একজন ডাক্তার শুধু প্রেসক্রিপশন লেখেন না, কখনও কখনও তিনি লিখে দেন মানবতার নতুন ইতিহাস।
ঠিক এমনই একজন মানুষ ভারতের বরাক উপত্যকার ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. রবি কান্নান (Dr. Ravi Kannan) — যিনি প্রমাণ করেছেন, চিকিৎসা মানে শুধু চিকিৎসা নয়, সেটি এক ধরণের ভালোবাসা, করুণা ও মানবতার অনুশীলন।
ধর্মনগরের এক ক্যানসার রোগী রমেশ নমঃশূদ্র (ছদ্মনাম), শেষ চিকিৎসার জন্য হাজির হন শিলচরের কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালে। হাতে টাকা নেই, ঘরবাড়ি বিক্রি শেষ, শেষমেশ নিজের সাত বছরের ছেলেকে বন্ধক রেখে মাত্র ৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।
চিকিৎসার শেষ দিনে যখন ডাক্তার কান্নান পরবর্তী তারিখ লিখতে যাচ্ছিলেন, রমেশ কাঁদতে কাঁদতে বলেন —
“স্যার, আর তারিখ দেবেন না... আমার আর আসা হবে না।”
একজন চিকিৎসক হিসেবে কান্নান থেমে যান।
তিনি জানতে চান — “কেন?”
রমেশ জানালেন, “সব বিক্রি শেষ। এখন শুধু ছেলেটা বন্ধক আছে। ওকেও না ছাড়ালে বাঁচতে পারব না।”
সেই মুহূর্তে কান্নানের চোখে জল এসে যায়।
তিনি তৎক্ষণাৎ ৫ হাজার টাকা দিয়ে দেন, বলেন —
“তোমার চিকিৎসা এখন থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হবে।”
এরপর স্থানীয় বিধায়কের সহায়তায় তিনি ছেলেটিকেও মুক্ত করে দেন।
সেই দিন থেকেই ডা. কান্নান বুঝেছিলেন —
চিকিৎসা শুধু শরীরের জন্য নয়, এটা সমাজেরও একটি দায়িত্ব।
তাঁর উদ্যোগে হাসপাতালে চালু হয় একটি নতুন নিয়ম —
যে রোগী নির্ধারিত তারিখে না আসে, তার বাড়িতে ফোন যায় — “আপনি আসেননি কেন? সমস্যা কী?”
রোগীর না আসা মানে, হয়তো তিনি টাকাহীন, হয়তো পথহীন — আর কান্নান তাদের পাশে দাঁড়াতে চান, যেভাবে রমেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
আজ পর্যন্ত তিনি ৭,০০০-এরও বেশি ক্যানসার রোগীর অস্ত্রোপচার করেছেন সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে।
তিনি নেন না বড় হাসপাতালের মতো বেতন, নেন না কোনো বিলাসী সুযোগ।
তিনি শুধু নেন মানুষের দোয়া, রোগীর হাসি আর সন্তুষ্টির নিঃশব্দ আশীর্বাদ।
ডা. রবি কান্নান ২০২3 সালে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন — কিন্তু তাঁর নিজের কথায়,
“এই সম্মান আসলে আমার নয়, সেই রমেশের — যিনি আমাকে মানবতা শিখিয়েছিলেন।”
আজকের পৃথিবীতে, যেখানে চিকিৎসা অনেক সময় পণ্য হয়ে দাঁড়ায়,
সেখানে রবি কান্নান দেখিয়ে দিলেন —
মানুষের প্রতি ভালোবাসা এখনো চিকিৎসার সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ।
Comments
Post a Comment