Wednesday, April 3, 2024

একজন দক্ষ ম্যানেজার হয়ে ওঠার ৮টি সূত্র

একজন দক্ষ ম্যানেজার হয়ে ওঠার ৮টি সূত্র
 
ভাল ম্যানেজার হতে চাইলে আপনাকে ব্যবস্থাপনা বা তদারকির কাজটি যথেষ্ট পরিমাণে করতে হবে। আসলে নেতৃত্বে থাকা অধিকাংশ মানুষের জন্যই এটা সত্য। কাজে দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে ম্যানেজার হলেও, আপনার যথেষ্ট প্রশিক্ষণের অভাব থাকতে পারে।

অর্থাৎ, কর্মীদের কম তদারকি করার সাথে অলসতা, অনাগ্রহ কিংবা অযোগ্যতার কোনো সম্পর্ক নেই। এর উল্টাটাই বরং সত্য। 

ভাল ম্যানেজার বলতে এমন কাউকে বোঝায় না যিনি খুঁটিনাটি সব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান। ম্যানেজারের নির্দেশ ছাড়া কোনো কাজ করবে না, ম্যানেজারকে অনেক কঠোর হতে হবে, বিষয়টা তাও না। ভাল ম্যানেজার হতে আপনাকে কাজের প্রতি নিবেদিত হতে হবে এবং কাজের প্রতিটি ধাপে কর্মীদের সাথে আলোচনা করতে হবে।

আলোচনার অর্থ হচ্ছে নিজে বলা এবং অন্যদেরটা শোনা। একই সাথে কর্মীদের প্রয়োজন সম্পর্কে জানা এবং তাদের সাহায্য করা। নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে এগুলি বড় অংশ, যেটা অনেকেই এড়িয়ে যান। ঠিকভাবে কাজ করার জন্য কর্মীদের সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে হয়। কার কী কাজ সেটা যদি পরিষ্কারভাবে বলা থাকে, তবে সবাই ভাল কাজ করতে পারে। বিষয়টি ‘প্যারাডক্স অফ চয়েস’ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। 

যেমন, মনে হতে পারে অনেকগুলি বিকল্প থাকলে সেটা আমাদের জন্য ভাল হয়। কিন্তু বিকল্প যদি বেশি থাকে, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমাদের পরিশ্রমও বেশি দিতে হয়। তাই বেশি বিকল্প থাকার কারণে সিদ্ধান্তহীনতা ও জড়তার মত অবস্থার তৈরি হয়।

আমরা যাতে কম তদারকি করার ভুল না করে বসি, এজন্য ম্যানেজার হিসেবে ব্যবস্থাপনার ৮টি মৌলিক বিষয় আমাদের মেনে চলতে হবে। যাকে বলা যায়, কর্মীদের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার ৮টি মৌলিক সূত্র।
.

১. প্রতিদিন তদারকি করার অভ্যাস করুন

কেবল নির্দিষ্ট দিনে তদারকি করার অভ্যাস বাদ দিন। টিম যাতে ভালভাবে কাজ করতে পারে সেজন্য, প্রত্যেকের সাথে দুই সপ্তাহে অন্তর একবার ব্যক্তিগতভাবে কথা বলুন। 

যদি তা করতে না পারেন, তবে অনেক খুঁটিনাটি বিষয় আপনার চোখ এড়িয়ে যাবে। কর্মীদের সাথে ব্যক্তিগত মিটিং-এ যে প্রশ্নগুলি করবেন:

• আমার কাছে আপনার চাওয়া কী?

• আপনার পরিকল্পনা কী? এরপর কোন পদক্ষেপ নিতে চান?

• পদক্ষেপগুলি নিতে আপনার কেমন সময় লাগবে?
.

২. পারফর্মেন্সের ওপর জোর দিয়ে কথা বলুন

সেরা প্রশিক্ষকদের হয়ত মানুষকে অনুপ্রাণিত করার বিশেষ ক্ষমতা থাকে। কিন্ত চাইলে ভাল প্রশিক্ষক আসলে সবাই হতে পারে। 

ভাল কোচ হতে আপনাকে সুনির্দিষ্টভাবে কথা বলার অনুশীলন সবচেয়ে বেশি করতে হবে। কাজ এবং পারফর্মেন্স নিয়ে যখন কথা বলবেন, তখন কেবল বলার জন্য বলবেন না, সুনির্দিষ্টভাবে আপনার পয়েন্টগুলি তুলে ধরুন। 

“আপনার কাজ কিছুই হচ্ছে না”—এটা খুব একটা কার্যকর বক্তব্য নয়। আপনাকে আসলে দেখিয়ে দিতে হবে ভুলটা ঠিক কোথায় হচ্ছে। এমনভাবে পরামর্শ দিন যা ব্যবহার করে কর্মীরা তাদের কাজের মান ভাল করতে পারে, উন্নতি করতে পারে।
.

৩. প্রতিবার একজনের সাথে বসুন, প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আলাদা পদ্ধতি ব্যবহার করুন

অফিসের একেকজন কর্মীর চাহিদা এক এক রকম হতে পারে। প্রত্যেক কর্মীর বিষয়ে আপনি নিজেকে এই প্রশ্নগুলি করুন:

• এই ব্যক্তিটি আমার টিমে কোন কাজটি করে?

• কেন তাকে আমার তদারকি করা দরকার?

• তার সাথে আমি কোন কোন বিষয় নিয়ে কথা বলব?

• তার সাথে কীভাবে কথা বলব?

• কখন তার সাথে কথা বলব?

• কোথায় আমি তার সাথে কথা বলব?
.

৪. কেবল মুখে নয়, কাজেও জবাবদিহিতা আনুন

অধিকাংশ ম্যানেজারের কাছে কর্মীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কোনো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি থাকে না। কার্যকর জবাবদিহিতা আনার জন্য এই নিয়মগুলি মেনে চলতে হবে:

• আপনি কী প্রত্যাশা করছেন তা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিন। সবাই যাতে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত থাকে, তার কাছে কী চাওয়া হচ্ছে।

• কোন কাজটি খারাপ, কোনটি ভাল, কোনটি অসাধারণ তা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরুন। ফলে কাজ কেমন হচ্ছে সেটা নিয়ে কোনো সংশয় তৈরি হওয়ার সুযোগ থাকবে না।

• পরবর্তী কাজ বা পরবর্তী প্রকল্প কী হবে, সেটা ঠিক করে নিন। কর্মীদের কাছে যেন আপনার পরিকল্পনা প্রথম থেকেই পরিষ্কার থাকে।

• কাজের পারফর্মেন্স ভাল হলে কী পুরস্কার থাকবে, সেটাও আগে ঠিক করে দিন।
.
 
৫. কোন কাজ কীভাবে করতে হবে কর্মীদের তা জানান

কাজ নিয়ে যদি কেউ হিমশিম খায়, ম্যানেজারের দায়িত্ব হচ্ছে তাকে সাহায্য করা। 

কয়েকদিন খারাপ করুক, তারপর সাহায্য করব—এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসুন। শুরুতেই যদি সাহায্য করার প্রয়োজন হয়, তবে আপনার যথাসাধ্য উপায়ে কর্মীদের সাহায্য করুন। তাদের সঠিকভাবে দিক নির্দেশনা দিন, পরে ধীরে ধীরে সাহায্য কমিয়ে আনুন।
.
 
৬. প্রতিটি ধাপে পারফর্মেন্স তদারকি করুন

শুরুতে যখন দিক নির্দেশনা এবং নিজের প্রত্যাশা জানিয়ে দিয়েছেন, এরপর আপনার কাজ হচ্ছে সঠিকভাবে তদারকি করা। এতে করে কোনো কাজে ভুল হলে সেটা দ্রুত সংশোধন করে দিতে পারবেন।

• কর্মীদের কাজ করা অবস্থায় দেখুন। বিশেষ করে শিল্প কারখানা, নার্সিং সেবা কিংবা নির্মাণকাজে এই ধরনের তদারকি সবচেয়ে ভাল কাজ করে।

• কাজের তথ্য ও হিসাব চান। কর্মীদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে মিটিং করার সময় তাদের কাছে কাজের হিসাব নিন। শেষ মিটিং হওয়ার পর থেকে কী কী কাজ করেছে, সে বিষয়ে হিসাব নিন।

• কর্মীরা যাতে নিজেই নিজেদের কাজ মনিটর করতে পারে সেজন্য সাহায্য করুন। এর জন্য চেকলিস্ট তৈরি করে দিতে পারেন।

• কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করুন। চূড়ান্ত কাজ করার আগে খসড়া, স্যাম্পল দেখতে চান। অবশ্যই প্রতিটি কাজ আপনি নিজে ভালভাবে খুঁটিয়ে পর্যালোচনা করুন।

• অন্যদের কাছ থেকেও পরামর্শ নিন। কলিগ এবং অন্য ম্যানেজারদের মতামত জানুন।
.

৭. সমস্যা ছোট থাকা অবস্থায় সমাধান করুন

যদি কর্মীদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগের মধ্যে থাকতে পারেন, আপনার জন্য ছোটখাট সমস্যা সমাধান করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এরপর আপনার কাজ হল, নিজেই দায়িত্ব নিয়ে সমাধানের উপায় বের করা। 

অনেক ম্যানেজার আছেন যারা কর্মীদের সাথে জরুরি কিন্তু তিক্ত আলাপগুলি এড়িয়ে যেতে চান।  কিন্তু আপনি যদি তিক্ততার এই কাজটি প্রথমে না করেন, তবে পরে আপনার জন্য তা অনেক কঠিন হয়ে যাবে।
.
 
৮. কাজের ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করুন

কিছু কর্মীকে বেশি সুবিধা দেবেন আবার কিছু কর্মীকে কম সুবিধা দিতে হবে, এই বিষয়টি অবশ্যই ঠিক করুন কাজের ওপর ভিত্তি করে। পারফর্মেন্স যাই হোক না কেন, সবাইকে সমানভাবে মূল্যায়ন করতে হবে এই ভুল ধারণা নিয়ে বসে থাকবেন না। 

কর্মীদের পুরস্কৃত করার জন্য আপনার হাতে খুব বেশি সুযোগ থাকে না। তাই কাজের প্রতি যারা সত্যিকার অর্থেই নিবেদিত, তাদের জন্য একটু বেশি করুন। তবে আপনাকেও নিজের দায়িত্ব পালন করতে হবে। সবাইকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা, দিক নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এমনভাবে তৈরি করুন, যাতে তারা নিজেদের সুযোগগুলির সদ্ব্যবহার করতে পারে। প্রত্যেকের জন্য ভিন্ন পুরস্কার ব্যবস্থা কাজে লাগানোর জন্য আপনাকে এই নীতিগুলি মেনে চলতে হবে:

• নিয়ন্ত্রণ: পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি যেন সবার নিয়ন্ত্রণে থাকে। অর্থাৎ শুরুতেই সবাইকে জানিয়ে দিন, পুরস্কার পেতে হলে তাদের কী করতে হবে।

• সময়: কাজের রিওয়ার্ড আর পারফর্মেন্সের সময় যত কাছাকাছি থাকবে, পুরস্কারের আশা কর্মীদের ওপর তত বেশি কাজ করবে।

• কাস্টমাইজেশন: অর্থ ছাড়া কর্মীদের কার কী চাহিদা, সেটা যদি বুঝতে পারেন, কর্মীদের জন্য এমন আরও পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে পারবেন, যেটা তাদেরকে আরো অনুপ্রাণিত করবে। 
.

একজন ম্যানেজারের দক্ষতা নির্ভর করে টিমের ধরন, প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি এবং বাজারের পরিস্থিতির ওপর। নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা, মানবিক বিবেচনাবোধ, লক্ষ্য অর্জন ও সম্পদ ব্যবস্থাপনায় পারদর্শিতা এসব বিষয় একজন ম্যানেজারকে সমস্যা সমাধানে দক্ষ করে তোলে। 

#ম্যানেজার #কর্মী #কাজ
Collected

No comments:

Post a Comment