাইলে যেকোনো তথ্য যোগ করতে পারেন। পরে অন্য ভিজিটররা সেই তথ্য পড়তে পারেন।

২. অন্য ব্যবহারকারীদের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য ওয়েব পেইজ ব্যবহার করা: ফেসবুক ও মাইস্পেস এর মত সামাজিক মাধ্যমগুলি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে কারণ, এগুলির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা একে অপরকে খুঁজে পেতে এবং পরস্পরের সাথে সহজে যোগাযোগ রাখতে পারেন।

৩. কনটেন্ট শেয়ারিংয়ের জন্য দ্রুত ও কার্যকরী উপায়: এর যথার্থ উদাহরণ হচ্ছে ইউটিউব। একজন ব্যবহারকারী ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করতে পারেন এবং তা অন্যদের দেখার জন্য সাইটে আপলোড করতে পারেন মাত্র এক ঘণ্টারও কম সময়ে।

৪. তথ্য পাওয়ার নতুন নতুন পদ্ধতি: ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা কোন ওয়েব পেইজের রিয়েলি সিম্পল সিন্ডিকেশন বা আরএসএস ফিডগুলি সাবস্ক্রাইব করতে পারেন। এর ফলে যতক্ষণ ইন্টারনেট সংযোগ থাকবে, ততক্ষণ ব্যবহারকারী নিয়মিতভাবে এই সাইটের আপডেট পেতে থাকবেন।

৫. কম্পিউটার ছাড়াও ইন্টারনেট অ্যাক্সেস: অনেকেই মোবাইল ফোন ও ভিডিও গেইম ডিভাইসের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন অচিরেই গ্রাহকেরা টেলিভিশন সেট ও বিভিন্ন ধরনের ডিভাইসের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
.

ওয়েব ১.০ কে লাইব্রেরি হিসাবে চিন্তা করুন। তথ্যের উৎস হিসেবে এটা ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু আপনি কোনোভাবেই এখানে তথ্য যোগ করতে বা পরিবর্তন করতে পারবেন না। 

অপরদিকে, ওয়েব ২.০ হল অনেকটা বন্ধু ও পরিচিতদের একটা বড় গ্রুপের মত। এখান থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য যেমন পাবেন, তেমনি কথাও বলতে পারবেন,অন্যদের সাথে অভিজ্ঞতা আরও সুন্দর ও সমৃদ্ধ করতে পারবেন।

ওয়েব ২.০ নিয়ে এখনও অনেক সমালোচনা আছে। তবে ইতিমধ্যেই অনেকে ওয়েবের ভবিষৎ কেমন হবে তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। 

ঠিক তাই। কেমন হবে ওয়েব ৩.০? আমরা আজ যে ওয়েব ব্যবহার করছি তার থেকে কতটা আলাদা হবে সেই ওয়েব? বৈপ্লবিক কোনো পরিবর্তন আসবে, নাকি কোনো সূক্ষ্ম পরির্বতন ঘটবে যেখানে আমরা পার্থক্যগুলি ধরতে পারব না?

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের পরবর্তী প্রজন্ম কেমন হবে বলে মনে করেন ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞরা?
.

# ওয়েব ৩.০

ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ওয়েব ৩.০ হবে এমন, যেন এটা আপনার ব্যক্তিগত সহাকারী, আপনার সম্পর্কে প্রায় সবকিছু জানে। এবং ইন্টারনেটের সকল তথ্য অ্যাক্সেস করে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। অনেকে ওয়েব ৩.০-কে বিশাল কোনো ডেটাবেজের সাথে তুলনা করেন। 

ওয়েব ২.০-তে মূলত ইন্টারনেট ব্যবহার করে মানুষের সাথে মানুষের সংযোগ স্থাপন হয়েছে। আর ওয়েব ৩.০ ইন্টারনেট ব্যবহার করে মানুষের সাথে তথ্যের সংযোগ স্থাপন হবে। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ওয়েব ৩.০ বর্তমান ওয়েবের জায়গা দখল করে নেবে, আবার অনেকে মনে করেন এটা পৃথক কোনো নেটওয়ার্ক হিসাবে থাকবে।

একটা উদাহরণের সাহায্য নিলে এই ধারণাটি বুঝতে সহজ হবে। ধরা যাক আপনি কোথাও ছুটি কাটাতে যাওয়ার কথা ভাবছেন। গরম আবাহাওয়া ও উষ্ণ পানি আছে এমন কোথাও যেতে চান। ভ্রমণের জন্য বাজেট ঠিক করেছেন ২ লক্ষ টাকা। আপনি চান, থাকার জন্য একটা ভাল জায়গা, তা যেন আবার আপনার বাজেটের বাইরে না চলে যায়। অল্প খরচে একটা মানসম্মত ফ্লাইটও আপনি চান।

বর্তমানে ওয়েব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভাল অপশনগুলি খুঁজে বের করতে আপনাকে অনেক গবেষণা করতে হবে। প্রথমে সম্ভাব্য গন্তব্য সম্পর্কে গবেষণা করতে হবে, তারপর এর মধ্য থেকে কোনটা ভাল হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। তারপর আবার এর জন্য দুই বা তিনটা ভ্রমণ সাইট ভিজিট করতে হবে আপনার, একটার সাথে অন্যটার ফ্লাইট ও হোটেল রুমের ভাড়ার তুলনা করতে হবে। বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনের অনেক ফলাফলের পেছনে সময় ব্যয় করতে হবে। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিতে কয়েক ঘণ্টা লাগতে পারে।

কিছু ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়েব ৩.০ এর সাহায্যে আপনি ইন্টারনেটকে দিয়ে নিশ্চিন্তে বসে থেকে সব কাজ করিয়ে নিতে পারবেন। একটা সার্চ সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবেন এবং সার্চের ক্ষেত্র বা পরিসীমা আরো সীমিত করে দিতে পারবেন। এরপরে ব্রাউজারটি তথ্য সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করবে। এমনভাবে করবে যার ফলে ফলাফলগুলি তুলনা করা আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। ওয়েব ৩.০ এতে সক্ষম হবে কারণ এর তথ্য বুঝতে পারার ক্ষমতা থাকবে।

বর্তমানে আপনি যে সকল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করছেন, সেগুলি আসলে আপনার সার্চের বিষয়টা বুঝতে পারে না। সার্চ করার জন্য আপনি যেসব শব্দ টাইপ করছেন, এই সার্চ ইঞ্জিনগুলি কেবল সেই কিওয়ার্ড ধরে ওয়েব পেইজ খোঁজে। ওয়েব পেইজটি চলে এলেও আপনার সার্চের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক কিনা তা এসব সার্চ ইঞ্জিন বুঝতে পারে না। এগুলি শুধু দেখে আপনার সার্চ করা কিওয়ার্ডটি ওয়েব পেইজে উপস্থিত আছে কিনা। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি "স্যাটার্ন" লিখে সার্চ করেন, একটা গ্রহ সম্পর্কে এবং একটা গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি সম্পর্কে ফলাফল পাবেন। অপরদিকে ওয়েব ৩.০ এর কোনো সার্চ ইঞ্জিন আপনার সার্চের কিওয়ার্ডগুলি খুজবে, পাশাপাশি সার্চের “কনটেক্সট”ও বুঝতে পারবে।

ফলে এটা আপনাকে অনেক প্রাসঙ্গিক ফলাফল দেখাবে এবং সার্চ টার্মের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য ফলাফলও দেখাবে। 

ছুটিতে ভ্রমণে যাওয়ার উদাহরণের ক্ষেত্রে, আপনি যদি "২ লাখ টাকার নিচে গ্রীষ্মকালীন ছুটির গন্তব্য" লিখে সার্চ করেন, তাহলে ওয়েব ৩.০ এর ব্রাউজার সার্চ ফলাফলের সাথে সম্পর্কিত মজাদার অ্যাকটিভিটি বা দুর্দান্ত রেস্টুরেন্টের তালিকাও আপনাকে দেখাতে পারবে। যে কোনো প্রশ্নের উত্তরের জন্য এটা পুরো ইন্টারনেটকে, তথ্যের বিশাল ডেটাবেজ হিসাবে বিবেচনা করবে।
.

# ওয়েব ৩.০ কীভাবে এটা করতে পারবে?

ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ঠিক কোন দিকে গড়াবে, তা কেউ’ই জানে না। তবে ওয়েব ৩.০ এর ক্ষেত্রে, বেশিরভাগ ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞই এর সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে একমত। তারা বিশ্বাস করেন, ওয়েব ৩.০ ব্যবহারকারীদের আরও সমৃদ্ধ ও আরো প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা দেবে। 

অনেকে এমনও মনে করেন, ওয়েব ৩.০-তে, প্রত্যেক ব্যবহারকারীর ব্রাউজিং হিস্ট্রির ওপর ভিত্তি করে একটা নিজস্ব ইন্টারনেট প্রোফাইল থাকবে। এই প্রোফাইল ব্যবহার করে ওয়েব ৩.০ সবার ব্রাউজিং অভিজ্ঞতাকে বিশেষ করে তুলবে। অর্থাৎ যদি দু'জন ভিন্ন ব্যক্তি একই সার্ভিস ব্যবহার করে একই কিওয়ার্ড দিয়ে ইন্টারনেট সার্চ করেন, তাহলে তারা পৃথক পৃথক প্রোফাইলের কারণে ভিন্ন ভিন্ন ফলাফল পাবেন।

এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশনের জন্য প্রয়োজনীয় যেসব প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার দরকার সেগুলি এখনও পরিপূর্ণভাবে তৈরি হয়নি। কিছু কোম্পানি যদিও ব্যবহারকারীদের ইনপুটের ওপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগতকৃত কন্টেন্ট সরবরাহ করছে, এগুলি এখনও মূলত ট্রায়াল-এবং-এরর পদ্ধতিতে কাজ করে। ফলে এসব ওয়েব ৩.০ এর মত অতটা কার্যকর না। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এসব সার্ভিস মূলত সীমিত পরিসরে, যেমন টেলিভিশন শো ও গান ইত্যাদি ক্ষেত্রে কাজ করে। অপরদিকে ওয়েব ৩.০ ইন্টারনেটের সমস্ত তথ্য নিয়ে কাজ করবে।

কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন ওয়েব ৩.০ এর ভিত্তি হবে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই)৷ এপিআই হল এমন ইন্টারফেস যা ডেভেলপারদের নির্দিষ্ট কিছু রিসোর্স ব্যবহার করে অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে দেয়। ওয়েব ২.০ এর অনেক সাইটে এপিআই রয়েছে। এর ফলে প্রোগ্রামাররা সাইটগুলির নিজস্ব ডেটা ব্যবহার করতে পারে। উদাহরণস্বরুপ, ফেসবুকের এপিআই ব্যবহার করে ডেভেলপাররা বিভিন্ন গেম, কুইজ ইত্যাদি তৈরি করতে পারে।

ওয়েব ২.০ এর একটা ট্রেন্ড ওয়েব ৩.০ এর উন্নয়নে সাহায্য করতে পারে। সেই ট্রেন্ডটি হলো ম্যাশআপ। ম্যাশআপ বলতে দুই বা ততধিক অ্যাপ্লিকেশনকে একটা অ্যাপ্লিকেশনে একত্রীকরণ বোঝায়। 

উদাহরণস্বরুপ, একজন ডেভেলপার এমন প্রোগ্রাম বানাতে পারেন যেখানে ব্যবহারকারীরা গুগল ম্যাপে রেস্টুরেন্ট রিভিউ করতে পারবেন। এই নতুন ম্যাশআপ অ্যাপ্লিকেশন কেবল রেস্টুরেন্টের রিভিউ’ই দেখাবে না, পাশাপাশি গুগল ম্যাপে ব্যবহারকারীদের রেস্টুরেন্টের অবস্থানও দেখাবে। কিছু ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ওয়েব ৩.০-এ ম্যাশআপ তৈরি করা বেশ সহজ হবে, ফলে যে কেউ এটা করতে পারবে।

অন্যান্যরা মনে করেন ওয়েব ৩.০-কে একেবারে নতুন ভাবে শুরু করতে হবে। ওয়েব ২.০ এর মত বেসিক কোডিং ভাষা হিসাবে এটা এইচটিওএমএল ব্যবহার করবে না। পরিবর্তে এটা নতুন কোনো (এখনও নামহীন) ভাষার ওপর নির্ভর করবে। 

বর্তমান ওয়েব পরিবর্তন করার চেষ্টা না করে নতুন করে শুরু করাই বরং সহজ হতে পারে। যাইহোক, ওয়েব ৩.০ এর এই সংস্করণটি এতই থিওরিটিক্যাল যে এটা ঠিক কীভাবে কাজ করবে তা বলা এখনও অসম্ভব।

ওয়েব ৩.০ যতটা না বাস্তব তার থেকে বেশি তাত্ত্বিক। তারপরেও ওয়েবের দূরবর্তী ভবিষ্যৎ কী হবে তা অনুমান করা থেকে মানুষ বিরত থাকেনি।
.

# ওয়েব ৩.০ ছাড়িয়ে

ওয়েবের পরবর্তী প্রজন্মের পরে কী আসবে? অনেক রকম তত্ত্বই আছে। কিছু রক্ষণশীল ভবিষ্যদ্বাণী, আর কিছু শুনলে মনে হবে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিভিত্তিক চলচ্চিত্রের মত। এখানে তার কয়েকটি থাকছে:

১. প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তা নোভা স্পিভাকের মতে, ১০ বছর পরপর ওয়েবের বড় ধরনের উন্নতি হয়। ওয়েব উদ্ভাবনের প্রথম দশকে, বেশিরভাগ উন্নয়ন ওয়েবের অবকাঠামোর দিকে ঘটেছে। তখনকার প্রোগ্রামাররা বিভিন্ন ধরনের প্রটোকল ও কোডিং ভাষা তৈরি করেছিলেন। 

দ্বিতীয় দশকে, প্রোগ্রামারদের মনোযোগ ওয়েবের অবকাঠামো থেকে সরে যায় এবং ওয়েব ২.০ যুগ শুরু হয়। এখন মানুষ অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশনের প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ওয়েব পেইজ ব্যবহার করতে পারে। তারা এখন ম্যাশআপ তৈরি করে, এবং ওয়েব অভিজ্ঞতা আরও ইন্টারেকটিভ করার নানা উপায় নিয়ে পরীক্ষা করে। আমরা এখন ওয়েব ২.০-এর শেষ দিকে আছি। 

পরবর্তী ধাপ হল ওয়েব ৩.০। এক্ষেত্রে লক্ষ্য বা ফোকাস আবারও ফিরে যাবে পেছনের দিকে। প্রোগ্রামাররা ওয়েব ৩.০-এর ব্যবহার উপযোগী করে ইন্টারনেটের অবকাঠামোকে পরিশীলিত করবে। এই পর্যায়টি আবার যখন শেষ হবে, আমরা ওয়েব ৪.০ যুগে প্রবেশ করব। ফোকাস আবারও ফিরে আসবে ওয়েবের ভেতরে। ঠিক যেভাবে ওয়েব ২.০-কে ভিত্তি করে ওয়েব ৩.০ গড়ে উঠবে, সেভাবেই ওয়েব ৩.০-কে ভিত্তি করে গড়ে উঠবে ওয়েব ৪.০। আমরা দেখা পাব হাজার হাজার নতুন প্রোগ্রামের।

২. ওয়েব একটা ত্রি-মাত্রিক পরিবেশে রূপান্তরিত হবে। ওয়েব ৩.০ এর পরিবর্তে, আমরা ওয়েব থ্রিডি দেখতে পাব। মাল্টিপ্লেয়ারভিত্তিক অনলাইন রোলপ্লেয়িং গেমগুলির (MMORPGs) স্থায়ী অনলাইন জগতের সাথে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির উপাদান একত্রিত হবে। এর ফলে ওয়েব এমন একটা ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপে পরিণত হতে পারে যা হবে অত্যন্ত গভীর। আপনি ওয়েবটি হয়ত ফার্স্ট-পারসন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবহার করবেন অথবা নিজের একটা ডিজিটাল সত্তা অর্থাৎ অ্যাভাটারের মাধ্যমে ব্যবহার করবেন।

৩. ওয়েব হয়ত ডিস্ট্রিবিউটেড কম্পিউটিং বা ছড়িয়ে দেওয়া কম্পিউটিংয়ের উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে। এর ফলে সত্যিকারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করা সম্ভব হবে। ডিস্ট্রিবিউটেড কম্পিউটিং হল এমন পদ্ধতি, যেখানে কয়েকটি কম্পিউটার একসাথে কোনো বৃহৎ কাজ প্রক্রিয়া করে। প্রতিটি কম্পিউটার সামগ্রিক কাজের একটা ছোট্ট অংশ পরিচালনা করে। 

কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, ওয়েব একসময় চিন্তা করতে পারবে। হাজার হাজার কম্পিউটার নিয়ে ওয়েব একটা বিশাল মস্তিষ্কে পরিণত হবে। অসীম ডেটা বিশ্লেষণ করবে এবং সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নতুন ধারণাগুলি ব্যাখ্যা করতে পারবে।

৪. কম্পিউটার ও সেল ফোনের সীমানা ছাড়িয়ে ওয়েবের পরিসর আরও বিস্তৃত হবে। ঘড়ি থেকে শুরু করে টেলিভিশন সেট, এমনকি পোশাক, আসলে সবকিছুই ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হবে। ব্যবহারকারীদের ওয়েবের সাথে একটা স্থায়ী সংযোগ থাকবে। এর বিপরীতে ওয়েবও ব্যবহারকারীদের সাথে সবসময় যুক্ত থাকবে।

ওয়েবের এই ভবিষ্যৎ সংস্করণগুলির মধ্যে কোনটা যে বাস্তবে রূপ লাভ করবে তা বলার মত সময় এখনও আসেনি। এমনকি এও সম্ভব যে ওয়েবের প্রকৃত ভবিষ্যৎ সবচেয়ে বেমি যে প্রত্যাশা  তার থেকেও অনেক বেশি মাত্রায় বিলাসবহুল হবে। 

আমরা কেবল এখন আশা করতে পারি, ওয়েবের সেই ভবিষ্যৎ যখন আসবে, সবাই যেন এটাকে নির্দিষ্ট কোনো নামে ডাকতে একমত হই।

#ইন্টারনেট #ভবিষ্যৎ #ওয়েবথ্রি
Collected from internet

Monday, April 15, 2024

আর্টে স্কেলিং একটা খুব বড় ইস্যু।

আর্টে স্কেলিং একটা খুব বড় ইস্যু।
 
একই আর্ট যেটা ছোটো ফর্মে অনবদ্য লাগে - খুব বড় হলে খাপছাড়া লাগে। রেনেসাঁ পিরিয়ডে দেখবেন যেগুলো মিউজিয়াম সাইজের বিশাল অল্টারপিস কিংবা ফ্রেস্কো - সেখানে নেগেটিভ স্পেইস নাই বললেই চলে কিন্তু পোর্ট্রেইটে ফর্মে তা অহরহ আছে। এর কারণ লার্জ ফরমেটে আর্টওয়ার্ক খুবই ভিন্ন চরিত্র ধারণ করে। সেখানে ড্রামা লাগে, গল্প লাগে - যেটা ছোটো ফর্মে না হলেও হয়। আপনি আর্কিটেকচারাল ড্রয়িং কিংবা পেইন্টিং যদি খুব লার্জ ফরমেটে করেন - দেখবেন যে সেটা বোরিং লাগছে কিন্তু  ছোটো/মাঝারি ফরমেটে বোরিং লাগে না।
 
মুঘল মিনিয়েচার পেইন্টিং সামান্য একটু  বড় করলেও আর্টিস্টিক ভ্যালু লুজ করে। কারণ গোয়াশ পেইন্টিংয়ের যে কোনো ডেপথ নাই - এইটা ছোটো ফর্মে খারাপ লাগে না কিন্তু বড়ো ফর্মে খারাপ লাগে। তাছাড়া মিনিয়েচার আর্ট ফর্ম, দর্শক কোন ডিস্টেন্স থেকে দেখবে (২ ফিট) - এটা ডিক্টেট করতে পারে। লার্জ ফরমেটে গেলে এর কোনো গ্যারান্টি নাই। আপনি ৩০ ফিট দূর থেকে দেখতে পারেন আবার ৮ ফিট দূর থেকেও দেখতে পারেন।  ফলে মিনিয়েচার ফর্মে একটা কালার আরেকটা কালারের সাথে মেলে (যেমন চুল ও স্কিন) - সেই ট্রানজিশানের জায়গাটায় একটা ম্যাজিক হয় - চোখ আটকে যায়। লার্জ ফরমেটে গেলেই ওই ম্যাজিকটা চলে যাবে এবং আপনার চোখে সব ভুল ধরা পড়বে।
 
মুঘল কিংবা ইসলামিক আর্টে নেগেটিভ স্পেইসে কোনো ড্রামা নাই। তাই তারা ওখানে ফুল-লতা-পাতা টাইপ ডিজাইন এলিমেন্ট দেয় - সোনা দিয়ে পেইন্ট করে। য়োরোপীয়ানরা এই সমস্যাটা ধরতে পারে। তাদের লার্জ ফরমেট পেইন্টাররা আসলে আর্টিস্ট কম - ফিল্ম ডিরেক্টর বেশী। তাদের প্রতিটা পেইন্টিং এ খুব ডিটেইল গল্প আছে। সেখানে এক্সিডেন্টালি একটা ব্রাশ স্ট্রোকও নাই। পুরাটাই প্ল্যান করা। তারা বুঝতে পারে যে একটা যে একটা A4 সাইজে নেগেটিভ স্পেইস আর ২০ ফিট সাইজের অল্টার পিসে নেগেটিভ স্পেইস পুরাপুরি আলাদা জিনিস।
 
আপনারা যারা আল্পনা আঁকেন তাদের প্রতি আমার পরামর্শ হোলো আল্পনা সুন্দর একটা আর্ট-ফর্ম কিন্তু এটা শুধুমাত্র ছোটো জায়গায় কাজ করে। কারণ যেকোনো রেপেটেটিভ ডিজাইন - একজন দর্শককে পুরোটা এক সাথে দেখতে হবে। এই যে রাস্তায় আল্পনা আঁকেন - এর সমস্যা হোলো আপনি দর্শকের চোখকে একটা জায়গায় ফিক্স করতে পারবেন না। যেকোনো ডিজাইন এলিমেন্ট - যদি দর্শক অন্য স্পেইসের সাপেক্ষে ডিজাইন এলিমেন্টটাকে দেখে (যেমন রাস্তার ড্রেন ও আল্পনা - আপনি একই সাথে দেখেন) - সেটা নির্ঘাত বিশ্রী লাগবে। ডিজাইন এলিমেন্টের মধ্যে একটা সম্পূর্ণতা থাকতে হবে যেইটা আপনি রাস্তায় আল্পনা আঁকলে এচিভ করতে পারবেন না। আপনার চোখ সামনে চলে যাচ্ছে কিন্তু আল্পনা শেষ হচ্ছে না।
 
তাছাড়া মানুষের চোখ ৩ লক্ষ বছর ধরে প্রসেস করছে যে দাঁড়ানো অবস্থায় সামনে তাকালে আই লেভেলের নীচের দিকে হোলো বিপদ (ঘাসের মধ্যে এপেক্স প্রেডেটর লুকিয়ে আছে যে আপনাকে ধরে খেয়ে ফেলবে) - আর আই লেভেলের উপরের দিকে হোলো আকাশ। দেখেন যে আকাশ হোলো সব ভালো জিনিসের খনি। আল্লাহ থাকেন আকাশে, বৃষ্টি আকাশে, ভাগ্য নিয়ন্ত্রক গ্রহ-নক্ষত্র আকাশে। আপনার আই লেভেলের ওপরে হোলো শান্তি আর নীচে বিপদ। আর্টিস্ট হিসাবে আপনি যদি কোনো আর্টওয়ার্ককে মানুষের এই স্বাভাবিক আই লেভেলের নীচের দিকে রাস্তায় কিংবা ফ্লোরে ফিক্স করেন (মানে মাথা নীচু করে দেখতে হয়) - মানুষ এই আর্টওয়ার্ক সাধারণত এপ্রিসিয়েট করে না বলে আমার অনুমান। মিউজিয়ামে মহান আর্ট সব সময় দিগন্ত থেকে একটু ওপরের আই লেভেলে রাখা হয়।
 
যেকোনো অবজেক্ট বা ইভেন্ট বা আর্টওয়ার্ক - আপনি যদি আপনার চোখ সামান্য উপরে না উঠিয়ে দেখেন - আমার অনুমান হোলো মানুষ এর সাথে ট্রানসেন্ডেন্স এর আইডিয়া যুক্ত করতে পারে না। ফলে সেটা মহত্ব অর্জন করতে পারে না।
 
আই লেভেলের নীচের দিকে কোনোদিনও আর্টওয়ার্ক প্লেইস করেন না। এইটা একটা ফান্ডামেন্টালি ব্যাড আইডিয়া। খুব লম্বা রাস্তায় আল্পনা আগলি বা নিদেন - আন্ডারওয়েলমিং ও বাংলামিজনক হতে বাধ্য।
Collected

Sunday, April 14, 2024

ঘসেটি বেগমের ঢাকার দিনগুলো এবং বেঈমানীর অনুশোচনা

ঘসেটি বেগমের ঢাকার দিনগুলো এবং বেঈমানীর অনুশোচনা।

নবাব সিরাজউদ্দৌলার পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের পেছনে দায়ী তাঁর সেনাপতি মীর জাফর ও খালা ঘসেটি বেগম। ঘসেটি বেগমের জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছে ঢাকার কেরানীগঞ্জে অবস্থিত জিঞ্জিরা প্রাসাদে। ঘসেটি বেগম ইতিহাসবিদদের মনোযোগ তেমন পাননি, যে কারণে তার ঢাকা জীবন সম্পর্কে তেমন তথ্য পাওয়া যায় না।

ঘসেটি বেগম দেখতে কেমন ছিল তার সচিত্র উল্লেখ তেমন নেই। 'আমি সিরাজের বেগম' গ্রন্থে সিরাজের স্ত্রী লুৎফার বয়ানে তাকে 'সুন্দরী, চতুর, আভিজাত্যপূর্ণ, বদমেজাজি ও উচ্চাভিলাষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পলাশী যুদ্ধের পর তিনি নিজেও শিকার হয়েছেন প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের। মীর জাফর নবাব হয়ে ঘসেটি বেগমকে বন্দি করেন। কিছুদিন হীরাঝিলে রেখে ঢাকার জিঞ্জিরা প্রাসাদে স্থানান্তর করেন। সেখানে তার সঙ্গে সিরাজের মা, স্ত্রী, কন্যাসহ অনেকজন নারীকেই রাখা হয়। ১৭৬০ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এখানেই বন্দি ছিলেন ঘসেটি বেগম।

তার মৃত্যু নিয়ে দুই রকম তথ্য প্রচলিত। কোথাও বলা হয়, মুর্শিদাবাদে ফিরিয়ে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়, তার কবরও সেখানেই। বাংলাপিডিয়া মতে, ১৭৬০ সালে মীর জাফরের ছেলে মীরনের পরিকল্পনায় ঘসেটি বেগম ও আমিনাকে মুর্শিদাবাদে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলে, বুড়িগঙ্গায় একটি বজরায় তুলে যাত্রা শুরুর কিছু পরে মাঝনদীতে বজরাটি ডুবিয়ে দেয়া হয়।

তার আসল নাম মেহের-উন-নিসা বেগম। তিনি আলীবর্দী খানের তিন মেয়ের মধ্যে প্রথম। তার বিয়ে হয় চাচাতো ভাই নওয়াজিস মুহাম্মদ শাহমাত জং এর সঙ্গে, যিনি ঢাকার নায়েবে নাজিম ছিলেন। আলীবর্দী খানের প্রাসাদে তিনি এত প্রভাবশালী ছিলেন যে আলীবর্দী খানের তিন মেয়ের মধ্যে একমাত্র তারই আলাদা প্রাসাদ ছিল। হীরাঝিলের মতোই প্রাসাদের নাম ছিল মতিঝিল। তার ছিল রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা, প্রবল ব্যক্তিত্ব এবং রাজনৈতিক প্রভাব।

আলীবর্দী খানের কোন ছেলে ছিল না। তিনি ছোট মেয়ে আমিনার বড় ছেলে সিরাজউদ্দৌলাকে তাঁর উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। কিন্তু ঘসেটি চেয়েছিলেন তাঁর পালকপুত্র এবং সিরাজের ভাই ইকরামউদ্দৌলাকে যিনি অল্প বয়সে গুটিবসন্তে মারা যান, তাঁরা সিংহাসনে বসুক। পরে তিনি মেজবোনের ছেলে শওকত জং কে সিংহাসনে বসাতে চেষ্টা করেন। উত্তরাধিকার বিষয়ে তাঁর মতামত গুরুত্ব না পেলেও বড় মেয়ে হিসেবে আলীবর্দী খানের কাছে তিনি গুরুত্ব পেতেন। তাঁর সুপারিশে কেউ পদ হারিয়েছে, কেউ ক্ষমতার কেন্দ্রে এসেছে। ১৭৫৫ সালে স্বামীর মৃত্যু হলে তিনি প্রচুর অর্থের মালিক হন। তাঁর স্বামী ঢাকার নায়েবে নাজিম থাকলেও ঢাকা পরিচালনা করতেন তিনি। ঢাকার শাসনভার ছিল প্রকৃতপক্ষে ঘসেটি বেগম ও বিশ্বস্ত দেওয়ান, অনেকের মতে প্রণয়ী, হোসেন কুলি খানের হাতে। কারণ নওয়াজিস ছিলেন দুর্বল প্রকৃতির লোক।

সিরাজউদ্দৌলার সেনাপতি মীর জাফর ছিলেন আলীবর্দী খানের সেনাপতি। তরুণ নবাবের সঙ্গে ব্যক্তিত্বের সংঘাতে তাঁকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে নামে সে। সঙ্গে যোগ দেয় ঘসেটি বেগম, ব্যবসায়ী জগৎ শেঠ ও উমিচাঁদ। সবারই ছিল অভিন্ন উদ্দেশ্য, নবাবকে উৎখাত। অবশেষে ১৭৫৭ এর ২৩শে জুন পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে হেরে যান সিরাজউদ্দৌলা।

শ্রী পারাবাতের লেখা 'আমি সিরাজের বেগম' গ্রন্থে বলা হয়, পলাশীর যুদ্ধ শেষ হওয়ার খবর মুর্শিদাবাদে পৌঁছার পরই ঘসেটি বেগম 'নিজের ভুল' বুঝতে পারেন। পরাজিত নবাব তখনও হীরাঝিলে এসে পৌঁছাননি। সে সময় ঘসেটি বেগম নবাব-পত্নী লুৎফাকে সতর্ক করেছিলেন, 'যেভাবে, যে পথেই তাঁরা যেন পালিয়ে যান, যেন নদীপথে তাঁরা না যান।' লুৎফার প্রথমবারের মত ঘসেটি বেগমের চোখে মাতৃত্বের ছায়া দেখেছিলেন। তাঁর বয়ানে তিনি বলছেন, 'হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন ঘসেটি বেগম'।

তথ্যসূত্র:
ক। বাংলাপিডিয়া 
খ। আমি সিরাজের বেগম, শ্রী পারাবাত।
গ। ঢাকা: স্মৃতি-বিস্মৃতির নগরী, মুনতাসীর মামুন। 
ঘ। বিবিসি বাংলা।
ঙ। ছবি: বৃটিশ লাইব্রেরির সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত ঘসেটি বেগমের প্রতিকৃতি (উইকিপিডিয়া)
কার্টেসীঃ ‌ঋষণা রূপকথা-The First Myth

Wednesday, April 10, 2024

আবোল তাবোল

প্যারিসের এক রেস্তোরাঁয় একবার এক সুন্দরী ভদ্রমহিলা এক স্প্যানিশ চিত্রশিল্পীকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন- উনি কি ১ মিনিটে তার ছবি এঁকে দিতে পারবে ?
সেই চিত্রশিল্পী ছবিটি আঁকার জন্য সময় নিলেন মাত্র ৩০ সেকেন্ড। সেই ভদ্রোহিলা ছবিটি নিয়ে যেতে চাইলে চিত্রশিল্পী সেটার মূল্য চাইলেন (যেটা স্বাভবিকের চেয়ে একটু বেশী মনে হচ্ছিল)।
মহিলাটি চমকে জিজ্ঞেস করলো- তুমি ৩০ সেকেন্ডের জন্য এতো টাকা চাইছ ?
সেই চিত্রশিল্পী জবাবে বলেন- ৩০ সেকেন্ডের কাজটার জন্য আমাকে ৩০ বছর সাধনা করতে হয়েছে। সেই সময়ের মূল্য কত হতে পারে?

###

ভুমিষ্ঠ হওয়ার পর ধাত্রী ভেবেছিলেন মৃতশিশুর জন্ম হয়েছে। এই কারণে ধাত্রী শিশুটিকে একটি টেবিলের উপর রেখে মায়ের সেবা-শুশ্রুষায় ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় শিশুটিকে টেবিলের উপর নিথর হয়ে পরে থাকতে দেখে তার কাকা এগিয়ে আসেন এবং তার মুখে থাকা সিগারেটের ধোঁয়া শিশুটির মুখে নিক্ষেপ করা মাত্রই শিশুটি নড়াচড়া দিয়ে উঠে। তার মা জানিয়েছেন শিশুকালে তার মুখে প্রথম উচ্চারিত শব্দ ছিল ‘পিজ’ ‘পিজ’! ‘পিজ’ আসলে ‘লাপিজ’ শব্দের শিশুতোষ সংক্ষিপ্ত উচ্চারণ। ‘লাপিজ’ অর্থ পেনসিল।

###

তাঁর খ্যাতিতে সবচেয়ে অবাক হয়েছিল তাঁর শিক্ষক, কারণ উনি তাঁকে মাত্র ১০ বছর বয়সে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছিলেন | কারন সেই ছাত্র বর্ণমালার কোনও অক্ষর মনে রাখতে পারত না,  ৭ কে বলতেন উল্টো নাক !

###

স্পেন ছেড়ে যখন তিনি ফ্রান্সে আসেন তখন তাঁর পরনে ছিল স্পেনের গ্রাম্য পোশাক, শ্রমিকের। মুখে গ্রাম্য ভাষা। সারা জীবন তিনি তা ত্যাগ করেননি | চুল কাটাতে কখনও তিনি বাড়ির বাইরে যেতেন না। নিজেই নিজের চুল কাটতেন, দাড়ি কাটতেন, নখ কাটতেন। কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের দিয়ে কাটিয়ে নিতেন। কারণ তাঁর স্প্যনিশ সংস্কার।এমন কি শেষ জীবনে বাড়িতে এসে একজন নাপিত তাঁর চুল, দাঁড়ি, নখ কেটে দিয়ে যেত l

তাঁর আচার-আচরনেও স্প্যানিশ রীতিনীতিই প্রকট হয়ে উঠত। একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ওলট-পালট করা শিল্পীর এইসব ব্যাপার-স্যাপার একেবারে অস্বাভাবিক না হলেও নজরে পড়ত। তিনি নিজেও বলতেন— ‘আমার শিল্পের প্রাথমিক প্রেরণা আমার গ্রাম এবং দেশের মানুষ।’

###

স্পেনের দুঃশাসক ফ্রাঙ্কোর দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সবসময়ই সরব ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে সোভিয়েত ইউনিয়নে যাবার জন্যে ফ্রাঙ্কো-সরকারের ছাড়পত্র নিতে হবে বলে তিনি আর সেখানে যাননি। উল্টো তিনি ফ্রাঙ্কোর শাসনকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘ফ্রাঙ্কোর কাছ থেকে কাগজ নেবার মতো ঘৃণ্য কাজ আমি করতে পারি না।' এমনই প্রতিবাদী ও নির্ভীক ছিলেন তিনি |

###

গোয়ের্নিকা, উত্তর স্পেনের শহরতলি। তখন স্পেনের গৃহযুদ্ধ চলছে। জার্মান বাহিনী বোমা ফেলল ছোট্ট শহরটির ওপর। চারদিকে ধ্বংসের ছবি। আর ধ্বংসের সেই ভয়াবহ চেহারা নিয়ে নিজের স্টুডিওতে ছবি আঁকা শুরু করলেন একজন শিল্পী। শোনা যায়, ছবির কাজ চলার সময় আচমকাই স্টুডিওতে হানা দেয় জার্মানরা। ছবি দেখিয়ে তারা প্রশ্ন করে, ‘কে করেছে?’ উত্তরও ছিটকে আসে, ‘তোমরা।’

চারদিকে ধ্বংসচিত্র, মানুষ চিৎকার করছে, এক মা আলো নিয়ে এগিয়ে আসছেন, কিউবিস্ট ধাঁচ ছবি জুড়ে। এটা তৈরির আগে ছবির মধ্যের বিভিন্ন এক্সপ্রেশনগুলোকে নিয়ে প্রায় দুশোর মতো স্কেচ করেছিলেন পিকাসো। তার অমর সৃষ্টিকর্ম ‘গোয়ের্নিকার’ সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

এ ‘গোয়ের্নিকা’ সৃষ্টি হয়েছে যার হাতে তিনি আর কেউ নন, তিনি পাবলো পিকাসো। 

দক্ষিন ফ্রান্সে থাকার সময় একবার পিকাসোর বন্ধুরা তাঁর বাড়িতে খেতে এসে দেখলো পিকাসোর ঘরে তাঁর নিজের আঁকা কোনও ছবি নেই। বন্ধুদের একজন জিজ্ঞাসা করলো, "তোমার আঁকা কোনও ছবি নেই কেন পাবলো, তুমি কি তোমার ছবি পছন্দ কর না?"

পিকাসোর জবাব, "বরং উল্টোটাই সত্য, আমি অনেক পছন্দ করি, কিন্তু পিকাসোর আঁকা ছবিগুলোর অনেক দাম, আমার কেনার সামর্থ নাই"।

তিনি এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন যে, একটা সময়  ছবি আঁকার জন্যে রং কেনার পয়সা ছিল না তার। পিকাসো তখন শুধু নীল রং দিয়েই ছবি আঁকতেন। তার এ সময়কে বলা হয় ‘ব্লু পিরিয়ড’। পিকাসো বলতেন, ‘আমার আবেগ কোনো রঙের অপেক্ষায় থাকে না। আমার যখন হলুদ রঙ থাকে না, তখন শুধু নীলেই আঁকতে পারি।’ মূলত নীল রঙে আঁকা পিকাসোর ছবিগুলো ধারণ করেছিল অন্য এক প্যারিসকে। 

পাবলো পিকাসো তখন দারুণ জনপ্রিয় চিত্রশিল্পী। একদিন চার্লি চ্যাপলিন গেলেন পিকাসোর সঙ্গে দেখা করতে। বললেন, ‘আপনি কী করে ছবি আঁকেন, দেখতে এলাম।’

পিকাসো সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়ে চার্লি চ্যাপলিনকে নিয়ে গেলেন তার স্টুডিওর মধ্যে। সেখানে তিনি একটা ছবি আঁকতে ব্যস্ত ছিলেন। চ্যাপলিন দাঁড়িয়ে আছেন আর পিকাসো নিমগ্ন হয়ে ছবি আঁকছেন। হঠাৎ তুলি থেকে খানিকটা রং ছিটকে গিয়ে পড়ল চার্লি চ্যাপলিনের সাদা জামায়। পিকাসো আঁতকে উঠে বললেন, ‘ওহ্, আমি খুবই দুঃখিত চার্লি! দাঁড়াও, আমি এক্ষুনি স্পিরিট নিয়ে এসে রংটা মুছে দিচ্ছি।’

চ্যাপলিন একবার তার জামাটার দিকে তাকান, তারপর হাসতে হাসতে বলেন, ‘কোনো দরকার নেই, তার চেয়ে আপনি বরং আমার প্যান্টের ওপর একটা সই দিয়ে দিন।’

পিকাসো ছিলেন সব রকম নির্যাতনের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠিত ধারনার বিরুদ্ধে। তবে ওই যে বলা হয়, তিনি ভেঙেছেন কেবল— এটা ঠিক না। যা কিছু ভেঙেছেন, তা গড়ার জন্যই। ভাঙার আনন্দে কোনও কিছু তিনি ভাঙেননি।

পাবলো পিকাসো, পৃথিবী যার আঁকার ক্যানভাস |

''শিল্পকলার উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্মা থেকে দৈনন্দিন জীবনের ধুলা দূর করা ।'' - পাবলো পিকাসো 

collected

Monday, April 8, 2024

প্রেম শুধু কবিতায় সুন্দর

প্রেম  শুধু কবিতায় সুন্দর, 
যে আকাশের কথা বললেন, 
সে আকাশে খুব শিঘ্রই মেঘ জমবে, 
অন্ধকার দেখবেন, , 
সন্ধ্যা না হওয়া সত্তেও সুর্য গ্রহনের মত অন্ধকার,  
ভালবাসা বিরহেই সুন্দর। 
যখন তাকে দেখি তার থেকে বেশি দেখি যখন তাকে না দেখি, এ অনুভুতি আজীবন থাকবে, , 
আপনি তার হয়ে গেলে দেখবেন, সে আর আপনার নেই, 
আপনি তাকে পেয়ে গেলে দেখবেন , সে আর আগের মতন নেই। , , 
আরো বলার ছিলো, , কিন্তু সব বললে বলার আফসোস টুকু ও থাকবে না,  থাকুক না সেই আফসোস টুকু, , 
ভালবাসা সুন্দর,  তবে মিলনের উলটো পিঠে।

Saturday, April 6, 2024

আসুন কিছু আদব-লেহাজ শিখি.....

আসুন কিছু আদব-লেহাজ শিখি..... 

একত্রে বসে খাওয়ার কিছু আদব লেহাজ: 

১. যে পাত্র থেকে সবাই খাবার নিচ্ছে ( খিচুড়ি বা মুড়ি মাখা),  তার উপর ঝুঁকে খাবার নেওয়া যাবে না, মুখ থাকবে মুখের জায়গায় - হাতে খাবার নিয়ে হাতটাকে মুখের কাছে নিতে হবে।  

২. হাতে থেকে যাওয়া অতিরিক্ত খাবার যা একেবারে মুখে ঢুকানো যায়নি তা ঝাড়া মেরে প্লেটে ফেলে দেওয়া যাবে না,  হাতে ধরে রাখতে হবে তারপর মুখের খাবার শেষ হলে বাকিটুকু মুখে দিতে হবে। 

৩. হাতে নেওয়া সমস্ত খাবার মুখে দিয়েছেন,  এখন হাত কোথায় রাখবেন? অনেকে মুখে খাবার খাচ্ছেন আর খালি হাতটা সম্মিলিত খাবারের পাত্রে রেখে দিচ্ছেন,  এটা করা যাবে না।  হাত নিজের কাছে রাখতে হবে। 

৪. কিছুক্ষণ পরপর সকলের অনুমতি না নিয়ে নিজের ইচ্ছেতেই "ভালো করে মিশানো" র অজুহাতে খাবার উলট পালট করা যাবে না। 

৫. সকলের অনুমতি না নিয়ে নিজের পছন্দমতো এডিশনাল ফুড ( মুড়ি মাখার ক্ষেত্রে বুন্দিয়া বা পুদিনা পাতা,  খিচুড়ির ক্ষেত্রে লাউয়ের ঝোল)  ফট করে পাত্রে ঢেলে দেওয়া যাবে না। 

৬. আপনি যেদিক দিয়ে খাচ্ছেন সেদিকে যা আছে তাই খাবেন,  আরেকজনের দিক থেকে বারবার পিয়াজুর পার্ট বা মাংসের টুকরো নিবেন না। 

৭. সবাই যে আইটেম খাচ্ছে সেটাই খেতে হবে।  সবাই যখন করলা ভাজি খাচ্ছে তখন আপনি "করলা ভাজি খাই না" বলে তড়িঘড়ি করে রোস্টের বড় পিচটা নিয়ে নিবেন - এটা ঠিক হবে না।  অপেক্ষা করুন - করলা ভাজি দিয়ে সবার খাওয়া শেষ হোক। 

৮. হোস্ট  একজনকে খাবার সার্ভ করছে,  তাকে সিরিয়ালি তা করতে দিন।  মাঝখান থেকে সিরিয়াল ব্রেক করে আপনার দিকে ডাকবেন না তাকে। 

৯. নিজের খাবারের দিকে তাকিয়ে থাকুন, অন্যদের পাতের দিকে ঘনঘন তাকাবেন না। 

১০. যে হাতে খাবার খাচ্ছেন -  ঐ হাতে চামচ, প্লেট, গ্লাস ইত্যাদি ধরবেন না। 

১১. খাওয়ার সময় ঢেঁকুর পারবেন না,  কোঁৎ কোঁৎ শব্দ করবেন না। 

১২. হুট করে নিজের পাতের খাবার আরেকজনের পাতে দিয়ে দিবেন না।  আপনি সিদ্ধ ডিম না খেয়ে একটা মাংসের পিচ বেশি খাবেন বা জিলিপি না খেয়ে আলুর চপ খাবেন বাড়তি তাই বলে জিলিপি বা সেদ্ধ ডিম পাশেরজনের পাতে দিয়ে দিবেন না - আপনার মতো সেইম চিন্তা তারও থাকতে পারে। 

১৩. যতটুকু খেতে পারবেন ততটুকুই পাতে নিবেন।  খাবারের দখল নেওয়ার অপচেষ্টা চালাবেন না। মুখে অল্প করে খাবার নিবেন,  খাবার মুখে ঢোকানোর পর দুই গাল যাতে দৃষ্টিকটু ভাবে  ফুলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।  

১৪. খাবারের শেষে দই বা ডাল আছে কিনা জিজ্ঞেস করবেন না ; সেটা নাই ধরে খাওয়া চালাতে থাকবেন। 

১৫. হোস্ট আপনার সামনে টিস্যু রাখবে কিন্তু তাই বলে সেটা অযথা অপচয় করবেন না।  পর্যাপ্ত পানি দিয়ে হাত ধুয়ে তারপর রুমাল বা টিস্যু দিয়ে ভেজা হাতটা মুছবেন। 

১৬. নির্দিষ্ট কোন খাবার বেশি ভালো লেগেছে এটা বলবেন না,  হোস্ট সবগুলো আইটেমই যথেষ্ট মমতা সহকারে রান্না করেছেন আপনাদের জন্য  - এটা মাথায়  রাখবেন।  

১৭. খাবার মুখে নিয়ে চপ চপ করবেন না,  খাইতে খাইতে নাকে সর্দি আসলে সেটা আস্তে করে মুছে নিবেন - উখ্খু উখ্খু শব্দ করে সেটাকে পেটে ঢুকানোর চেষ্টা করবেন না। মুখে কাকড় বা কাটা পড়লে মুখের খাবারটুকু বের করে সকলের সামনে ফেলে দিবেন না,  সকলের আড়ালে কোথাও ফেলুন। 

১৮. কোন একটা আইটেম নেওয়ার জন্য যদি আপনি প্রথমে উদ্যোগ নেন তাহলে চেষ্টা করবেন আশেপাশে দুএকজনকে আগে  দিয়ে পরে নিজে নিতে।  নিজে বড়ো পিসটা নিয়ে পাশেরজনের দিকে বাটি ঠেলে দিবেন না। নেওয়ার সময় চামচ দিয়ে সবগুলো পিস ঘাটাঘাটি করবেন না,  চোখের আন্দাজে আগে সিলেক্ট করে তারপর সেটা চামচে তুলবেন। 

১৯. দূরে থাকা কোন খাবার নেওয়ার জন্য বাটি নিজের দিকে দেওয়ার জন্য আরেকজনকে বলবেন না, সেটা উনার জন্য পরিশ্রমের। আপনার প্লেট বাটির কাছে এগিয়ে নিয়ে তারপর প্লেটে নিজে নেন বা কাউকে দিতে বলেন। 

২০. নিজে ডিমের কুসুম না খেয়ে রেখে দিয়ে পাশেরজনকে কুসুমের পুষ্টিগুণ বুঝাতে যাবেন না। 

২১. সালাদের বাটি থেকে বেছে বেছে শুধু টমেটো নিবেন না।  টমেটো,  শসা,  মূলা আনুপাতিক হারে নিবেন। 

২২. শুধুমাত্র আপনাকে একা  কাঁচামরিচ বা লবন এনে দেওয়ার জন্য কাউকে অনুরোধ করবেন না।  

২৩. হোস্ট পোলাওয়ের বাটি আনার সাথে সাথেই জিজ্ঞেস করে বসবেন না - সাদা ভাত আছে  কিনা? 

২৪. মজলিশে যিনি সবচেয়ে আস্তে খান তার সাথে তাল মিলিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন,  এতে করে সবাই সমানভাবে খাওয়ার অংশ পাবে।  

২৫. সকলের সাথে একসাথে খাওয়া শেষ  করুন। 

২৬. গলা পর্যন্ত খেয়ে হোস্টের মুখে " কিছুই তো খাইলেন না " শোনার জন্য  " বেশি খায়ালছি " বলে ঢং করবেন না।  আপনি যে বেশি খায়ালছেন এটা সবাই এতোক্ষণে ভালোই বুঝে গেছে! 

আজ এ পর্যন্তই । 

 এর বাইরে আরো পয়েন্ট থাকলে কমেন্টে যোগ করুন।  

থিউরি বুঝতে সমস্যা হলে - বাসায় দাওয়াত দিন,  হাতে কলমে শিখুন!

collected

অনলাইনে প্রথমবার জমির খাজনা দিতে কী কী ডকুমেন্টস লাগে?

✅ অনলাইনে প্রথমবার জমির খাজনা দিতে কী কী ডকুমেন্টস লাগে?
👉👉খাজনা দেয়ার জন‍্য নিম্নলিখিত পেপার এর প্রয়োজন হবে:
1. সর্বশেষ রেকর্ড/খারিজ খতিয়ানের কপি।
2.  পূর্ববর্তী দাখিলার কপি।
3.  জাতীয় পরিচয়পত্র।
4.  একটি স্মার্টফোন/কম্পিটার ও ইন্টারনেট কানেকশন।
5.  মোবাইল নাম্বার ও পাসওয়ার্ড।
6.  জমির অবস্থান অনুযায়ী-বিভাগ,জেলা, উপজেলা, মৌজার তথ্য, খতিয়ান নং ও হোল্ডিং নং।

N.B: বকেয়ার সাল চার এর অধিক হলে এবং পূর্ববর্তী খাজনার রশিদ আপনার নিকট থাকলে (যা অন লাইন নয়) প্রথম বার ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে খাজনা দিন।

✅অন লাইনে খাজনা দেয়ার ধাপ সমূহঃ
☆ ধাপ ১- ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন ( ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://ldtax.gov.bd )

☆ ধাপ ২- নাগরিক নিবন্ধন করুন ( মোবাইল নং, জন্ম তারিখ, আইডি নং দেয়ার পর ওটিপি নং পাবেন)।

☆ ধাপ ৩- প্রোফাইল সেটিং করুন ( প্রফাইলের তথ‍্যগুলি পুরন করুন)।
☆ ধাপ-৪ জমির খতিয়ান যুক্ত করুন।
☆ ধাপ-৫ হোল্ডিং ও ভূমি উন্নয়ন করের তথ্য পূরণ করুন।
☆ ধাপ-৬ পেমেন্ট অপশন সিলেক্ট করুন।
☆ ধাপ-৭  ই-পেমেন্ট করুন।
☆ ধাপ-৮ খাজনা রশিদ ডাউনলোড করুন
◆ খতিয়ানে নাম থাকা যে কোন একজন খাজনা দিতে পারবেন।
◆ ওয়ারিশান হলে ওয়ারিশ সনদ সংযুক্ত করে খাজনা দেয়া যাবে।
◆ যাদের আইডি কার্ড নেই তারা প্রতিনিধির মাধ‍্যমে খাজনা দিতে পারবেন।
◆ খতিয়ানে থাকা সব জমির খাজনা দিতে হবে। আংশিক খাজনা দেয়ার নিয়ম নেই।