Skip to main content

বই পড়ার গুরুত্ব ও উপকারিতা

বই পড়ার অভ্যাস এবং উপকারিতাবই পড়ার অভ্যাস এবং উপকারিতা
‘বই’ দুই বর্ণের একটি শব্দ মাত্র। যা এসেছে আরবি ‘ওহি’ থেকে। আরবি ‘ওয়াও’  হরফের বাংলা উচ্চারণ হয় ‘ব’। ওহির বাংলা উচ্চারণ হয় বহি। ধীরে ধীরে ভাষার  পরিবর্তনে বহিটি বই রূপ ধারণ করেছে। এভাবে বইয়ের সঙ্গে ঐশী জ্ঞানের একটা  সম্পর্ক রয়েছে। বই পড়লে মানুষের জ্ঞানের দ্যুতি বাড়ে। আমাদের জীবসত্তা  জাগ্রত থাকলেও মানবসত্তা জাগ্রত করার সিঁড়ি হচ্ছে বই।
মানব সভ্যতার সূচনা থেকেই মানুষের পাঠ অভ্যাসের তথ্য পাওয়া যায়। মানুষ বই  পড়ে মনের খোরাকের জন্য, অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এবং নিজেকে জ্ঞানের আলোয়  আলোকিত করার জন্য। জ্ঞানের সূচনা বই থেকেই এবং সে জ্ঞানকে সামগ্রিকভাবে  কাজে লাগানোর দক্ষতা মানুষ বই পড়ে পেয়ে থাকে। মানুষের মননশীল, চিন্তাশীল,  সৃষ্টিশীল চিন্তার যাবতীয় সূচনার বিস্ফোরণ একমাত্র বইয়ের মাধ্যমে হতে পারে।
কিন্তু মানুষ আগে যেভাবে যেকোনো বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিতে পারত, প্রযুক্তির  এ সময়ে এসে একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে আগের মতো আর মনোযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে  না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বইয়ের সাথে মানুষের দূরত্ব। একটা সময় অলস দুপুরে  বালিশে হেলান দিয়ে কিংবা ভ্রমণে বাসে-ট্রেনে বসে বই বই পড়ে সময় কাটানো  কিংবা এক টানে একটি বই পড়ে শেষ করার প্রবণতা এখনকার দিনে নেই বললেই চলে।  এখন আধা পৃষ্ঠার একটা প্রবন্ধ পড়ার দরকার হলে হয়তো দু-এক লাইন পড়েই বাদ  দিয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ আমাদেরকে একটা বিষয় স্বীকার করতেই হবে, সবারই  বইপত্র বা খবরের কাগজের প্রবন্ধ ইত্যাদি পড়ার অভ্যাস একেবারেই বন্ধ হয়ে  যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
অথচ, জীবনে সফলতা অর্জন করতে হলে যেসব গুণাবলি বা দক্ষতার প্রয়োজন তার  মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বই পড়া বা বই থেকে জ্ঞান অর্জন। পৃথিবীর সফলতম মানুষদের  মধ্যে জ্ঞান এর প্রতি যে অসীম তৃষ্ণা রয়েছে তা মেটানোর জন্যই হচ্ছে বই  পড়া। Warren Buffett তাঁর পেশা জীবনের শুরুতে প্রতিদিন ৬০০-১০০০ পৃষ্ঠা  নিয়মিত পড়তেন। Bill Gates প্রতিবছর ৫০ টি বই শেষ করেন। Elon Mask রকেট  সায়েন্স এর বিদ্যা বই পড়ার মাধ্যমেই অর্জন করেছেন। Mark Cuban প্রতিদিন ৩  ঘণ্টার বেশি বই পড়েন।
এসব পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, তারা সফল হওয়া সত্ত্বেও তাদের জানার প্রতি  রয়েছে অসীম আগ্রহ। তাই তাদের কাছে বই পড়ার গুরুত্ব কমে যায় নি। কারণ  তারা জানেন বই পড়েই হওয়া যায় সুদক্ষ এবং অনেক গুণাবলীসম্পন্ন। আসুন দেখে  নিই কীভাবে আমাদের বিভিন্ন দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে বই।
মানসিক উত্তেজনা
বই পড়ার সর্বপ্রথম উপকারিতা হচ্ছে মানসিক উত্তেজনা। এক গবেষণায় দেখা  গেছে, অধ্যয়ন Dementia এবং Alzheimer’s নামের  এই রোগ দুটিকে হ্রাস এমনকি  প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। মস্তিষ্ককে সচল রাখলে তা কখনোই তার ক্ষমতা  হারাবে না। মস্তিষ্ককে শরীরের একটি সাধারণ পেশী হিসেবে বিবেচনা করে,  নিয়মিত ব্যায়াম করলে তা শক্তিশালী এবং ফিট থাকবে।
মানসিক চাপ হ্রাস
কিছু মানুষ তাদের মানসিক চাপ কমাতে ব্যায়ামের আশ্রয় নেয়, কেউ কেউ আবার  যোগব্যায়ামের দ্বারস্থ হয় তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে। জীবনে এমন কোন  মানসিক চাপ নেই সেটি যেই পরিমাণই হোক না কেন, যা একটি ভালো গল্প সমাধান  করতে পারে না। বই পড়ার মজা হচ্ছে এটি একজন মানুষকে মুহূর্তের মধ্যেই কোনো  এক অজানা জগতে নিয়ে যাবে কিংবা এমন কোন সময়ে ভ্রমণ করাবে যা সে কখনো  কল্পনাও করেনি। একটি ভালো অনুচ্ছেদ তাকে প্রতিদিনের বাস্তবতা থেকে একটু  হলেও রেহাই দেবে। এমনি মানসিক চাপ কমিয়ে মানসিক প্রশান্তি ফিরিয়ে আনে  সহায়ক মাধ্যম বই।
শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধি
যত বেশি বই পড়া হবে তত বেশি শব্দভাণ্ডারে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শব্দ যোগ  হতে থাকবে। ফলে বই পড়া শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধিতে অনেক বেশি সাহায্য করে।  নিজেকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা চাকুরিজীবনে এমনকি ব্যক্তিগত জীবনেও সহায়ক  হবে। এমনকি
একজন মানুষকে আত্মবিশ্বাস জোগাতেও অনেক সাহায্য করে। নতুন কোনো ভাষা  শিখতেও বই পড়ার বিকল্প নেই। এটি খুব দ্রুত নতুন যেকোনো ভাষাকে আয়ত্ত করতে  সহায়তা করে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি
কটি বই পড়ার সময় দেখা যায় বিভিন্ন তথ্য দেয়া থাকে যা পাঠককে গল্পের  স্বার্থেই মনে রাখতে হয়। যেমন: বিভিন্ন চরিত্র, ইতিহাস, পটভূমি, গল্পের  উদ্দেশ্য, উপ-খণ্ড ইত্যাদি। এসব তথ্য আমাদের কাছে অতিরিক্ত মনে হলেও  মস্তিষ্কের অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে সবকিছু মনে রাখার। প্রত্যেকটি নতুন  স্মৃতি একটি নতুন Synapse তৈরি করে এবং বিদ্যমান স্মৃতিকে আরও শক্তিশালী  করে এবং স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিকে আরও উন্নত করে।
Analytical thinking কে উন্নত করে
বই পড়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হচ্ছে  Analytical thinking কে  উন্নত করা। অনেকের কাজের ক্ষেত্রে দেখা যায় Analytical thinking খুব দরকার  পড়ে, সেই ক্ষেত্রে বই পড়া খুব কাজে লাগতে পারে। এমনকি কখনো হয়েছে যে  পাঠক কোনো রহস্যমূলক বই পড়ার সময় পুরো বই পড়ার আগেই রহস্যটি সমাধান করে  ফেলেছেন? তার মানে তার ভালো দক্ষতা রয়েছে। মানুষের জীবনেও এমন অনেক  পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখানে Analytical thinking দিয়েই সেসব পরিস্থিতি  মোকাবেলা করতে হয়।
অন্যের জ্ঞান থেকে অভিজ্ঞতা নেয়া
পাঠক যে বইটি পড়ছেন সেটি মূলত সেটি ওই বইয়ের লেখকের বিশেষ জ্ঞান বা  অভিজ্ঞতা থেকেই লেখা। সেই জ্ঞান পাঠকের সফলতাকে ত্বরান্বিত করবে। বিভিন্ন  বইয়ে দেখা যায় লেখক তার জীবনের সফলতা এবং ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা করে এবং  সেই ব্যর্থতা থেকে কীভাবে কী উপায়ে তিনি উপরে উঠতে থাকে সেই বৃত্তান্ত  লিপিবদ্ধ থাকে ওই বইয়ে। সেই লেখা বা গল্প থেকে জানতে পারা যায় কোন পথে গেলে  সফলতা নিশ্চিত এবং ভুলের সম্ভাবনাও কমে আসে। জীবন খুবই ছোট এসব ভুলের  পুনরাবৃত্তি করা সফলদের একজন হতে চাইলে তাদের অতীত থেকে শিক্ষা নাও এবং  জেনে নাও ব্যর্থতাকে সফলতায় রূপান্তর করার মন্ত্র ।
কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতা বাড়ায়
বই যেন মানুষকে এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যাবে, তাকে দেখাবে কোনো কিছুই যেন  অসম্ভব নয়। পড়ার মাধ্যমেই দেখাবে বিষয়গুলোর অধিকাংশ তার জানা। বাকিটা  বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সহজেই আবিষ্কার করা সম্ভব। বই যেন এক বিশাল  মাকড়শার জাল, যা সবকিছুকেই এক সূত্রে গেঁথে দেয়, পাঠকের জানা বিষয়ের  সঙ্গে নতুন আবিষ্কৃত বিষয়কে জোড়া লাগিয়ে নতুন এক উত্তর কিংবা সমাধান বের  করা যেন বইয়ের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।
নতুন চিন্তা বা আবিষ্কার ক্ষমতা বৃদ্ধি
বই পড়ার মাধ্যমে একজন মানুষ নতুন বিষয় বা তথ্য উদঘাটনে সহায়তা পান। কোন  সমস্যা সমাধান করা অথবা কোনো কিছু অর্জন করার নতুন কোনো মাধ্যম আবিষ্কার  করতে বই ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বই পড়ার সুবাদে তার পছন্দের তালিকায় নতুন  কোনো শখ কিংবা নতুন কোনো পেশা যুক্ত হয়েছে যেটি শেষে সে তার পেশা হিসেবে  বেছে নিয়েছে এবং সফলতা অর্জন করেছে। অন্বেষণের শুরু কিন্তু পড়া এবং  উপলব্ধির মাধ্যমেই।
Meditation for soul
মানসিক প্রশান্তি পেতে কোনো এক নিরিবিলি জায়গায় কোনো এক পছন্দের বই  নিয়ে যেতে হবে। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মুক্ত বাতাস ওই পাঠকের  চিন্তাকে যেন আরও প্রসারিত করবে, যা কখনোই লাইব্রেরিতে বসে বসে পড়ার মধ্যে  পাওয়া সম্ভব নয়। কিছুক্ষণের বই পড়া তার সারাদিনের ক্লান্তিকে নিমিষেই  দূর করে দিবে।
মনোযোগ বৃদ্ধি
তথ্যপ্রযুক্তির যুগের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে মানুষ যেন প্রযুক্তির গতিই  আগে গ্রহণ করেছে। মানুষকে এখন সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটির সম্মুখীন হয় তা  হল মনোযোগের অভাব। ৫ মিনিটের বিস্তারে একদিকে যেখানে কোনো কাজের পরিকল্পনা  করা হচ্ছে, আরেকদিকে হয়ত ইমেইল চেক করা হচ্ছে, আবার সেই সঙ্গে কারো সাথে  হয়ত করা হচ্ছে চ্যাট কিংবা ব্যবহার করা হচ্ছে স্মার্টফোন। এই ধরনের আচরণ  কার্যক্ষমতা কমিয়ে বাড়িয়ে দেয় স্ট্রেস।
যখন আমরা একটা গল্প পড়ি তখন আমাদের মনোযোগ শুধুমাত্র সেই গল্পের মধ্যেই  সীমাবদ্ধ থাকে, যেন পুরো পৃথিবীটা তখন নিশ্চুপ হয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন  যদি বই পড়ার অভ্যাস করা হয় তবে দেখবে মনোযোগ ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজে  যাওয়ার আগে ১৫-২০ মিনিট পড়ার অভ্যাস করলেএবং দেখা যাবে আগের থেকেও অনেক  বেশি মনোযোগী হওয়া যায়।
বই পারস্পরিক যোগাযোগের মন্ত্র
আমাদের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্র হচ্ছে যোগাযোগ। যা শুধু বই  পড়ার মাধ্যমে ভালো পারস্পরিক যোগাযোগ গড়ে তোলা যায়। যারা বই পড়ে তারা  খুব সহজেই অন্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। তারা জানে কোন  পরিস্থিতিতে কি কথা বলতে হয় এবং কার সাথে কীভাবে কথা বলতে হয়। যারা বই  পড়ে না তারা অনেক বিষয়েই সচেতন নয়।
যারা কিছুই জানে না তাদের আসলে অন্যকে বলারও কিছু থাকে না। সমাজে চলতে  গেলে যোগাযোগের কোনো বিকল্প নেই। বই পড়া যেমন জ্ঞানের পরিধি বিস্তারে  সাহায্য করে, তেমনি ভালো সংবাদদাতা বা উপস্থাপনকারী হতেও সহায়তা করে। বেই  পারে মানুষকে পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত করতে।
বই আত্মোন্নতিতে সহায়ক
বই পড়া নিজেকে এক উন্নত আমি হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে। বই পড়ার  মাধ্যমেই মানুষ  এক নতুন পৃথিবী আবিষ্কার করা সম্ভব। যেই বিষয় নিয়ে  মানুষের আগ্রহ রয়েছে সেই বিষয়ে জ্ঞান আরও বৃদ্ধি করতে বইই একমাত্র  অবলম্বন। বই পড়ার মধ্য দিয়েই মানুষ তার অন্তরদৃষ্টির একটি সুগঠিত পন্থা  এবং ভবিষ্যতের উত্তম কর্ম নির্ণয় করতে সক্ষম হয়।
“Reading is to the mind, what exercise is to the body” – এই কথাটির  মধ্যেই বই পড়ার গুরুত্ব বোঝা যায়। ব্যায়াম যেমন আমাদের শরীরকে সুস্থ  রাখে তেমনি বই পড়ার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মনকে সুস্থ এবং প্রফুল্ল রাখতে  পারি। আসলে বই পড়ার আনন্দ কখনোই শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব নয় এটি  শুধু অনুভব করা যায় অভিজ্ঞতা দ্বারা।
‘বই’ দুই বর্ণের একটি শব্দ মাত্র। যা এসেছে আরবি ‘ওহি’ থেকে। আরবি ‘ওয়াও’  হরফের বাংলা উচ্চারণ হয় ‘ব’। ওহির বাংলা উচ্চারণ হয় বহি। ধীরে ধীরে ভাষার  পরিবর্তনে বহিটি বই রূপ ধারণ করেছে। এভাবে বইয়ের সঙ্গে ঐশী জ্ঞানের একটা  সম্পর্ক রয়েছে। বই পড়লে মানুষের জ্ঞানের দ্যুতি বাড়ে। আমাদের জীবসত্তা  জাগ্রত থাকলেও মানবসত্তা জাগ্রত করার সিঁড়ি হচ্ছে বই।
মানব সভ্যতার সূচনা থেকেই মানুষের পাঠ অভ্যাসের তথ্য পাওয়া যায়। মানুষ বই  পড়ে মনের খোরাকের জন্য, অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এবং নিজেকে জ্ঞানের আলোয়  আলোকিত করার জন্য। জ্ঞানের সূচনা বই থেকেই এবং সে জ্ঞানকে সামগ্রিকভাবে  কাজে লাগানোর দক্ষতা মানুষ বই পড়ে পেয়ে থাকে। মানুষের মননশীল, চিন্তাশীল,  সৃষ্টিশীল চিন্তার যাবতীয় সূচনার বিস্ফোরণ একমাত্র বইয়ের মাধ্যমে হতে পারে।
কিন্তু মানুষ আগে যেভাবে যেকোনো বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিতে পারত, প্রযুক্তির  এ সময়ে এসে একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে আগের মতো আর মনোযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে  না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বইয়ের সাথে মানুষের দূরত্ব। একটা সময় অলস দুপুরে  বালিশে হেলান দিয়ে কিংবা ভ্রমণে বাসে-ট্রেনে বসে বই বই পড়ে সময় কাটানো  কিংবা এক টানে একটি বই পড়ে শেষ করার প্রবণতা এখনকার দিনে নেই বললেই চলে।  এখন আধা পৃষ্ঠার একটা প্রবন্ধ পড়ার দরকার হলে হয়তো দু-এক লাইন পড়েই বাদ  দিয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ আমাদেরকে একটা বিষয় স্বীকার করতেই হবে, সবারই  বইপত্র বা খবরের কাগজের প্রবন্ধ ইত্যাদি পড়ার অভ্যাস একেবারেই বন্ধ হয়ে  যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
অথচ, জীবনে সফলতা অর্জন করতে হলে যেসব গুণাবলি বা দক্ষতার প্রয়োজন তার  মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বই পড়া বা বই থেকে জ্ঞান অর্জন। পৃথিবীর সফলতম মানুষদের  মধ্যে জ্ঞান এর প্রতি যে অসীম তৃষ্ণা রয়েছে তা মেটানোর জন্যই হচ্ছে বই  পড়া। Warren Buffett তাঁর পেশা জীবনের শুরুতে প্রতিদিন ৬০০-১০০০ পৃষ্ঠা  নিয়মিত পড়তেন। Bill Gates প্রতিবছর ৫০ টি বই শেষ করেন। Elon Mask রকেট  সায়েন্স এর বিদ্যা বই পড়ার মাধ্যমেই অর্জন করেছেন। Mark Cuban প্রতিদিন ৩  ঘণ্টার বেশি বই পড়েন।
এসব পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, তারা সফল হওয়া সত্ত্বেও তাদের জানার প্রতি  রয়েছে অসীম আগ্রহ। তাই তাদের কাছে বই পড়ার গুরুত্ব কমে যায় নি। কারণ  তারা জানেন বই পড়েই হওয়া যায় সুদক্ষ এবং অনেক গুণাবলীসম্পন্ন। আসুন দেখে  নিই কীভাবে আমাদের বিভিন্ন দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে বই।
মানসিক উত্তেজনা
বই পড়ার সর্বপ্রথম উপকারিতা হচ্ছে মানসিক উত্তেজনা। এক গবেষণায় দেখা  গেছে, অধ্যয়ন Dementia এবং Alzheimer’s নামের  এই রোগ দুটিকে হ্রাস এমনকি  প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। মস্তিষ্ককে সচল রাখলে তা কখনোই তার ক্ষমতা  হারাবে না। মস্তিষ্ককে শরীরের একটি সাধারণ পেশী হিসেবে বিবেচনা করে,  নিয়মিত ব্যায়াম করলে তা শক্তিশালী এবং ফিট থাকবে।
মানসিক চাপ হ্রাস
কিছু মানুষ তাদের মানসিক চাপ কমাতে ব্যায়ামের আশ্রয় নেয়, কেউ কেউ আবার  যোগব্যায়ামের দ্বারস্থ হয় তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে। জীবনে এমন কোন  মানসিক চাপ নেই সেটি যেই পরিমাণই হোক না কেন, যা একটি ভালো গল্প সমাধান  করতে পারে না। বই পড়ার মজা হচ্ছে এটি একজন মানুষকে মুহূর্তের মধ্যেই কোনো  এক অজানা জগতে নিয়ে যাবে কিংবা এমন কোন সময়ে ভ্রমণ করাবে যা সে কখনো  কল্পনাও করেনি। একটি ভালো অনুচ্ছেদ তাকে প্রতিদিনের বাস্তবতা থেকে একটু  হলেও রেহাই দেবে। এমনি মানসিক চাপ কমিয়ে মানসিক প্রশান্তি ফিরিয়ে আনে  সহায়ক মাধ্যম বই।
শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধি
যত বেশি বই পড়া হবে তত বেশি শব্দভাণ্ডারে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শব্দ যোগ  হতে থাকবে। ফলে বই পড়া শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধিতে অনেক বেশি সাহায্য করে।  নিজেকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা চাকুরিজীবনে এমনকি ব্যক্তিগত জীবনেও সহায়ক  হবে। এমনকি
একজন মানুষকে আত্মবিশ্বাস জোগাতেও অনেক সাহায্য করে। নতুন কোনো ভাষা  শিখতেও বই পড়ার বিকল্প নেই। এটি খুব দ্রুত নতুন যেকোনো ভাষাকে আয়ত্ত করতে  সহায়তা করে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি
কটি বই পড়ার সময় দেখা যায় বিভিন্ন তথ্য দেয়া থাকে যা পাঠককে গল্পের  স্বার্থেই মনে রাখতে হয়। যেমন: বিভিন্ন চরিত্র, ইতিহাস, পটভূমি, গল্পের  উদ্দেশ্য, উপ-খণ্ড ইত্যাদি। এসব তথ্য আমাদের কাছে অতিরিক্ত মনে হলেও  মস্তিষ্কের অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে সবকিছু মনে রাখার। প্রত্যেকটি নতুন  স্মৃতি একটি নতুন Synapse তৈরি করে এবং বিদ্যমান স্মৃতিকে আরও শক্তিশালী  করে এবং স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিকে আরও উন্নত করে।
Analytical thinking কে উন্নত করে
বই পড়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হচ্ছে  Analytical thinking কে  উন্নত করা। অনেকের কাজের ক্ষেত্রে দেখা যায় Analytical thinking খুব দরকার  পড়ে, সেই ক্ষেত্রে বই পড়া খুব কাজে লাগতে পারে। এমনকি কখনো হয়েছে যে  পাঠক কোনো রহস্যমূলক বই পড়ার সময় পুরো বই পড়ার আগেই রহস্যটি সমাধান করে  ফেলেছেন? তার মানে তার ভালো দক্ষতা রয়েছে। মানুষের জীবনেও এমন অনেক  পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখানে Analytical thinking দিয়েই সেসব পরিস্থিতি  মোকাবেলা করতে হয়।
অন্যের জ্ঞান থেকে অভিজ্ঞতা নেয়া
পাঠক যে বইটি পড়ছেন সেটি মূলত সেটি ওই বইয়ের লেখকের বিশেষ জ্ঞান বা  অভিজ্ঞতা থেকেই লেখা। সেই জ্ঞান পাঠকের সফলতাকে ত্বরান্বিত করবে। বিভিন্ন  বইয়ে দেখা যায় লেখক তার জীবনের সফলতা এবং ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা করে এবং  সেই ব্যর্থতা থেকে কীভাবে কী উপায়ে তিনি উপরে উঠতে থাকে সেই বৃত্তান্ত  লিপিবদ্ধ থাকে ওই বইয়ে। সেই লেখা বা গল্প থেকে জানতে পারা যায় কোন পথে গেলে  সফলতা নিশ্চিত এবং ভুলের সম্ভাবনাও কমে আসে। জীবন খুবই ছোট এসব ভুলের  পুনরাবৃত্তি করা সফলদের একজন হতে চাইলে তাদের অতীত থেকে শিক্ষা নাও এবং  জেনে নাও ব্যর্থতাকে সফলতায় রূপান্তর করার মন্ত্র ।
কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতা বাড়ায়
বই যেন মানুষকে এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যাবে, তাকে দেখাবে কোনো কিছুই যেন  অসম্ভব নয়। পড়ার মাধ্যমেই দেখাবে বিষয়গুলোর অধিকাংশ তার জানা। বাকিটা  বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সহজেই আবিষ্কার করা সম্ভব। বই যেন এক বিশাল  মাকড়শার জাল, যা সবকিছুকেই এক সূত্রে গেঁথে দেয়, পাঠকের জানা বিষয়ের  সঙ্গে নতুন আবিষ্কৃত বিষয়কে জোড়া লাগিয়ে নতুন এক উত্তর কিংবা সমাধান বের  করা যেন বইয়ের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।
নতুন চিন্তা বা আবিষ্কার ক্ষমতা বৃদ্ধি
বই পড়ার মাধ্যমে একজন মানুষ নতুন বিষয় বা তথ্য উদঘাটনে সহায়তা পান। কোন  সমস্যা সমাধান করা অথবা কোনো কিছু অর্জন করার নতুন কোনো মাধ্যম আবিষ্কার  করতে বই ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বই পড়ার সুবাদে তার পছন্দের তালিকায় নতুন  কোনো শখ কিংবা নতুন কোনো পেশা যুক্ত হয়েছে যেটি শেষে সে তার পেশা হিসেবে  বেছে নিয়েছে এবং সফলতা অর্জন করেছে। অন্বেষণের শুরু কিন্তু পড়া এবং  উপলব্ধির মাধ্যমেই।
Meditation for soul
মানসিক প্রশান্তি পেতে কোনো এক নিরিবিলি জায়গায় কোনো এক পছন্দের বই  নিয়ে যেতে হবে। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মুক্ত বাতাস ওই পাঠকের  চিন্তাকে যেন আরও প্রসারিত করবে, যা কখনোই লাইব্রেরিতে বসে বসে পড়ার মধ্যে  পাওয়া সম্ভব নয়। কিছুক্ষণের বই পড়া তার সারাদিনের ক্লান্তিকে নিমিষেই  দূর করে দিবে।
মনোযোগ বৃদ্ধি
তথ্যপ্রযুক্তির যুগের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে মানুষ যেন প্রযুক্তির গতিই  আগে গ্রহণ করেছে। মানুষকে এখন সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটির সম্মুখীন হয় তা  হল মনোযোগের অভাব। ৫ মিনিটের বিস্তারে একদিকে যেখানে কোনো কাজের পরিকল্পনা  করা হচ্ছে, আরেকদিকে হয়ত ইমেইল চেক করা হচ্ছে, আবার সেই সঙ্গে কারো সাথে  হয়ত করা হচ্ছে চ্যাট কিংবা ব্যবহার করা হচ্ছে স্মার্টফোন। এই ধরনের আচরণ  কার্যক্ষমতা কমিয়ে বাড়িয়ে দেয় স্ট্রেস।
যখন আমরা একটা গল্প পড়ি তখন আমাদের মনোযোগ শুধুমাত্র সেই গল্পের মধ্যেই  সীমাবদ্ধ থাকে, যেন পুরো পৃথিবীটা তখন নিশ্চুপ হয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন  যদি বই পড়ার অভ্যাস করা হয় তবে দেখবে মনোযোগ ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজে  যাওয়ার আগে ১৫-২০ মিনিট পড়ার অভ্যাস করলেএবং দেখা যাবে আগের থেকেও অনেক  বেশি মনোযোগী হওয়া যায়।
বই পারস্পরিক যোগাযোগের মন্ত্র
আমাদের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্র হচ্ছে যোগাযোগ। যা শুধু বই  পড়ার মাধ্যমে ভালো পারস্পরিক যোগাযোগ গড়ে তোলা যায়। যারা বই পড়ে তারা  খুব সহজেই অন্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। তারা জানে কোন  পরিস্থিতিতে কি কথা বলতে হয় এবং কার সাথে কীভাবে কথা বলতে হয়। যারা বই  পড়ে না তারা অনেক বিষয়েই সচেতন নয়।
যারা কিছুই জানে না তাদের আসলে অন্যকে বলারও কিছু থাকে না। সমাজে চলতে  গেলে যোগাযোগের কোনো বিকল্প নেই। বই পড়া যেমন জ্ঞানের পরিধি বিস্তারে  সাহায্য করে, তেমনি ভালো সংবাদদাতা বা উপস্থাপনকারী হতেও সহায়তা করে। বেই  পারে মানুষকে পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত করতে।
বই আত্মোন্নতিতে সহায়ক
বই পড়া নিজেকে এক উন্নত আমি হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে। বই পড়ার  মাধ্যমেই মানুষ  এক নতুন পৃথিবী আবিষ্কার করা সম্ভব। যেই বিষয় নিয়ে  মানুষের আগ্রহ রয়েছে সেই বিষয়ে জ্ঞান আরও বৃদ্ধি করতে বইই একমাত্র  অবলম্বন। বই পড়ার মধ্য দিয়েই মানুষ তার অন্তরদৃষ্টির একটি সুগঠিত পন্থা  এবং ভবিষ্যতের উত্তম কর্ম নির্ণয় করতে সক্ষম হয়।
“Reading is to the mind, what exercise is to the body” – এই কথাটির  মধ্যেই বই পড়ার গুরুত্ব বোঝা যায়। ব্যায়াম যেমন আমাদের শরীরকে সুস্থ  রাখে তেমনি বই পড়ার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মনকে সুস্থ এবং প্রফুল্ল রাখতে  পারি। আসলে বই পড়ার আনন্দ কখনোই শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব নয় এটি  শুধু অনুভব করা যায় অভিজ্ঞতা দ্বারা।
(সংগৃহীত ফ্রম ইন্টারনেট)

Comments

Popular posts from this blog

Books poem analysis with bangla

Books poem in bangla and with analysis Verse-wise Bangla Translation: What worlds of wonder are our books! As one opens them and looks, New ideas and people rise In our fancies and our eyes. আমাদের বইগুলো কী আশ্চর্য এক জগৎ! যখনই কেউ তা খুলে দেখে, নতুন ভাবনা আর নতুন মানুষ জেগে ওঠে কল্পনায় ও চোখের সামনে। The room we sit in melts away, And we find ourselves at play With some one who, before the end, May become our chosen friend. আমরা যে ঘরে বসে আছি, তা যেন মিলিয়ে যায়, আর আমরা আবিষ্কার করি নিজেদের খেলায় মত্ত কাউকে সঙ্গে নিয়ে, যে হয়তো শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠবে। Or we sail along the page To some other land or age. Here's our body in the chair, But our mind is over there. অথবা আমরা পৃষ্ঠার ওপর দিয়ে ভাসতে থাকি অন্য কোনো দেশ বা কালের দিকে। আমাদের শরীরটা রয়েছে চেয়ারে, কিন্তু মন চলে গেছে দূরে অন্য কোথাও। Each book is a magic box Which with a touch a child unlocks. In between their outside covers Books hold all things for their lovers. প্রতিটি বই একেকটি জাদুর বাক্স, যা শিশুরা এক ...

🚀 ৫০টি দরকারি কিবোর্ড শর্টকাট (Windows)(বাংলা ব্যাখ্যাসহ)

🚀 ৫০টি দরকারি কিবোর্ড শর্টকাট (Windows) (বাংলা ব্যাখ্যাসহ) (অজানা কিন্তু খুবই কাজে লাগে) ⸻ ১. Ctrl + N → নতুন ফাইল বা ডকুমেন্ট খুলবে (Word, Notepad, Browser ইত্যাদিতে)। ২. Ctrl + Shift + T → আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্রাউজার ট্যাব পুনরায় খুলবে। ৩. Ctrl + Shift + Left/Right Arrow → একসাথে পুরো শব্দ নির্বাচন করা যাবে। ৪. Alt + F4 → অ্যাপ বা উইন্ডো বন্ধ হবে। ৫. Ctrl + P → প্রিন্ট ডায়ালগ বক্স খুলবে (প্রিন্ট করার জন্য)। ⸻ ৬. Ctrl + A → সব ফাইল বা টেক্সট সিলেক্ট হবে। ৭. Ctrl + C → কপি করা যাবে। ৮. Ctrl + V → পেস্ট করা যাবে। ৯. Ctrl + X → কাট করা যাবে। ১০. Ctrl + Z → সর্বশেষ কাজ Undo হবে। ⸻ ১১. Ctrl + Y → Undo করা কাজ Redo হবে। ১২. Windows Key + E → File Explorer খুলবে। ১৩. Windows Key + D → ডেস্কটপ দেখাবে (সব মিনিমাইজ হবে)। ১৪. Ctrl + Shift + Esc → সরাসরি Task Manager খুলবে। ১৫. Windows Key + L → কম্পিউটার লক হবে। ⸻ ১৬. Windows Key + S → সার্চ অপশন চালু হবে। ১৭. Windows Key + R → Run কমান্ড চালু হবে। ১৮. F5 → রিফ্রেশ করবে। ১৯. Alt + Enter → Properties খুলবে। ২০. Ctrl + T → ব্রাউজারে নতুন ট্যাব খু...

70 speaking rules(1~20)

Spoken Rule-1 Feel like – ইচ্ছা করা/আকাঙ্খা প্রকাশ করা প্রয়োগ ক্ষেত্র: ব্যক্তির কোন কিছুর “ইচ্ছা করলে” Feel like ব্যবহার হবে Structure: Subject + feel like + Verb (ing) + Extension. Example ✪ I feel like doing – আমার করতে ইচ্ছা করছে। ✪ I feel like eating – আমার খেতে ইচ্ছা করছে। ✪ I don’t ...