যে দশটি দেশে সর্বোচ্চ তেলের রিজার্ভ আছে :::
তেলকে বলা হয়ে থাকে 'ব্ল্যাক গোল্ড'; এ থেকেই বোঝা যায় বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব কতখানি।বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে কয়েকটি বিষয়ের পরিসংখ্যানের দিকে সবচেয়ে বেশি নজর রাখা হয়, তেলের উৎপাদন তার মধ্যে একটি, কারণ এটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উৎপাদনের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। তেলকে বলা হয়ে থাকে 'ব্ল্যাক গোল্ড'; এ থেকেই বোঝা যায় বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব কতখানি।
১. ভেনেজুয়েলা
তেলের রিজার্ভ: ৩০৩.৮ বিলিয়ন ব্যারেল
বলিভারিয়ান রিপাবলিক অফ ভেনেজুয়েলা বা ভেনেজুয়েলা দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশ। বিশ্বের বৃহত্তম তেলের মজুদ থাকা সত্ত্বেও, ভেনেজুয়েলা তেল উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় তুলনামূলকভাবে নিচের দিকে রয়েছে। তবে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ফলে তেলের সাপ্লাই চেইনে ব্যাঘাত ঘটায় এখন পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই এবছর ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে তাদের কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে। এছাড়াও, তারা এটি শেভরন কর্পোরেশনকে দেশটিতে তেলের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার জন্য একটি লাইসেন্স প্রদান করেছে।
২. সৌদি আরব
তেলের রিজার্ভ: ২৫৮.৬ বিলিয়ন ব্যারেল
কিংডম অব সৌদি এরাবিয়া (কেএসএ) বা সৌদি আরব বৈশ্বিক তেলের বাজারে প্রভাবশালী একটি দেশ হিসেবে কাজ করে এবং এটি ওপেকের বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ, যারা কিনা ২০২২ সালের নভেম্বরে ১০.৪৮ মিলিয়ন ব্যারেল তেল সরবরাহ করেছিল। সৌদি আরবের জাতীয় তেল কোম্পানি, সৌদি এরাবিয়ান অয়েল কোম্পানি আয়ের দিক থেকেও বিশ্বের বৃহত্তম তেলের প্রতিষ্ঠান। যদিও ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর দাম বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও তেল উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে এবছরের শুরুর দিকে বিতর্কের মুখে পড়েছিল সৌদি আরব।
৩. ইরান
তেলের রিজার্ভ: ২০৮.৬ বিলিয়ন ব্যারেল
পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইরানের তেলের রিজার্ভ বিশ্বের সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর মধ্যে একটি। ইরানের তেলের বাজারের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা জারি করার ফলে শুধুমাত্র হাতেগোনা কয়েকটি দেশ ইরান থেকে তেল কিনতে পারে। ইরানের প্রধান তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, ন্যাশনাল ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানি একসময় আয়ের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অয়েল কোম্পানি ছিল। ভারত ও চীনই মূলত ইরানের তেলের প্রধান ক্রেতা এবং চলতি বছরে চীন রেকর্ড পরিমাণ তেল কিনেছে ইরানের কাছ থেকে। ক্রয় করে, চীনের ক্রয় এই বছরের শুরুতে রেকর্ড মাত্রা স্পর্শ করে।
৪. কানাডা
তেলের রিজার্ভ: ১৭০.৩ বিলিয়ন ব্যারেল
উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডার বর্তমান জিডিপি ২.২৪ ট্রিলিয়ন ডলার। দেশটির বেশিরভাগ তেলের রিজার্ভই আথাবাস্কা অয়েল স্যান্ডসে অবস্থিত এবং কানাডার সর্ববৃহত তেল উতপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হলো কানাডিয়ান ন্যাশনাল রিসোর্সেস লিমিটেড। ২০২১ সালে কানাডা ছিল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত তেল উৎপাদনকারী দেশ; সেসময় এটি দৈনিক ৫ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করতো। দেশের অভ্যন্তরে তেলের ব্যবহার কমে ২.২৬ মিলিয়ন ব্যারেলে দাঁড়ানোয় কানাডা তাদের বেশিরভাগ তেল রপ্তানি করতে সক্ষম হয়। জানা গেছে, কানাডিয়ান ন্যাচারাল রিসোর্সেল লিমিটেড ২০২৩ সালের মধ্যে তাদের তেল উৎপাদন ১.১ মিলিয়ন ব্যারেল বাড়াতে চায়।
৫. ইরাক
তেলের রিজার্ভ: ১৪৫ বিলিয়ন ব্যারেল
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাকও ওপেকের একটি সদস্য দেশ। দেশটির অর্থনীতির অনেকটাই নির্ভর করে তেল রপ্তানির ওপর। ২০২১ সালে হিসাব অনুযায়ী, ইরাকের বৈদেশিক মুদ্রার ৯০% আসে অপরিশোধিত তেল বিক্রি করে। ওপেকের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ ইরাক ২০২২ সালে নভেম্বর পর্যন্ত ৪.৪৫ মিলিয়ন তেল উৎপাদন করেছে। ইরাকের তেলের বাজারের উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো পেট্রোচায়না কোম্পানি লিমিটেড ও বিপি পি আই সি। এবছর ইরাকে তেল উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও আগামী বছর তা হ্রাস পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
৬. রাশিয়া
তেলের রিজার্ভ: ১০৮ বিলিয়ন ব্যারেল
আন্তঃমহাদেশীয় দেশ রাশিয়া প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। মূলত প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে রাশিয়া শীর্ষ সারিতে থাকলেও দেশটিতে যথেষ্ট তেলের মজুদ রয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে এবছর পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে রাশিয়ার তেল বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং এর পরিবর্তে ভারত ও চীনের কাছে ছাড়কৃত মূল্যে তেল বিক্রি করছে তারা। ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থায়নের ক্ষমতা সীমিত করার জন্য পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ান তেল ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলারে সীমাবদ্ধ রেখেছে।
৭. কুয়েত
তেলের রিজার্ভ: ১০১.৫ বিলিয়ন ব্যারেল
পশ্চিম এশিয়ার দেশ কুয়েত ওপেকেরও একটি সদস্য। কুয়েতের রপ্তানির অর্ধেকই হলো পেট্রোলিয়াম পণ্য এবং দেশটির জাতীয় তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হলো কুয়েত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন। ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ২.৬৮ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে কুয়েত, যা ওপেকের মধ্যে চতুর্থ বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী। কুয়েতের বেশিরভাগ তেলই এশিয়ার দেশগুলো কিনে নেয়।
৮. সংযুক্ত আরব আমিরাত
তেলের রিজার্ভ: ৯৭.৮ বিলিয়ন ব্যারেল
৭৭৯ বিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাথাপিছু জিডিপির হার অনেক বেশি। দেশটির মোট রপ্তানির প্রায় এক চতুর্থাংশ আসে তেল ও এ সংক্রান্ত পণ্য থেকে কাছাকাছি তৈরি করে। আরও তেল অন্বেষণের জন্য চলতি বছরের ডিসেম্বরে মালয়েশিয়ার সরকারি মালিকানাধীন অয়েল কোম্পানি পেট্রোলিয়াম ন্যাশনাল বারহাদের সাথে জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে তারা। সংযুক্ত আরব আমিরাতও ওপেক সদস্য এবং এবছরের নভেম্বর পর্যন্ত তারা ৩ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে।
৯. লিবিয়া
তেলের রিজার্ভ: ৪৮.৩৬ বিলিয়ন ব্যারেল
উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়াও ওপেকের সদস্য। চলতি বছরের ডিসেম্বরে দেশটির সরকার তেল উৎপাদন কার্যক্রমের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করে এবং বৈশ্বিক কোম্পানিগুলোকে তাদের কাজ আবারও শুরু করার অনুমতি দেয়। ২০২২ সালে লিবিয়ার তেল উৎপাদন ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে, ২০২২ সালের নভেম্বর অবধি তারা ১ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল সরবরাহ করেছে।
১০. যুক্তরাষ্ট্র
তেলের রিজার্ভ: ৪৭.১০ বিলিয়ন ব্যারেল
নামে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সর্ববৃহত তেলের ভোক্তা। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দৈনিক তেল ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ৮৯ ব্যারেল। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নিজের পেট্রোলিয়াম রিজার্ভও সবচেয়ে বেশি, ৩৭৮ দশমিক ৬ মিলিয়ন ব্যারেল (২০২২ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত)। এক্সন মোবিল কর্পোরেশনের মতো কিছু বৃহৎ অয়েল কোম্পানির অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রে।
collected
No comments:
Post a Comment