Wednesday, April 10, 2024

আবোল তাবোল

প্যারিসের এক রেস্তোরাঁয় একবার এক সুন্দরী ভদ্রমহিলা এক স্প্যানিশ চিত্রশিল্পীকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন- উনি কি ১ মিনিটে তার ছবি এঁকে দিতে পারবে ?
সেই চিত্রশিল্পী ছবিটি আঁকার জন্য সময় নিলেন মাত্র ৩০ সেকেন্ড। সেই ভদ্রোহিলা ছবিটি নিয়ে যেতে চাইলে চিত্রশিল্পী সেটার মূল্য চাইলেন (যেটা স্বাভবিকের চেয়ে একটু বেশী মনে হচ্ছিল)।
মহিলাটি চমকে জিজ্ঞেস করলো- তুমি ৩০ সেকেন্ডের জন্য এতো টাকা চাইছ ?
সেই চিত্রশিল্পী জবাবে বলেন- ৩০ সেকেন্ডের কাজটার জন্য আমাকে ৩০ বছর সাধনা করতে হয়েছে। সেই সময়ের মূল্য কত হতে পারে?

###

ভুমিষ্ঠ হওয়ার পর ধাত্রী ভেবেছিলেন মৃতশিশুর জন্ম হয়েছে। এই কারণে ধাত্রী শিশুটিকে একটি টেবিলের উপর রেখে মায়ের সেবা-শুশ্রুষায় ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় শিশুটিকে টেবিলের উপর নিথর হয়ে পরে থাকতে দেখে তার কাকা এগিয়ে আসেন এবং তার মুখে থাকা সিগারেটের ধোঁয়া শিশুটির মুখে নিক্ষেপ করা মাত্রই শিশুটি নড়াচড়া দিয়ে উঠে। তার মা জানিয়েছেন শিশুকালে তার মুখে প্রথম উচ্চারিত শব্দ ছিল ‘পিজ’ ‘পিজ’! ‘পিজ’ আসলে ‘লাপিজ’ শব্দের শিশুতোষ সংক্ষিপ্ত উচ্চারণ। ‘লাপিজ’ অর্থ পেনসিল।

###

তাঁর খ্যাতিতে সবচেয়ে অবাক হয়েছিল তাঁর শিক্ষক, কারণ উনি তাঁকে মাত্র ১০ বছর বয়সে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছিলেন | কারন সেই ছাত্র বর্ণমালার কোনও অক্ষর মনে রাখতে পারত না,  ৭ কে বলতেন উল্টো নাক !

###

স্পেন ছেড়ে যখন তিনি ফ্রান্সে আসেন তখন তাঁর পরনে ছিল স্পেনের গ্রাম্য পোশাক, শ্রমিকের। মুখে গ্রাম্য ভাষা। সারা জীবন তিনি তা ত্যাগ করেননি | চুল কাটাতে কখনও তিনি বাড়ির বাইরে যেতেন না। নিজেই নিজের চুল কাটতেন, দাড়ি কাটতেন, নখ কাটতেন। কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের দিয়ে কাটিয়ে নিতেন। কারণ তাঁর স্প্যনিশ সংস্কার।এমন কি শেষ জীবনে বাড়িতে এসে একজন নাপিত তাঁর চুল, দাঁড়ি, নখ কেটে দিয়ে যেত l

তাঁর আচার-আচরনেও স্প্যানিশ রীতিনীতিই প্রকট হয়ে উঠত। একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ওলট-পালট করা শিল্পীর এইসব ব্যাপার-স্যাপার একেবারে অস্বাভাবিক না হলেও নজরে পড়ত। তিনি নিজেও বলতেন— ‘আমার শিল্পের প্রাথমিক প্রেরণা আমার গ্রাম এবং দেশের মানুষ।’

###

স্পেনের দুঃশাসক ফ্রাঙ্কোর দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সবসময়ই সরব ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে সোভিয়েত ইউনিয়নে যাবার জন্যে ফ্রাঙ্কো-সরকারের ছাড়পত্র নিতে হবে বলে তিনি আর সেখানে যাননি। উল্টো তিনি ফ্রাঙ্কোর শাসনকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘ফ্রাঙ্কোর কাছ থেকে কাগজ নেবার মতো ঘৃণ্য কাজ আমি করতে পারি না।' এমনই প্রতিবাদী ও নির্ভীক ছিলেন তিনি |

###

গোয়ের্নিকা, উত্তর স্পেনের শহরতলি। তখন স্পেনের গৃহযুদ্ধ চলছে। জার্মান বাহিনী বোমা ফেলল ছোট্ট শহরটির ওপর। চারদিকে ধ্বংসের ছবি। আর ধ্বংসের সেই ভয়াবহ চেহারা নিয়ে নিজের স্টুডিওতে ছবি আঁকা শুরু করলেন একজন শিল্পী। শোনা যায়, ছবির কাজ চলার সময় আচমকাই স্টুডিওতে হানা দেয় জার্মানরা। ছবি দেখিয়ে তারা প্রশ্ন করে, ‘কে করেছে?’ উত্তরও ছিটকে আসে, ‘তোমরা।’

চারদিকে ধ্বংসচিত্র, মানুষ চিৎকার করছে, এক মা আলো নিয়ে এগিয়ে আসছেন, কিউবিস্ট ধাঁচ ছবি জুড়ে। এটা তৈরির আগে ছবির মধ্যের বিভিন্ন এক্সপ্রেশনগুলোকে নিয়ে প্রায় দুশোর মতো স্কেচ করেছিলেন পিকাসো। তার অমর সৃষ্টিকর্ম ‘গোয়ের্নিকার’ সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

এ ‘গোয়ের্নিকা’ সৃষ্টি হয়েছে যার হাতে তিনি আর কেউ নন, তিনি পাবলো পিকাসো। 

দক্ষিন ফ্রান্সে থাকার সময় একবার পিকাসোর বন্ধুরা তাঁর বাড়িতে খেতে এসে দেখলো পিকাসোর ঘরে তাঁর নিজের আঁকা কোনও ছবি নেই। বন্ধুদের একজন জিজ্ঞাসা করলো, "তোমার আঁকা কোনও ছবি নেই কেন পাবলো, তুমি কি তোমার ছবি পছন্দ কর না?"

পিকাসোর জবাব, "বরং উল্টোটাই সত্য, আমি অনেক পছন্দ করি, কিন্তু পিকাসোর আঁকা ছবিগুলোর অনেক দাম, আমার কেনার সামর্থ নাই"।

তিনি এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন যে, একটা সময়  ছবি আঁকার জন্যে রং কেনার পয়সা ছিল না তার। পিকাসো তখন শুধু নীল রং দিয়েই ছবি আঁকতেন। তার এ সময়কে বলা হয় ‘ব্লু পিরিয়ড’। পিকাসো বলতেন, ‘আমার আবেগ কোনো রঙের অপেক্ষায় থাকে না। আমার যখন হলুদ রঙ থাকে না, তখন শুধু নীলেই আঁকতে পারি।’ মূলত নীল রঙে আঁকা পিকাসোর ছবিগুলো ধারণ করেছিল অন্য এক প্যারিসকে। 

পাবলো পিকাসো তখন দারুণ জনপ্রিয় চিত্রশিল্পী। একদিন চার্লি চ্যাপলিন গেলেন পিকাসোর সঙ্গে দেখা করতে। বললেন, ‘আপনি কী করে ছবি আঁকেন, দেখতে এলাম।’

পিকাসো সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়ে চার্লি চ্যাপলিনকে নিয়ে গেলেন তার স্টুডিওর মধ্যে। সেখানে তিনি একটা ছবি আঁকতে ব্যস্ত ছিলেন। চ্যাপলিন দাঁড়িয়ে আছেন আর পিকাসো নিমগ্ন হয়ে ছবি আঁকছেন। হঠাৎ তুলি থেকে খানিকটা রং ছিটকে গিয়ে পড়ল চার্লি চ্যাপলিনের সাদা জামায়। পিকাসো আঁতকে উঠে বললেন, ‘ওহ্, আমি খুবই দুঃখিত চার্লি! দাঁড়াও, আমি এক্ষুনি স্পিরিট নিয়ে এসে রংটা মুছে দিচ্ছি।’

চ্যাপলিন একবার তার জামাটার দিকে তাকান, তারপর হাসতে হাসতে বলেন, ‘কোনো দরকার নেই, তার চেয়ে আপনি বরং আমার প্যান্টের ওপর একটা সই দিয়ে দিন।’

পিকাসো ছিলেন সব রকম নির্যাতনের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠিত ধারনার বিরুদ্ধে। তবে ওই যে বলা হয়, তিনি ভেঙেছেন কেবল— এটা ঠিক না। যা কিছু ভেঙেছেন, তা গড়ার জন্যই। ভাঙার আনন্দে কোনও কিছু তিনি ভাঙেননি।

পাবলো পিকাসো, পৃথিবী যার আঁকার ক্যানভাস |

''শিল্পকলার উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্মা থেকে দৈনন্দিন জীবনের ধুলা দূর করা ।'' - পাবলো পিকাসো 

collected

No comments:

Post a Comment