Monday, April 15, 2024

আর্টে স্কেলিং একটা খুব বড় ইস্যু।

আর্টে স্কেলিং একটা খুব বড় ইস্যু।
 
একই আর্ট যেটা ছোটো ফর্মে অনবদ্য লাগে - খুব বড় হলে খাপছাড়া লাগে। রেনেসাঁ পিরিয়ডে দেখবেন যেগুলো মিউজিয়াম সাইজের বিশাল অল্টারপিস কিংবা ফ্রেস্কো - সেখানে নেগেটিভ স্পেইস নাই বললেই চলে কিন্তু পোর্ট্রেইটে ফর্মে তা অহরহ আছে। এর কারণ লার্জ ফরমেটে আর্টওয়ার্ক খুবই ভিন্ন চরিত্র ধারণ করে। সেখানে ড্রামা লাগে, গল্প লাগে - যেটা ছোটো ফর্মে না হলেও হয়। আপনি আর্কিটেকচারাল ড্রয়িং কিংবা পেইন্টিং যদি খুব লার্জ ফরমেটে করেন - দেখবেন যে সেটা বোরিং লাগছে কিন্তু  ছোটো/মাঝারি ফরমেটে বোরিং লাগে না।
 
মুঘল মিনিয়েচার পেইন্টিং সামান্য একটু  বড় করলেও আর্টিস্টিক ভ্যালু লুজ করে। কারণ গোয়াশ পেইন্টিংয়ের যে কোনো ডেপথ নাই - এইটা ছোটো ফর্মে খারাপ লাগে না কিন্তু বড়ো ফর্মে খারাপ লাগে। তাছাড়া মিনিয়েচার আর্ট ফর্ম, দর্শক কোন ডিস্টেন্স থেকে দেখবে (২ ফিট) - এটা ডিক্টেট করতে পারে। লার্জ ফরমেটে গেলে এর কোনো গ্যারান্টি নাই। আপনি ৩০ ফিট দূর থেকে দেখতে পারেন আবার ৮ ফিট দূর থেকেও দেখতে পারেন।  ফলে মিনিয়েচার ফর্মে একটা কালার আরেকটা কালারের সাথে মেলে (যেমন চুল ও স্কিন) - সেই ট্রানজিশানের জায়গাটায় একটা ম্যাজিক হয় - চোখ আটকে যায়। লার্জ ফরমেটে গেলেই ওই ম্যাজিকটা চলে যাবে এবং আপনার চোখে সব ভুল ধরা পড়বে।
 
মুঘল কিংবা ইসলামিক আর্টে নেগেটিভ স্পেইসে কোনো ড্রামা নাই। তাই তারা ওখানে ফুল-লতা-পাতা টাইপ ডিজাইন এলিমেন্ট দেয় - সোনা দিয়ে পেইন্ট করে। য়োরোপীয়ানরা এই সমস্যাটা ধরতে পারে। তাদের লার্জ ফরমেট পেইন্টাররা আসলে আর্টিস্ট কম - ফিল্ম ডিরেক্টর বেশী। তাদের প্রতিটা পেইন্টিং এ খুব ডিটেইল গল্প আছে। সেখানে এক্সিডেন্টালি একটা ব্রাশ স্ট্রোকও নাই। পুরাটাই প্ল্যান করা। তারা বুঝতে পারে যে একটা যে একটা A4 সাইজে নেগেটিভ স্পেইস আর ২০ ফিট সাইজের অল্টার পিসে নেগেটিভ স্পেইস পুরাপুরি আলাদা জিনিস।
 
আপনারা যারা আল্পনা আঁকেন তাদের প্রতি আমার পরামর্শ হোলো আল্পনা সুন্দর একটা আর্ট-ফর্ম কিন্তু এটা শুধুমাত্র ছোটো জায়গায় কাজ করে। কারণ যেকোনো রেপেটেটিভ ডিজাইন - একজন দর্শককে পুরোটা এক সাথে দেখতে হবে। এই যে রাস্তায় আল্পনা আঁকেন - এর সমস্যা হোলো আপনি দর্শকের চোখকে একটা জায়গায় ফিক্স করতে পারবেন না। যেকোনো ডিজাইন এলিমেন্ট - যদি দর্শক অন্য স্পেইসের সাপেক্ষে ডিজাইন এলিমেন্টটাকে দেখে (যেমন রাস্তার ড্রেন ও আল্পনা - আপনি একই সাথে দেখেন) - সেটা নির্ঘাত বিশ্রী লাগবে। ডিজাইন এলিমেন্টের মধ্যে একটা সম্পূর্ণতা থাকতে হবে যেইটা আপনি রাস্তায় আল্পনা আঁকলে এচিভ করতে পারবেন না। আপনার চোখ সামনে চলে যাচ্ছে কিন্তু আল্পনা শেষ হচ্ছে না।
 
তাছাড়া মানুষের চোখ ৩ লক্ষ বছর ধরে প্রসেস করছে যে দাঁড়ানো অবস্থায় সামনে তাকালে আই লেভেলের নীচের দিকে হোলো বিপদ (ঘাসের মধ্যে এপেক্স প্রেডেটর লুকিয়ে আছে যে আপনাকে ধরে খেয়ে ফেলবে) - আর আই লেভেলের উপরের দিকে হোলো আকাশ। দেখেন যে আকাশ হোলো সব ভালো জিনিসের খনি। আল্লাহ থাকেন আকাশে, বৃষ্টি আকাশে, ভাগ্য নিয়ন্ত্রক গ্রহ-নক্ষত্র আকাশে। আপনার আই লেভেলের ওপরে হোলো শান্তি আর নীচে বিপদ। আর্টিস্ট হিসাবে আপনি যদি কোনো আর্টওয়ার্ককে মানুষের এই স্বাভাবিক আই লেভেলের নীচের দিকে রাস্তায় কিংবা ফ্লোরে ফিক্স করেন (মানে মাথা নীচু করে দেখতে হয়) - মানুষ এই আর্টওয়ার্ক সাধারণত এপ্রিসিয়েট করে না বলে আমার অনুমান। মিউজিয়ামে মহান আর্ট সব সময় দিগন্ত থেকে একটু ওপরের আই লেভেলে রাখা হয়।
 
যেকোনো অবজেক্ট বা ইভেন্ট বা আর্টওয়ার্ক - আপনি যদি আপনার চোখ সামান্য উপরে না উঠিয়ে দেখেন - আমার অনুমান হোলো মানুষ এর সাথে ট্রানসেন্ডেন্স এর আইডিয়া যুক্ত করতে পারে না। ফলে সেটা মহত্ব অর্জন করতে পারে না।
 
আই লেভেলের নীচের দিকে কোনোদিনও আর্টওয়ার্ক প্লেইস করেন না। এইটা একটা ফান্ডামেন্টালি ব্যাড আইডিয়া। খুব লম্বা রাস্তায় আল্পনা আগলি বা নিদেন - আন্ডারওয়েলমিং ও বাংলামিজনক হতে বাধ্য।
Collected

No comments:

Post a Comment